হাতে জ্বলতে থাকা সিগারেটটা মাঝামাঝি এসে থেমে যায়। আমি থামিয়ে দেই । একটা সিগারেট দুবার চালানো আরকি। মাসের শেষ দিন গুলোতে জীবনের ছকটা আমার এমনি - আধপোড়া। আমার পিওর লেদারের মানিব্যাগটার তুলোট হয়ে যাওয়ার কাহিনির মতোই। এখন পাঁচ টাকার দাম অনেক আমার কাছে। স্টুডেন্টের মায়েরে বাপ। বেতনটা মাসের শেষদিকে দিলে কি এমন ক্ষতিটা হয়। একটা পুরোনো পাঁচতলা বিল্ডিং। পুরোটাই একটা ম্যাচ। চল্লিশ জন বর্ডার আমারা। চল্লিশটা বুনে যাওয়া স্বপ্ন। আমার ঘরটা ঠিক পাঁচতলায়। বলা যায় একটা চিলেকোঠার ঘর। ওপরটায় টিনের ছাদ! শহরটা যেহেতু রাজশাহী তাই গরমের দিনগুলোতে হাঁপিয়ে ওঠা গরম আর শীতের রাতে গায়ে চড়াতে হয় দু-তিনটা লেপ-কাঁথা-কম্বলের ওঁম। ঘরটা আমার বেশ বড়ই অন্য সিঙ্গেল রুম গুলোর তুলনায়। চারপাশে হালকা আকাশি রঙে পালিশ হয়ে থাকা চারটে দেয়াল যেন লেখকের ড্যাশবোর্ড। দেয়াল জুড়ে কলম-পেন্সিলে লিখে চলা আমার কিছু আকিঁবুকি ভাবনা - অচেনা কোন নারীর অবয়ব- রেখাচিত্র ; কিংবা আমার ভাল লেগে যাওয়া ওর(!) সবচে আবেগ মাখা কথাটা -" আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে"। এই তো আমি। পড়ার টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা - কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, অক্সফোর্ড ডিকশনারি, বাংলা অভিধান, দ্য ভিঞ্চি কোড কিংবা হিমু সমগ্র। রংচটা বেডশিটের ওপর আয়েশি ভঙ্গিতে বসে থাকা চট্ চটে একটা বালিশ। বালিশ। আমার মতন ব্যাচেলরদের জন্য ওটাই অনেক কিছু। কত রাত ওটাকে মাথা থেকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরেছি । ওটার ভেতর চাপা দিয়েছি কত - হঠাৎ পাওয়া কষ্টকে। মুছেছি ভেজা চোখের কত অবুঝ আবেদন। কিংবা হয়ত কাল এক্সাম। আজ রাতে চোখের পাতা জোড়া এক করা যাবেনা কিছুতেই। বইয়ের পাতায় তাকিয়ে চোখদুটো ঘোলাটে হয়ে আসবে বার বার।দুহাতে চোখ রগড়ে নিয়ে, কিছু জলের ঝাপটা দিয়ে আবার বুলিয়ে নিতে হবে কিছুক্ষণ আগে পড়া মাইক্রোপ্রসেসরের ফাংশনটা। তারপর হয়ত বইয়ের ওপরই মাথা লাগিয়ে ঘুম। ঠিক আটটায় মুঠোফোনের এলার্মটা হয়ত জাগিয়ে দেবে আমায়। তারপর ফ্রেশ হয়ে - শাওয়ার সেরে নিয়ে, প্রিয় টি-শার্টটা গায়ে চাপিয়ে এক দৌড়ে ভার্সিটি। এক্সাম শেষে হয়ত ওর মুখোমুখি হয়ে যাওয়া। ওর লাজুক কিছু প্রশ্ন আমার সঙ্কোচময় কিছু উত্তর। তারপর রুমে ফিরে ওকে নিয়ে নতুন একটা স্বপ্ন গাঁথা। আবেগের অহেতুক বাড়াবাড়ি। নাহ্ আজো বলা হয়নি কতটা ভালোবাসি তোমায় ! কিংবা কাল হরতালের রাজনীতি। ভার্সিটি বন্ধ। আজ অনেক রাত জেগে পছন্দের কোন মুভি দেখা।তারপর পুবের আকাশ ক্ষাণিকটা ফর্সা হয়ে এলে ঘুমুতে যাওয়া। সকালের ঘুমটা হয়ত ক্ষণিকের জন্য ভেঙে যাবে ককটেল-টিয়ার শেল-সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে। আমাদের শহরে এইসব চলে! আমি পাশ ফিরে ঘুমের নতুন অধ্যায় শুরু করবো। এরপর পুরো বিছানা গড়িয়ে ঠিক মধ্যাহ্নে নিজেকে জীবিত আবিষ্কার করবো। বিছানা হাতড়ে মুঠোফোনের স্ক্রিনে তখন তিন তিনটা মিস্ ড কল আর ওর একটা টেক্সট -" এখনো ঘুমুচ্ছো!" তারপর আড়মোড়া ভেঙে একটা তৃপ্তি - উমমমমম।
কিংবা আজ মাত্র দুটো ক্লাস। কলা ভবনের সামনে যা জম্পেশ একটা আড্ডা হবে না! একেকটা টপিকে তর্ক হবে অনেকক্ষণ। টপিক আসবে টপিক যাবে। মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখে নেয়া যাবে লাল নীল পরীদের। কারো কারো সাথে হয়ত চোখাচোখিও হবে। ওদের কারও চোখ থাকবে ভীষণ শীতল - ভাবলেশহীন, কারও চোখে করুণা, কারও কারও ' এক্ষুণি খেয়ে ফেলবো' যেন। দীপা হঠাৎ গেয়ে উঠবে ওর পছন্দের কোন গানের কলি।এরপর আমরা সবাই হেঁড়ে গলায় ওটাকে টেনে নিয়ে যাবো বহূদুর - ফুল না ফোঁটা পর্যন্ত।
কিংবা? কিংবা সেদিনটা হবে শনিবার। শেষ বিকেলে কাঁচা ঘুমটা হঠাৎ ভাঙে যাবে। মনে পড়বে আজ আবার স্টুডেন্ট পড়াতে যাবার কথা। এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসবো আমি। মুঠোফোনের ঘড়িটায় তখনো দশ মিনিট বাকি থাকবে। আমি থামিয়ে দেয়া সিগারেটটা আবার জ্বালাবো। কুন্ডুলি পাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে মনে হবে - মধ্যবিত্তের জীবন তো এমনি, একবার থেমে সাহস সঞ্চয় করে আবার এগিয়ে যাওয়া।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জাকিয়া জেসমিন যূথী
দিনলিপি স্টাইলের লেখা হলেও গল্পটি ভীষণ সুন্দর। শুধু সুন্দর নয়, ভীষণ সুন্দর। আপনার অন্য কোন লেখা আমি পড়েছি কিনা মনে পরছে না। তবে, এই লেখাটি পড়ে বলতেই হচ্ছে, না বলে পারছি না- আপনার লেখনী হাতে -ধার আছে!!! শুরুরু লাইনটা আর শেষের লাইনটা পড়লেই পাঠকের মুগ্ধতা ছড়াবে। শুধু একটা বিষয় ধাঁধাঁ ছড়িয়েছে মনে- শুরুতে লিখেছেন, "শহরটা রাজশাহী শহর..."; আবার শেষে এসে লিখেছেন, ভার্সিটি...তাও ঠিক আছে। কিন্তু কলা ভবন কি 'রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতেও আছে?' ...জাস্ট মনের ভেতরে খচখচানি যে, রাজশাহী আর ঢাকা শহর মিলিয়ে কি গল্পটি লেখা নাকি আমার বোঝার ভুল?? জানাবেন। শুভকামনা ও শুভেচ্ছা রইলো। লেখার পথ ধরে আপনি অনেক দূর যাবেন।
হুম রাবিতেও কলা ভবন আছে............ শহীদুল্লাহ কলা ভবন, মমতাজ উদ্দিন কলা ভবন, রবীন্দ্র কলা ভবন। পড়বার জন্য ধন্যবাদ। শুধু প্রশংসা নয় বরং সাথে গঠনমূলক সমালোচনা করলে খুব খুশি হবো।
লেখককে 'ধন্যবাদ' বলার খুব একটা আবশ্যকতা নেই। আপনি লেখক বা কবির লেখাটি পড়ুন, এবং লেখাটি সম্পর্কে আপ[অনার সুচিন্তিত মতামত, ভালো লাগা, অথবা উপদেশ প্রদান করুন। ভোট এবং সাজেশন দুটোই একজন নবীন লেখকের জন্য প্রয়োজনীয়।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।