ছোটবেলা থেকেই বড়দের কথা হজম করার একটা বদ অভ্যেস আমার ছিল। সন্ধ্যার পর মা আর পাড়ার চাচীরা যখন বেলকনিতে বসে আড্ডা দিত, আমি তখন তাদেরই কারো কোলে বসে কথাগেলা র কাজে মগ্ন থাকতাম। সংসারের নানা কূট-কৌশল আর পরিবার পরিকল্পনার নানা বিষয়েই তারা বেশি গল্প করতো। বিশেষ করে সেফ পিরিয়ড আর আনসেফ পিরিয়ড নিয়ে যে কত বাকবিদন্তাই না তাদের মধ্যে হতো! প্রায়ই দেখতাম আমার দিকে তাকিয়ে এক চাচী অন্য আর এক চাচীকে বলছেন এটাতো ভাবীর আনপ্লানড কিমবা মা নিজেই হয়তো হেসে আমার পেটে নাক ঘসে বলেছেন এটা আমার একটা এ্যক্সিডেন্ট। আমিও ভাবতাম আমি হচ্ছি এ্যক্সিডেন্ট, সমস্যা বাধত যখন কেউ আমাকে নাম জিজ্ঞেস করতো আমি কনফিউজড থাকতাম যে কি উত্তর দেব ? আনপ্লানড, এ্যকসিডেন্ট নাকি পরাগ! যাই হোক প্রসঙ্গে আসি। আমার আবার একটা বড় সমস্যা আছে একটা কথা বলতে গেলে তার ইতিবৃত্তান্ত মনে পরে যায়, তখন খেই হারিয়ে ফেলি। প্রায়ই দেখা যায় যে প্রসংগে কথা বলব বলে মন স্থির করেছি তাই অপ্রসঙ্গিক কথার অতলে হারিয়ে যাচ্ছে। আসলে সারা জীবনে এত কথা হজম করেছি যে একটা বলতে গেলে সব গুলো উগড়ে আসে। বাবা প্রসংঙ্গে যে কথা শুনে বড় হয়েছি আপাতত তাই নিয়েই আলোচনায় আসি। আমার বয়স তখন সবে তিন, খুব মিষ্টি দেখতে ছিলাম (শোনা কথা)। কোয়টাররে চাচীদের আর কলেজ পড়–য়া আপুদের কোলে কোলেই বড় হয়েছি। আমিই নাকি বিরক্ত হয়ে যেতাম একোল সেকোল যেতে যেতে। একবার আমার ভয়ানক জ্বর হলো । কিছুতেই সেই জ্বর ভাল হচ্ছেনা। মা দ্বিগবিদিক শূন্য হয়ে গেলেন। মধ্যতিরিশের এক গৃহবধু তিন কন্যা সন্তান কে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ওষুধের দোকান থেকে ডাক্তার ডেকে আনলেন তিনিও ব্যাবস্থাপত্র দিয়েছিলেন কিন্তু কোন ভাবেই জ্বর নিয়ন্ত্রনে আসছিলনা। এদিকে আমার ওজন দিন দিন কমে যাচ্ছিল। উপায়ন্ত না পেয়ে একদিন বাধ্য হয়েই মা তিন কন্যা নিয়ে সোজা বাপের বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হলেন। আমার ছোট খালা তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন তার হাসপাতালে, সেখানে প্রফেসরদের সাথে কথা বলে হাসপাতালে ভর্তি করালেন। শুরু হলো নিবীড় পর্যবেক্ষণ আর চিকিতসা। ছাত্রীর আত্মীয় বলে প্রফেসররা বেশ ভাল ভাবেই খোজ রাথতেন। আমাদের সব আত্মীয় ¯^জন আর প্রতিবেশিরা সারাক্ষণ আমার বেডের চারপাশে ঘিরে থাকতেন। প্রকৃতি যে কোন দূর্যোগে সব মানুষকে এক করে দেয়।
আমার সারা শরীর অসংখ্য সিরিঞ্জের ফুটোয় ভরে গেল। রক্তের সব রকমের পরীক্ষা সম¦প্ন হলো।পরীক্ষার রিপোর্ট যখন নরমার আসল তখন আরও চিন্তায় পরে গেলেন বিশেষঞ্জ চিকীতসক গন কারন জ্বর কিছুতেই নিয়ন্ত্রনে আসছেনা।এদিকে প্রায় মাস খানেক পার হয়ে গেল হাসপাতালেই। ডা: এম আর খান অসহায়ের মত প্রকাশ্যেই বলে ফেললেন এবার তো জ্বর মনে হচ্ছে আমার শরীরেও এসে গেল । আমিতো কখনও এভাবে হেরে যাইনি।ওর মাকে আমার কাছে পাঠাও আমি তার ডিটেইলড ফ্যমিলি হিস্ট্রি চাই। মা যথারীতি তার সাথে দেখা করলেন। ডাক্তার সাহেবের প্রথম প্রশ্ন ছিল বাচ্চার জ্বর কবে বা কোন ঘটনার পর থেকে শুরু হলো? মানে নতুন কোন ঘটনা বা পরিবেশে বা ভয়ের এমন কিছু ঘটেছিল কি? ওর বাবা গত দুই মাস হলো দেশের বাইরে। আরকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পেয়েছেন পি এইচ ডি প্রোগ্রামে। আমার এই মেয়েটা ওর বাবার গলা জড়িয়ে ঘুমাত বলেই মা চোখের পানি সম্বরনের চেষ্টা করলেন। ডাক্তার সাহেব ব্যবস্থা পত্র দিলেন আর বললেন আমি গ্যরান্টি দিয়ে বলছি ওর জ্বর ভাল হয়ে যাবে, অপনারা দ্রুত ওর বাবাকে দেশে আসতে বলুন। নানাভাই অনেক বারন করলেন মাকে, জামাই কে এসব কথা জানানোর দরকার নাই। পড়ালেখার এরকম সূযোগ মানুষের জীবনে বার বার আসেনা। একটু ধৈর্য্য ধরে কয়েকটা বছর ওখানে থাকুক । সরকারী চাকরি করে, একবার ছুটি নিয়ে অসলে বাংলাদেশ সরকার হয়তো অবার সূযোগ নাও দিতে পারে। আমি আরও বড় ড্ক্তাার দেখাব। ওই ডাক্তার বেশি কথা বলেন, বাবা দিয়েই যদি চিকিতসা হতো তাহলে হাসপাতালের বেডে বেডে এত রোগি কেন? মা নানাভাইকে না জানিয়ে বাবার কাছে লুকিয়ে ফোন করে সবিস্তারে বললেন , ও প্রান্ত থেকে বাবার কোন আওয়াজ মা পাননি। মনে হল লাইনটা কেটে গেল। আমার বাবা ততক্ষনাত তার সুপারভাইজারের কাছে গেলেন । আমার মেয়ে আমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারেনা , আমার কোন অধিকার নাই তার ঘুম নষ্ট করার। আমার এই ডিগ্রির চাইতেও আমার মেয়ের ঘুম আমার কাছে অনেক মূল্যবান। বেচে থাকলে আমি জীবনে কোন না কোন সময় এই ডিগ্রি অর্জন করতে পারব, কিন্তু আমার মেয়েকে আমি নির্ঘুম রাখতে পারবনা। ড: এসলে স্মিত হেসে বলেছিলেন তোমরা জাতি হিসেবে অনেক আবেগ প্রবন ! আমি তোমার কন্যার সূস্থতা কামনা করি। দেশে ফিরে আমাকে জানিও তার কথা। বাবা দেশে ফিরেছিলেন কয়েক দিনের মধ্যেই। আর আমার জ্বরও বাবার চোখের পানিতে ধুয়ে গেল। যে বাবা তার ক্যরিয়ারের একটা চুড়ান্ত পর্যায়ে এমন খামখেয়ালি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তার জন্য সন্তান হিসেবে কি করছি? কতটুকু করেছি? আর কতটুকুই বা করা সম্ভব একজন গৃহবধু হয়ে বাংলাদেশের মত একটি পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে বসবাস করে?!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।