সবেমাত্র আমি ক্লাস টেনে উঠেছি। আর আশা ক্লাস এইটের ছাত্রী। দু’জনে একই স্কুলে পড়াশোনা করতাম। আশা হলো আমার দূর সম্পর্কের মামাতো বোন। তার বাবা পেশায় একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবীদ ছিলেন। আশার গায়ের রং একটু কালো ছিল। কালো হলেও দেখতে খুব সুন্দর এবং আকর্ষনীয়। সব চেয়ে দেখার মত ছিল তার কাজল কালো দু’টি চোখ। তার চোখের মায়াজালে অনেকেই বন্দি হতে চায়তো। আমিও ঐ মায়াজালে কখন যে আটকা পড়ে গিয়েছিলাম তা একটুও টের পেয়েছিলামনা। প্রত্যাড়্গান করার ভয়ে ভালবাসার কথা মুখে বলার সাহস পেতামনা। এছাড়া আমিও ছিলাম খুব ভীতু স্বভাবের পারিবারিক অবস্থার দিক দিয়ে তাদের চেয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে। সাহস করে একদিন ছোট্ট একটা চিরকুট লিখেছিলাম। কিন্তু সেটা তাকে দেওয়া হয়েছিলনা। কুয়াশায় ঘেরা এক শীতের সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে রাসত্মার উপর কালের সাড়্গী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রাসু কাকার বটগাছের তলায় একটা শিশিরসিক্ত লাল গোলাপ আশার হাতে চুপটি করে ধরিয়ে দিয়ে দ্রম্নত চলে এসেছিলাম। তার চোখের দিকে একবারও তাকাতে পেরেছিলামনা সেদিন। তাকালে হয়ত ফুলটি দিতে পারতামনা আমি। পরেরদিন স্কুলে আমার বান্ধবী লিজা একগুচ্ছ রজনীগন্ধা আর একটা চিরকুট এনে দিয়ে আমাকে বলেছিল যে, “আশা তোমাকে এগুলো দিয়েছে।” লিজার কথাগুলো শোনে বুকের ভিতরে অজানা এক সুখের কম্পন শুরম্ন হয়েছিল ঐ মুহুর্তে। চিরকুটটিতে লিখা ছিল, “ ভালবাসেন তো মুখ ফোঁটে বলতে পারেন না কেন?”। আমার প্রিয় ফুল ছিল রজনীগন্ধা; আর তাই আশা হয়ত এই জন্যই রজনীগন্ধা দিয়েছিল। আমিও ফিরতি চিরকুটে লিখেছিলাম, “সাহস হয়না, তুমি যদি রাজি না হও”। মান-অভিমান, রাগ-অনুরাগ আর ছোট্ট ছোট্ট চিরকুট দেওয়া-নেওয়া এই সব নিয়ে ভালোই সময় কাটছিল আমাদের। কোন এক শীতের পড়নত্ম বিকেলে দেখা হয়েছিল দু’জনার। থরে থরে সাজানো গোছানো দূর্বাঘাসের গালিচায় পাশাপাশি বসে ছিলাম দু’জন। দিবসের অবসানে সন্ধ্যা নামলে ক্লানত্ম সূর্যপ্রদীপটি তেঁজ হারিয়ে ঢলে পড়েছিল পশ্চিমাকাশে। এক ফাঁকে তার নরম দুটি হাত ধরেছিলাম আমি। তার মিষ্টি ছোঁয়ায় আমার শিরা-উপশিরা গুলো...। আশা সেদিন খুব লজ্জা পেয়েছিল। সুখের মুহুর্তগুলো বুঝি তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর পরই যে যার বাসায় চলে গিয়েছিলাম আমরা। আমার এসএসসি পরীড়্গার পর পর আশার বড় ভাই ডলি নামের এক মেয়েকে নিয়ে নিরম্নদ্দেশ হয়েছিল। এক সপ্তাহ যাবৎ অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও পাওয়া যাচ্ছিলনা তাদেরকে। ঐ মুহুর্তে আমার আর আশার ব্যাপারটি আশার পরিবার জেনে গিয়েছিল। আমার প্রতি অনেক হুমকি আসতে শুরম্ন করল। আগেই বলেছি আশার বাবা খুব প্রভাশালী ছিলেন। শুনেছিলাম আশাকে অনেক মেরেছিল তার পরিবার। সাত দিন বাসা হতে বের হতে দিয়েছিলনা। সাত দিন পর আবার আশা স্কুলে যাওয়া শুরম্ন করলো। স্কুলে যাওয়ার সময় পথের মাঝে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “আমার জন্য মার খেতে হল তোমাকে, তাই না?” আশা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেছিল, “আমি আপনাকে খুব ভালবাসি কিন্তু আমার পরিবার কখনোই আপনাকে মেনে নেবেনা, আর আমি আমার পরিবারের মতের বিরম্নদ্ধে কিছুই করতে পারবনা”। আশার তৃষ্ণার্ত চোখ থেকে তখন অঝোরে জল ঝরছিল। এর কিছুদিন পর আমার একটি সরকারী চাকুরী হয়। চাকুরীর প্রয়োজনে তখন আমি চট্টগ্রামে। এদিকে আশার হঠাৎ টাইফয়েড জ্বর হয়। কোন মতেই ভাল হচ্ছিলনা। রাজশাহীতে কোন এক নামী-দামী ক্লিনিকে নিয়ে গেলে দামী দামী ঔষধ দিয়েছিল আশাকে। ঔষধ খাওয়ার পর আশার শরীরে নানা ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রীয়া দেখা দিয়েছিল। আশার মাথার চুলগুলো উঠে যেতে শুরম্ন করল। এমনকি কয়েকদিন পর আশার শরীরের এক অংশ অচল হয়ে গিয়েছিল এবং ব্রেণে প্রচন্ড রকমের সমস্যা দেখা দিতে শুরম্ন করল। তার কিছুদিন পর আমি ছুটিতে যাই তাকে দেখার জন্য। সে তখন বাসায় শুয়ে শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু কোন কথা বলতে পারেনা। দু’চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। চেহারাটাও ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আমি চলে আসার সময় আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে চেয়েছিল আর তার চোখের কোন দিয়ে অশ্রম্ন গড়িয়ে পড়ছিল। আশাকে দেখে ছুটি শেষে কর্মস্থলে চলে এসেছিলাম আমি। কে জানত যে সেটাই হবে আমার আশার সাথে শেষ দেখা। এক সপ্তাহ পর অর্থাৎ ২০০৮ সালের ০৬ ডিসেম্বর ঠিক রাত ০০১০ ঘটিকার সময় আমার মামাতো ভাই সাঈদ ফোন করে আশার শেষ বিদায়ের কথা শোনালো। আমি তখন হতভম্ব হয়ে পড়লাম। আমার পায়ের নিচের মাটিগুলো সরে যেতে শুরম্ন করল। এত রাতে বাস কোথায় পাব। আর হাড়কাঁপানো শীত পড়ছিল; চারিদিকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা। এছাড়াও অফিসিয়াল ঝামেলাও তো মিটাতে হবে। সেই বার আমার ছুটি যাওয়া হয়েছিলনা। ছোট্ট মাটির ঘরে শায়িত করা হয়েছিল আশাকে। আর কোন দিন ফিরে আসবেনা এই সুন্দর পৃথিবীতে; ফিরে আসবেনা আমার কাছে। কারন সে যে চলে গেছে না ফেরার দেশে। বিদায় বেলায় আশার মুখটি শেষবারের মত দেখা হয়নি আমার। কঠিন বাসত্মব তাকে শেষ বারের মত দেখতে দেয়নি। সেদিন মনে হয়েছিল আমার, “বাঁচার জন্য প্রয়োজন টাকা, টাকার জন্য প্রয়োজন কর্ম; তবে কর্ম কেন এত কঠিন?”। জানি এই প্রশ্নের কোন জবাব নেই। হয়ত আমার এই কর্মই সেদিন ভালবাসার মানুষের বিদায় বেলায় কাছে থাকতে দেয়নি। এখন অনেক ব্যসত্ম থাকতে হয় আমাকে। সবুজ ঘাসের গালিচায় বসা হয়না তাকে নিয়ে। ইচ্ছে করলেও আশা নামের মিষ্টি মেয়েটির হাত দু’টি আর ধরতে পারিনা আমি। কেউ আর ভূল করেও চিরকুটে লেখেনা, “ ভালবাসেন তো মুখ ফোঁটে বলতে পারেন না কেন?”। এখন তার আর আমার মাঝে অনেক দুরত্ব। আমার অবস্থান এই নিঃষ্ঠুর পৃথিবীতে। আর যে এই আমার পৃথিবী ছিল তার অবস্থান হয়ত এখন সপ্তম আসমানে অথবা তারও বেশি ওপরে। শীতের রাতে কুয়াশার দেওয়াল ভেদ করে দূর আকাশে রঙ্গিন পোষাক পরিহিত রম্নপার থালার মত লাল টকটকে রম্নপালী চাঁদ উদিত হয়; জ্বল জ্বল করে ধ্রম্নবতারারাও । আমি সেই রাতের আকাশের দিকে চেয়ে থেকে ভাবি, তুমি বুঝি লুকিয়ে আছ রম্নপালী চাঁদ অথবা ধ্রম্নবতারাদের মাঝে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক
সুন্দর কাহিনী বিন্যাস...আর একটু যত্ন নিলে আরো ভালো হত...বিশেষ করে বানানগুলো....অনেক শুভ কামনা...
খুব ভাল লাগল। আমার সাইট www.gangchil.com এ ঘুরে আসার নিমন্ত্রন রইল। এটা গল্প-কবিতা আসরের সাইট। পছন্দ হবে নিশ্চই। এখানে নিবন্ধন করে আপনার লেখাও প্রকাশ করতে পারেন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।