পাঁচফোড়ন

Fahmida Bari Bipu
২০ এপ্রিল,২০১৮

(জীবন অনেক সুন্দর। মাঝে মাঝে অসুন্দর কিছু এলেও তা যেন ছাপ না ফেলে। এত সুযোগ সেই অসুন্দরকে দেওয়ার কোন মানে হয় না। গক'র পাঠকদের উদ্দেশ্যে আমার হালকা একটি লেখা। পড়লে মন্তব্য করলে খুশি হব। এটি ছিল আমার ৫০-তম ছোটগল্প। )

 

                                                  

এক

রান্নাঘর থেকে নানারকম শব্দ ভেসে আসছে।

এতক্ষণ চলছিল কড়াই খুন্তির যুদ্ধ। এবারে ভেসে আসছে প্রেসার কুকারের হোঁশ হোঁশ হুইসেল।

জাভেদ লেখালেখি বাদ দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে রইলো। আজ শান্তা মনে হয় শব্দ যুদ্ধ শুরু করেছে। ঝগড়া করতে করতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন কিছুদিন মৌনব্রত পালন করে শান্তা। গত দু’দিন ধরে সে মৌনব্রত মোডে চলে গেছে। কিন্তু আজ মনে হয় আর চুপ করে থাকা পোষাচ্ছে না। আবার আনকোরা কোন ইস্যু না পেলে নতুন করে ঝগড়াই বা কিভাবে শুরু করে! তাই রান্নাঘরের নীরিহ থালাবাসনের ওপর দিয়েই যুদ্ধটা চালু রেখেছে।

জাভেদ অপেক্ষা করতে লাগলো। তার গল্পের ক্লাইমেক্স চলছে। সূক্ষ্ণ মনোযোগ দরকার এখন। এইসময় এরকম তীব্র শব্দ গোলযোগে মনোনিবেশ করাই অসম্ভব। বেশ অনেকটা সময় পার হয়ে যাওয়ার পরে মনে হলো, রান্নাঘর কিছুটা শান্ত হয়েছে। নিশ্চিন্ত বোধ করে আবার লেখার দিকে ঝুঁকতে যাবে, এমন সময়েই ছ্যাঁত করে একটা আর্তনাদ ভেসে এলো। আর সেই সাথে ছড়িয়ে পড়লো মসুরের ডালের মৌ মৌ সুবাস। ডালে পাঁচফোড়ন পড়েছে!

জাভেদের মন ঈষৎ আনচান করে উঠলো। রান্নাটা একটু বেশিই ভালো করে শান্তা। প্রতিটি খাদ্যই বেশ সুখাদ্যে রূপ নেয়। দ্রোপদী যদি রান্না দিয়ে পাঁচ স্বামীকে কুপোকাত করে থাকে, তাহলে শান্তাও তার রান্না দিয়ে অনায়াসেই এক স্বামীকে ধরাশায়ী করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

কিঞ্চিৎ হেলে পড়া মনটাকে একটু বকা দিল জাভেদ। সাতদিন ধরে ঝগড়াঝাঁটি করে বাসার শান্তি হারাম করে দিয়েছে অশান্ত শান্তা। এখন রান্নার প্রলোভন দেখিয়ে সব ভুলিয়ে দেবে এমনটা ভাবলে খুব বড় ভুল করবে সে।

মন বকাঝকা খেয়ে আবার বশে এসেছে। সবকিছু ভুলে গিয়ে আবার জোর করে নিজেকে লেখার মধ্যে ডুবিয়ে দিল জাভেদ।

বেশ অনেকক্ষণ যাবত একটানা লেখা চালিয়ে গেল জাভেদ। এখন সে তার গল্পের নায়ক নায়িকার জীবনের ঘনায়মান জটিলতার মাঝে পুরোপুরি ঘনীভূত। এমন সময়ে আবার মনোযোগচ্যুতি। কাঁচের চুড়ির রিনিঝিনি।

ইদানীং শান্তা কিছু রঙঢঙ শুরু করেছে। ঝগড়া করার সময়ে এমনিতে তার দিনদুনিয়ার হুঁশ থাকে না। নাকের পানি চোখের পানিতে মাখামাখি দশা হয়। আবার মাঝে মাঝে সাজগোজের বহর দেখলে উল্টানি খেতে হয়। চোখে মোটা কাজল, সোনার চুড়ির বদলে কাঁচের রেশমী চুড়ি। সালোয়ার কামিজ আর ম্যাক্সির বদলে তাঁতের বড় পাড়ের শাড়ি।

জাভেদের ঝগড়াক্লিষ্ট মনকে খালি অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা। এতদিন ধরে বলা অকথা কুকথা কে একফুঁয়ে ভুলিয়ে দেওয়ার ছলনা। সে কী আর বোঝে না কিছু! অবশ্য মন বড় বেয়াড়া। মাঝে মাঝে সন্ধি করে ফেলার জন্য বেশিরকম আঁইঢাই শুরু করে দেয়।

‘এই যে শুনছো!’

‘কানের কাছে এসেই তো শোনানোর চেষ্টা করছো। না শুনতে পাওয়ার কী আছে!’

‘বলছিলাম যে, ইয়ে...আকাশে মেঘ করেছে...দেখতে পাচ্ছো?’

এ কী রসের কথা! যে মেয়ের মুখে এই পাঁচদিন আগেও রণ দামামা বেজে উঠেছে, আজ সে কী না আকাশের মেঘ দেখাচ্ছে! এ জন্যই বলে, নারী মন বোঝা দেবতার পক্ষেও দুঃসাধ্য।

জাভেদ গাম্ভীর্য অটুট রেখে জবাব দিল,

‘আমি কি ময়ুর নাকি, যে মেঘ করেছে দেখে নাচতে বের হবো!’

সাথে সাথে মেঘ কেটে গিয়ে বজ্রপাত শুরু হলো।

‘এজন্যই কথা বলতে ইচ্ছে করে না! একটা ভালো কথা বললাম, কী উত্তর দিল! ইস! কী ভাষার ছিরি!’

‘ছিরি ভালো না হলে বিচ্ছিরি বস্তু ঘাঁটতে আসো কেন? না আসলেই পারো!’

‘আসাটাই ভুল হয়েছে। বেরসিক ঝগড়াবাজ লোক! পারে খালি ভোঁস ভোঁস করে নাক ডাকতে আর ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে ঝগড়া করতে।’

‘এ্যাই খবরদার আজেবাজে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি! ন্যাকামি করে কে এসেছে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে? ইহ্‌ কী ঢঙের কথা...দেখ আকাশে মেঘ করেছে...!’

শান্তা তেড়ে এলো শিং বাগিয়ে।

সকালের আবহাওয়া আবার গুমোট হয়ে উঠলো। পাঁচদিনের গলা যুদ্ধ, দু’দিনের মৌনব্রত আর একটু আগের শব্দ যুদ্ধের পরে যে একটু খানি হাওয়া বদলের পূর্বাভাষ দেখা যাচ্ছিলো তা আর বাস্তবে রূপ নিল না।

 

দুই

ঝগড়া টগড়া করে বেজায় ক্ষুধা পেয়ে গেল দুজনের। প্রতিবারের ঝগড়াতে শক্তি তো আর কম খরচ হয় না! ননস্টপ বাক্যবাণ ছোঁড়া, সেই সাথে অল্প বিস্তর হাত পা ছোঁড়াছুঁড়ি। ঝগড়া থামলে একদিনের জমিয়ে রাখা শক্তি ক্ষয় হয়ে যায়।

খাওয়ার টেবিলে দুজনেই হাপুস হুপুস করে খেতে লাগলো। দুজনের কারোরই এখন আশেপাশে হুঁশজ্ঞান নেই। সম্পূর্ণ মনোযোগ খাওয়াতে নিবদ্ধ।

জাভেদের মাথা থেকে গল্পের প্লট বহু আগেই বিদায় নিয়েছে। তার গল্পের নায়ক নায়িকা জীবনের কী জটিলতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলো, কিচ্ছু মনে নাই। সে এখন পাকস্থলী পূর্ণ করার প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত।

ভাতের সাথে দু’বার প্লেট ভর্তি করে ডাল নিল জাভেদ। শান্তা খাসা রান্না করে এই ডাল। বরাবরই ডাল তার ভীষণ প্রিয় খাবার। বিশেষ করে মসুরের ডাল। বিয়ের আগে যখন সে ব্যাচেলর জীবন কাটাতো তখনও প্রায় প্রতিদিনই এই ডাল রান্না করতো। ডাল উপচে পড়ে চুলার চারপাশ নোংরা হয়ে যেত। প্রতিদিন সেই চুলার ধার সে পরিষ্কার করতো। তবু ডাল রান্না করা বন্ধ হতো না। কিন্তু শান্তার রান্না করা এই ডালের কাছে জাভেদের রান্না করা সেই ডাল একেবারে নস্যি, নেহাতই ম্যাড়ম্যাড়ে।

ঝড় বহু আগে থেমে গিয়েছে। আকাশে কিছুটা মেঘ এখনো জমে আছে ঠিকই, তবে তা দিয়ে বড়জোর বৃষ্টিপাত হতে পারে। ঝড়ঝাপ্টা হওয়ার আর সম্ভাবনা নেই। জাভেদ ডালের বাটি কাছে টানতে টানতে জিজ্ঞেস করলো,

‘ডালটা রান্না খুব ভালো হয়েছে।’

শান্তা খেতে খেতে নির্বিকার গলায় বললো,

‘প্রতিদিনই হয়, আজকে আবার নতুন কী!’

‘আমিও তো আগে ডাল রান্না করতাম, এত মজা হতো না। তুমি ডালে কী দাও?’ জাভেদের গলার গাম্ভীর্য কেটে গিয়ে তারল্য ফুটে উঠছে।

‘ডাল রান্না করা কী এমন কঠিন ব্যাপার! পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, হলুদ, লবন দিয়ে পানি দিয়ে বসিয়ে দেওয়া। তারপরে সিদ্ধ হলে ঘুটে পানি দিয়ে আবার জ্বাল দেওয়া। বলগ উঠলে ফোঁড়ন দেওয়া...ব্যস! এই তো!’ শান্তার গলার স্বরও এখন একেবারেই স্বাভাবিক। একটু আগের হম্বি তম্বি পুরোপুরি উধাও।

‘দাঁড়াও দাঁড়াও...ঐ যে ফোঁড়নের কথা বললে না? ঐটা দিতাম না আমি। তাছাড়া আর সব মিলে গেছে।’

‘ফোঁড়ন না দিলে পানসে ডাল হবে। ঠিক তোমার মতো পানসে!’

‘এই এই...দেখ, আবার শুরু করো না বলে দিচ্ছি! খাচ্ছি... খেতে দাও।

‘খাও খাও বেশি করে খাও। আরো দু’চামচ ডাল নাও। ফোঁড়ন দেওয়া ডাল।

বলতে বলতে সত্যি সত্যি দু’চামচ ডাল জাভেদের প্লেটে ঢেলে দিল শান্তা।

 

তিন

শান্তা দ্রুতবেগে তৈরি হচ্ছে।

শুরুতে গড়িমসি করে এখন একটু তাড়াহুড়ার মধ্যে পড়ে গিয়েছে সে। প্রবলবেগে ব্রাশ চালাচ্ছে মুখে।

বেশ দীর্ঘসময় নিয়ে গোসল সেরেছে আজ। তার আগে একবার পার্লার থেকেও ঘুরে এসেছে। পেডিকিউর, মেনিকিউর...ফেসিয়াল, স্পা কিছুই বাদ দেয়নি।

শ্যাম্পু করা দীঘল চুল এলিয়ে দিয়েছে পিঠের ওপরে। পার্লার থেকে আসার পথে শাহবাগের মোড় থেকে কয়েকটা বেলিফুলের মালা কিনে এনেছিল। ভেবেছিল খোঁপায় বেঁধে নেবে। চুল শুকালো না। তাই আর খোঁপা করা হলো না। মালাগুলো চুড়ির মতো এক হাতে জড়িয়ে নিল শান্তা।

ঘিয়ে রঙের জামদানী পরেছে আজ। সাথে সোনালী রঙের ব্লাউজ।

চোখে মাশকারার স্ট্রোক দিতে দিতেই ভাবনার জালে জড়িয়ে গেল শান্তা। আজ কতদিন পরে এভাবে সাজছে সে! এক যুগ...নাকি এক জনম?

মোবাইলের মেসেজ টোনের আওয়াজে ভাবনার জাল ছিঁড়লো।

সে মেসেজ পাঠিয়েছে।

‘এত সময় লাগাচ্ছো যে! এতক্ষণ বুঝি বরের খপ্পরে পড়েছিলে?’

শান্তার ঠোঁটের কোণে হাসির সূক্ষ্ণ ভাঁজ পড়লো। উত্তরে লিখলো,

‘সে যন্ত্রণা আজ সকাল সকাল বাসা থেকে বেরিয়েছে। আমার আজ তোমার জন্যই সবটুকু সময়।’

‘তাহলে দেরি কেন? প্রতিটি মূহুর্তই দামী! এভাবে হেলায় হারাতে হয়?’

‘আর কিছুক্ষণ...এতদিন পরে দেখা হবে। নিজেকে তৈরি করতে তো কিছুটা সময় লাগবেই!’

‘তাড়াতাড়ি এসো...’

‘আসছি...’

নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে বাসা থেকে বেরুতে বেরুতেই সত্যি সত্যি অনেকটা দেরি হয়ে গেল। দরজায় তালা মারতে মারতে ভয়ে ভয়ে চারদিকে দেখতে লাগলো শান্তা। কেউ দেখে ফেললো না তো! এভাবে বিশেষ সাজসজ্জা রত অবস্থায় পরিচিত কারো সামনে পড়ে যাওয়ার একেবারেই ইচ্ছে নেই ওর। প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত হতে হবে তাহলে।

অনেক তো হলো! আর কত? এতদিন অনেক বোঝাপড়া করেছে সে নিজের সাথে। সেই একঘেঁয়ে ম্যাড়ম্যাড়ে জীবন, দু’দিন পর পর ঝগড়া...আর সংসার নামক যাঁতার নীচে দিনরাত পিষে যাওয়া। এখন থেকে নিজের জন্য বাঁচবে শান্তা।

বাইরে বের হতেই আরেকটা মেসেজ এলো। তবে এবার ‘সে’ করেনি, করেছে জাভেদের বোন।

‘ভাবী, বাসায় আছো তো? আমি আসছি!’

শান্তা ছোট করে লিখলো,

‘আমি একটু বের হয়েছি। ফিরতে দেরি হবে। কখন ফিরবো জানি না।’

মেসেজটা পাঠিয়েই ফোনটা অফ করে দিল শান্তা। ‘সে’ কোথায় থাকবে জানে শান্তা। অতএব ফোন অন রাখার দরকার নেই। বরং এখন ফোন অন রাখা মানেই ঝামেলা। কে জানে, জাভেদের বোন যদি এখন আবার ফোন করে বসে?

হেঁটে হেঁটে মোড় অব্দি এলো শান্তা। মোড়ের কাছে সিএনজি পাওয়া যায়। একটা সিএনজি নিয়ে চলে যাবে। রাস্তা যদিও খুব বেশি নয়, তবু এত সেজেগুজে রিক্সায় করে যেতে লজ্জা লাগবে ওর।

সেই সময়েই কে যেন হাঁক দিয়ে উঠলো,

‘আরে ভাবী না? কই চললেন এত সেজেগুজে? বাপ রে, কী সুন্দর লাগছে আপনাকে! একেবারে তো চেনাই যাচ্ছে না!’

পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশী। এত বকবক করতে পারে যে, মাথার পোকা পর্যন্ত যন্ত্রণাতে বের হয়ে আসে। আর এদিকের গল্প ওদিকে চালাচালিতে রীতিমত ওস্তাদ।

শান্তা প্রমাদ গুনলো। এই রে! সেরেছে! এখন তো কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো মহল্লা জেনে যাবে যে, শান্তা আজ সেজেগুজে কোথাও বেরিয়েছে।

‘এই যাচ্ছি একটু বন্ধুর সাথে গল্প করতে। ইউনিভার্সিটির বন্ধুর সাথে অনেকদিন পরে দেখা হবে তো!’

‘ও তাই? ছেলে বন্ধু নাকি?’ বলেই চোখ টিপলো প্রতিবেশিনী। তারপর জুড়ে দিল, ‘বাঃ! কী দারুণ মজা আপনাদের! আমাদের ভাই বন্ধুও নাই, আড্ডা টাড্ডাও মারতে পারি না তাই। যান যান ভাবী...তা ভাই কই? ভাইকেও সাথে নিতেন!’

শান্তা বিরক্ত হলো মনে মনে। মুখে বললো,

‘আমার বন্ধুর মধ্যে ওকে নিয়ে কী করবো? শুধু শুধু বোরড হবে!’

‘ও আচ্ছা, হ্যাঁ তাইতো! যান ভাবী। ফূর্তি করে আসেন। মন ফ্রেশ হবে। আমি যাই, রান্না করি গে। আর কী করবো? আমাদের কী আর এত ভালো ভাগ্য! বন্ধু বান্ধবও নাই...মজাও নাই! দিনরাত স্বামীর হুকুম তামিল করি আর বাচ্চা কাচ্চা পালি।’

শান্তা একরকম পালিয়ে এলো। তার প্রতিবেশিনীর মুখের লাগাম খুলে গিয়েছে।  শান্তার ভয় করতে লাগলো। এমনভাবে জেরা করছিল...মনে হচ্ছিলো বুঝি এখনি জাভেদকে ফোন করবে। ফোন নাম্বার থাকলে সত্যি সত্যিই তাই করতো।

সিএনজি’র জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে গেল শান্তার। আশ্চর্য! অন্যদিন কম করে হলেও পাঁচ-ছয়টা সিএনজি দাঁড়িয়ে থাকে এখানে। আজ একেবারে শুনশান!

আশেপাশের লোকজন শান্তাকে দেখতে দেখতে যাচ্ছে। শান্তা যে দেখতে সুন্দরী, এটা সে একরকম ভুলেই গিয়েছিল।

একটু অন্যরকম লাগতে লাগলো শান্তার। এই পথ দিয়ে কতদিন যাতায়াত করেছে। টুকটাক জিনিসপাতি কিনতে যখন তখন চলে এসেছে মোড়ের দোকানে। কেউ একবারের বেশি দু’বার তাকায়নি তার দিকে।

‘তার’ সাথে দেখা করতে যাওয়াটা সত্যিই ‘অন্যরকম’ কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে যেন।

একপেশে রঙচটা জীবনটা বুঝি নতুন রঙে মুড়তে যাচ্ছে। তাহলে কি সবকিছু নতুন করে শুরু হবে ওর জীবনে?

নিয়মে বাঁধা কর্তব্যে মোড়া পানসে জীবনে কেউ যেন আবীর ছিটিয়ে দিয়েছে। আজ নতুন করে আবার নিজের প্রেমে পড়লো শান্তা।

বাঃ! দারুণ তো!

 

চার

সিএনজি থেকে নেমেই পড়িমড়ি করে ছুট লাগালো শান্তা।

ভরদুপুর। এই সময়ে দু’একজন বাদে কাউকেই দেখা গেল না চন্দ্রিমা উদ্যানে বসে থাকতে। যে দু’একজন বসে ছিল তারা সবাই জোড়ায় জোড়ায়। সেই কেবল বেমানান জোড়া ছাড়া।

চন্দ্রিমা উদ্যানের সেতুর ওপরে দাঁড়িয়ে একমনে পানির দিকে তাকিয়ে থাকলো শান্তা। আজ কতদিন পরে দেখা হবে তার বন্ধুর সাথে! সেই একই জায়গায়...যেখানে তারা একসময় কত এসেছে! কতদিন...আজ কতদিন পরে আবার এখানে এল সে!

‘কী, পানির রঙ কি একই রকম আছে, নাকি বদলে গেছে?’

চমকে সামনে তাকিয়েই ফিক করে হেসে দিল শান্তা। একটু লজ্জা রাঙা মুখে বললো,

‘অনেকটা আগের মতোই আছে। তেমন বদলায়নি!’ তারপরে দুঃখিত ভঙ্গিতে বললো,

‘ইস! অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করিয়ে রেখেছি তাই না?’

‘অপেক্ষাই তো করিয়ে রাখলে সারা জীবন!’

শান্তা ঠোঁট কামড়ে অপূর্ব ভঙ্গি করলো। মুখে বললো,

‘তুমিও তো সময়মত দেখা দিলে না! দোষ কি শুধু আমার?’

‘দেখা দিলে লোকে কী বলে এই ভয়েই তো লুকিয়ে ছিলাম এতদিন।’

‘বাঃ বেশ! আর আমার সেই ম্যাড়ম্যাড়ে লোকটার সাথে কীভাবে দিন কাটছে সেটা জানতে চেয়েছো কখনো?’

শান্তা ঠোঁট ফোলালো, সেই কিশোরী বেলার মতো।

দুজনে আরো কিছুক্ষণ পুলের ওপরে দাঁড়িয়ে থেকে একসময় সামনে এগিয়ে গিয়ে কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় ঘন হয়ে বসলো।

দুজনের হাতেই আজ অনেক সময়। দুজনেই এক দিনের ছুটি নিয়েছে কাজ থেকে।

‘আচ্ছা, আমরা এভাবে মাঝে মাঝে দেখা করতে পারি না? এই ধরো...মাসে দু’তিনবার।’

‘দু’বার নাকি তিনবার?’

‘ধরো দু’বার...না না তিনবার।’

‘বেশ করবো এখন থেকে। আর ভয় করে লাভ নেই। বেশি ভয় করে সব তো হারাতেই বসেছি! এখনো যেটুকু বাকি আছে জীবনের, এভাবেই কাটিয়ে দিব...কী বলো?’

‘আচ্ছা বলো তো, সেই লোকটি কি খুব অসহ্য?’

‘কোন লোকটি?’

‘কোন লোকটি আবার, যার ঘর করছো এতদিন!’

‘খুব...অসহ্য ঝগড়াবাজ...মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে...ইচ্ছে করে...’

‘কী ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে?’

‘ইচ্ছে করে... ভালো করে ফোঁড়ন দিয়ে ডাল রান্না করা শিখিয়ে দিই!’

বলেই হা হা করে হেসে উঠলো শান্তা।

পাশে বসা জাভেদের মুখও তখন ঝলমল করছে হাসিতে। হাসতে হাসতেই বললো,

‘ইস! রেসিপিটা কেন যে বেচারাকে এত দেরি করে শেখালে! বেচারা ডাল খেতে কত ভালবাসে!

...রাঁধতে পারতো না বলে পানসে ডাল খেয়েই খুশি থাকতে হয়েছে এতদিন!’

‘বেচারা...’ হাহ হা হা...

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

অক্টোবর ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i