'আমার নিরবতা; অভিমানে হারিয়ে যাওয়া,
তোমাকে ভালোবাসার;
এই আমার এক নির্বাক প্রকাশ!
এই, তুমি কিন্তু কখনো;
হারানোর বিজ্ঞপ্তি দিওনা।
নিখোঁজ সংবাদে, পোস্টারে পোস্টারে
গোটা শহর, ছেপে দিওনা!'
অন্তি কলেজ থেকে ফিরে বিকেলে বারান্দায় বসে বসে কলেজ ম্যাগাজিনে অর্ণবের লিখা এই কবিতাটি পড়ছে। নবীনবরন অনুষ্ঠানে সিনিয়র অর্ণবের সরব উপস্থিতি, ছুটেচলা, বন্ধুদের মধ্যমনি হয়ে অনুষ্ঠান পরিচালনা করা এই সব কিছু নজর কেড়েছিল অন্তির। অর্ণব ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে আর অন্তি ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট।
অন্তি কলেজ ম্যাগাজিনের বইটা বন্ধ করে রেখে, মোবাইল হাতে নিলো। ফেসবুকে ঢুকে "অর্ণব" নাম দিয়ে সার্চ দিয়ে অর্ণবের ফেসবুক ওয়ালে অর্নবের ছবি এবং পোস্ট গুলো দেখছে। পোস্টের মধ্যে বেশিরভাগই কবিতা আর অর্ণবের প্রিয় খেলোয়াড় বিরাট কোহলি, লিও মেসি এবং সাকিব আল হাসানের ছবি।
রাতের বেলায় ঘুমাতে গিয়ে অন্তি ফেসবুকে ঢুকে দেখতে পেল অর্ণব একটি নতুন কবিতা লিখে পোস্ট করেছে-
"আমার জীবনের সৌন্দর্যের কুসুমি,
পূর্ব জন্মে নারী রূপে ছিলে কি না তুমি?"
অন্তির নিয়মিত অভ্যাস হয়ে গিয়েছে অর্ণবের ফেসবুকের ওয়ালে ঢুকার, মনে মনে অন্তি অর্ণবকে পছন্দও করে; কিন্তু সে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছেনা।
এইভাবে ছয় মাস পার হয়ে গেল। মেধাবী অর্ণব পড়ালেখা নিয়ে তুমুল ব্যস্ত, সামনে তার এইচএসসি পরীক্ষা।
অন্তির এক ফ্রেন্ড থাকে অর্ণবের পাশের বাসায়। সে জানে অন্তির ভালোলাগার কথা। সে অন্তিকে হাফইয়ারলি পরীক্ষার আগে অর্ণবের সাথে কথা বলার চালাকি শিখিয়ে দিচ্ছে:
- শোন অন্তি, তুই অর্ণব ভাইয়ার কাছে গিয়ে বলবি, ভাইয়া আপনার ম্যানেজমেন্ট ফাস্ট পেপারের নোট খাতাটা একটু দিবেন, প্লিজ; পরীক্ষা শেষ হলে দিয়ে দিবো।
- অন্তি বললো, ভয় লাগছে দোস্ত। কিন্তু না যদি, বকা দেয়!
- আরে না না, বকা দিবে কেন! তুই বলতে পারবি, ব্যাপার না। তারপর দেখবি আসতে আসতে তোদের কথা বলা শুরু হবে এবং অত:পর প্রেম। এই বলে অন্তির বান্ধবী শ্রেয়া একটা হাসি দিয়ে বললো, এখনই যা। ভাইয়া লাইব্রেরীতেই আছে।
অন্তি এক ভালোলাগার অসস্থি আর ভয় নিয়ে অর্ণবের সামনে প্রথমবারের মতো কথা বলতে গেল।
- হুঅঅ (কাচুমাচু করে গলা ঝারা দিয়ে), ভাইয়া আমি অন্তি, প্রথমবর্ষে আছি।
- কেমন আছো, অন্তি? হুম আমি তোমাকে দেখেছি আমার বন্ধু তমালের ছোট বোন শ্রেয়ার সাথে, কিন্তু নাম টা জানতাম না তোমার। এখন জানলাম।
- ভালো আছি৷ আপনি কেমন আছেন?
- আমিও ভালো আছি।
- আপনার ম্যানেজমেন্ট ফাস্ট পেপারের নোট খাতাটা দিবেন প্লিজ, হাফ-ইয়ারলি পরীক্ষার পরে দিয়ে দিবো।
- ঠিক আছে। কালকে নিয়ে আসবো।
- থ্যাঙ্কিউ, ভালো থাকবেন ভাইয়া।
আজ রাতে অর্ণবের ফেসবুকে অন্তি ফ্রেন্ডরিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। সাথে সাথে ভয়ে আবার ক্যান্সেলও করে দিয়েছে। তারপর আবার পাঠিয়েছে।
আধাঘণ্টা পর পর অন্তি ফেসবুকে ঢুকে দেখে রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করলো কি না। রাত সাড়ে এগারোটার পর অর্ণব মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে অন্তির রিকোয়েস্ট এসেছে, সে এক্সেপ্ট করলো। তারপর তাদের হাই হ্যালো থেকে শুরু;
প্রতিদিন রাতে কথা হয়, কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা হয়। অন্তি বললো আপনার কবিতা আমার অনেক ভালো লাগে।
- তুমি আমার কবিতা পড়ো!
- জ্বি, সব কবিতাই পড়েছি। এতো সুন্দর কবিতা লিখেন কিভাবে, প্রেম করলে নাকি এমন কবিতা লিখা যায়। আপনার ক্ষেত্রেও কি তাই?
- না না, আমি এখনো কারো প্রেমে পড়তে পারিনি। কিন্তু প্রেম করার পর প্রেমিক টাইপ কবিতা কেমন হয় তা দেখার ইচ্ছা আছে; এই বলে অর্ণব হাসছে।
অপর দিকে অন্তির মনে অসম্ভব প্রফুল্লতা বিরাজ করছে, কারণ সে বুঝতে পেরেছে অর্ণব এখনো সিংগেল।
তাদের চলমান কথা বলা এক সময় প্রেমে পরিণত হলো। বিকেলে রিক্সা করে ঘুরাফেরা, ফুচকা খাওয়া, তুমি মাঝে মাঝে তুই করে বলা, অর্ণবের অন্তির জন্য কাচের চুড়ি - কাঁঠগোলাপ নিয়ে আসা, সুন্দর ছোট্ট চিরকুটে ছোট্ট কবিতা লিখা:
"এই আমি এক;
অন্ধ পাগল প্রেমিক।
পথিক হতে চাই!
তুই কি আমার, পথ হবি?"
তাদের মধ্যে, এ যেন এক ক্লাসিক প্রেম।
এইভাবে এক সময় অর্ণবের এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলো, কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী তেমন ভালো ফলাফল করতে পারেনি। স্যারদের সকলের প্রত্যাশা ছিলো অর্ণব ভালো ফলাফল করবে, এইচএসসি টেস্ট পরীক্ষার আগে পর্যন্ত অর্ণবের রেজাল্ট সবসময়ই ভালো ছিলো।
পরীক্ষা শেষ করে অর্ণব ঢাকায় চলে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য। পাবলিক কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সে চান্স পায়নি। অর্নবের ফ্রেন্ডরা ভালো রেজাল্ট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে৷ পরে সে মন খারাপ নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে (তেজগাঁও কলেজে) ভর্তি হয়েছে।
অন্তি এখন সেকেন্ড ইয়ারে। অন্তির বাবা বিয়ের জন্য অন্তিকে প্রেশার দিচ্ছে। আগামীকাল পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। অন্তি অর্ণবের সাথে বিয়ের এই প্রেশারের কথা সব খুলে বললো। অর্ণব বললো দেখতে আসলেইতো বিয়ে হয়ে যাবে না, তুমি চিন্তা করো না। তারপর তারা পরিকল্পনা করলো পালিয়ে বিয়ে করে ফেলবে নেক্সট ফ্রাইডেতে।
আজকে রাতে অন্তিকে দেখতে আসবে, ছেলে বিদেশে থাকে। অন্তি বিয়েতে রাজি না শুনে অন্তির বাবা রাগারাগি করার পর তার ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেলো। অন্তির বাবা শুয়ে আছে বিছানায়। সবাই কান্নাকাটি করছে। অন্তির মা স্বামীর মাথায় পানি দিচ্ছে, অন্তি তার বাবার পা গরম করার জন্য পায়ের পাতা মালিশ করছে। অস্থির পরিস্থিতি। এই দিকে পাত্রপক্ষ কাছাকাছি চলে এসেছে। অন্তির মা, অন্তির বাবার দোহাই দিয়ে কাদঁতে কাদঁতে অন্তির হাত ধরে বললো, মা তুই বিয়েতে রাজি হয়ে যা; তোর কাছে আর কিচ্ছু চাওয়ার নেই আমাদের। অন্তি মাথা নিচু করে কাঁদছে আর বাবার পা ধরে রাখছে। কিছুক্ষণ পর তার বাবা একটু সুস্থ হলো, পাত্রপক্ষ আসলো।
পাত্রপক্ষের অন্তিকে পছন্দ হওয়াতে ওইদিনই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো।
অর্ণবের বন্ধু তমাল তার ছোট বোন শ্রেয়ার কাছ থেকে বিয়ের খবর শুনে অর্ণবকে ফোন দিয়ে জানালো "দোস্ত, অন্তির নাকি বিয়ে হয়ে গেছে!" ফোনের অপর পাশ থেকে অর্ণবের আর কোন কথা বলার শক্তি ছিলো না। অর্ণব ফোন রেখে দিলো। তমাল হ্যালো! হ্যালো! বলে, আবার কল ব্যাক করলো। ফোনে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। মোবাইল বন্ধ।
"কেঁদে, তোমরা বেদনা মুছো!
আমার মতো কেউ কি আছো?
বেদনাকে পোষো!"
অর্ণব টানা তিন মাস শোকে অনেক ভেংগে পরেছে। স্বাস্থ্যের অনেক নাজুক অবস্থা। কারো সাথে মিশতো না, কথা বলতো একদম কম; প্রয়োজনের থেকেও কম। গ্রামের বাড়িতে সে যেতো না, টিউশনি করে বাবা-মাকে টাকা পাঠাতো।
"হৃদয় ছাড়া, কেউ জানে না;
এই তফাৎ, কার রচনা!
কেউ জানে না।
কেউ জানে না।"
অর্ণব তার অনার্স-মাস্টার্সের মোট ৬ বছর এমন মনোযোগ দিয়ে লেখা পড়া করেছে, ভালো ফলাফলতো করেছেই মাস্টার্সের বছর বিসিএস দিয়ে উত্তীর্ণও হয়েছে।
অর্ণব এখন বিসিএস পুলিশ ক্যাডার- এএসপি হিসেবে অন্তির শ্বশুর বাড়ির এলাকায়। একদিন মাদকাসক্ত এক বন্দি আসামীর খবর নিয়ে থানায় এসেছে অন্তি৷ অত:পর!!!
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
নারী - প্রেম- বিরহ থেকেই জীবনের গতি সঞ্চারিত হয়, তার পরিণতিতে হয় কোন এক বিসিএস পুলিশ ক্যাডার নয়তোবা পরিণত করে কোন এক মাদকাসক্ত।
অর্জন হয়তো হয় কখনো ইতিবাচক অর্জন নয়তো নেতিবাচক অর্জন।
১৬ নভেম্বর - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
১১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪