আমার তখন বালক বয়েসি, এই বয়স কত হবে আট কি নয়। শৈশবের দুরন্তপনা বলতে যা বুঝায় তার পুরোটাই পেয়িছি। ঝিল থেকে মাছ ধরা, পেয়ারা চুরি করে খাওয়া, বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলা, ঘাস ফড়িং ধরে তার ডানা বেঁধে রাখা, কাঁঠালের কস ফুলের পাপড়িতে মেখে প্রজাপতি ধরা আর শেষ বসন্তে দখিনা হাওয়ায় ঘুড়ি ওড়ানো। আহা! আমার সেই দুরন্ত শৈশব আজ কোথায়। আমরা ছিলাম দুই ভাই। আমার ছোট ভাইয়ের নাম সুজন। ও ছিল আমার ঘুড়ি ওড়ানোর পার্টনার। ও ঘুড়ি টেনে দূরে নিয়ে যেত তারপর উপরের দিকে ছেড়ে দিত, আর আমি দিতাম নাটাইয়ে ঘেন্না(নাটাইয়ে সূতো ঘোড়ানোকে ঘেন্না বলে)। ঘুড়ি উড়ে যেত অনেক দূরে। যেন সেটি মেঘের ভিতরে ঢুকে যাবে। মূহুর্তেই চারদিক থেকে আরো অনেক ঘুড়ি এসে ভিড় জমাতো। সারা আকাশ নাল-নীল-হলুদ-সবুজ রঙের ঘুড়িতে ভরে উঠতো। কোন কোন ঘুড়ি দেখতে চিলের মতো, কোনটি প্রজাপতির মতো, কোনটি বর্গাকার, আয়তাকার, চোঙার মতো নানা রঙের ঘুড়ি কিলবিল করতো আকাশে আকাশে, মেঘে মেঘে। ঘুড়ি ওড়ানো কেবল ওড়ানো নয়। ঘুড়িতে ঘুড়িতে কাটাকাটিই হচ্ছে আসল ঘুড়ি খেলা। আমারা ঘুড়িকে বলতাম ঘুড্ডি। আমরা পঞ্চাশ পয়সা দিয়ে একটা ঘুড্ডি কিনতাম। নানা রঙের ঘুড্ডি। আমার ছোট ভাই পছন্দ করতো লাল রঙের ঘুড়ি। কখনো ঘুড়ি কেনার পয়সা না থাকলে খাতার পৃষ্ঠা ছিড়ে ঘুড়ি বানাতাম। একবার হলো কি। আমার ছোট ভাইয়ের হোমওয়ার্কের খাতার পৃষ্ঠা ছিড়ে ঘুড়ি বানালাম। ও বিষয়টি টের পায়নি। স্কুলে হোমওয়ার্ক জমা না দিতে পেরে মাষ্টার মশাইয়ের বেত্রাঘাতও সইতে হয়েছিল। সেদিন আমার একটু খারাপ লেগেছিল। আমার ঘুড়িপ্রীতির জন্যই ওকে মার খেতে হলো। যা হোক, যা বলছিলাম ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হতো বিশেষ সূতো, একটু মোটা ধারালো সূতো। সেই সূতোয় দেয়া হতো মাঞ্জা। মাঞ্জা হচ্ছে মিহি কাচের গুড়ো, সাগু কিংবা ভাতের মারের সাথে মিশিয়ে তৈরি করা এক মিশ্রণের নাম। সুজন মুঠোয় করে সেই মাঞ্জার মিশ্রণ রাখতো, আর আমি সেই মিশ্রনের ভিতের সূতোকে ঢুকিয়ে দিয়ে নাটাইয়ে ঘেন্না দিতে দিতে যেতাম। সূতো প্যাঁচানো হতো দুই প্রান্তে দুই বাঁশের কঞ্চিতে। মাঞ্জা সূতোর সাথে ভালোভাবে মিশে গেলে। তা কয়েক ঘন্টা শুকোতে হয়। শুকিয়ে গেলে তা হয়ে যায় ভয়ঙ্কও ধারালো। যে ঘুড়িই আসবে তাকে এক পোঁচেই ক্যাত করে কেটে দিব। আর কেটে যাওয়ার ঘুড়ির পেছন পেছন দৌড়াতে থাকবে দুষ্ট ছেলেদের দল। কেউ দৌড়ায় তার ঘুড্ডিকে উদ্ধার করবার জন্যে। আবার কেউবা দৌড়ায় নতুন একটা ঘুড্ডির মালিক হবার জন্য। যে-ই কেটে যাওয়া ঘুড়ির সূতো ধরতে পারবে সে-ই হবে মালিক। মাঝে মাঝে কেউবা ঈর্ষান্বিত হয়ে অন্যের হাতে সূতো কাটা ঘুড়িকে ছিড়ে ফেলে দেবে ভোঁ দৌড়। মাঝে মাঝে সূতো টানাটানি করে কারোবা হাতো কেটে যায়। আমারইতো একবার নাইলন সূতোর ঘুড়ি ধরতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হেচকা টানে হাতের আঙুল কেটে গিয়েছিল। এ ঘুড়ি ধরার ঘটনা নিয়ে মাঝে মাঝে দু’চার ঘা মারামারিও হয়ে যায়। আমিও কয়েকবার ঘুড়ি ধরাকে কেন্দ্র করে পাশের পাড়ার ছেলেদের সাথে মারামারি করেছি । তোমরা কিন্তু কেউ মারামারি করোনা যেন আবার। অনেক সময় এই কাটা ঘুড়ি গুলো আটকে থাকতো ইলেকট্রিক খামে, কারো আম গাছের মগডালে, কারোবা এন্টেনায়। কখনো দমকা হাওয়া এলে তা ডান্ডি পটাশ হয়ে যেত। ঘুড়ির কাঠি ভেঙে গেলে তাকে বলে ডান্ডি পটাশ। আমরা দু ভাই স্কুলে যাওয়ার সময় কখনোবা সেইসব আটকে থাকা ডান্ডি পটাশ ঘুড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। মনে মনে বলতাম আহা ঘুড়ি! ডান্ডি পটাশ ঘুড়ি কেন আমার কাছে ধরা দিলিনা। এখন হয়তো অনেক বড় হয়েছি। কিন্তু শৈশবের সেই ঘুড়ি ওড়াবার স্মৃতি মনের মধ্যে এক কাঁচা সবুজ মাঠের কথা বারবার মনে করিয়ে দেয়। বড় বড় দালানের আড়ালে আজ আকাশ দেখা যায় না। কোথায় পাবো সেই ঘুড়ি। আহা! আমার দূরন্ত শৈশব আজ কোথায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
শিশু কিশোরদের শৈশবের স্মৃতি আজবীন অমলিন হয়ে থাকে। তাদের আনন্দময় মূহুর্তগুলো ভবিষ্যতের চিন্তার খোরাক জোগায়। শৈশবে ঘুড়ি নিয়ে অনেকের অনেক গল্পকথা ও স্মৃতি রয়েছে। এ গল্পটি সেরকমই একটি স্মৃতিচারণমূলক গল্প।
২৭ নভেম্বর - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।