অসমাপ্ত প্রেমের গল্প

প্রেম (ফেব্রুয়ারী ২০১৭)

রায়হান মুশফিক
  • ৪২

প্রথম পর্ব
আকাশে আজ মরা চাঁদ উঠেছে। আকাশে হালকা হালকা মেঘ, স্থির। তাই চাঁদের আলো ভালো ফুটেনি। রাত আটটা সাড়ে আটটা হবে। মাহমুদ ঈসার নামাজ পড়ে বাড়ির যাওয়ার পথে সাকোটার উপর দাঁড়িয়ে গেল। কোথাও একফোটা বাতাস নেই। গাছের পাতাগুলো অনড়। নদীতে জোয়ারের পানির সাথে পূর্ব দিক থেকে হালকা বাতাসের আচ পেল। কি ইচ্ছা হতেই সাকোর পশ্চিম দিকটায় পা ঝুলিয়ে বসে পড়ল। মরা চাঁদ টা ওর বা দিকের আকাশে। আজ সকাল থেকেই মনটা ভালো নেই, সকালে ঘুম থেকে উঠেই বুঝতে পেরেছিল শরীর টা কেমন যেনো ম্যাজমেজে। এই জন্যই সারাদিন কোন কাজে ঠিক মন বসাতে পারেনি।

এখনো মনটা বেশ উদাস।
অনেকক্ষণ ঘাড় উচু করে চাঁদের দিকে তাকিয়ে এলোমেলো অনেক কিছু ভাবতে লাগলো। ভাবনার অনেকাংশ জুড়েই নীলিমা। মেয়েটাকে ও ভীষণ রকম ভালবাসে। ও এখন কেমন আছে? কি করছে? অনেকদিন কথা হয়না। মনটা ভার ভার। মাথা উচু করে থাকতে থাকতে ঘাড় ব্যথা হয়ে গেল মাহমুদের। ঘাড় নামিয়ে পানিতেই চাঁদ দেখতে লাগল। মরা চাঁদ জোয়ারের পানিতে অ্যানিমেশন ছবির মত কাপাকাপা দেখাচ্ছে। বার কয়েক পায়ের নিচে পানিতে থু থু ফেলল। পানির সাথে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে চোখের আড়াল হয়ে গেল।
দুর থেকে একটা মোবাইলের টর্চ এগিয়ে এলো ওর কাছে।
-কে? মাহমুদ কাকা নাকি?
- হুম। মনির?
-হ্যাঁ। একা একা বসে আছেন যে?
- হ্যা রে খুব গরম। এখানে হালকা বাতাস ভালো লাগছে।
- সত্যি খুব গরম। এই নদীর মাঝখানে একটু বাতাস আছে। তা বসে থাকেন আমি একটু বাজারে যাচ্ছি।
-আচ্ছা যা।
আবার মন এলোমেলো হয়ে গেল। নানান কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কোন কথা ই চার পাঁচ সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হচ্ছে না।
একজন লোক পাড়ারই শের আলী আর একটা বাচ্চা ছেলে পার হয়ে গেল। শের আলী মাহমুদের চাচা পরিচয় হয় একটু ভীতু টাইপের। অন্ধকারে মাহমুদ কে ভয়ার্ত চোখে কয়েকবার দেখে চলে গেল।
এক সময় ভাবল দুদিক থেকে একসাথে দুজন এলেই বাড়ি চলে যাবে। যদিও বসতে ভাল লাগছিল।
বছর দুয়েক আগেও এই সাকোতে বসে অনেক গল্প করেছিল একদিন নীলিমার সাথে। সেদিন ছিল চাঁদ ভরা জোছনা। ওরা ভার্সিটিতে একই সাথে পড়ে।
ওর সাথে ছিল বন্ধু রুবেল।
নীলিমার সাথে কথা শেষ করে অনেকক্ষণ জোছনা দেখেছিল ওরা।
কিছুক্ষণ পর দুদিক থেকেই আলো দেখতে পায় মাহমুদ। এবার উঠে পড়ে সে। বাড়ি ফেরে।

আমার পারাণ যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পারাণ যাহা চায়......
গানটা গুন গুন করে গায় আর ভেজা চুল আঁচড়ায় নীলিমা। ও কখনোই গান গলা ছেড়ে গাইতে পারে না।
আর মাহমুদ যতবারই এই গুনগুন শোনে ততবারই আবদার করে গানগুলো সুর করে শোনার।
একদিন কথা বলতে বলতে নীলিমা একটা গানের কথা বলেছিল।
-শ্রীকান্ত আচার্যের, 'নীড় ছোট ক্ষতি নেই' গানটা আমাকে ডাউনলোড করে দেবে।
-হঠাৎ এই গান তুমি কোথায় পেলে?
-আমি টিভিতে দেখেছি। আমার খুব ভালো লাগে।
-হুম শ্রীকান্তের গান গুলো অনেক সুন্দর। ডাউনলোড করা লাগবে না আমার কাছেই আছে।
-ও তাই! তাহলে তো খুব ভালো।
-দিতে পারি এক শর্তে, গানটা মুখস্থ করে আমাকে শোনাতে হবে।
-কিন্তু আমি যে পারি না।
-সে আমি জানিনা। তাইলে গানও পাবে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে আগে গানটা দিও তো!
নীলিমা এমন ব্যস্ত থাকে যে কোনদিনই সময় মত গোসল খাওয়া দাওয়া করতে পারে না।
এখনো চুল আঁচড়াতে গিয়ে খাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে বসে আছে।
বিয়ে হয়েছে বছর দেড়েক হলো। ওর বর নাজমুল ইসলাম একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে ঢাকাতেই। নীলিমার ভার্সিটিতে যাওয়ার সুবিধার জন্যই কাছাকাছি একটা ফ্লাট ভাড়া করে থাকে। মাঝে মাঝে দেশের বাড়ি জামালপুরে যায় ওরা, আবার দু একদিন বাদেই চলে আসে। কখনো কখনো নীলিমা একাই চলে যায়। মায়ের কাছে থাকতে খুব ভাল লাগে। বাড়ির বড় মেয়ে কত আদরের ছিল ও। বিয়ের ক'দিন আগেও গালে তুলে ভাত খাইয়েছে নাসিমা বেগম। বড্ড জ্বালাত মাকে খাওয়া নিয়ে। এখন বোঝে মায়ের ভালবাসা। তাই ইচ্ছা হলেই চলে আসে জামালপুর। ছোট বোনটা এবার আলীম পাশ করেছে, ফাজিলে ভর্তি করাতে হবে কাছের কোন মাদ্রাসায়।
বাচ্চাদেরকে ও ভীষণ রকম ভালোবাসে। ওর বাসায় সময় কাটে না বলে বাচ্চাদের সাথে গল্প করে, ওদের পড়ায়। টিউশনির টাকা ও নিজের কাজেই খরচ করে। খুব বেশি দরকার না হলে নাজমুলের কাছে টাকার কথা বলে না। ও ছোট বেলা থেকেই এমন নিজের কষ্ট, দুঃখ কারো কাছে শেয়ার করবেনা।
ঘড়িতে চারটা বেজে গেছে অনেকক্ষণ, ইফতি এসে সালাম দিল, 'আন্টি আসসালামু আলাইকুম'। ওয়ালাইকুম আসসালাম, তোরা পড়তে চলে আসছিস। বসে পড়বে লাগ আমি এসে লিখতে দেব। ভেজা চুল পরিপাটি করে এঘরে চলে আসে। নাহ্, এখন খাবো না। ওদের পড়িয়ে নেই আগে।

২য় পর্ব

'অন্বেসন বানান ভুল' সঠিক বানান হবে অন্বেষণ। অ- দন্ত্য নয়ে ব এ কার- পেটকাটা মর্ধন্য ষ- মর্ধন্য। এবার আর ভুল হবে? মায়াময় চোখ তুলে তাকায় রুবির দিকে।
মেয়েটা ওদের পাশের ফ্লাটেই থাকে। মা বাবা দুজনেই চাকুরী করেন। রুবি তাই প্রায় সবসময়ই নীলিমা আন্টির কাছে থাকে। নীলিমা ও রুবি মেয়েটাকে প্রচন্ড ভালবাসে। ওর একাকিত্বের সময় রুবিসহ উপর নীচের ফ্লাটের কয়েকজন বাচ্চাই ওকো সঙ্গ দেয়।
নীলিমার মনটাও শিশুদের মত, সহজেই মিশে যায় ওদের সাথে।
রুবির খাতা উল্টে দেখতে দেখতেই নীলিমার ফোন কেঁপে উঠল। বেশিরভাগ সময় ও ফোনের রিংটোন দেয় না। ভাইব্রেশন মোড টাই ভাল লাগে।
ফোন তুলে দেখে মাহমুদের কল।
রিসিভ করে কানে আর ঘাড়ে চেপে ধরেই খাতা দেখতে লাগল।

- আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
- কিতা কন?
- কইতাম তো অনেক কিছু চাই,
কিতা করেন?
- আঁর কিতা করুম ফড়াইতেছি।
- ফড়ান!
- হ্যাগোরেই ফড়ান?
- হ! হ!! হ্যারাই তো আঁর ফরান দিল কইলজা!
- ও ও ও তাই তো দেহি।
- হেতেগো ভালাপাই
- ভালাপাই না ভালোবাই
- হো হো হো...
- বাচ্চাগো তো মুইও ভালোবাই!
- ও ও এই কতা?
- হ এই কতা!
- তা আন্নে কুনাই?
- আঁই তো বাজার যাই
- ক্যা?
- কাম কাজ নাই, আড্ডা দিত।
মুই অহন পানির ভিত্রে হাডি।
- আরে বাউরে হানিতে ডুবে গেছে?
- হ, আমরা তো জলাবদ্ধতার মধ্যে পড়ছি।
- ও ও ও
- আঁই খুব ভালা
- আন্নে খুব ভালা কেন?
- আই আড্ডা দিত যাই কিন্তু কোন মাতারিগো না দেহি!
- হো হো হো! আন্নে দেহি কি....!!
আই কি কইতাম কতা খুইজ্জা পাই না।
- অ অ, ভাষা হারাইয়ালচেন?
- হ, খুইজ্জা পাইনা।
- খুজুইন।
- এ পরে কথা বলবানি বুঝেছ! এখন রাখি বাচ্চরা হা করে মুখের দিকে তাকায় আছে।
- আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ।

ওরা মাঝে মাঝেই বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে।
নাটক দেখে দেখে যতটুকু শিখেছে আর কি!

দুজনের পরিচয় ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েই। প্রথম প্রথম মেয়েদের সাথে কথা বলতে কেমন আড়ষ্ঠতা বোধ করত মাহমুদ। আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
একদিন ক্লাসে ঢুকেই চোখ আটকে যায় ওর।
মেয়েটার মাথায় আকাশী রংয়ের স্কার্ফ, শুধু সাদা চোখ দুটো দেখা যায়।
হঠাৎ করেই যেন ভালো লেগে যায় মেয়েটিকে। প্রথম কোন মেয়েকে ভাল লাগা। কোমল হৃদয়ে একটু খানি ভালবাসার অস্তিত্ব অনুভব করা।

নাম, স্টুডেন্ট আইডি ইত্যাদি জেনে নেয় বান্ধবীদের সহায়তায়।
হুমায়রা ইয়াসমিন নীলিমা। আহ কী সুন্দর নাম নীলিমা! না জানি সুন্দর ও নামের চেয়েও।
সংকল্প করে বন্ধুত্ব করবে মেয়েটার সাথে।
মাঝে মাঝে একটু একটু কথা বলা, ক্লাস সিডিউল জানিয়ে দেয়া, লেকচার শিট জোগাড় করে দেওয়া ইত্যাদি করতে করতে বন্ধুত্ব হয়ে যায় দুজনের।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম ।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

১২ ডিসেম্বর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪