ইহা একটি সাইন্স ফিকশন

বাবা (জুন ২০১২)

আহমাদ মুকুল
  • ৩৯
  • ১৪
-খাম্বারে খাম্বা তুই কেন লাম্বা’’ সমস্বরে চেঁচায় একদল আন্ডাবাচ্চা।

রাইগা মাইগা তেলেবেগুনে দশা খাম্বা মিয়ার। খিস্তি করে….“তারে তারে বাতাসের বাড়ির সূরে ঘুম ঘুম আইসা গেছিল। উঠাইয়া দিল পাঁজির পাঝাড়া পোলাপাইন।”

আজকাল কাম কাইজ মোটেও নাই। মাঝে মাঝে একটু আধটু চালান আসে। ঠিক ঠাক পার কইরা দিয়া নাক ডাইকা ঘুম।

উপর’থন বাপজান খ্যাক খ্যাক কইরা ঠেস দেয়-
-কিরে পবিস, শুইয়া বইসা খাম্বা শরীর ফুলাইয়া ঢোল বানাবি নাকি?

-শুইতে বসতে পারলাম কই? খাড়াইয়া থাকার ডিউটি। তুমিও যে কোন ঘোড়ার আণ্ডা কাম করো আমি জানি না বুঝি!’’ ছোট খাম্বা মিয়ার পাল্টা গজাল।

একবিংশ শতাব্দীর মাইঝ বরাবর সময়ের বাপ-ছেলের নিয়মিত রঙ্গ তামাশা, কৃত্রিম ঠেসাঠেসি।

বাপ ছেলেরে বুঝায়, “দেখ খাম্বা, আমি হইলাম গিয়া টাওয়ার, জাতীয় ব্যাপার স্যাপার। তুই পল্লীর দায়িত্বে থাইক্যা বড় কামের মাজেজা কী বুজবি?’’

ক্রিং ক্রিং ক্রিং……ঘন্টা বাইজা উঠে।..……আসতাছে…….. চিল্লাপাল্লা শুরু হয়। দৌড়াদৌড়ি কইরা তার থেইকা হুগাইতে দেওয়া কাপড়, পাট বিচালি নামাইতে ব্যস্ত হয় মানুষ। দুই মিনিটে সব খালি। সবুজ পতাকা উড়াইয়া ক্লিয়ারেন্স দেয়, কাজে ব্যস্ত হইয়া পড়ে ছোট মিয়া। ফাঁকে বাপরে খোচায়-

-বা’জান ঘুমাও নিহি?

-হ তরে কইছে? তর আগেই আমার চালান আহে, জানস না? আমার তে’ই তো তুই পাছ, দিন দিন খবিস হইতাছস পবিস!’’ ব্যস্ত বাবা দাঁত খিচায়।

দেশ জুইরা ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার হইতেছে। বালিতে বুইজা যাওয়া নদী, রাস্তাঘাট, রেললাইন ব্যবহারের আওতায় আসতেছে। অবুঝ কেউ কেউ এইগুলানরে অবৈধ দখল বইলা চালাইতে চায়। নাদান পাবলিক! এইদিকে বিরাট একখান ক্ষেত্র ব্যবহারের আওতার বাইরে পইড়া ছিল। ঢ্যাঙ্গা ঢ্যাঙ্গা বিদ্যুতের খাম্বা আর তারগুলা ব্যবহার করা যাইতে পারে বইলা ২০৫০ সালের উর্বর ব্রেইনের বাঙালীরা বুদ্ধি বাইর কইরা ফালাইছে।

প্রতিটা খাম্বায় রেলক্রসিংয়ের মত গেইট বসানো হইছে। সপ্তায় দিনে এক দুইবার বিজলীর চালান আইলে ক্রিং ক্রিং ঘন্টা বাজে। সারা দিন বাকী সময় ব্যবসা বাণিজ্য, সামাজিক কাজকাম চলে ঐসব জায়গায়। পল্লী বিদ্যুতের ছোট খাম্বাগুলির তারে মানুষ কাপড় শুকাইতে দেয়, বর্ষাকালে পাট, ধানের দিনে বিচালি শুকায় আধুনিক কৃষকরা। খাম্বাগুলার মাথায় ‘খাম্বা চা কর্ণার’ ‘নিউ পোল ক্যাফে’ নামে দোকান-আকান বসে। চঙ্গ বাইয়া উঠানামার সুব্যবস্তা আছে। এই আধুনিক চিন্তা-ভাবনার কারণে সরকারও কিছু রাজস্ব পায় এই অলস সেক্টর থেইকা।

জাতীয় গ্রিডের বড় লাইনগুলি আরো উন্নত কামে লাগতাছে। বেশ কয়েকটা এমিউজমেন্ট পার্ক লিজ লইয়া ফালাইছে। উচা তার বাইয়া কেরোসিন ইঞ্জিনের রোলার কোস্টার চলে। কিছু পরিবহন কোম্পানী মাইটা তেলচালিত কেবল কারও চালাইতেছে। পইড়া গিয়া মাঝে মইধ্যে দূর্ঘটনায় মানুষ মরলেও কোন উচ্চবাচ্য হয় না। ব্যাপক মাইনষের মইদ্দে দুই একজন মরলে কী আসে যায়। তয় বিদ্যুতের চালানে ধাক্কা খাইয়া একটা মরনেরও রেকর্ড নাই। এই দোষ কেউ দিতে পারবো না। কারন জাতীয় গ্রীডে চালান আহনের দুই/চাইর দিন আগেই খবর হইয়া যায়।

ব্যবসা-বানিজ্যওলারা সামাজিক দায়িত্ব হইতে মোটেও সইরা যায় নাই। মাচাং দেওয়া ‘উচা টাওয়ার রিসোর্ট’ গুলাতে প্রেমকুঞ্জ আছে। আসমানের আগায় বইসা আধুনিক তরুন তরুনীরা টুইট ফুইট করে। আছে ‘বজ্রপাত হইতে বিদ্যুৎ গ্রহণপূর্বক চলমান’ পরিবেশবান্ধব খাম্বা পিসি। কারণ বাঙালী নাকি সৌরশক্তিও চাইছা পুইছা খাইয়া ফালাইছে। টিমটিম্যা সুর্য হইতে যা পাওয়া যায় তা বৈদেশে রফতানি করে। সুতরাং ‘নবায়নযোগ্য শক্তি’ হিসাবে বজ্রপাত নানান সেক্টরে ব্যবহার হইতেছে।

-জানছ্ বাবা, এক সময় এই দ্যাশে নদী দিয়া পানি যাইতো। কল কল করা স্রোতের মইধ্য দিয়া নৌকা জাহাজ চলতো, দ্যাশে জল-বিদ্যুৎ অইতো। এহন তো সব ভেজাল কারেন্ট, এইহানেও বুঝি ফরমালিন ভাইটামিন মিশায়, গা বাইয়া গেলে ফোসকা পইড়া যায়….’’ বাবা উদাস হয়।

-নদী কি বাজান?

অশিক্ষিত্ কোথাকার! যা, এনসাইক্লোপিডিয়া খোঁজ গিয়া…!’’ বাবার মেজাজ আবার তিতা হয়।

-থাউকগা বাবা। রাগ হইয়া শইল খারাপ কইরো না, ঠান্ডা হও….দুঃখিত….ছরি…..কাহিনী কও….

বাবা বইলা চলেন…..নদীর পানির লাহান আমার তার বাইয়া সারা দিন কারেন্ট যাইতো! আহা কি যে আনন্দ লাগতো….আমাগো কি মর্যাদা ছিল! মানুষ বিদ্যুতের খাম্বারে ‘….বাহিনী’র চাইয়া বেশী ডরাইতো। জানস, আমাগো গায়ে মানুষের কংকালের ছবি দিয়া টকটইক্যা লাল কালিতে লেখা থাকতো “সাবধান, বিপদজনক’’….হায় রে দিন….সব গেছে গয়া গাছে….!’’

বাবার কথায় আবার বাম হাত ঢুকায় পোলা, বলে- জান বাজান, আইজকাল নাকি কোন এলাকায় বিদ্যুৎ আইলে উৎসব হয়, স্থানীয় পত্রিকায় খবর অয়…..’’

-ধুরর, এই টেরেন্ড তো তিরিশ চল্লিশ বছর আগের থন চইলা আইতাছে। নিয়মই এইডা, সাপে ব্যাঙ ধরলে খবর হয় না, ব্যাঙে সাপ ধরলে খবর হয়…..বাবায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, ‘‘আয় আন্ধার রাইতে তারা দেহি…..।’’ এক সময় যেইসব খাম্বারে গ্রামের ভাষায় ‘তারা খাম্বা’ বলা হইতো তারা আজ আসমানের তারা দেইখ্যা সময় কাটায়।

…টুইট…টুইট…..! ছোট খাম্বা ব্যস্ত হইয়া বাপরে কয়- ‘‘আব্বাজান, একটু পেরাইভেট বাত সাইরা আহি।’’ বাপে সবই বোঝে, পোলায় সেয়ানা হইছে, তার পরান পঙ্খি ডাক দিয়াছে….

-হাই খাম্বি হানি।

-ভেরি ফানি...দামড়া পোলা বাপের কোলে বইসা থাকো, আমার টিরিট কই?

-আমার আন্ধার ঘরের নিভা বাত্তি জানু….নেক্সট ফ্লো’তে ২০০ কেভি’র একটা ‘…উমমম…মা…’ প্যাক পাঠামু, নামাইয়া রাইখো সোনা।

ফিরা আইসা পোলায় বাপরে জিগায়, একটা কথা কওতো বাজান, আমাগো দিন কি ফিরবো?

-জনম হওয়ার পর থেইকা দেইখা আইতাছি এইসব। ব্যাড ইকোনোমিক্স, গ্রহণ-সরবরাহ=তছরূপ। স্বভাব বদলায় নাই। কেমনে হইবো ক’?

ছেলে মুগ্ধ হয়ে বলে, বাজান তুমি কত কিছু জানো!

-কচু জানি, জানি সব আজাইরা চোরাই বুদ্ধি! আমার লাগ উত্তরে পুরাইন্যা যেই টাওয়ার ছিল, ওরে আমরা লেতরা টাওয়ার কইতাম…হ্যায় শুনলাম আজকাইল ভিআইপি মাইক্রোওয়েভ বিজলীর ঠিকাদারি করে….যতই হউক যন্ত্র মন, নষ্ট হইতে কতক্ষণ….এই দ্যাশে সবই সম্ভব! থুইয়া দে এইসব।

আউলা মনে বাপে-পুতে গান ধরে। বিংশ শতাব্দীর উকিল মুন্সির গান, ……শুয়াচান পাখী……আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি…….

-ইনভ্যালিড রিকোয়েস্ট। ইউর নেক্সট ডেলিভারি ডিউ অন……’’ গান গাওয়ার টাইমে বেখেয়ালে মেইন কন্ট্রোলের সাথে কমিউনিকেটিং বাটনে চাপ পইড়া গেছিল।

অটো আনসারের সাথে সাথে যান্ত্রিক গাইল পাড়ে বাঙালী রোবট, ‘‘ইয়ো স্টুপিড খাম্বা’স!’’ ফিসফিসাইয়া কয়- ভাল পার্টি থাকলে আওয়াজ দিস, খাম পাঠাইয়া দিস চামে, দশ/বিশ মেগা আমার ব্যাটারিতে লুকাইয়া রাখছি….’’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মনির মুকুল রম্য রচনা শুধু হাসির খোরাকই জোগায় না, মনকে সতেজ ও চাঙ্গা করে তোলে। আর যদি তার মধ্যে সমাজ সংস্কারের কোনো ডোজ পুশ করা থাকে তাহলে তো সেই লেখাটাকে নরমাল কোনো লেখার কাতারে ফেলা যায় না। অনেক অনেক শ্রদ্ধা এই সুন্দর সৃষ্টির স্রষ্টাকে।
পারভেজ রূপক দারুণ রিচ লেখা আপনার মুকুল ভাই...
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ....................কমা দিয়া (কম?) শ্যাষ করছেন ক্যা? অহন বয়া থাকুম নাকি বাত্তে যামু কয়া ফালান দেহি। চমৎকার লেগেছে, আশাকরি কয়েক দিনের মধ্যে বাকিটুকুও পেয়ে যাচ্ছি। ষুভেচ্ছা রইল।
কথার কি আর শেষ আছে, ভাইজান? কতকিছু বলার আছে!.....আপাতত বাত্তে যান, পয়লা তারিখ আইয়েন, আরো কিছু কমুনে অন্য বিষয় নিয়া।.....অনেক ধন্যবাদ, ওয়াহিদ ভাই।
susmita :)) ইয়ো স্টুপিড খাম্বা’স!লেখাটা অচাম হইচে :P
মুহাম্মাদ আমানুল্লাহ খাম্বার মুখে আগামী দিনের জটিল জীবনের ইতিকথা লেগেছ্।উপস্থাপন আর সঙলাপ নির্মাণ বেশ উপভোগ্য। ধন্যবাদ।
সেলিনা ইসলাম ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত হত 'এম আর আক্তার মুকুল'-এর অনুষ্ঠান চরম পত্র -'কি পোলারে বাঘে খাইল শেষ!আইজ থাইক্যা বঙ্গাল মুল্লুকে মাছুয়া গো রাজত্ব শেষ...ঠাস ঠাস কইরা আওয়াজ হইলো -ডরাইয়েননা ডরাইয়েননা ...বিচ্ছুগো আওয়াজ পাইয়া জেনারেল পিয়াজী সাবে চেয়ারথন পইড়া গেছিল-৮হাজার ৮শো ৮৪ দিন আগে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট তারিখে মুসলমান ,মুসলমান ভাই ভাই কইরা করাচি ,লাহুর পিন্ডির মাছুয়া মহারাজা বংগাল মুল্লুকে যে রাজত্ব কায়েম করছিলো...আইজ তার খতম তারাবী হইয়া গেলো' (সংগৃহিত)- এই অনুষ্ঠান বাংলার মানুষকে কৌতুক রসের পাশাপাশি শক্তি যুগিয়েছিল চরমভাবে । (গল্পটা পড়ে শেয়ার না করে পারলাম না ) আর আজ আরেক মুকুলের (শ্রদ্ধাভরে)এই লেখা পড়ে আঞ্চলিক ভাষার পাশাপাশি রম্যরচনার মাধ্যমে বাস্তবতার জীবন্ত ছবি দেখতে পেলাম । ..শুভকামনা জানাই ...
আপনার প্রতি শ্রদ্ধায় নত হলাম, চরমপত্রের দারুন উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী কথাগুলো এখানে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। কাকতালীয় এক মিল দেখে নিজের নামটির জন্য গর্ব হচ্ছে আজ। অনেক কৃতজ্ঞতা, সেলিনা।
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ মনোযোগ দিয়ে পড়লাম । ভাল লাগা ও ভালবাসা রেখে গেলাম ।
তানি হক খাম্বারে খাম্বা তুই কেন লাম্বা’’........দারুন লাগলো ভাইয়া ...পুরো গল্পটা জুড়েই অন্য রকম একটা জাদু ছিল ..শেষ হবার পরে ..বাবা এবং ছেলের কে আরো একটু সময় পেলামনা কেন , সেই জন্য আফসোস করছি ...আপনাকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ ..
মৃন্ময় মিজান এইটারে রম্য কইলেন ক্যান মুকুল ভাই ? এইটা হইল ব্যঙ্গ পিউর ব্যঙ্গ। এই ব্যঙ্গের কারণে আপনার বাসার বিদ্যুতের খাম্বা থেকে তার কর্তন করা হবে। হাইকোর্টে রুলনিশি জারী করা হবে। আপনারে তিনরাস্তার মাথায় খাম্বা বানাইয়া দাঁড় করাইয়া দেয়া হইবে। আপনারে.....আপনারে.....আরো অনেক কিছু........ইয়ে জেল জরিমানাও হইতে পারে কিন্তু...

১৯ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "নগ্নতা”
কবিতার বিষয় "নগ্নতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ মে,২০২৪