অলৌকিক

শৈশব (সেপ্টেম্বর ২০১৩)

সুজিত দেব রায়
  • 0
  • ১০
শৈশব । শৈশবের অনেক কথাই ভুলে গেছি । কিন্তু সেই ঘটনাটি আমি ভুলতে পারি না । কথাটি আমি কাউকে বলিনি । এরকম কথা কাউকে বলার না ।
আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি । আমাদের স্কুলটা আমাদের গ্রাম থেকে এক কিলোমিটারের মত দূরে ছিল । আমরা লম্বা একটা কাচা রাস্তা ধরে যাওয়া আসা করতাম । সেদিন স্যারের একটা কাজে আমাকে ১ ঘণ্টা পর যেতে হয়েছিল । আমি একা একা হাঁটছি । ভাল লাগছিল না । কারন অন্যদিন সবাই একসাথে যাই, খুব মজা হয় । কিছুক্ষণ হাটার পর আমি দেখতে পেলাম একাও বাড়ি ফিরছে । একা আমাদের ক্লাসের ১ নম্বর ছাত্রী । খুব মিষ্টি । স্কুলের বড় ভাইয়েরা আর আমাদের ক্লাসেরও অনেক ছেলেরা তার পিছনে ঘুরাঘুরি করে ।
বাতাস খুব জোরে বইছে । একা তার জামাতে এক হাত রেখে উদাস ভঙ্গিতে হাঁটছিল । আমি একটু তাড়াতাড়ি হেটে তার সাথ ধরলাম । এখন আমরা একসাথে হাঁটছি । আমি কিছু বলছি না । আমার কম কথা বলার স্বভাবের জন্য ক্লাসের তেমন কারও সাথে আমার পরিচয় নেই । মেয়েদের সাথে তো নয় ই ।
কিছুক্ষণ হাটার পর একা বলল, “বিশ্বজিৎ । ভালো আছ”?
আমি বললাম, “হ্যাঁ । তুমি ? স্যার কি তোমাকেও কাজে লাগিয়েছিলেন”?
একা হেসে বলল, “হ্যাঁ”।
“ও”।
“আচ্ছা বিশ্বজিৎ, তুমি এতো কম কথা বল কেন”?
“না । এমনি”।
“তুমি যে সেদিন ভুতের মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছ, আমার খুব ভাল লেগেছে”।
“থ্যাংকস । তুমিও ভাল অভিনয় করেছিলে”।

একা তার কপালে আসা চুল সরিয়ে বলল, “আচ্ছা, তুমি কি ভুত বিশ্বাস কর”?
আমি বললাম, “দেখো একা, ভুত আছে ও আবার নেই ও”।
“মানে”!
“মানে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো যতক্ষণ সচেতন থাকে ততক্ষণই বিভিন্ন প্রকারে বিভ্রান্তের মাধ্যমে আমরা ভুতের ভয় পেতে পারি । কিন্তু যখন আমাদের ইন্দ্রিয় অচেতন তখন ভ্রান্ত সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা নেই । আর ভুত ও নেই”।
“তুমি বলছো ভুত নেই । আরও একটু ব্যাখ্যা করবে”?

আমি বইগুলো আরেক হাতে নিতে নিতে বললাম, “দেখ, একজন সুস্থ মানুষ কে যদি আমি রাতের অন্ধকারে বলি সামনের গাছটির উপর ভুত থাকে । তাহলে সে ঐ ভুত এবং গাছ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণার সৃষ্টি করতে করতে যাবে । এবং গাছের কাছে আসার সাথে সাথে তার মাথায় ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হতে পারে । তখন কোন সাদা কাপড় ঊড়ে গেলে তার কাছে মনে হবে কোন বিধবা মহিলা হেটে বা ঊড়ে যাচ্ছে । কিন্তু কোন নেশাগ্রস্ত লোক সহজেই ঐ গাছের নিচে সারারাত কাটাতে পারবে”।

একার চোখে বিস্ময় দেখা যাচ্ছে । বলল, “এতো ভালো উত্তর দিবে আশা করি নি”!
আমি হেঁসে বললাম, “মুখে যা এসেছে বলে দিয়েছি । অনেকে মানবে, অনেকে না”।

একা এবার হেঁসে বলল, “বিশ্বজিৎ”?
“কি”?
“আমি যদি ভুত হই”?
এবার আমি হাঁসতে শুরু করলাম । একাও হাসছে । হটাৎ লক্ষ্য করি একার হাতে কিসের দাগ ! আমি জিজ্ঞেস করলে বলল, শারমিন নাকি কম্পাস দিয়ে ফুটো করে দিয়েছে । খুব ব্যথা পেয়েছে নিশ্চয়ই ।
খুব বাতাস বইছে । রাস্তাটা খুব বেশী ব্যস্ত নয় । তাই হাঁটতে ভালই লাগছে । আমার খুব পিসাবে পেয়েছে । অনেকক্ষণ থেকে সহ্য করছি । আর সম্ভব না । আমি একাকে বইগুলো ধরতে দিয়ে বললাম, “একা তুমি হাট । আমি আসছি”।
একা হেঁসে বলল, “ঠিক আছে। ঠিক আছে”।

আমি একটু পিছনে চলে গেলাম । আমি পিসাব করে উঠে সামনে তাকালাম ।
একি! একাকে দেখা যাচ্ছে না ! গেলো কোথায় ? পিছনে একটি লোক অনেকগুলো গরু নিয়ে আসছে । আমাকে একটি রিকশা ক্রস করল । বাতাস বইছে । আমি একা একা বলে চিৎকার করলাম । না একা নেই ! তাহলে কি কোন সাইকেল বা রিকশা এসেছে আর চলে গেছে ? হতে পারে । আমার বইগুলোও রাস্তায় রেখে চলে গেল । কাজটা কি ঠিক করল ! যাক । আমি বাসায় চলে গেলাম ।

পরের দিন স্কুলে এসেই দেখি হাসান আর জুয়েল ক্লাসরুমে বসে আছে । আর কেঊ নেই । আমি বললাম, “কিরে? কি হয়েছে”!
হাসান বলল, “তুই জানিস না”!
“কি”?
“কাল দুপুরে একা সাপের কামড়ে মারা গেছে । আজ স্কুলে এসে কমনরুমে একার লাশ পাঊয়া গেছে । কাল সে স্কুলেই মারা যায় । সবাই এখন তাদের বাসায়”।

কথাটা শুনে আমার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায় । আমি কিছু বুঝে ঊঠটে পারছিলাম না । বুকের মাঝে অদ্ভুত একটা ব্যথা হয় ।
আজ দীর্ঘ ৫৭ বছর পর সেই দিনটির কথা হটাৎ মনে পড়ে গেল । সে দিনের অদ্ভুত ব্যথাটা আজও হচ্ছে !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক সুন্দর গল্প...ধারাবাহিকতা অনেক ভালো...প্রথম গল্প হলেও বেশ পাকা হাত বলতে হবে..েএকটু সমালোচনা যদি করতে হয় তাহলে এই লাইনটা নিয়ে “কাল দুপুরে একা সাপের কামড়ে মারা গেছে । আজ স্কুলে এসে কমনরুমে একার লাশ পাঊয়া গেছে । কাল সে স্কুলেই মারা যায় ।”-এতে পাঠকের বিভ্রান্তি থেকে যাবে...
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
মোঃ সাইফুল্লাহ খুবই সুন্দর। আমার মা গলব্লাডারে ক্যান্সারে আক্রান্ত। আল্লাহর কাছে আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন ও আমার মায়ের শাররিক অসুস্থতার বিষটি মানবিক দিক দিয়ে বিচার করে যে যতটুকু পারেন আর্থিক সাহায্য করবেন । সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা : মোঃ সায়ফুল্লাহ ,সঞ্চয়ী হিসাব নং -১০১৭৪০৪, সোনালী ব্যাংক,মাগুরা শাখা মাগুরা। যোগাযোগের ঠিকানা :০১৯১১-৬৬০৫২২।
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটে থাকে যা আমাদের ধারণার বাইরে, কিন্তু অস্বীকার করা যায়না- এটাও তেমনি একটা কিছুর গল্প। ভাল লিখেছেন। শুভেচ্ছা রইল।
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
এশরার লতিফ ভালো লাগলো গল্পটি।
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

১৫ আগষ্ট - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪