বঙ্গমাতার ভালোবাসায়

আমি (নভেম্বর ২০১৩)

অতনু সাগর
  • ২১
বলতে পারো, আজ আকাশ কেন এত নীল ?
মনে পরে কি তোমার, এমন নীলাকাশের নিচে দুহাত মেলে দিয়ে চিল হয়ে উড়ে যেতে ইচ্ছে করত তোমার l মাঝ আকাশে নিঃসঙ্গ কোনো চিল মাঝে মাঝে ডেকে উঠত কোনো সঙ্গীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবার আশায় l তুমি উড়ে গিয়ে তাকে সঙ্গ দিতে চাইতে l পাশে থেকে আমি জড়িয়ে ধরতাম তোমায় l ভয় হত, সত্যি যদি পাখি হয়ে উড়ে যাও ! তুমি আমার দিকে চেয়ে হাসতে l অভয়ের হাসি l নিশ্চয়তার হাসি l আমার মনটা ভরে যেত l নিশ্চিত হতাম, তুমি যেমন আছ, তেমনি থাকবে আমার মনের রানী হয়ে l সারাজীবন, সারাটিক্ষণ l
আকাশের নিল রং তোমার কথা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে l রোজকার মত আজও আকাশে চিল উড়ে বেড়াচ্ছে l কিন্তু একটা নয়, দুটো l তাহলে অন্যটা কে? অন্য কোনো চিল ? নাকি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে ওই পাখিটিকে সঙ্গ দিতে ?
আমি যে একা হয়ে গেলাম l আমার যে ক্ষমতা নেই উড়ে যাবার l না হলে কি এখানে থাকতাম? আমিও যেতাম তোমার কাছে l তুমি যে আমার l তোমাকে আমার পাশে রাখতে আমি যে প্রুতিশ্রুতিবদ্ধ l পাচশত এক টাকায় পাওয়া সে পবিত্র প্রুতিশ্রুতি l
আমার প্রুতিশ্রুতি আমি রাখতে পারিনি l তোমাকে ধরে রাখতে পারিনি l আর একবার কি সুযোগ পাব? সুযোগ দিবে কি একবার?
তুমি কি ভুলে গেছ সেদিনের কথা ? যেদিন টুকটুকে বউ সেজে আমার উঠোনে পা রেখেছিলে? আমার পায়ে সালাম করে ধীরে ধীরে বলেছিলে, "আমি নতুন, অনেক কিছুই বুঝবনা l আমার কাজে কর্মে কোনো ভুল হলে আমাকে শিখিয়ে দেবেন l আমি শিখে নিব l আজ হতে আপনার মা-বাবাকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব আমার l আর আমাকে দেখার দায়িত্ব আপনার l"
তোমার ঐটুকু কথাতেই আমার বুকের মাঝে বিশাল এক জায়গা তৈরী হয়ে গিয়েছিল তোমার জন্য l
তুমি জানতে, বাবা-মা ছাড়া আমার দুনিয়াতে আর কেও নেই l পরিবারের একমাত্র সন্তান হবার কারণে সকল দায়-দায়িত্বও আমার উপর l তুমি এসে আমার দায়িত্বের এক বিরাট অংশ নিজের কাধে নিয়ে নিয়েছিলে l
তোমার কি মনে পরে সেই কথা, আমার বাবা একবার আটার রুটি খেতে চেয়েছিল l ঘরে কোনো আটা ছিলনা l আমি বলেছিলাম ভোরবেলা দোকান থেকে কিনে আনব l কিন্তু রাতের বেলা সবাই ঘুমিয়ে পড়লে তুমি একা একা সারারাতে গম পিষে আটা বানিয়ে তা দিয়ে রুটি তৈরী করে সকালবেলা বাবার সামনে ধরেছিলে l সেদিন বুঝেছিলাম,আমার পরিবারকে তুমি কত ভালবাস l
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বলে পারিবারিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলনা l প্রতিবেশীরা ছোট চোখে দেখত আমাদের l একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলে তুমি l পুরো পরিবারকে আগলে রেখেছিলে পরম আদরে, ভালবাসায়, মমতায় l
এর মাঝে একদিন এলো সেই ভয়ংকর রাত l পাকিস্তানি ঘৃণ্য পশুদের ঘৃন্যতায় ছেয়ে গেল সারা দেশ l জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে, এবং মেজর জিয়ার বেতার বার্তায় সারা দেশ যেন জেগে উঠলো l বারবার ভেসে আসছিল সে বার্তা l স্বাধীনতা যুদ্ধের বার্তা l তুমি দুহাতে আমাকে আকড়ে ধরেছিলে আর চুপচাপ শুনছিলে সে ডাক l তোমার চোখের তারাগুলো চঞ্চল হয়ে উঠছিল ক্রমশ l
খুব মনে পড়ে , একসময় আমার হাত ছেড়ে দিয়ে দীপ্ত কন্ঠে বলেছিলে, "এ দেশ আপনার মায়ের মতন l সমাজের মানুষ আপনাকে নিচু চোখে দেখলেও এ দেশের মাটি আপনাকে ত্যাগ করেনি কখনো l এ মা-মাটি আমার থেকেও অনেক বড় আপনার কাছে l আপনাকে এ মাটি রক্ষা করতেই হবে l"
সেই যে সেদিন তোমার কপালে ছোট্ট চুমু দিয়ে বের হয়ে গেলাম l তুমি বলেছিলে আমার মা-বাবাকে তুমি দেখে রাখবে l আর অপেক্ষায় থাকবে আমার ফিরে আসার l তখন আমাকে বরণ করার ডালা থাকবে তোমার হাতে l আমার শক্তি তো ছিল সেটাই l
টানা আট-ন' মাস সারা দেশে ছুটে বেরিয়েছি l কতশত পশুদের মেরেছি, মনের ঝাল মিটিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই l অবশেষে আসে সে কাঙ্খিত বিজয় l কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের প্রতিক্ষার অবসান ঘটে l
কত আশা বুকে নিয়ে ফিরে আসি বাড়িতে, যেখান থেকে তুমি আমায় বিদায় জানিয়েছিলে l সেবার বিদায় দিয়েছিলে, আজ তুমি আমায় গ্রহণ করবে l
আমি এলাম-ও l কিন্তু তোমায় পেলামনা l মা-বাবা সবাই আছে, শুধু তুমি নেই l পরে জানলাম, পাকিস্তানি কুত্তারা এসেছিল এখানে তোমাকে পেয়ে লালসা মেটাতে l কিন্তু তুমি তাদের সে সুযোগ দাওনি, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলে l আচ্ছা, আমার কথা কি মনে ছিল তোমার?
যে মা-কে রক্ষা করাতে আমায় তুমি পাঠিয়েছিলে, সেই মায়ের কোলে আমাকে একা রেখেই বিদায় নিলে l
জানো বউ, আজ তাদের-ই বিচার হচ্ছে, যারা সেদিন পাকিস্তানি কুকুরদের ডেকে এনেছিল তোমাকে তাদের লালসার বস্তু বানাতে l সারাদেশে যারা ধর্মের আবরণে অধর্মের লীলাখেলা চালিয়েছিল l আজ তাদের উপযুক্ত বিচার শুরু হয়েছে l আমার মায়ের প্রেমিক সন্তানেরা তাদের কিছুতেই ছাড়বেনা l তাদের ইটা বুঝিয়ে দিবে যে, ধর্ম মানুষকে নিজে বাচতে এবং অপরকে বাঁচাতে শেখায় l অপরকে মেরে নিজে ধর্মের লেবাস পরানো শেখায়না l
আজ তাইতো আমার এ বঙ্গমাতা তার অপরূপ সাজে প্রকৃতিকে সাজাচ্ছে l জাতি আজ কলঙ্কমুক্ত হতে যাচ্ছে এই আশায় l আমিও সেই প্রতিক্ষায় প্রহর গুনছি l
এই স্বাধীন দেশের মুক্ত স্বাধীন ক্ষনে, আমার প্রিয় বঙ্গ সন্তানদের কাছে তোমাকে তুলে ধরলাম l তারা কখনো ভুলবেনা তোমাকে, তোমার আমার মা এই প্রিয় বাংলাদেশকে l

উত্সর্গ: স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ হারানো সকল শহীদ আত্মাদের l
(একজন মুক্তিযোদ্ধার একান্ত ভালবাসার অনুভুতি অবলম্বনে)
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি দেশকে নিয়ে খুব আবেগময় দরদী লেখা .......... ভাল লেগেছে........অনেক ধন্যবাদ আপনাকে...........অতনু আপনাকে অন্যদের লেখা গুলোও তো পড়তে হবে তাইনা?..............দেখবেন পাঠক সংখ্যা বারবে.....................
দীপঙ্কর বেরা বেশ , অন্য রকম , ভাল লাগল ।
মিলন বনিক যে মা-কে রক্ষা করাতে আমায় তুমি পাঠিয়েছিলে, সেই মায়ের কোলে আমাকে একা রেখেই বিদায় নিলে ল মন ছুয়ে গেল...
এফ, আই , জুয়েল # ভিন্ন ধারার একটি অন্যরকম গল্প ।
ঐশিকা বসু খুব ভাল লেখার হাত আপনার।
আরাফাত ইসলাম পড়ে মনে হচ্ছে কোন প্রতিষ্ঠিত লেখকের হাতের ছোঁয়া !
তানভীর চৌধুরী স্বদেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ।

২৭ অক্টোবর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী