নিঃশব্দ কান্না অথবা...

বন্ধু (জুলাই ২০১১)

শুকনো পাতা
  • ৪৮
  • 0
  • ৩৬
কতক্ষন ধরে এভাবে বসে আছি জানিনা,আমার জানার ইচ্ছাও নাই,আমার তো মনে হচ্ছে এভাবে অনন্ত কাল বসে থাকলেও আমার খারাপ লাগবেনা...হঠাৎ পাশ থেকে কেউ বলে উঠল কন্ঠ শুনে মনে হল নাজনীনের কন্ঠ বলছে,দোস্ত তুই কোন কথা বলছিস না কেন?''আমি তখন ও চুপ।কি বলব আমি??কাকে বলব?কোন প্রশ্নেরই উত্তর কারো কাছে নেই,হঠাৎ পরিচিত কোন কন্ঠের আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকালাম,অবাক হয়ে গেলাম খুব!!এ কি??এ দেখি আমরা সব স্কুল ফেন্ড একসাথে ক্লাসে...

লুবনা খুব রেগে আমার বেঞ্চের সামনে দুই হাত কোমরে রেখে দাঁড়িয়ে বলল,
;এই মাইয়া,তুই কি উঠবি?পুরা ক্লাস মাছের বাজার হয়ে গেল আর ক্যাপ্টেন লাস্ট বেঞ্চে বসে গল্পের বই পড়ছে,উঠ বলতেছি...নাইলে কিন্তু এবার ম্যামকে আমিই নালিশ করব উঠ...
আমি মাথা না তুলেই বললাম,
;লুবা,তোর সমস্যাটা কি?দেখতেছস কতো মনোযোগ দিয়া পড়তেছি আর তুই এসে ঘ্যান ঘ্যান শুরু করছিস,আজিব!!প্লিজ,সবাইকে একটু চুপ করতে বল তোর গলার আওয়াজতো মাশাআল্লাহ তুই বল...
;কি বললি?আমি আমার গলার আওয়াজ মাশাআল্লাহ?দাড়া দেখাচ্ছি...
কানটা মনে হয় আমার শেষ হয়ে যাবে এবার!কারন লুবনা আমার কানের কাছে এসে ক্লাসের মেয়েদেরকে চুপ করতে বলছে।কিন্তু আমি কিছুই বলব না,কারন আমি তখন আর ক্লাসে নাই আমি আছি সাইমুম সিরিজের নায়ক আহমেদ মুসার সাথে শক্রুর সামনে!একটু পর ও বলে,
;তুই যদি সামনের বেঞ্চে না আসিস আমি একটু পর ম্যামকে বলে দিব তুই বইয়ের ভেতর গল্পের বই রেখে পড়িস।
কি মুসিবতে পড়লাম!উফ...মাথা তুলে বললাম,
;লক্ষী মেয়ে লুবনা,আমার ব্যাগে আজকে দারুন টিফিন আছে ওটা আজকে তোর আর আজকে তুই আমার সামনে বসবি আমি তোর পেছনে বসব কারন আমাকে আজকের ভেতর বইটা শেষ করতে হবে পুরা ক্লাস তুই ম্যানেজ করবি,ঠিক আছে?এখন যা...
লুবনা মহা ক্ষেপে বক বক করতে করতে চলে গেল,আমি জানি ও ঠিকই আমার সব গুলা কাজ করে দিবে এমন কি একটু পর আমার টিফিনটা এনে আমার মুখে তুলে দিবে।


হাফসা আমার কাধে হাত রেখে বলল,সুইটি আসেনি?''আমি মনে হল অন্য জগত থেকে মাত্র বাস্তবে এলাম কিছুনা বলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম,আস্তে আস্তে চোখ ঝাপসা হয়ে এলো আবার।মাথা নিচু করে ফেললাম।একটা আন্টী টাইপের কেউ আমাদেরকে বলল,
;তোমরা মেয়েরা এমনে বাইরে বইসা থাইকো না ভিতরে যাও,কতো মানুষ আইতাছে কি কইব দেখলে?
সেতু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,ভেতরে চল।কিন্তু আমি কিছু না বলে আমার মত বসে রইলাম ওখানে।আবার মনে হল পরিচিত কোন আওয়াজ শুনছি,সামনে তাকালাম...

;এসব কি বলছিস সুইটু পাখি?লুবনার বিয়ে হইছে মানে?কলেজে ঊঠে এত এত পড়া দেখে তোর মাথা পুরাই গেছেরে...!
আমার কথা শুনে সুইটি রেগে গিয়ে বলল,
;দেখ,তুই সব সময় সব কিছু হালকা ভাবে নিবি না,আমি সত্যি বলছি,লুবনার আকদ হয়ে গেছে ওর চাচার বাসায় হঠাৎ করেই ওর আম্মুও ছিল না বিয়েতে শুধু ওর আব্বু ছিল।
৭তারিখে অনুষ্ঠান তাই তোকে জানালাম।
;লুবনার আব্বুর মতো উদ্ভট টাইপের আব্বু আমি জীবনেও দেখিনাই!আজীব একটা মানুষ!
একটা মাত্র মেয়ে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়ার কি দরকার?!সেতুর কথা শুনে আমি বললাম
;বেচারি লুবনা,কত স্বপ্ন ছিল ওর ডাক্তারী পড়ার,কিন্তু সব শেষ,এখ্ন সাউথ আফ্রিকা যেয়ে জংলিদের সাথে পড়তে হবে।
সেতু বলল,
;আরে আর পড়া হবে কিনা ওর কে জানে,ওর জামাই ওর থেকে প্রায় পনের বছরের বড় দেখবি বিয়ে করেই লুবনা বাচ্চার মা হয়ে গেছে।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
;কি বলিস?পনের বছরের বড়???হায় হায়,আমার ছোট মামা আমার থেকে দশ বছরের বড় তাহলেতো লুবনার জামাই পুরা আঙ্কেল বয়সি!লুবনা একটা আঙ্কেলের সাথে সংসার করবে?!!
আমার কথা শুনে সুইটি হাসতে হাসতে বলল,
;শোন,তোর বাপ যদি এখন তোকে এই ইন্টারে পড়া অবস্থায় বিয়ে দেয় তাহলে তোর কপালেও আঙ্কেলই জুটবে,আমাদের দেশের ছেলেরা বিয়ে করে আঙ্কেল বয়সেই বুঝলি?হাহহাহাহ।


চোখের পানিতে ওড়নাটা ভিজে গেছে মনে হল,ঠিক ঠাক করে মাথা তুলতেই দেখি কিছু দূরে চেয়ারে বসে আছে লুবনার আব্বু।আমি তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন,প্রচন্ড রাগী আর এ্ক রোখা টাইপের মানুষটাকে সবাই খুব ভয় পাই,তার কথার উপরে কথা বলার সাহস লুবনাদের বাসায় তেমন কারও নেই।সে জন্যই এ্কমাত্র মেয়ে হওয়া সত্বেও লুবনাকে ওর চাচার বাসায় থেকে পড়তে হয়েছে আর ওর বাবা মা থেকেছেন সে গাজীপুর ওর ভাইকে নিয়ে।একা একা লুবনা কাটিয়েছে ওর কিশোরী বয়স আর ভাবতো কবে স্কুল ছুটি হবে কবে বাড়ী যাবে আম্মুর কাছে,কবে পড়া শুনা শেষ হবে।স্কুল জীবন শেষ হয় কিন্তু লুবনার আর আম্মুর কাছে যাওয়া হয়নি চলে গেছে শ্বশুর বাড়ী।বিয়ের ৩মাস পর ওর স্বামীর সাথে চলে যায় তার কর্মস্থল সুদূর সাউথ আফ্রিকা।কিছুদিন পর লুবনা ফোন করেছিল আমাকে,
;দোস্ত,তোকে একটা গুড নিউজ দেয়ার জন্য ফোন দিয়েছি বলতো কি?
আমি বললাম,
;কি নিউজ?তুই ওখানে একটা ভাল কলেজে ভর্তি হয়েছিস এটাইতো?
;নারে,আমার মনে হয় না আর এবছর কলেজে ভর্তি হওয়া হবে,সামনের বছর হব দেখি।
;কেন?এ বছর না কেন?!
;কিভাবে আর হব,দুইজন ছিলাম আগে এখন তিনজন হয়ে গেলাম যে...বলে হাসতে লাগল লুবনা।আমি কিছুক্ষন কপাল কুঁচকে থেকে চোখ বড় বড় করে বললাম,
;বাপরে!!বলিস কি দোস্ত??হাহাহাহা,কাহিনী শুরু করে দিলি ভাল ভাল...একলা একলা জঙ্গলে বসে সংসার করে এখন আম্মা হয়ে যাচ্ছ ভালই...
;হুম,তোদের কে খালামনি বানিয়ে দিলাম বুঝলি?হাহাহা
;খালামনি?হায় হায়,দোস্ত,তাহলেতো মনে হয় আমাদের বিয়ে আর তোর বাচ্চার বিয়ে একসাথে হবে!তখন সবাই দ্বিধায় পড়ে যাবে আমাদের বয়স নিয়া...হাহাহা
কথাটা বলে আমিও হাসছি লুবনাও হাসছে...

তারপর............


চারদিন আগে লুবনা ফোন করেছিল রাতে,
;দোস্ত,আমি কাল সকালে হাসপাতালে যাচ্ছি,সম্ভবত কালই সিজার করাবে ডাক্তার।
;ওহ,তুই কি ভয় পাচ্ছিস?রাকিব ভাইতো আছেই টেনসন করিস না,আল্লাহকে ডাক।
;দোস্ত তোকে একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছি,আম্মুকে বলতে চেয়েছিলাম পারিনি রাকিব কেও বলব।
;কি কথা?
;দোস্ত,আমি মনে হয়না হাসপাতাল থেকে আর বাসায় ফিরে আসব,কেন জানি মনে হচ্ছে তোর সাথে আমার এটাই শেষ কথা...
আমি মাঝখান থেকে বললাম,
;কি আবল তাবল বলা শুরু করলি?কিছুই হবেনা চুপ থাক,আর মানুষের কি বাচ্চা হয়না?
;নারে,আমার মন বলছে আমার মেয়েটাকে আমি একবার কোলেও নিতে পারবনা তার আগেই চলে যাব,তাই তোকে বলে যাচ্ছি,দোস্ত,আমি মরে গেলে আমার মেয়েটাকে রাকিবের কাছে দিস না ওকে আমার আম্মুর কাছে দিস,রাকিবের কাছে থাকলে ও আমার মেয়েকে সৎ মায়ের কাছে বড় করাবে আমি চাইনা এটা,আমি মরে গেলে আমার আম্মু খুব কষ্ট পাবে আমি জানি আমার আম্মু আমার মেয়েকে আমার থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসা দিবে তাই আমি চাই আমার মেয়েটাকে আমার আম্মু মানুষ করুক আমি...।
কান্নায় কন্ঠটা বুজে আসে লুবনার,এপাশে আমার ও চোখ ভিজে যায়,ও আবার বলে,
;তুইতো জানিস,রাকিব আমাকে শুধু ওর ঘরের বঊ ভেবেছে,জীবন সাথী বা ভালোবাসার মানুষ ভাবেনাই,আমার সুখ দু;খের ভাগ নেয়ার সময় ওর কখনো হয়নি,আমার চাওয়া পাওয়ার মুল্য দেয়ার সময় ওর হয়নি,ও আমার মেয়েকেও কখনো বুঝবেনা আমি জানি,আমিতো বিয়ের পর মরেই গেছি বলা যায় আমি......
আবা্র কান্নায় কন্ঠ আটকে যায় লুবনার।একটু পর আবার বলে,
;মাঝে মাঝে খুব রাগ হই আব্বুর উপর,কোন অন্যায়ের শাস্তি উনি আমাকে দিয়েছিলেন জানিনা,উনি ভেবে বসে আছেন মেয়ে বড় হয়েছে সৎ পাত্রস্থ করেছি দায়িত্ব শেষ মেয়ে কতটা সুখি আছে সেটা বুঝার ক্ষমতা নেই কেমন বাবা আমার......
আবার কান্নায় আওয়াজ আটকে যায় লুবনার।


কেউ একজন বলে উঠল,জানাজার জন্য লাশ নিয়া যাবে একটূ পর কে কে শেষ বারের মত দেখবেন দেখেন''তাকিয়ে দেখি লুবনার মামী শ্বাশুরী বলছে কথাটা।ধীর ধীরে আমি উঠে দাড়ালাম তাকালাম লাশটার দিকে,মনে পড়ল কাল রাতে সেতু ফোন করে লুবনার শ্বশুর বাড়ীতে আসতে বলে আমাকে,কেন জানতে চাইলে কিছু না বলেই লাইন কেটে দিয়েছিল সেতু।চিন্তিত মুখে আর দুরু দুরু বুক নিয়ে লুবনার শ্বশুড় বাড়ীতে পা রাখি এত মানষ আর ওর আম্মুর চিৎকার শুনে বুঝতে পারলাম সব শেষ...

আসার পর থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত লুবনার লাশের পাশে বসে আছি,আর বিশ্বাস করার চেষ্টা করছি লুবনা চলে গেছে অনেক দুরে,ঝাপসা চোখে তা্কালাম লুবনার দিকে,কেমন কালো হয়েগেছে মুখটা,কে যেন পাশে দাড়ীয়ে বলছে,মেয়ের মা হলে চেহারা কালো হইয়া যায় এ জন্যই লুবনার মুখটা কালো হইয়া আছে''।হঠাৎ আমার মনে পড়ে গেল,লুবনার মেয়ের কথা।আমিতো ভুলেই গিয়েছি ওর কথা...কোথায় ও??দোতালা থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পেলাম মনে হল...এক ঝাটকায় বের হয়ে এসে সিঁড়ি ভাঙ্গতে লাগলাম আর কানে বাজতে লাগল,
দোস্ত,আমার মেয়েটাকে যেন আমার আম্মু মানুষ করে......ওকে রাকিবের কাছে দিস না.........আমি জানি আমি আর হাসপাতাল থেকে ফিরবনা.........
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার নাহিদ হোসেন গল্পটা, বেশ লাগলো।
শুকনো পাতা সূর্য,অনেক ধন্যবাদ
শুকনো পাতা @রোমেনা,অনেক ধন্যবাদ
সূর্য চিরায়ত বাংলার মেয়েদের কথা; স্কুল পেরুলেই বিয়ে দিয়ে দাও। ভাল হয়েছে।
রোমেনা আলম সুন্দর লিখেছেন।
শুকনো পাতা @আশা,আশাহত হলাম মনে হয়্‌,...!!!
শুকনো পাতা @নয়ন,অনেক ধন্যবাদ
শুকনো পাতা @রনীল,অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য...
আশা হাজার ব্যস্ততার মাঝে মনটাকে একটু ফ্রেশ করতে আমার প্রিয় সাইট গল্পকবিতা ডট কমে ঢুকলাম। বহু গল্প বাছাই করে পড়তে লাগলাম আপনার টা। ভালোই লাগছিল। কিন্তু আমার কপাল মন্দ, টাইমআপ। তাই চলে গেলাম সম্পূর্ণ না পড়েই। বিচার করার টাইম পেলাম না, তাই ভালো একটা মার্ক পেলেন। কারণ যদি আবার কম হয়ে যায়?

০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪