মাসুদ একটি বেসরকারি ব্যাংক-এ কাজ করে। ১০ বছরের বেশী তার চাকুরীর বয়স। পদমর্যাদাও কম নয়। এ্যাসিসটেন্ট ভাইস-প্রেসিডেন্ট। কেরোনা মহামারিতেও দায়িত্বের খাতিরে তাকে প্রতিদিন ব্যাংকে ডিউটি করতে হয়। তার কোন ছুটি নেই। অন্য অফিসারদের ছুটি থাকলেও তার কোন ছুটি নেই। একটানা ডিউটি করতে করতে মাসুদ মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যায়। ব্যাংকে কত লোক আসে। কে করোনা বহন করে ব্যাংকে নিয়ে এসেছে কেউ তা জানে না? একদিন রাতে তার ভীষণ জ্বর আসে। মাসুদের মনটা একেবারে খারাপ হয়ে যায়। এভাবে তার জ্বর তিনদিনেরও বেশী সময় স্থায়ী হয়। ফলে তার মনে সন্দেহের বাসা বাঁধে। মনে মনে ভাবতে থাকে তার করোনা হয়ে গেলো কি না?
মাসুদের স্ত্রী বিষয়টি লক্ষ্য করে। তিনি সময় নষ্ট না করে মাসুদকে নিয়ে কোভিড-১৯ টেস্ট করানোর জন্য হাসপাতালে যান। হায়রে ভীড়! এই ভীড়ের মধ্যে মানুষ থাকলে যার কোভিড নেই তারও কোভিড হবে নি:সন্দেহে। তারপরেও কষ্ট সহ্য করে নতুনা দিয়ে বাসায় চলে আসে। দুই দিন পরে মাসুদের মোবাইলে ম্যাসেজ আসলো তিনি কোভিড-১৯ পজেটিভ। ম্যাসেজটা পেয়ে মাসুদের মনটা একেবারে খারাপ হয়ে গেল। তার স্ত্রী তার পাশে এসে দাঁড়ালো। তিনি মাসুদকে অভয় দিলো। মনে সাহস দিল যাতে মাসুদ ভেঙ্গে না পড়ে।
মাসুদের ব্যাংকের স্টাফদের জন্য একজন ভালো ডাক্তার এসাইন করা ছিলো। তিনি ফোনে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করলেন। ডাক্তার ওষধ লিখে তার মোবাইলে পাঠিয়ে দিলেন। মাসুদ ডাক্তারের পরামর্শে চলতে শুরু করলেন। তিনি একটি রুমে আইসোলেটেড হয়ে ডাক্তারের দেয়া ওষধ খেতে লাগলেন। সাথে গরম গরম চা ও লেবুর পানি তো আছেই। মাসুদের ঘরে কেউ যেতে পারতো না। কোন প্রয়োজন হলে তার স্ত্রী মোবাইলে যোগাযোগ করতো। এভাবে ১৫ দিন কেটে গেল। মাসুদের কোন অসুবিধাই হয় নি। হয়নি কোন স্বাশকষ্ট। ১৫ দিন পর মাসুদ আবার কোভিড টেস্ট করালো। দুই দিন পরে ম্যাসেজ আসলো তিনি কোভিড-১৯ নেগেটিভ।
তারপর তিনদিন পরে নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে মাসুদ আবার অফিসে গেলেন। সহকর্মীরা তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিলো। তিনি সবার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘করোনা একটি ভাইরাস মাত্র। একে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে চললে এই ভাইরাস মানুষের কোন ক্ষতিই করতে পারে না।’ সবাই তার বক্তব্যে হাতে তালি দিলো এবং কোভিড হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে চলার অঙ্গীকার করলো।
-স্বপন রোজারিও (মাইকেল) 15.4.21
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন