আমিই বাংলাদেশ...

দেশপ্রেম (ডিসেম্বর ২০১৩)

আরিফ রহমান
  • ৫০
দুই বাংলার বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক কবি "সোলেমান সোলে" কিঞ্চিত চিন্তিত...

আজ সকালে তার কাছে একটা চিঠি এসেছে। চিঠিতে অশ্রাব্য ভাষায় তার সাহিত্যের সমালোচনা করা হয়েছে। এবং তার সর্বশেষ প্রকাশিত কবিতা "স্বর্গের হুরপরী, বাকবাকুম তুরতুরি" থেকে দুটি লাইন তুলে দিয়ে তাকে নাস্তিক কাফের ঘোষণা করা হয়েছে।

তাকে এখনি নিজ দেশ ভারতে গিয়ে দুর্গার ছবি আঁকতেও বলা হয়েছে চিঠিতে।

যদিও সোলেমান সোলে কোনদিন ভারতে যান নি।

তবে এটা তো সবাই জানে নাস্তিক কাফেরদের অভয়ারণ্য তো ভারতই, এই সোলেমান সোলেই দেশের বহু লেখক-লেখিকাদের নাস্তিক বলে ভারতে পাঠিয়েছেন।

হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় একাত্তরের স্মৃতি, আহা... কি জীবনই না ছিল... শালা নাস্তিক বাঙ্গালী বলদের দল; এত যে স্বাধীনতার জন্য লড়লি, আজকে পাকিস্তান একসাথে থাকলে কত সুবিধা হইত ভাবিস কখনো ?? টেরেনে কইরা পাকিস্তানে যাইতি। ১০ টাকায় বিদেশ ভ্রমণ।

আহারে পাকিস্তান... সোলেমান সোলের মনটা কেঁদে উঠল পাকিস্তানের জন্য। আনমনে গেয়ে ওঠেন ...পাক সারজামিন সাদ বাদ...

সোলেমান সোলে কখনই তেমন উঁচু মানের কবি ছিলেন না। তার কবিতা গুলো টেনে টুনে ছড়া বলে চালানো যায়। কবি এখন একটা জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতার উপসম্পাদক।

যদিও তার সাহিত্য পাতায় মউদুদির তাহফিমাত, গোলাম আযমের হাকিকাত আর সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠীর পাহাড়ে চড়ার গল্প ছাড়া কিছুই থাকে না। এই মানবাধিকার ট্রাইব্যুনাল তার সুখের জীবনে এক অভিশাপ। সব সাহিত্যিকরা কারাগারে, এখন লেখা কই পাওয়া যায় ? যাই হোক পুরনো বইপত্র দিয়ে কোনমতে কাজ চালাচ্ছেন সোলেমান সোলে। তার মাঝে এই যন্ত্রণা...।

সোলেমান তার মুঠোফোন থেকে তার পত্রিকা "দৈনিক কাঠ কয়লার সম্পাদক" 'মোল্লা মোজাফফর আলী'কে ফোন করলেন। বারবার রিং হয় কেউ ধরে না । সোলেমান সোলে একটু বিচলিত হলেন, বেরিয়ে পড়লেন অফিসের উদ্দেশ্যে। তার শিশু সুলভ ছড়া কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কথা না।

সত্যি বলতে সোলেমান সোলে একটু ভয় পাচ্ছেন। এর আগে যতবার এই দেশে কারো নামে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের গুজব রটেছে। তাদের কেউই দেশে নেই,

আর যারা দেশে আছেন তারা কেউ বেঁচে নেই...

কি যন্ত্রণা !!! পরশু রাতে জামাতের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা মউদুদির তারজুমানুল কুরান পড়ছিলেন সোলে

…. অমুসলিমদের সন্তানেরা জান্নাতে যাবে এবং সেখানে তারা জান্নাতবাসীদের দাসে রুপান্তরিত হবে (পৃঃ ১৩৪)।
অমুসলিমদের যেসব কন্যা অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদেরকে জান্নাতে হুর বানানো হবে ( জুন ১৪, ১৯৬৯)। মওদুদি মনে করেন, এই বিশাল বক্ষা হুররা জান্নাতের পুরুষদের সাথে জান্নাতি প্রাসাদের অন্দরমহলে সময় কাটাবেন। আর ছোট ছোট “হুরি মেয়েরা” সারা জীবন ছোট থাকবে এবং প্রাসাদের বাইরে অবস্থান করবে।
যখন তারা বিকালে ঘুরে বেড়াবে, তখন জান্নাতের পুরুষরা তাদের সাথে সঙ্গম করবে। আহা! “কাফের” শিশুদের জন্য দুঃখ হয়…….

এসব পড়েই "স্বর্গের হুরপরী, বাকবাকুম তুরতুরি" কবিতাটা জন্ম দিয়ে দিলেন সোলেমান সোলে।

-------------------------------------------------------------------------------------------

পরদিন দেশের সবকয়টা দৈনিক পত্রিকায় সোলেমান সোলের কাণ্ড বড় অক্ষরে ছাপা হল। দৈনিক কাঠ কয়লার সার্কুলেশন বন্ধ করার জন্য

মাদ্রাসার ছাত্ররা উঠে পড়ে লাগলো। পত্রিকা অফিসে আগুন দেয়া হল। মসজিদে মসজিদে বিক্ষোভের ডাক... বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন কোর্টে মামলা করে দিলো। বড় বড় নেতারা সভা সমাবেশ করে, এক দড়িতে সোলেমান সোলে এবং মোল্লা মোজাফফর আলীর ফাঁসি দাবী করলো।

বিভিন্ন মসজিদের খতিবরা এই বিচার না হলে সারা দেশে আন্দোলনের ডাক দিলেন, এবং সরকার পতনের হুমকি দিলেন।

সরকার ঐ দিনই প্রেস নোটে তড়িঘড়ি করে "দৈনিক কাঠ কয়লা"র সার্কুলেশন বন্ধ করে দিলো। বিকালের দিকে এক প্লাটুন পুলিশ এসে সোলেমান সোলে কে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। তার বাসার বাইরে মানুষ জন তাকে কিছুক্ষণ জুতা পেটা করলো, স্থানীয় শিবির নেতা নিজ হাতে জুতার মালা পরিয়ে দিলো।

সোলেমান সোলে খুবই অবাক হলেন। এই দৃশ্যটাই এর আগেও তিনি কোথাও দেখেছেন...

দ্রুত বিচার আইনে সোলেমান সোলের মামলার দুই মাসেই বিচার হয়ে গেল। তথ্য অধিকার আইনে তার সাজা হল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সোলেমান সোলে খুশীই হলেন। আদালত থেকে বের হলেন "ভি" চিহ্ন দেখিয়ে।

খুব ভালো করেই জানেন ছাড়া পেলে বাঁচার আশা নাই, পাবলিক নিজ উদ্যগে ছাল চামড়া তুলে নেবে; কবর পর্যন্ত দিতে দেবে না।

"কাঠ কয়লা" ৬০ বছর পুরনো পত্রিকা।
৭১'এ পাকিস্তানের দালালি করে বহু সুনাম কামিয়েছিলো। সোলেমান সোলে নিজে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলো
দুই মাস, তবে বেকুব বিধায় বেশী ডিন টেকে নাই। মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছরেও কেউ এই পত্রিকার টিকি পর্যন্ত ছুতে পারে নাই

আর আজ এই হাস্যকর কবিতা তার এই অবস্থা করলো...

-------------------------------------------------------------------------------------------

আপনাদের সবাইকে একটা গোপন কথা বলে দেই... সোলেমান সোলে কে হুমকি ধামকি দিয়ে চিঠিটা আমিই লিখেছিলাম। আর ঐ চিঠির কয়েকটা কপি দেশের সবগুলো সংবাদপত্র আর বড় বড় ধর্মভিত্তিক দল গুলোর কাছে পাঠাই আমিই।

ধর্মের করাতে ধার অনেক, তবে একটা কথা আছে না করাত আসতে কাটে যাইতেও কাটে ......

ধর্মের করাতে আজও অনেক ধার,
শুধু ধরতে জানতে হয়...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুন ম. আজিজ গুরুগম্ভীর সুর গল্পের পরতে...বেশ ....মওদূদীর এই ফতোয়াগুলো জানা ছিল নাঠিক...জানলাম। ধন্যবাদ।
এফ, আই , জুয়েল # অসাধারন একটি লেখা । লেখার থীম---এর প্রকাশভঙ্গি , গতিময়তা---সবকিছুই গভীর ভাবনার উদ্রেককারী । ধন্যবাদ ।।
আরাফাত ইসলাম ভালো তো অবশ্যই লিখেছেন ! তবে একে গল্প না বলে রূপক গল্প বললেই মনে হয় ভালো মানায় !! আর একটা কথা নতুন হিসেবে বলি, কেবল নিজের লেখায় সীমাবদ্ধ না থেকে আরো দশজনের লিখা পড়–ন এবং আপনার অভিব্যক্তি শেয়ার করুন । বুঝলেন না ? ধ্যাত ! সবকথা কি আর খুলে বলা যায় !!!

০৮ নভেম্বর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪