নানুর হাতের ‘তিলের জাউ’

Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon)
০৬ ফেব্রুয়ারী,২০১২

আমার নানুর কথা খুব বেশী মনে পড়ছে। মাত্র ক’দিন আগেই উনি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন অনন্ত অসীম গন্তব্যে। আমাদের সবক’টা ভাই বোনের কাছেই আমাদের নানু অনেক প্রিয় ছিলেন। আমার জন্মের পর আমার মা আমাকে নিয়ে ঢাকা থেকে খুলনা চলে যান। আমার শৈশবের প্রথম ৪ টি বছর কাটে নানুর সান্নিধ্যে। অনেক আদর যত্নে নানু আমাকে লালন পালন করেন। আমার বয়স যখন ৭ মাস তখন আমার নানা মারা যান। উনার স্মৃতি বলতে আমার কিছুই নেই। থাকার কথাও না। কিন্তু নানুর অসংখ্য স্মৃতি আমাদের মনে জমা হয়ে আছে। মাঝে মাঝে সেগুলা মনে পড়ে আর বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে অজান্তেই।

 

আমার নানাবাড়ি খুলনার দৌলতপুরে। আমার নানা বাড়ির নাম ‘তছির মঞ্জিল’। তছির উদ্দিন ছিল আমার মায়ের দাদা’র নাম। বাড়িটা উনার তৈরি করা সেই ১৩৪৭ বঙ্গাব্দে। তখন যৌথ সংসার ছিল। আমার নানুর রান্নার হাত ছিল অনেক ভাল। আমার মায়ের কাছে শুনেছি যে, আমার নানুর হাতের রান্না খায় নাই, ঐ তল্লাটে এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অনেক কোমল মন ছিল উনার। মানুষকে খাওয়াতে ভালবাসতেনও। ছোটবেলায় অনেক খেয়েছি উনার হাতের রান্না। ১৯৯৮ সালের দিক থেকে উনার শারীরিক অসুস্থতা বেড়ে যায়। প্রায় শয্যাশায়ী হয়ে যান। রান্না বান্না করতেও অক্ষম হয়ে পড়েন।

 

 

১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসের কথা। সবে মাত্র আমি S.S.C পরীক্ষা শেষ করে একাই নানু বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছি। বরাবরের মত নানু আমাকে দেখে অনেক খুশি হলেন। উনার একটা অভ্যাস ছিল। আমরা যখন খেতে বসতাম তখন উনার সামনেই খেতে বসতে হত আর উনি আমাদের খাওয়ার তদারকি করতেন। আমাদের খাওয়া না হলে উনি নিজে খেতেন না। আমরা যখনই নানুবাড়ি যেতান তখন এই নিয়ম চলত। আম্মুর কাছে শুনেছিলাম নানুর হাতের ‘তিলের জাউ’ এর কথা। নানু ঐটা খুব ভাল রাধঁতে পারতেন। তিলের জাউ হল- তিল, খেঁজুরের গুড় আর আতপ চালের সমন্নয়ে তৈরি এক ধরনের পায়েশ যা সাধারণতঃ দক্ষিণাঞ্চলের দিকে সকালের নাস্তা হিসাবে খাওয়া হয় তিলের মৌসুমে। একদিন কথা প্রসঙ্গে বললাম, নানু তুমি নাকি তিলের জাউ অনেক মজা করে বানাও? উনি হেসে বললেন, ‘এখন তো আর তেমন পারি না। শরীরে বল পাই না’। উনি মনে গেঁথে নিলেন কথাটা যে আমি তিলের জাউ খেতে চেয়েছি।

 

পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি নানু তার ঘরে নেই। খুঁজে দেখলাম উনি উনার পুরানো রান্না ঘরে বসে বসে খড়ি দিয়ে রান্না করছেন। আমি বললাম, কি কর নানু? বললেন, ‘তোমার জন্য তিলের জাউ রান্না করি। তুমি নাকি খাও নাই কখনও’। আমি হতবাক হয়ে গেলাম। নানু আমার জন্য এত কষ্ট করে তিলের জাউ রান্না করছেন! এরপর বললেন, ‘ঘরে তিল আর ঝোলাগুড় ছিল তাই দিয়ে রান্না করছি। তুমি ঘরে যাও। খেতে বস গিয়ে’। নানুর রান্না শেষ হয়ে গেলে জাউ ঘরে আনা হল। আমি প্রায় হামলে পড়লাম জাউ এর উপরে। একে তো কোনদিন খাইনি, শুধু আম্মুর কাছে গল্প শুনে গেছি, তার উপরে যেমন স্বাদ আর তেমনি সুগন্ধ। সেই সুবাস এখনও নাকে লেগে আছে। সেই নানুবাড়ি এখনো পড়ে আছে। শুধু আমার নানু আর নেই।

 

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সালেহ মাহমুদ UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# মনটা ভারী হয়ে গেল। আমার নানীর কথা কথা মনে পড়ে গেলো। খুব ভালো লাগলো লেখাটা। ধন্যবাদ শাওন ভাই।
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) onek onek kritoggota o shuveccha aponake saleh vai. doa korben amar nanir jonno!
ভালো লাগেনি ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মাহ্ফুজা নাহার তুলি সময় বসে থাকেনা.....মানুষও থাকেনা......থাকে শুধু তার ফেলে যাওয়া সৃতি ......এটাই নিয়ম....তবু মন মানতে চায়না/
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) thiki bolechhen. mon mante chay na!
ভালো লাগেনি ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
রনীল N/A UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# আপনি লাকি ভাই। এমন একজন অসাধারণ নানু পেয়েছেন। আমি নানু তো দুরের কথা, নিজের মা কে ও কখনো দেখতে পারলামনা। অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাই... একেবারে নস্ট্রালজিক বানিয়ে দিলেন..।
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) dhonnobad vai! mon kharap koro na! amader jibontai emon nishthur!
ভালো লাগেনি ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) ami amar boro maa orthat amar nanur maa keo dekhechhi.
ভালো লাগেনি ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i