চোর অতপর......

পূর্ণতা (আগষ্ট ২০১৩)

হোসাইন সুনজন
শীতের রাত। ঠান্ডা বাতাস বইছে। সদ্য নির্মিত রাস্তার দু’ধারের গাছগুলোর শা শা আওয়াজ হচ্ছে। পথের দুধারকে ঝিঝিময় করে তুলছে ঝি ঝি পোকাগুলো। আজকের চাঁদের আলো বড্ড বেশি বিরক্তিকর লাগছে অর্ক আর ন্যাড়ার কাছে। অথচ এক সময় চাঁদের আলো দেখলে লোভী হয়ে উঠত অর্ক। কবি হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। তার প্রিয় কবি হেনার হাত ধরে জ্যোৎসনা রাতে ঝিঝি ডাকা পথে হাটার স্বপ্ন দেখতো, তা কখনও হয়ে উঠেনি। কারণ হেনার বাবা তাকে কখনও সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। ইউনিভার্সিটির প্রথম দিক থেকে অর্কের লেখার ভক্ত ছিল হেনা। ইউনিভার্সিটির ছেলে মেয়েদের কাছে লাইব্রেরীর সিড়ির গুণে এই দুটি মুখ খুব পরিচিত হয়ে উঠেছিল। প্রতিদিন একই টি-শার্ট পড়া অগোছালো ছেলেটার সাথে পরিপাটি সুন্দরী হেনাকে দেখে ছেলেরা ঈর্ষায় জ্বলত আর মেয়েরা ভ্র“-কুচকাত। আর অর্ক খুব গর্বিত হয়ে হেনার আর একটু কাছ ঘেষে বসত আর ভাবত কবি হতে হলে দুটি জিনিসের খুব দরকার একটি হচ্ছে কোন সুন্দরী নারীর গভীর সংস্পর্শ আর অন্যটি হচ্ছে উত্তপ্ত রাজনীতির সামান্য ছোঁয়া।
‘কি ভাবছ অক্কদা?
অর্ক শ্রোতার গুনাগুন চিন্তা না করেই উত্তর দেয় হেনার কথা ভাবছি।
ঐযে মেয়েটা তোমাকে জেলখানায় দেখতে আইত আর তোমার সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাঁদত হে?
অর্ক মাথা নাড়ে। তার চোখ দুটো ছলছল করে উঠে। এই জ্যোৎসনা রাতে সেটা ন্যাড়াকে এড়িয়ে যেতে পারে না। ন্যাড়া কি বলবে ভেবে পায়না। সে চুপচাপ হাটতে থাকে। মানুষ যে জিনিসটি নিয়ে ভাববেনা চিন্তা করে সেটিই তার ভাবনায় ঘুরে ফিরে আসে। যে জিনিসটি এড়িয়ে চলতে চায় সেটিই বারবার তার সামনে এসে দাঁড়ায়। অর্ক বারবার চেষ্টা করেছে তার অতীতকে পেছনে ফেলতে। তার অতীত যাতে তাকে না ফেরায় সভ্য জগৎ ছেড়ে সে বেছে নিয়েছে বস্তির অন্ধকার জীবন। ছোট্ট এই ন্যাড়াকে সে জীবনের অবলম্বন ভেবেছে। এই ন্যাড়ার মধ্যে অনেক কিছুর অভাব আছে যার অন্যতম হচ্ছে কৃত্তিমতা। শিক্ষিত সভ্য মানুষগুলোর কৃত্তিমতা ওর মধ্যে নেই। অর্কও ধীরে ধীরে সভ্য মানুষগুলোর নৈতিকতা বিসর্জন দিতে শুর“ করেছে। এতদিন ধরে ন্যাড়া যে রিহার্সেল তাকে করিয়েছে সময় এসেছে তার পরীক্ষা দেওয়ার। চাইলে ন্যাড়া একাই কাজটা করতে পারত। কিন্তু না, অর্ককে বসিয়ে রাখলে চলবে না। তাকে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে।
অর্কের নাকে হাসনাহেনার গন্ধ আসে। রাস্তার পাশে সবুর মাস্টারের বাড়িটা হেভি। চারদিক দিক থেকে স্বল্প উচ্চতার পাঁচিল ঘেরা অনেক গাছপালার মাঝখানে ছোট্ট একটি ঘর। কাঠ আর বাঁশের কম্বিনেশনে তৈরি ঘর। বাড়ির সামনে হাসনা হেনা আর বিভিন্ন ফুলের বাগান। বুঝা যায় হাসনা হেনার প্রতি আলাদা একটা দূর্বলতা আছে ব্যাটার। পুরো বাড়িটা একটি পার্কের মত দেখায়। ইচ্ছে করলেই যে কেউ পাঁচিল টপকে বাড়ির ভিতরে যেতে পারবে, কিন্তু কুকুরের ভয়ে কেউ যায়না। দুর থেকে মাঝখানের ঘরটাতে বসার যে কারও লোভ হবে। ন্যাড়া বিড় বিড় করে ব্যাটা ঘুষের ট্যাহা দিয়া স¹ বানাইছে। অর্ক জানে ন্যাড়া ভুল বলছে কিন্তু প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে হয় না। সবুর মাস্টার এর সাথে এই রাস্তায় নিয়মিত হাটার সুবাধে পরিচয় আছে অর্কের। প্রাইমারী স্কুলের মাস্টার ছিল। কোন এক রহস্যময় ঐতিহাসিক কারণে বিয়ে শাদী করেননি। সম্ভবত রিটায়ার্ডের সময় হাতে পাওয়া প্রভিডেন্ট ফান্ড আর জমানো টাকা দিয়ে তৈরি করা তার একান্ত নিজস্ব এই স্বর্গ। অর্কের ইচ্ছে হচ্ছিল পাচিল টপকে গিয়ে ঘরটার ধবধবে বিছানায় কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে। বসে বসে কবিতা লিখে। কোন এক কবি বলেছিল ধবধবে সুন্দর বিছানায় না বসলে সে কবিতা লিখতে পারে না। তাই হয়ত বস্তির তেল ছিটছিটে বালিশ আর ময়লা বিছানায় থাকতে থাকতে অর্ক একটি কবিতাও এতদিনে লিখতে পারেনি। না একা না হেনা থাকলে ভাল হত। এমন হাসনা হেনা বেষ্টিত ঘরে হেনা না থাকলে সে একা থাকতেই পারত না। হেনার কোলে মাথা রেখে গান শুনতে শুনতে সে রাত শেষ করে দিত। তা কখনও হবে না সে জানে।
হেনার সাথে তার শেষ দেখা হয়েছিল জেল থেকে বের হওয়ার মাস দুয়েক আগে। অর্কের সমস্ত ভালবাস ফেরত দিতে এসেছিল। অগ্নি গোলকের মত দুটি ক্লান্ত শ্রান্ত চোখ ছাড়া অর্কের আর কিছুই মনে পড়ে না। একটা জিনিস সে ফেরত দিয়ে যেতে পারেনি। ধরা পড়ার আগে অর্ক তার ব্যাগে একটি রিভলবার চালান করে দিয়েছিল সেটি। অর্ক বলেছিল ওটা তোমার কাছে আমার চিহ্ন হিসেবে থাক। হেনা কিছুই বলেনি। যাওয়ার সময় ছোট্ট একটি কাগজ অর্কের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল, অনুরোধ এখন পড়ো না আমি চলে গেলে পড়। অর্ক যখন কাগজটা খুলে পড়ল তখন তার কিছুই করার ছিল না। শুধু চার দেয়ালের মাঝে ফুসফাস করা ছাড়া। হেনা লিখেছিল আমি তোমাকে অনেক আগেই গ্রহণ করেছি, আমার পক্ষে আর কাউকে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। আমার মা-বাবা আমার জন্য যে আয়োজন করেছে তাতে আত্মহত্যা করার মত মেয়ে আমি না ভাল করেই জান, তারা আমাকে প্রতিটি রাতে বসে বসে কান্নার ব্যবস্থা করেছে। তোমার দেওয়া যন্ত্রটি আমার ভবিষ্যৎ জীবনের সহায়ক হ্েব। সম্ববত আর কখনও জীবিত দেখা হবে না। পরকালে বিশ্বাস না করাটা তোমার কাছে শিখেছি, তাই তার নিশ্চয়তা দিতে পারছিনা। ভাল থেকো।
আর কোনদিন আসেনি সে। অর্কও জেল থেকে বের হয়ে খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।
বড় রাস্তা ছেড়ে পুল পেরিয়ে তারা এখন খালের অন্যপাড়ের রাস্তা দিয়ে হাটছে। কেউ কোন কথা বলছেনা। অর্কের ভাবনার জগতে ন্যাড়াও যেন থই হারিয়ে ফেলেছে। খালের উপর বাধ দিয়ে বসানো থই এর মধ্যে আটকা পড়া পুটি মাছগুলো লাফাচ্ছে আর কই মাছের পাকনা থই এর কাঠির সাথে ফরফর আওয়াজ করছে। ন্যাড়া টর্চের আলোটা থই এর উপর ফেলতেই অর্ক দেখল একটি ডোরা সাঁপ মাছ খেয়ে ধুমসি হচ্ছে। মাছগুলো সাঁপের মুখ থেকে বাঁচার জন্য এদিক ওদিক লাফাচ্ছে। মরার আগে যেন বাঁচার রিহার্সেল দিচ্ছে। মানুষও মরার আগে বোধ হয় এরকম রিহার্সেল করে। আরেকটু বাঁচার জন্য হাত পা ছুড়ে, ট্রায়াল দেয়। ন্যাড়া বিড় বিড় করে ‘শালা মানুষ থই বসাল আর মাছগুলো খেয়ে যাচ্ছে সাঁপ’। অর্ক ভাবল ন্যাড়া আসল সাঁপ চিনেনা। চাঁদের আলো কিছুটা কমে আসছে। ঠান্ডা হাওয়া গায়ে লাগছে। সুনসান শব্দ ছাড়া আর কিছু কানে আসছে না। জোনাকী পোকাগুলো অগোছালো উড়ছে এদিক ওদিক। ন্যাড়ার কথা ঠিক থাকলে বাড়িটা আর বেশি দূরে নয়, মাইল খানেক। খালের পাড় ধরে হাটলে ডানদিকে বিলের মাঝে বাড়িটা।
খালের এপাশটায় আগে কোন ঘরবাড়ি ছিলনা। খাল পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের সীমানা নির্ধারিত অর্থাৎ শহরের সীমানা। খালের এপাশে বিল আর বিল। এখন শহরের মানুষগুলোর চোখ পড়েছে এই বিলের উপর। বিশেষ করে রিয়েল এস্টেট কোম্পানী ও প্রবাসীদের। রিয়েল এস্টেট কোম্পানীগুলো জমির মালিক দরিদ্র কৃষককে দশ/বিশ হাজার টাকা দিয়ে খুঁটি গেড়ে সাইনবোর্ড তুলে আর শহর থেকে দুই মিনিট, পাঁচ মিনিট ইত্যাদি দূরত্বে সুন্দর আবাসনের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিযে নেয়। প্রবাসী যুবকগুলো ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ইত্যাদি জায়গায় দিনরাত কামলা খেটে কাঁচা পয়সা জমায় আর দেশে এসে বাবু সেজে রিয়েল এস্টেট কোম্পানীগুলোর সাথে হাত মিলায়। অথবা এদিকটায় কমদামে জায়গা কিনে বিলাসী বাড়ি বানায়। এরপর কলেজ ইউনিভার্সিটিতে ঘুরে তার চোখে সবচেয়ে সেরা মেযেটা বাছাই করে বিস্তারিত ঠিকানা যোগাড় করে মা বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েটার কপাল পুড়ে। মেয়ের মা বাবা ছেলে কি করে প্রশ্নের উত্তরে বিদেশ থাকে শুনলে খুশিতে গলদঘর্ম হয়ে কি করে ভুলে গিয়ে কোথায় থাকে প্রশ্নটাই বড় মনে করে। শিক্ষাদীক্ষা সম্পর্কে খুব একটা খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনা। ইউনিভার্সিটি পড়–য়া একটা মেয়ের সাথে প্রাইমারী পাশ না করা ছেলের মানসিক যোগাযোগ মেয়ের মা বাবা এত দ্র“ত করিয়ে দেন যে ছেলে কর“ণায় মহৎ হয়ে কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা মাতাকে দ্র“ত উদ্ধার করে। অন্যদিকে মেয়েটি তার ইউনিভার্সিটি জীবনের উচ্ছল দিনগুলোকে চুলোয় পুরে কয়েকদিন কান্নায় বুক ভাসায় তো মুখ ভাসায় না। কোন অফিসের বড় ঊীপঁঃরাব হওয়ার স্বপ্নকে মাটিচাপা দিয়ে মাথায় একহাত ঘোমটা দিয়ে মা বাবার সুখটাকে দীর্ঘস্থায়ী করে। ছেরেটিও তার যথার্থ কত্যব্য ভেবে মেযেটির শরীর ও মনে স্থায়ী চিহ্ন রেখে আবার বিদেশ পাড়ি জমায়।
জেল থেকে বের হওয়ার পর ন্যাড়ার পেশাগত প্রমোশন হয়েছে। সাথে শিফ্টও পরিবর্তন হয়েছে। দিনের বেলায় এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায় টোকাইদের সাথে আর রাতে মাঝে মাঝে ক্ষ্যাপ মারে সুযোগ বুঝে। আজ সে একা নয় অর্ককেও সাথে নিয়েছে। যেমনটা একটু পরে যে নাটকটি মঞ্চস্থ হবে তার চিত্রনাট্যের পরিচালকের মত ন্যাড়া বলল, বুঝলে অক্কদা, আজকে যে বাড়িতে আমরা যাচ্ছিনা হেইডি বড় অদ্ভুদ বাড়ি। এত সুন্দর বিরাট বাড়ি অথচ দুজন মানুষ থাহে। একটা বুড়ি আর তার পোলার বউ। পোলাডা বিদেশ থাহে। তুমি আবার বউডারে দেইখা বেবাক ভুইলা যাইয়ুনা। বউডা সিনেমার মত। আমি যে র“মে ঢুকতে বলমু ঢুইকা দামী যা কিছু পাইবা নিয়া নিবা। তুই দেখছিস নাকি বউটাকে?
দেখছিনা আবার! কত্তবার কথাও বলছি। ওদের যে দারোয়ান হে আমাগো দেশি। এক সময় আমার লাইনে আছিল। এখন পাবলিকের মাইর সহ্য করতে না পাইরা হজ্ব কইরা ধোয়া তুলসি পাতা অইছে। তয় বেটা আইজ নাই। বাড়িত গেছে। এই সুযোগটার জন্য বইয়া আছিলাম এতদিন। ন্যাড়া কাশে।
আচ্ছা তুই কখনো ধরা পড়িসনি ন্যাড়া? অর্ক জিজ্ঞেস করে। ন্যাড়া যেন খুব মজা পায় ‘ওমা কও কি অক্কদা, ধড়া না পড়লে জেলখানায় তোমার সাথে দেখা অয় ক্যামনে? তুমি রাজনীতি কইরা জেলে গেলা আর আমি চুরি কইরা। আমার মায় কইত যারা রাজনীতি করে তারা অইল বড় চোর, আমরা অইলাম ছোট চোর। তুমিও আমার লগে থাইক্যা থাইক্যা আজ থেইক্কা ছোড চোর অইয়া গেলা। অর্কের প্রাণটা যেন বের হয়ে যেতে চাচ্ছে। কলজেটা মোচড় দিচ্ছে। মৃত্যুর আগে থই এর মধ্যে পড়া মাছের মত ছটফট করছে তার প্রাণটা। রাতের অন্ধকার আর চোখের অন্ধকার মিলে যেন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। না তার নিজেকে সামলে নিতে হবে এখন আর ফিরে যাওয়া যাবে না। এই লাইনে এসব সেন্টিমেন্ট বাদ দিতে হবে। ওতো এখন ছোট চোর।
অর্কের মনের ভিতরকার বিশাল বিশাল ঢেউগুলির আওয়াজ ন্যাড়ার কানে একটুও আসল না। আপন মনে সামনের দিকে হাটতে লাগল।
গুমোট ভাবটা কাটানো দরকার বলে অর্ক জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা তোর নাম ন্যাড়া কে রাখল রে? কে রাখবে আবার, পুলিশ।
পুলিশ আবার কারো নাম রাখে নাকি?
রাখেনা আবার, তুমি জাননা, এই লাইনে বেশির ভাগ পাবলিকের নাম পুলিশ অতবা পাবলিক রাখে। রাস্তায় পড়ে থাকা পাথরের সাথে হোচট খেল ন্যাড়া। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে আবার বলতে শুর“ করল, হেইদিন বাসে উইঠ্যা দেহি এক সাহেবের প্যান্টের পিছনের পকেট ফুইল্যা আছে । আমার পরানটা ও ফুলি উঠল। ভীড় ঠেইল­া আস্তে আস্তে কাছে যাইয়া দেখি বোতামও নাই, মোটা মানি ব্যাগও দেখা যায়। হাত দিতেই ব্যাডা খামছি মাইরা ধইরল। বাস থামাইয়া মাইত্তে মাইত্তে বাস থেকে নামাইল। কি রকম মাইর, আপনি না দেইখলে বুইঝতে পারবেননা। পাবলিকের মাইর খাইতে ট্রেনিং লাগে। অর্ক হাসল, তারপর? তারহর আর কি, কয়েকজন পাবলিক আমাকে নাপিতের দোকানে নিয়ে ন্যাড়া করি দিল। ততক্ষণে কে যেন রাস্তার মোড় থেকে পুলিশ নিয়ে আইল। আমি ও বাচলাম। পুলিশ আইসা কইল ঐ ন্যাড়া ভ্যানে উঠ। আমি ও উঠে পড়লাম। তখন থেকে আমার নাম ন্যাড়া। রাতের নির্জনতা ভেঙ্গে অর্ক হো হো করে হেসে উঠল। তোর নাম তাহলে আগে কি ছিল? অর্কের হাসি দেখে ন্যাড়ার গা জ্বলছিল তারপরও সে উত্তর দিল আঁর মায় রাখছিল ডঃ কামাল, মাইনসে কামাইলে­ কই ডাইকত। অর্কের হাসি দ্বিগুন থেকে তিনগুন হল। জন্মের পর ডক্টর আর ডক্টর থেকে ন্যাড়া। অর্কের হাসি যেন থামছিল না। ন্যাড়া রেগে গিযে বলল, এত হাসেন কেন , আপনার নামত আরো ফালতু অক্ক।
ততক্ষণে তারা বাড়িটার সামনে পৌঁছে গেছে। আশে পাশে অন্য কোন ঘর বাড়ি নেই। পাঁচিলের সাথে লাগানো কয়েকটি পেয়ারা গাছ আছে। যা দিয়ে সহজে পাঁচিল টপকানো যাবে। তারপর ন্যাড়ার হাতে লোহা গলানোর যন্ত্রটা চক চক করে উঠে। পাঁচিল টপকে দুজন বাড়ির ভিতর ঢুকল। অর্ক অবাক হল বাড়ির পরিবেশ দেখে। বাড়ির সামনে সযতেœ ম্যাচিং করা ফুলের বাগান। সব জায়গায় একটি শৈল্পিক র“চির ছাপ। মনে হচ্ছে যেন তার অনেক দিনের পরিচিত বাড়ি। বাড়ির গ্রিল খোলা, দুতলায় একটি র“মে নীল আলোর একটি লাইট জ্বলছে। অর্ক আর ন্যাড়া খুব সন্তর্পনে পা ফেলছে। ন্যাড়া ফিস ফিস করে বলল, নিচের তলাত কেউ থাকে না। বউ শাশুড়ি দুজনই উপরে থাকে। আপনি যাইবেন বউয়ের র“মে, আর আমি শাশুড়ির র“মে। অর্ক কৌতুহল নিবারন করতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, গ্রিল তো খোলা তাহলে এই যন্ত্রের কাজ কি? ন্যাড়া কোন কথা না বলে যন্ত্রটা পকেটে চালান করে দিল।
দুতলায় উঠে ন্যাড়া একটি র“মের দিকে নির্দেশ করে বলল, এইডি শাশুড়ির র“ম। এটাতে আমি ঢুকছি। সামনে গেলে আরেকখান র“মের দরজা পাইবা হেডি বউয়ের, ঐটিতে আপনার কাজ। অর্ক ন্যাড়াকে ফিস ফিস করে বলল, কিন্তু তুই এটাতে ঢুকবি কেমনে? এটাতো তালা লাগানো তাছাড়া ভিতর থেকেও লক করা থাকতে পারে। অর্কের মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। ন্যাড়া বিড় বিড় করে বলল, আমার কাজ আপাই করি রাইখছে। অর্ক জিজ্ঞেস করল, আপা মানে? হেডি আপনি বুঝবেননা আপনার টাতে আপনি যান। দরজা বন্ধ থাকলে খুলব কেমনে? বন্ধ থাকবে না। অর্ক কিছুই বুঝতে পারলনা। তার মুখের মুখোশটার উপর একবার হাত বুলাল। সামনের দিকে এগিয়ে দেখে সত্যিই দরজা খোলা। যে নীল আলোটা নিচ থেকে দেখা যাচ্ছিল সেটা এই র“মে। দরজার নীল আলোর ছটা প্যাসেজের গায়ে এসে পড়ছে। অর্ক আরেকটু সামলে এগোল। বিছানায় কেউ নেই। অর্কের ভয়টা আরও বেড়ে গেল, নিশ্চয় দরজা খুলে বাথর“মে গেছে। কিন্তু ঘরের একটি কোণায় চোক পড়তেই চমকে উঠল অর্ক। ছোট একটি টেবিলে মাথা উপুড় করে বসে আছে একটি মেয়ে। হাতে একটি রিভলবার ধরা। অর্ক পালাবে, ঠিক সে সময় একটা আওয়াজ আসল, অর্ক। মেয়ে কন্ঠে তার নামটা শুনে অর্কের হাটুর সমস্ত শক্তি যেন কে কেড়ে নিল। ন্যাড়া পিছন দিক থেকে এসে অর্কের হাত ধরল। নারী মূর্তিটি এবার মাথা তুলল। “আমার মুখে তো কোন মুখোশ নেই, দেখতো আমাকে চেন কি না?
অর্ক কিছুই বলতে পারল না। ন্যাড়াই বলল, আপা চলেন যাই, সকাল অই যাইব। নারী মূতির্টি এবার ন্যাড়াকে বলল, চল কামাল ব্যাগটা নাও।
সোজা ডিস্ট্রিক্ট রোডে উঠে এলো তারা। অর্কের ঘোর এখনো কাটেনি। হাটতে হাটতে হেনা একটা ধান ক্ষেতের দিকে ছুড়ে মারল তার হাতের কিছু একটা। অর্ককে বলল, তোমার আমানত ছুড়ে ফেললাম। ফেরত চাইলেও আর দিতে পারব না। পর পর তিনটি গাড়িকে হাত দেখাল ন্যাড়া কিন্তু প্রথম দুটি থামল না, শেষটি থামল। ন্যাড়া জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাবে? গাড়ির এসিসট্যান্ট বলল, কক্সবাজার। তিনজনই উঠে বসল, একটি সিটে ন্যাড়া আর হেনা। পিছনের সিটে অর্ক একটি অপরিচিত লোকের সাথে। অর্কের ঘোর কেটে যাচ্ছে। ন্যাড়ার প্রতি কৃতজ্ঞতায় তার চোখের জল আসছে। পিছনে একবার তাকিয়ে ন্যাড়া মিটমিট হাসছে। ভোরের বাতাস গায়ে লাগছে তাদের। একের পর এক সবকিছু পিছনে চলে যাচ্ছে।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সৈয়দ আহমেদ হাবিব লা জবাব, ছবি দেখে পরিচিত মনে হচ্ছে, চিটাইংগা অইলে আওয়াজ দন
মিলন বনিক গল্পের গাঁথুনি খুব ভালো লাগলো...আপনার প্রথম গল্প...কিন্তু পাঠক কম কেন বুঝলাম না....অনেক শুভকামনা...
মোজাম্মেল কবির শুভ কামনা রইলো...

২৮ জুলাই - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী