দ্য স্ট্রেইঞ্জ জার্নি

অসহায়ত্ব (আগষ্ট ২০১৪)

ফরহাদ আহমদ নিলয়
ট্রেইলারঃ
বনের মধ্য দিয়ে একটা মায়া হরিণ প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে । ভয়ার্ত তার চোখ; সে চোখে অশ্রু, অবিশ্বাস, জীবন নাশের শঙ্কা । ছোটখাটো ঝোপ-ঝাড় পেরিয়ে জঙ্গলের আঁকা-বাঁকা পথে দৌড়াচ্ছে সে । পিঠে তার গভীর ক্ষত, এখনো রক্ত ঝরছে সেখান থেকে । তবে সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই ।

হরিণটার ঠিক পেছনেই ঘোড়ায় চেপে এক সুদর্শন রাজকুমার, তীর-ধনুক হাতে হরিণটাকে তাড়া করছে । তবে সে ঠিক সুবিধা করতে পারছে না । কয়েকবার তীর ছুড়েছিল, কিন্তু হরিণটা আঁকা বাঁকা দৌঁড়ানোয় তা লক্ষভ্রষ্ট হয় । শেষে তীর ছোড়া বাদ দিয়ে সে জোরে ঘোড়া ছোটাতে থাকে । যে করেই হোক, খাল পার হয়ে গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়ার আগে হরিণটাকে থামাতেই হবে । একবার সেখানে চলে গেলে পরে তার নাগাল পাওয়া কষ্টকর হবে ।

ঐদিকে, হরিণও এই তথ্যটা জানে । তাই সেও ছুটছে উর্ধ্বশ্বাসে । যে কোন মূল্যেই সে বনের এই হালকা অংশটা পেরিয়ে খালপাড়ের গভীর অংশটায় পৌঁছাতে চায় । এই যাত্রায় তাকে যে বাঁচতেই হবে ।

রাজ্যের একবারে শেষ প্রান্তে বিশালাকৃতির এই বনটা । একপাশে লোকালয়, অন্যপাশে আদিগন্ত সমুদ্র । বনের ঠিক মাঝ দিয়েই বয়ে গেছে সাপের মত সর্পিল একটা খাল । খালটি বনের দুটো অংশকে আলাদা করে রেখেছে । একপাশে হালকা জঙ্গল, বড় বড় গাছ আর ছোটখাটো ঝোপ সেখানে । হরিণ, খরগোশ, বনমোরগের মত কিছু নিরীহ প্রাণীর বাস এখানে । এই অংশটায় মানুষের চলাফেরা আছে । কাঠুরিয়া এখানে কাঠ কাটতে আসে, মৌয়ালরা আসে মধু সংগ্রহ করতে । মাঝে মাঝে রাজা তার উজির-নাজির নিয়ে বের হন অবলা প্রাণী শিকারে । আর খালের অন্য পাশে ? সেখানে জঙ্গল এত ঘন যে সূর্যের আলোও ঠিকমত পৌঁছাতে পারে না । এজন্য দিনের বেলাতেও সে অংশটা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে । আর সেখানে কত রকম প্রাণী বাস করে তার সঠিক হিসেবটা কেউ জানে না । যারাই সেখানে ঢুকেছে, তাদের কেউই আর ফিরে আসেনি । তাই দুঃস্বপ্নেও কেউ ঐ অংশটায় প্রবেশের কথা চিন্তা করেনা ।

দূর থেকেই খালপাড়ের ঘন জঙ্গলটা চোখে পড়ল মায়া হরিণের । গতি বাড়িয়ে দিল সে । শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে সে ছুটছে ।

এদিকে ঘোড়ার পিঠেও ক্রমাগত চাবুক মেরে যাচ্ছে রাজকুমার, গতি বাড়ানোর জন্য । শিকার যে তার ফসকে যেতে বসেছে ।

ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল মায়া হরিণটির । এক লাফে পেরিয়ে গেল খাল, তারপর হারিয়ে গেল গভীর জঙ্গলে ।

খালপাড়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ মাথার চুল ছিড়ল রাজকুমার । তারপর ঘোড়ায় চেপে বসল ফিরে যাওয়ার জন্য । যাওয়ার আগে বিড়বিড় করে বলল- আমি আবার আসব । আবার আসব তোমাকে খুঁজে বের করতে । পৃথিবীর যেই প্রান্তেই লুকাও না কেন তুমি, আমার হাত থেকে তোমার নিস্তার নেই.....

পূর্বকথাঃ

বহু বছর আগের কথা । কত বছর আগের তার হিসেব নেই, কারণ তখনকার মানুষের সাল গণনার দারকার হত না ।

সমুদ্রের উপকূলে বিশাল এক বদ্বীপ । একপাশে আবক্ষ সমুদ্র, অন্যপাশে বিস্তৃত সমভূমি । দূরে কোথাও বরফ ঢাকা পাহাড়ের চূড়া, তারই অববাহিকায় বয়ে যাওয়া পাহাড়ি কিছু নদী । নদীর তীর ঘেঁষে উর্বর জমিতে গড়ে উঠছে ছোট খাটো কিছু জনপদ, ছোট খাটো কিছু রাজ্য । তেমনই এক রাজ্যের কাহিনী এটি ।

সেখানকার মানুষেরা ছিল খুব সহজ-সরল, শান্ত প্রকৃতির, কারো সাতে-পাঁচে নেই এমন ধাঁচের । তারা খুব অতিথি পরায়ণও ছিল । দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল তাদের আতেথিয়তার খবর । আর ছিল তাদের এক মহানুভব জ্ঞানী রাজা, ছিল গ্রীক দেবতাদের মত সুদর্শন সাহসী এক রাজপুত্র । ছিল একগাদা অন্তপ্রাণ বিচক্ষণ মন্ত্রী, প্রজাদের সুখই ছিল তাদের সব । অনুগত কিছু সৈন্য-সামন্ত্যও ছিল, বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সর্বঃস্ব দিয়ে লড়তেও তারা ছিল সর্বদা প্রস্তুত । উজির-নাজির-কাজী.... সবাই যার যার কতর্ব্য পালনে সচেষ্ট ছিল, রাজ্যের শান্তি রক্ষায় সবাই ছিল বদ্ধপরিকর । সেখানে সবকিছুই ছবির মত সাজানো গোছানো ছিল । এ যেন মত্যৈর স্বর্গ ।

সুখ বেশীদিন স্থায়ী হয় না । স্বয়ং আদম-হাওয়াও স্বর্গে বেশীদিন সুখে থাকতে পারেন নি । এই মত্যৈর মানুষ কিভাবে থাকবে ? একদিন তাই মত্যৈর স্বর্গেও শোকের অমনিশা উঁকি দিল ।

বৃদ্ধ রাজা অসুস্থ হয়ে পড়লেন । রাজ্যজুড়ে হৈ হৈ রব পড়ে গেল । রাজবৈদ্যের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হল । এক প্রত্যুষে পুরো রাজ্যকে শোক সাগরে ভাসিয়ে রাজা পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে । রাজ্যজুড়ে নেমে এল শ্মশানের নীরবতা ।

রাজার মৃত্যুতে কয়েক জায়গায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিল । কিছু সৈন্য বিদ্রোহ করল । রাজকোষের কয়েকজন কর্মচারী বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেল । শুরু হল অরাজকতা ।

এমতাবস্থায় প্রধান মন্ত্রী রাজ্যের হাল ধরতে এগিয়ে এলেন । বাকি সভাসদদের সাথে পরামর্শ করে রাজপুত্রকে নতুন রাজা ঘোষণা করলেন ।

ঘোষণাটা প্রত্যাশিতই ছিল । কিন্তু হুট করে রাজা হয়ে যাওয়ায় রাজপুত্র হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন । তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা তরুণ । যখন যা মন চাইত, তাই করতেন । রাজ্যময় ঘুরে বেড়াতেন, মাঝে মাঝে শিকারে বেরুতেন, কখনোবা তার পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চেপে চলে যেতেন নাম না জানা কোন দেশে... তার বাবা ছিলেন খুবই বিচক্ষণ রাজা । বাবা বেঁচে থাকতে রাজ্য নিয়েই কখনোই মাথা ঘামায় নি তিনি । তাই বাবার মৃত্যুর পর হঠাৎ করেই রাজ্যের সব ভার তার ঘাড়ে এসে পড়ায় ভয় পেয়ে গেলেন। তবে ভয় পেলেও তিনি রাজার ছেলে, পিতার যোগ্য উত্তরসুরী । ধীরে ধীরে সব সামলে নিলেন । চপলা রাজপুত্রের খোলস পাল্টে হয়ে গেলেন গম্ভীর রাজা । পিতার মতই বিচক্ষণতার পরিচয় দিলেন রাজকার্যে । সব বিশৃঙ্খলা শক্ত হাতে দমন করলেন । দোষীদের যথাপোযুক্ত শাস্তি দিলেন । কিছুদিনের মাধ্যেই রাজ্যে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হল ।

রাজ্যে শান্তি ফিরে এলেও নতুন রাজার মনে শান্তি নেই । এখন তার হৈ হুল্লোড করে বেড়ানোর বয়স । এই বয়সে রাজ সিংহাসনে বসে প্রজার সুখ দুঃখ দেখতে কার-ই বা ভাল লাগে ? তার ছিল উত্তেজনাপূর্ণ জীবন, ছিল নিত্যনতূন আবিষ্কারের নেশা, সেই তাকেই এখন রাজার গতানুগতিক জীবন যাপন করতে হয় । কোন উত্তেজনা নেই, নেই কোন নতুন চ্যালেঞ্জ, প্রতিদিন শুধু একই কাজ- গম্ভীর মুখে প্রজাদের যত অভিযোগ শোনা ! রাজসভা যতক্ষণ চলে ততক্ষণ হাসিমুখে দায়িত্ব পালন করে যান তিনি । সভা শেষেই প্রসাদের ছাদে উঠে উদাস চোখে আকাশপানে তাকিয়ে থাকেন আর নিজের ভাগ্যকে অভিসম্পাত দেন । এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিন ।

সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে চললেও প্রধানমন্ত্রী ব্যাপারটা খেয়াল করলেন । নতুন রাজা সবসময় উদাস হয়ে ছাদে বসে থাকেন ! আগের রাজার দীর্ঘদিন সহচর ছিলেন তিনি । ছেলেটাকে বলতে গেলে নিজের চোখের সামনেই বড় হতে দেখেছেন । নিজের সন্তানের মতই স্নেহ করেন তাকে । তাই রাজার উদাসীনতা তাকে ভীষণ পীড়া দিল । তার উদাসীনতার কারণ তিনি বুঝেন । এই বয়সটা তো সবাই পার করে এসেছে, তাই না ? রাজার উদাসীনতা কাটানোর জন্য তিনি মনে মনে একটা পরিকল্পনা করলেন । তারপর নিকট ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আপন মনেই হেসে উঠলেন ।

রাজ্যে রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ল প্রধানমন্ত্রীর দূত । তারা গেছে রাজকুমারীর সন্ধানে । রাজা থাকবে, অথচ রাণী থাকবে না এটা তো হয় না ।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ পরিকল্পনাটা আর কিছু না, রাজাকে একটা বিয়ে করানো ! রাজার তো আর আপন জন বলতে কেউ নেই, দায়িত্বটা তাই নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন মন্ত্রী । রাজার প্রতিকৃতি দিয়ে দূর-দূরান্তের রাজ্যগুলোতে বিশেষ দূত পাঠিয়েছেন যোগ্য রাজকুমারীর সন্ধানে ।

সপ্তাহ পেরিয়ে মাস গেল । পাঠানো দূতেরাও ফিরে আসতে শুরু করেছে নানান দেশের রাজকুমারীদের প্রতিকৃতি নিয়ে । মন্ত্রীর তো "শোল ধরি না বোয়াল ধরি" অবস্থা । কাকে দেশের রাণী বানানো যায় এটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তার মাথার আধপাকা চুলগুলো পুরোপুরি পেকে গেল । অবশেষে তিনি হাল ছেড়ে দিয়ে রাজার সরাপন্ন হলেন । সবগুলো ছবি তার সামনে ধরে বললেন- দেখো তো বাছা, এদের মাঝে কাকে তোমার বেশী পছন্দ হয় ?

নিজের বিয়ের কথা শুনে পরমক্রমাশীল রাজাও লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন ! মিনমিন করে বলল- আপনি তো দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের পরিবারের সাথে যুক্ত আছেন । আপনিই ঠিক করুন এই রাজ্যের রাণী হিসেবে কে বেশী যোগ্য ?

মন্ত্রী আবার অথৈ সাগরে পড়লেন । ভেবেছিলেন, রাণী নির্বাচনের কাজটা রাজাকে দিয়েই সারবেন, কিন্তু তা আর হল কই ? শেষমেষ বহু বাছ-বিচারের মাধ্যমে দূর দেশের এক রাজকুমারীকে রাণী হিসেবে মনোনীত করলেন । রাজ্যজুড়ে খুশীর জোয়ার বইতে লাগল । রাজার বিয়ে বলে কথা !

নির্দিষ্ট দিনে রাজ্যের সহস্রাধিক মান্যগণ্য ব্যক্তি নিয়ে রাজা রওনা দিলেন বিয়ে করতে । সাথে উপঢ়ৌকন হিসেবে শত উট বোঝায় সোনা-দানা, আর জনা পন্ঞ্চাশেক দাসীও সামিল তাদের সাথে ।
সপ্তাহ খানেক বাদে নতুন রাণী নিয়ে তারা ফিরেও এলেন ।

নতুন রাণীকে নিয়ে প্রজাদের উন্মাদনার সীমা নেই । রাণীকে অভ্যর্থনা জানাতে রাজধানীর মূল ফটক থেকে রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার লম্বা ফুলের তৌরণ তৈরি করা হল । পুরো পথ ঢেকে দেয়া হল লাল গালিচায় । যেদিন রাণী পৌঁছাবেন, পুরো রাজ্যের মানুষ এসে জমা হল রাজপথের দু'ধারে, রাণীকে এক নজর দেখার আসায় । রাজা-রাণীকে বহনকারী বিশেষ রথটি যখন রাজধানীতে ঢুকল, চারপাশ থেকে বৃষ্টির মত ফুল ঝরতে শুরু করল । রাজা তো প্রজাদের এমন ভালবাসায় সিক্ত হয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন । আর রাণী.... নতুন দেশে এমন অভ্যর্থনা পেয়ে রাণীও মহাখুশী । রাণীর সম্মানে সপ্তাহব্যাপী রাজ্যের এখানে সেখানে উৎসব চলল ।

প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনাটা ভালো ভাবেই উতরে গেল । রাণী আসার পর থেকে রাজা ভীষণ খুশী । আগের সেই ঔদাসীন্যতার ছিটেফোটাও এখন আর তার মাঝে নেই । রাজকার্যেও গতি এসেছে । ভালোই কেটে যাচ্ছিল দিন ।

একদিন রাজা তার সভাসদদের নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন, কিভাবে প্রজাদের অসুবিধা না করে রাজকোষের আয় আরো খানিকটা বাড়ানো যায় তা নিয়ে । এমন সময় এক সুফী তার দরবারে প্রবেশ করল । পরনে সফেদ জোব্বা, বুক পর্যন্ত নেমে আসা দাড়ি, হাতে লাঠি, কাঁধে ঝোলা । চেহারায় ক্লান্তির ছাপ, কিন্তু চোখে-মুখে আশ্চার্য রকমের ঔজ্বল্ল্য ।

রাজা তার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চাইতেই সে বলল- আমি একজন পরিব্রাজক । দেশে দেশে ঘুরে বেড়াই । অনেকদূর হেঁটে এসে আমি ক্লান্ত । আজকের দিনটা আপনাদের কাছে আশ্রয় চাই ।

আগেই বলেছিলাম, দেশটির মানুষরা খুব অতিথি পরায়ণ । রাজা তাকে সাদরে প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন । ব্যক্তিগত দাসীকে আদেশ দিলেন মুসাফিরের জন্য বিশ্রাম আর আহারের ব্যবস্থা করতে । এবং সেই সাথে সূফীকে বলে দিলেন- তিনি যতদিন ইচ্ছা এখানে থাকতে পারেন ।

সপ্তাহ গড়িয়ে মাস পার হল । সূফী এখনো প্রাসাদেই আছেন । ইতিমধ্যে রাজার সাথে তার ভালই খাতির হয়েছে । বিশাল তার জ্ঞানের ভান্ডার । হেন কোন বিষয় নেই যা তিনি জানেন না । রাজাকে তো রীতিমত তার গুণমুগ্ধ বলা চলে । প্রতিদিন সূফীর সাথে তার কিছু সময় না কাটালেই যেন নয় ।

সূফীর অতি ভক্তি ভাব মন্ত্রীর কাছে ভাল ঠেকল না । তিনি রাজাকে সাবধান করে দিলেন । কিন্তু রাজা মন্ত্রীর পরামর্শকে খুব একটা গ্রাহ্য করল না । বৃদ্ধ সূফী তার আর কিই বা ক্ষতি করতে পারে ?

একদিন সূফী রাজাকে নিয়ে শিকারে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করল । রাজাও সানন্দে রাজি হলেন । সূফী রাজাকে তাদের এই যাত্রার ব্যাপারটা মন্ত্রীর কাছে গোপন রাখতে অনুরোধ করল । কারণ হিসেবে বলল- মন্ত্রী হয়ত তাদের যাত্রার ব্যাপারে আপত্তি তুলতে পারেন । সূফীর ব্যাপারে মন্ত্রীর মনোভাব রাজা জানতেন, তাই হাসিমুখে তিনি এই শর্তটাও মেনে নিলেন । দুদিন পর, এক সকালে রাজা আর সূফী সবার অগোচরে ঘোড়া নিয়ে শিকারে বেরিয়ে গেলেন । কে জানে, এটাই হয়ত হবে রাজার জীবনে শেষ আনন্দ যাত্রা !

জঙ্গলে ঢুকতেই তারা এক মায়া হরিণ দেখতে পেলেন, আপন মনে ঘাস খাচ্ছে । দুজন চোখাচোখি করে হরিণটাকে ঘিরতে দুদিকে চলে গেলেন । কাছাকাছি যখন পৌঁছেছেন, হরিণটা সম্ভাব্য বিপদ টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করল । কিন্তু সূফীর তীরের অব্যর্থ নিশানা, যা তার চেহারা আর বেশভূষার সাথে সম্পূর্ণ বেমানান । এক আঘাতেই হরিণ লুটিয়ে পড়ল । কিছুক্ষণ ছটফট করে তারপর মরে গেল । রাজা আর সূফী দুজনেই ঘোড়া থেকে নিচে নেমে দাঁড়ালেন । রাজার চোখে ঘোর লাগা মুগ্ধ দৃষ্টি । তিনি নিজেও একজন ভাল শিকারি কিন্তু সুফীর মত এতটা ভাল না ।

হঠাৎ রাজাকে অবাক করে দিয়ে সূফী বলল- মহারাজা, আপনি চাইলে আমি এখন এই হরিণটাকে জীবত করে দেখাতে পারি ।
রাজা অবাক- কিভাবে ?
সূফী হেসে বলল- "আত্মা সঞ্জিবণী" মন্ত্রের সাহায্যে । দাঁড়ান, আপনাকে দেখাই !

রাজা দেখলেন সূফীর দেহটা আস্তে করে মাটিতে পড়ে গেল আর হরিণ গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াল । তারপর দুপা তুলে রাজাকে কূর্নিশ করল । তারপর আবার পড়ে গেল এবং সূফী উঠে দাঁড়াল ।

রাজা তো বিষ্ময়ে কথা বলতেও ভুলে গেছেন । একটু পরে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে কোনমতে শুধু বললেন- কিভাবে ?
সূফী পুরো প্রক্রিয়াটা ব্যাখ্যা করল রাজাকে- এই মন্ত্রের মাধ্যমে আপনি যেকোন মৃত দেহে প্রবেশ করতে পারবেন । এই মন্ত্রের মাধ্যমে প্রথমে আমি হরিণটির শরীরে ঢুকি । তখন আমার নিজের দেহেটা প্রাণহীন হয়ে পড়ে যায় । আবার যখন আমি আমার দেহে ফিরে আসি, তখন হরিণটা আবার মৃত হয়ে পড়ে ।

রাজা মন্ত্রটা শিখতে চাইলে সূফী সোত্সাহে রাজাকে মন্ত্রটা শিখিয়ে দিল এবং পরীক্ষা করে দেখতে বলল । বোকা রাজা কুটিল সূফীর চক্রান্তটা ধরতে পারলেন না । তাই মন্ত্র পড়ে যেই না তিনি হরিণের শরীরের প্রবেশ করলেন, ঠিক তখনই সূফী নিজের শরীর ছেড়ে রাজার শরীরে প্রবেশ করল । শেষে মূহুর্তে রাজা রাজা বুঝতে পেরেছিলেন সূফীর উদ্দেশ্য । কিন্তু তখন আর কিছুই করার ছিল না ।

রাজার শরীরে ঢুকেই সূফী তীর ধনুক তাক করল হরিণরূপী রাজাকে নিঃশেষ করতে । আর রাজা সব ভূলে প্রাণ ভয়ে দৌড়াতে শুরু করলেন ।

রাজার বেশে সূফী ঘোড়া ছুটাল হরিণটার পিছনে, এক সত্যকে চিরতরে ধ্বংস করতে । আর হরিণের শরীরে আবদ্ধ রাজা ছুটছেন গভীর জঙ্গলের দিকে, আপতত নিজের প্রাণ বাঁচাতে....

বর্তমান কথাঃ

১।
বেশকিছু দূর গিয়ে রাজা পিছনে তাকিয়ে দেখলেন কেউ পিছু নিয়েছে কিনা । নাহ, সূফী ওপাড় থেকে ফেরৎ গেছে । এই পাড়ে আসে নি ।

হতাশা গ্রাস করল রাজাকে । সেই সাথে অজানা ভয় চারপাশ থেকে ঘিরে ধরল তাকে । এই সেই বন যে বন থেকে কেউ কখনো জীবিত ফেরত যেতে পারে নি । চোখ ফেটে জল এল তার । কিন্তু দূর্ভাগ্য, সেই পানি মোছার মত হাত নেই তার । নিজেকে নিজেই অভিসম্পাত দিলেন, কেন যে মন্ত্রীর কথাকে গুরত্ব না দিয়ে সূফীকে বিশ্বাস করতে গেলেন ! নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছেন তিনি, কিন্তু এখন যে আর কিছুই করার নেই ।

বেশ কিছুক্ষণ পর উঠে দাঁড়ালেন তিনি । বেঁচে থাকতে কে না চায় ? আর বেঁচে থাকার জন্য চারপাশ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি ।

২।
নদীর পাড় থেকে ফিরে সূফী প্রথমেই নিজের লাশটাকে গুম করার ব্যবস্থা করল । তারপর প্রাসাদে ফিরে গেল । প্রাসাদে রটিয়ে দিল সূফী তার নিজ গন্তব্যে ফিরে গেছে, যেহেতু রাজার সাথে তাকে শিকারে বেরুতে দেখে নি কেউ । অনেক কাজ বাকি তার, সাবধানে প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে । কাউকে কিছু বুঝতে দেয়া চলবে না ।

সিংহাসনে বসেই প্রথম সিদ্ধান্তটি নিল- শিকারে যাবে সে । অনেকদিন শিকারে যাওয়া হয় না । সেনাপতিকে নির্দেশ দিল- বনের পাশে সৈন্য সমাবেশ করতে ।

রাজার নির্দেশ পেয়ে সেনাপতি তো ভীষণ অবাক । রাজাকে এর আগেও অনেকবার শিকারে যেতে দেখেছে সে । বেশির ভাগ সময় তিনি একাই যেতেন । মাঝে মাঝে হয়ত দু/একজন তার সঙ্গী হত । কিন্তু এভাবে সৈন্য সমাবেশ করে পুরোপুরি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে শিকারে যাওয়ার ব্যাপারটা তার জন্য নতুন । মনে প্রশ্ন জাগলেও কোন দ্বিমত করল না সে । রাজার সঙ্গে দ্বিমত পোষণের ফল ভাল নাও হতে পারে । নিজের সৈন্য নিয়ে বনের দিকে রওনা দিল সে ।

৩।
ভাগ্যের পরিহাসে রাজার দিন কাটছে এখন ঘাস আর লতাপাতা খেয়ে ! হরিণের শরীরে বন্দি হবার পর দিন তিনেক পেরিয়ে গেছে । এখনো কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কি করবেন তিনি ? বন থেকে বেরুনোটা নিরাপদ হবে না । পানি খাওয়ার জন্য খাল পাড়ে পৌঁছে বুঝেছেন ঐপাশে লোকজনের সমাগম হচ্ছে । কে জানে ঐ সূফী শয়তানটা প্রাসাদে গিয়ে কি করছে ?

প্রাসাদের কথা মনে পড়তেই তার বুকটা হাহাকার করে উঠল । তার রাণীর কি অবস্থা ? রাণী কি বুঝতে পেরেছে যে তার শরীরে আসলে সে নয় ? শয়তানটা রাণীর কোন ক্ষতি করে বসেনি তো ?

৪।
সৈনিক এক- রাজার কি মাথা খারাপ হয়েছে ? এমন সিদ্ধান্ত মানুষ কিভাবে নেয় ? এতো পুরো আত্মহত্যার শামিল ! যে বনে কেউ দুঃস্বপ্নেও যাওয়ার কথা চিন্তা করতে পারে না, শখ করে সেখানে হরিণ শিকারে যাওয়ার অর্থ কি ?
সৈনিক দুই- আস্তে বল । এসব কথা রাজার কানে গেলে তখন তোরও গর্দান যাবে ।

রাজাবেশী সূফী সেনাপতিকে আদেশ দিয়েছে তার সমস্ত সৈন্য নিয়ে যাতে ঘন জঙ্গলটায় অভিযান চালানো হয় । বনের সকল মায়া হরিণকে তার চাই ।

৫।
হরিণের শরীরে আবদ্ধ হওয়ার চতুর্থ দিন । বনজুড়ে তোলপাড় । সৈন্যরা নির্বিচারে প্রাণী হত্যা করে চলেছে । রাজা বুঝতে পারছেন এই সবই ঐ সূফীর কূট বুদ্ধি । সামনে তার মহাবিপদ । কিছু একটা তো করতে হবে । চার পায়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলেন কি করা যায় ?

ভাবতে ভাবতেই বিশাল এক অশ্বস্থ গাছের নিচে একটা মৃত টিয়াকে পড়ে থাকতে দেখলেন । আর কোন কিছু না ভেবেই তিনি টিয়ার শরীরে প্রবেশ করলেন । বন থেকে পালানোর এখন এই একটাই উপায় ।

সূফী যখন বনের মাঝে রাজাকে খুঁজে মরছিল, টিয়ার শরীরে ভর করে রাজা তখন প্রাসাদের পথে উড়ছিলেন ।

৬।
চারজন সৈন্যের একটি দল দেখল বিশাল এক অশ্বস্থ গাছের নিচে একটা হরিণ মরে পড়ে আছে । তবে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করার জন্য তারা কেউ সত্যটি জানালো না । সবার কাছে বড়াই করে জানাল, হরিণটিকে তারা বহু কষ্টে হত্যা করেছে ।

একটা মায়া হরিণ শিকারের খবর শুনে রাজাবেশী সূফী ছুটে এল । এসেই চিনতে পারল এটাই সেই হরিণ । খুশীতে তার মনে আনন্দের ঢেউ বইতে শুরু করল । তার শত্রু চিরতরে শেষ । এখন সে নিশ্চিন্ত !

৭।
রাণী খেয়াল করলেন, ইদানীং তার শয়নকক্ষের পেছনে যে বিশাল কড়ই গাছটা আছে তাতে একটি টিয়া বসে সারাদিন তার দিকে তাকিয়ে থাকে । প্রথম প্রথম তিনি অবাক হলেও পরে পাখিটার জন্য অনেক মায়া অনুভব করলেন । কেন জানি তার মনে হয়, পাখিটা তাকে যেন কিছু বলতে চায় । কেন না জানি, পাখিটাকে তার অনেক আপন মনে হয় ।

এক বিকেলে রাণী প্রাসাদের ছাদে উঠেছিলেন । এমন সময় হঠাৎ টিয়ার ডাক শুনে চমকে উঠলেন । পিছনে তাকিয়ে দেখলেন পাখিটা রেলিং এ এসে বসেছে । কি মনে করে তিনি হাত বাড়িয়ে দিলেন । আর সাথে সাথেই পাখিটা উড়ে এসে তার হাতে বসল । রাণী তো মহাখুশী । পিঠে হাত বুলিয়ে পাখিটাকে আদর করে দিলেন, চোখ বুজে পাখিটা আদরটুকু উপভোগ করল । তারপর হাত থেকে লাফ দিয়ে কাঁধে চড়ে বসল ।

রাণী বাচ্চাদের মত খুশী হয়ে আদুরে গলায় বললেন- ওরে আমার সোনা পাখি, যাবি আমার সাথে ?
পাখিটা কি বুঝলি কে জানে ! কিন্তু সেটা মাথা নেড়ে সম্মতি দিল । রাণী অবাক হলেন। তারপর পাখিটাকে নিয়ে প্রাসাদে ফিরে এলেন ।

৮।
পাখির দেহে বন্দি রাজা বেশ কিছুদিন যাবৎ প্রাসাদে আছেন । সারাদিন রাণীর আশেপাশে ঘুরঘুর করেন, ইশারায় তাকে কিছু বলার চেষ্টা করেন । কিন্তু মানুষের কি আর সাধ্য পাখির ইশারা বুঝে ? অগ্যতা রাজা হাল ছেড়ে দিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় থাকলেন ।

রাণীর শয়নকক্ষে একটা দোলনা টাঙ্গানো হয়েছে । রাতটা রাজা সেখানে কাটান । রাতে রাজার দেহধারী সূফী যখন রানীকে স্পর্শ করে, রাগে কিড়মিড় করতে থাকেন তিনি । কিন্তু নিয়তির কাছে যে বড় অসহায় তিনি ।

৯।
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রাণী দেখলেন- তার আদরের পাখিটি মরে পড়ে আছে । কোনরূপ দূঘর্টনা ছাড়া পাখিটি হঠাৎ মারা যাওয়ায় রাণী ভীষণ মুষড়ে পড়লেন । খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন ।

১০।
রাণীর প্রধান দাসী যে ছিল, সে একটি বিড়াল পুষত । মাদী বিড়াল, রাণীও বিড়ালটিকে খুব পছন্দ করতেন ।

সম্প্রতি বিড়ালটি গর্ভবতী হয়েছিল । সেদিন রাতে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে বিড়ালটি মারা যায় । সদ্য জন্ম নেয়া মা মরা কচি বিড়াল ছানাগুলোকে দেখে রাজার বুকটা ধক করে উঠল । তিনি পাখির শরীর ছেড়ে মৃত বিড়ালের দেহে প্রবেশ করলেন । ভেবেছিলেন, ভোর হতেই পাখির দেহে ফিরে আসবেন । কিন্তু ছানাগুলোকে দুধ খাওয়ানোয় তিনি এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে কোন ফাঁকে সকাল হয়ে গেছে এটা তিনি খেয়ালই করেন নি । আর যখন খেয়াল করলেন তখন অনেক দেরি হয়ে যায় । রাণী ততক্ষণে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে ।

রাণীর কান্না শুনে রাজার ইচ্ছে করছিল তখনই ছুটে টিয়ার দেহে প্রবেশ করেন । কিন্তু একটি মৃত টিয়া হঠাৎ জীবিত হয়ে উঠলে আর কেউ না হোক রাজার বেশ ধারী সূফী সবকিছু বুঝে যাবে, তখন নিজের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হতে পারে । তাই অনেক কষ্টে নিজেকে থামালেন । ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকেন । সুযোগ আসবেই !

১১।
রাণীর কান্নাকাটির খবর শুনে সূফী ছুটে এল । সব শুনে সে বলল- ঠিক আছে । আমি তোমার আদরের পাখিটিকে আরো কিছুক্ষণের জন্য বাঁচিয়ে তুলতে পারি । তবে একটা শর্ত আছে !

কান্নাভেজা চোখে রাণী সূফীর দিকে তাকালেন এবং তার চোখে চোখ রেখে বুঝতে পারলেন শর্তটা আসলে কি ! তিনি স্বামীর বুকে কিল মেরে বললেন- সেসব রাতে দেখা যাবে ! আগে তুমি আমার পাখিকে ভাল করে দাও !

সূফী হেসে "আত্মা সঞ্জীবনী" মন্ত্রের সাহায্যে পাখির শরীরে প্রবেশ করল । রাণী অবাক হয়ে দেখলেন- রাজার দেহটা টলে পড়ে গেল এবং পাখির মৃত দেহটা প্রাণ ফিরে ফেল । খেয়াল করলেন না এসবের ফাঁকে কখন যেন দাসীর সেই বিড়ালটি তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ।

১২।
এমন একটা সুযোগের অপেক্ষায় ই ছিলেন রাজা । সূফী রাজার দেহ ছেড়ে পাখির দেহে প্রবেশ করতেই তিনি মূহুর্তেই নিজের দেহে ঢুকে পড়েন । বহুদিন পর নিজদেহে ফিরে এসে তিনি প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিলেন । তারপর তলোয়ার বের করে ধীর পায়ে পাখির দেহে থাকা সূফীর দিকে এগিয়ে গেলেন ।

উপসংহারঃ

"ছেলেগুলো যা ফাজিল ! শুধু শুধু খোঁচা মারে । মাঝে মাঝে পালক ধরে টান মারে, মাঝে মাঝে মাথায় ঠুঁয়া দেয় । ইচ্ছে করে ঠোঁকর মেরে এক-একটার চোখ খুলে নিই । কিন্তু তাতেও ভয় আছে । বাচ্চাদের কোন ক্ষতি হলে মালিক জানে মেরে ফেলবে ।" খাঁচায় বন্দি বিরক্ত পাখিটি আপন মনে নানা চিন্তার জাল বুনে চলে । কিন্তু তার বিরক্তিকে বাচ্চারা খুব একটা পাত্তা দে না । তারা মনের সুখে তাদের প্রিয় খোঁচা-খুঁচির খেলাটা খেলতে থাকে । তাদেরই বা আর কি দোষ ? তারা কি আর জানে পাখির ছদ্মবেশে থাকা কোন এক তান্ত্রিককেই তারা প্রতিনিয়ত খুঁচিয়ে যাচ্ছে ?

সেদিন বিড়ালটাকে ঢলে পড়তে আর রাজাকে উঠে দাঁড়াতে দেখেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায় সূফীর কাছে । রাজাকে তলোয়ার নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে তখনই উড়ে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে যায় । কিন্তু ভাগ্য খারাপ বলতে হবে তার । প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে সে যে গাছটাতে বসেছিল, কোন এক পাখি শিকারি তাতে ফাঁদ পেতেছিল । অজান্তেই সেই ফাঁদে আটকা পড়ে সূফী । শিকারি তাকে এনে এক পাখি ব্যবসায়ীর কাছে বেছে করে দেয় । ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তাকে কিনে নেয় বর্তমান মালিক ।

অন্যদিকে, রাজার সংসারে এখন চাঁদের হাট বসেছে । রাণীর কাছে কিছু বিষয় অস্পষ্ট, কিন্তু রাজার ভালবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি আর সেসব নিয়ে মাথা ঘামান না ।

সেদিন তার পাখিটি উড়ে চলে যাওয়ায় অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন । কিন্তু দুদিনেই সব সামলে নেন । প্রিয়জন মারা গেলে হয়ত তাকে স্মরণ করে দীর্ঘদিন কষ্ট পাওয়া যায়, কিন্তু চোরের মত পালিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের জন্য দীর্ঘদিন মনে কষ্ট পুষে রাখার কোন অর্থ হয় না । তাছাড়া সেদিনের পর থেকে রাজাও কেমন জানি একটু বদলে গেছেন । তাকে এখন অনেক বেশী সময় দেন, অনেক বেশী ভালবাসেন ।

নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলোকে রাজা রাণীর কাছে চেপে যান । পাছে, অন্য পুরুষের সাথে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন ভেবে রাণী যদি হিন্যমনতায় ভুগেন, সেজন্যে । পুরো ঘটনায় তো তার কোন দোষ নেই । তিনি তো জানেনও না যে আসলে কি ঘটেছে ! তাই এসব কথা এখন তাকে জানিয়ে কষ্ট দেয়ার কোন অর্থ হয় না । কিছু সত্য গোপন থাকাই ভাল ।

মর্ত্যের স্বর্গে এখন আবার আগের সেই আনন্দ ফিরে এসেছে । রাজা রাণীর ঘরও উজ্জল করে এসেছে একজন চাঁদবদন রাজকুমার । রাজপুত্রের বয়স যখন সাত, তখন একদিন হলো কি......

থাক সেসব । সেসব বলতে গেলে যে নতুন আরেকটা রূপকথা শুরু হয়ে যাবে ! এই রূপকথার আপাতত এখানেই পরিসমাপ্তি !

মরালঃ দুষ্টশক্তি সর্বদাই পরাজিত হয়।

অফটপিকঃ
ছোট বেলায় দাদুর কাছে শুয়ে শুয়ে কত কত রুপকথা যে শুনেছি তার ইয়ত্তা নেই। আনন্দের সময়গুলো এখনকার ডিজিটাল বাচ্ছা কাচ্চারা মিস করে যাচ্ছে।
আইনাস্টাইন বলেছিলেন- ইমাজিনেশান ইজ মোর ইম্পর্ট্যান্ট দ্যান নলেজ। কিন্তু এখনকার বাচ্চাকাচ্চারা নলেজের পিছনে এতটা সময় দেয় যে তাদের ইমাজিনেশান এর জন্য কোন সময়ই থাকে না।

কিছু রুপকথা লিখব বলে ঠিক করেছি। খানিকটা বাচ্চা কালের শোনা কাহিনী, খানিকটা আমার উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা। দেখা যাক কি হয় ?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ রহমান রুপকথার আমেজ পেলাম। লেখকের লেখার হাত চমৎকার ।
আখতারুজ্জামান সোহাগ বেশ লাগল রূপকথাটি পড়তে। একদম ডুবে গিয়েছিলাম গল্পের মধ্যে, এক দমে শেষ করলাম। অসাধারণ লেখনী। শুভকামনা লেখকের জন্য। আশা করছি ভবিষ্যতে আরও কিছু লেখা পাব এই লেখকের কাছ থেকে।
অপদেবতা লেখার স্টাইল ভাল , পুরানো গল্প, তাও পুরোটা পড়া হল।ভালই লাগল। কিন্তু প্রতিযোগিতার বিষয়ের সাথে মিল খুজে পাচ্ছি না। গল্পটা যদি সঠিক বিষয়বস্তু অনুসারে শেয়ার করেন তাহলে অবশ্যই ভোট পাওয়ার তালিকায় থাকবেন । শুভ কামনা থাকল।
শামীম খান আপনার রাজা রানীর গল্পে ডুবে গিয়েছিলাম । অসাধারন একটি লেখা । খুব ভাল লাগলো । শুভেচ্ছা ।

০৭ সেপ্টেম্বর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী