আমার পৃথিবী নাকি আমাদের, ভাবনা আমার নাকি আমাদের। ভাবনার গভীরে মিশে যাওয়ার এ এক অন্যরকম অনুভূতি, যা আমি দেখি, নাকি আমায় দেখায়, শুধুই আমায়? না, এ কোনও নাটক কিংবা সিনেমার ঘটনা নয়। অতীত ইতিহাস নাকি ইতিহাসের সান্নিধ্য যে যাই বলেন না কেন আমি কিন্তু লেখক নই কিংবা এর দাবিদার ও নই। শুধুমাত্র সেই ছোট্ট আমি থেকে শুরু করে এখন অবধি “আমার আমি”।
পৃথিবী নাকি এগিয়ে চলছে, তার সাথে আমাদের বাংলাদেশ। প্রতিযোগিতা নামক পৃথিবীতে এসে সেই ছোট শিশুটি কি বুঝতে পারে পৃথিবীর বুকে আলো জালাতে পারবে, নাকি আলো-আঁধারির মাঝেই লুকোচুরি খেলবে! সমাজ তথা সংস্কৃতি এগিয়ে চলছে, এনালগ থেকে ডিজিটালে ধাবিত আমি, আমরা, আমাদের বাংলাদেশ। সব কিছুর ভালো মন্দ থাকবে, আছে, ছিল, চলছে...চলবেই। অনেক বছর আগে (৮-১০) আমাদের সমাজের মানুষগুলি, তাদের চারিপাশের অবস্থানগুলি ছিলও অনেকটাই সামাজিক, সমাজের কাছে ছিলও চাওয়া পাওয়া। ছোটবেলা থেকেই চাহিদা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিলও সুন্দর, যা বর্তমানের মতো নয়। অর্থের দিক থেকে হয়তো তারা ধনী ছিলেন না, কিন্তু কিছু করার ছিলও অদম্য ইচ্ছা (ভালো কিছু)। ভাবনা তাদের বিবেক কে করা নাড়ত, এটা কি ঠিক হবে, করবো? আজকের আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি যা আমাকে ভাবায়, ভাবনা আমায় ছারে না। সমাজের মানুষগুলি অতিশয় বেস্ত, কর্মচঞ্চল মনে সময় কোথায় অন্য মানুষগুলির দিকে তাকানোর? যে যার চাহিদায় মত্ত। সেই কবে থেকেই চলা শুরু হয়েছে, যার শেষ কোথায় আমি জানি না, হয়তো তারাই ভালো বলতে পারবেন। চলার পথে তারা কখনও ভাবে না কোথায় তাদের চাহিদার সমাপ্তি অথবা প্রাপ্তির মূল্যায়ন। সমাজের অপসংস্কৃতি, তথা অপ-ব্যবহার বেড়েই চলছে। আজ এমন একটা পরিস্থিতির ছোঁয়া আমাদের নিতে হচ্ছে যেখানে নিজ বাড়িতেই আমরা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছি না। এ কেমন সমাজের চাহিদা যা আমাদেরকে ক্রমশ ঠেলে দিচ্ছে আপন থেকে দূরে? মাঝে মাঝে ভাবি, আমাদের বিবেক কোথায়? নাকি বিবেকও চাহিদার ঘোরে ঘুরতে ঘুরতে সেই কবে আপন হারা হয়ে গেছে আমরা নিজেরাই জানি না। কিছুটা প্রতিচ্ছবি নাকি ইতিহাসের সাক্ষি আমি জানি না, বাস্তবতা...??? হয়তঃ
আগের দিনের মানুষগুলি সমাজের মানুষের কাছে ছিল অনেকটাই দায়বদ্ধ। সকলেই সকলের খোঁজ খবর রাখতো, কিংবা এটাকে তারা দায়িত্ব মনে করতো। সকলের সুখ, দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতো, খোলা মনে ভাব বিনিময় যা মনের ভেতরের আমিত্বকে উপরিভাগে সকলের সম্মুখে তুলে আনত, আপন মনের মাধুরিতে সাজাত আপন ভুবন যেথায় ঠাই ছিল আমাদের তথা সমাজের, এক অর্থে সবার।
এখন আমাদের সমাজের মানুষগুলি সমাজ কি তা নিয়ে ভেবে দেখার সময় কোথায়? নিজে বেচে থাকাই বুঝি সমাজের নতুন সংজ্ঞা! একটি সিনেমার কথা মনে হয়ে গেলো, মৌমাছিরা পরাগায়নের মাধ্যমে... মধু আহরণ করে, এক সময় মৌমাছিরা চিন্তা করে, আমরা কষ্ট করে মধু তৈরি করি আর সেই মধু মানুষ নিয়ে নিবে এটা হতে পারে না। এরপর তারা আদালতে সমর্পণ হলে রায় পেয়ে যায় এবং পৃথিবী থেকে সকল মধু নিয়ে নিতে থাকে, এক সময় এমন পরিস্থিতি হয় মধু রাখার মতো কোনও জায়গা খুজে পায় না। ইতিমধ্যে মৌমাছিদের আর কোনও কাজ নেই, শুধু শুয়ে বসে থাকে, সকলেই এত অলস হয়ে পরে যে নড়াচড়া করতেই কষ্ট হয়। এদিকে পরাগায়ন না ঘটার দরুন পৃথিবীর অধিকাংশ এলাকা বৃক্ষ শুন্য হয়ে পরে। ঐদিকে মৌমাছিরা মারা যেতে থাকে, পৃথিবী হতে থাকে বসবাসের অযোগ্য। সবশেষে মৌমাছিরা সিদ্ধান্ত নেয় তারা আগের মতোই চলবে, তা না হলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, যাই হোক সিনেমার ঘটনাটা অনেক সংক্ষেপ করে বললাম, আসলে সিনেমাটা যা শিক্ষা দেয় তা হচ্ছে, শুধুমাত্র নিজের জন্নে বেচে থাকা নয়, বেচে থাকো সবাই কে নিয়ে, এটা শুধুই আমার অভিমত, বাকিটা আপনাদের কাছেই রেখে গেলাম।
দিন দিন কেমন জানি আমারাও আমাদেরকে এমনভাবে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করে ফেলছি যেখানে শুধু নিজেদের মজুদ ঘর তৈরি করার প্রয়াশ, সেই সিনেমার মতোই...
সবাই সুখে থাকতে চাই, কিন্তু নিজ জগতের মাঝে, সম্পদের পাহাড় গড়তে চাই, জানি না এর ব্যাবহার আদৌ করতে পারবো কিনা, দরকার ছিলও কি? যেথায় ঠাই মেলে না সমাজের কিংবা অবহেলিত মানুষদের সংস্পর্শ, সেথায় আমার বিবেক কি বলে? যুব সমাজ চাকুরি নামক সোনার হরিনের পেছনে ছুটতে ছুটতে প্রায়ই দুর্নীতির জালে আবদ্ধ হচ্ছে।
একদিন টাঙ্গাইলের এক কম্পিউটার এর দোকানে গিয়ে শুনি, এক ভদ্রলোক কম্পিউটার কিনতে আসছে, তিনি বিগত কয়েক মাস যাবত আসতেছেন, এক মাসে মাদারবোর্ড, অন্য মাসে অন্যান্য যন্ত্রাংশ, বাকি ছিলও আগামী মাসের জন্নে হার্ড ডিস্ক, তবেই তার কম্পিউটার পূর্ণতা পাবে। কিন্তু আমরা বলেছিলাম এত আগের যন্ত্রাংশ আর নতুন কিছুটার সংমিশ্রণে প্রবলেম হবে না? দোকানদার বলছিলও হতে পারে, আমি হাসি, আমার হাসি তাদের জন্নে যারা সমাজটাকে নিয়ে গেছে বিবেকহীন অন্ধকারের গহীনে। যাই হোক, সেদিন ভদ্রলোকটির কম্পিউটার ঠিক ই পূর্ণতা পায়, তার সততার পুরস্কার সরুপ। কিন্তু, তিনি যখন হার্ড ডিস্কটা উপহার হিসেবে পায় সেদিন তার দুচোখ বেয়ে বৃষ্টি পড়ছিল, যে বৃষ্টির দাম আমরা দিতে পারি না, কখনও পারবো কি? এখন আসি লোকটার চাকরির বিবরণীতে, যতদূর মনে পরে তিনি খাদ্য অফিসার নাকি সহকারি খাদ্য অফিসার ছিলেন। যে পোস্টে চাকুরির জন্নে এত্ত তদবির আর ও কতো কিছু। ভাবনা আমায় ভাবায়, যে পোস্টের চাকুরি করে শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে ভালোভাবে থাকা যায় না, তার জন্নে এত্ত তদবির, আর...???
ভাবনাগুলি শুধুই ভাবায়, সততার মূল্য কি তবে “কান্না”? এরকম উদাহরন অনেক বলা যায়। কি লাভ এই শিক্ষার, যে শিক্ষা আমাদেরকে, বিবেককে জাগ্রত করতে পারে না, নাকি আমাদের বিবেকও আজ কোনও এক বইয়ের পাতায় কিংবা ফ্রেমে আবদ্ধ?
আমাদের শিক্ষা বেবস্থায় প্রাইমারি থেকেই গঠন করা উচিত নৈতিকতা বিষয়, যা শিশুসুলভ মনে সুন্দর অনুভূতির খোঁড়াক জোগাবে। প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু সেখানে থাকবে সুন্দর পরিবেশ, সুস্থ চিন্তাধারা, সুন্দর এক আগামির স্বপ্ন নিয়ে রেখে যাবো আগামি প্রজন্ম। আমি দেখেছি, প্রায় সকল মানুষের ভেতর নিজস্ব একটা আমি থাকে যাকে আমি “আমার আমি” শিরোনাম কিংবা নামকরন করেছি। সেই আমিটাকে জাগিয়ে তুলতে পারলেই আমি অন্তত নিশ্চিত, পৃথিবী ফিরে পাবে আপন রঙ, বিকশিত হবে চারিদিক, স্বপ্ন দেখাবে আপন মনে, বেচে থাকবে বাংলাদেশ তথা সুন্দর এই পৃথিবী।
আমরা কি পারি না! “আমার আমি” কে জাগিয়ে তুলতে? তবুও আশা রাখি, বিবেক (আমার আমি) জাগ্রত হবেই, সুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠবে আগামি প্রজন্ম, সুচিত হবে নতুন অধ্যায়, গঠিত হবে সোনার বাংলা। পৃথিবীর ভেতর ছোট্ট বাংলাদেশ আলোক শিখা জ্বালিয়ে আলোকিত করবে স্বদেশ তথা সমগ্র পৃথিবীকে, ঘোষিত হবে সোনার বাংলাদেশ সূচিত হবে সুন্দর পৃথিবী, ফিরে পাবো সত্যিকারের “আমার আমি”।