প্রতিদান

ঈদ (আগষ্ট ২০১৩)

মামুনুর রশিদ
  • 0
  • ২৭
সবে মাত্র ভোর হয়েছে। প্রতিদিনের মত আজকেও কাকের কর্কশ চিৎকারে ঘুম ভাঙল রহিমের। বস্তির জীর্ণশীর্ণ ঘরের মরিচা ধরা গ্রিলের ফাঁকে উঁকি মারছে নতুন দিনের সূর্য।সূর্যের আলো সরাসরি মুখে পরলে আর শুয়ে থাকা যায় না। আড়মোড়া ভেঙেই সে তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে উঠার জন্য ডাক দেয়। সকালের ঘুম সবার জন্য না। পেটের দায়ে বেচারা রহিম রিকশা চালায়। রিকশা চালানো মনে হয় তাদের বংশগত পেশায় রূপ নিতে যাচ্ছে। রহিমের বাবাও রিকশা চালাত। সেও চালাচ্ছে। তার পাশেই ছোট্ট ঘুমন্ত সন্তানটিও হয়ত একদিন চালাবে। মানুষকে জায়গা মত পৌছায় দেওয়াটা কিন্তু খারাপ কাজ না।
সকালের নাস্তা না করেই রিকশাটা পরিষ্কার করে নেয় রহিম। স্ত্রীকে বলে,”গায়ে একটু হাওয়া লাগায়ে আসি।” স্ত্রী বাধা দিতে গিয়েও পারে না। সে জানে, তার স্বামীর কাছে এই মুহূর্তে বেশি টাকা নেই। তারা দিন আনে, দিন খায়। রহিম রিকশা চালিয়ে কিছু উপার্জন করতে যাচ্ছে, যাতে অন্তত ছোট্ট শিশুকে অভুক্ত থাকতে না হয়।
রাস্তায় নামতেই রহিম দেখে তার বিপরীত পাশ দিয়ে হেঁটে আসছেন এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক। ভদ্রলোক মনে হয় সকালে ব্যায়াম করতে বের হয়ে ছিলেন। ভদ্রলোক ডাকলেন ,”এই রিকশা, যাবে?”
“হ যামু , কই যাবেন ?”
“মিরপুর,ডিওএইচস”
“উঠেন”
ভদ্রলোক দামদর না করেই উঠে গেলেন আর রহিমও কিছু না বলে তাকে বাসায় পৌঁছে দিল। বাড়ির সামনে এসে রহিম অবাক। কত বড় বাসায় থাকে লোকটা ? কিন্তু দেখে নিতান্ত সাধারণ বলে মনে হয়।চিন্তা করতেই ভাল লাগে, এত টাকা থাকলে সে নিজে কি করত।
যথারীতি দিনের প্রথম উপার্জন শেষে রাস্তায় বের হল রহিম। ভদ্রলোক, মানুষ হিসেবেও ভাল। আসল ভাড়ার চেয়ে কিছু টাকা বেশিই দিয়েছেন।অনেকে আছে অল্প কিছু টাকার জন্য কান্নাকাটি করবে,কিন্তু রিকশায় উঠে যখন পাশের জনের সাথে কথা বলবে, তখন মনে হবে সে যেন ঢাকা শহর কিনে ফেলছে আর টাকার বস্তা নিয়ে ঘুরছে। এইটা বেশি হয় নতুন নতুন বিয়ে করছে অথবা প্রেম করছে এমন লোকদের। তাই এই সমস্ত কপোত-কপোতীদের সে ভুলেও রিকশায় তুলে না। ওরা আবার আদর করে ডাকে
“মামা যাবা ?” একটাই উত্তর,”না” মুখের উপর বলে দিতে ভালই লাগে। ওরা অসহায়ভাবে তাকায় থাকে।
বস্তিতে ঢোকার আগে ছেলের জন্য কিছু খাবার কিনে নেয় রহিম। রিকশা নেমে সে আবিষ্কার করল, ভদ্রলোক রিকশায় ভুলে তার মানিব্যাগটি ফেলে গেছেন। বাসার ঠিকানা ত মাথায় আছেই। তাই স্ত্রীর সাথে দেখা না করেই রওয়ানা দিল ভদ্রলোকের বাসার দিকে।
বাসার গেইটে মোটাসোটা বিশাল গোঁফওয়ালা দারোয়ান। সে বলে “কি চাই ?”
“সাহেবরে একটু দরকার।”
“কেন?”
“তার মানিব্যাগ আমার রিকশায়ে ভুলে ফালায়ে গেছলেন। তাই ফিরত দিতে এসেছি।”
“কই, মানিব্যাগ দেখি।”
রহিম দারোয়ানকে মানিব্যাগটা দিলে সে ব্যাগ থেকে টাকাগুলো বের করে নিজের পকেটে রেখে দেয় আর রহিমকে পাঁচশ টাকার একটা নোট দিয়ে বলল, “এই বেটা শোন,টাকাটা নে আর সাহেবরে কিছু জানানোর দরকার নেই। চালায়ে এখান থেকে বাইর হয়ে যা, আর আসবি না।”
“আমি এই টাকা নিমু না। এইটা আমার টাকা না। আর আমি স্যারের জন্য দাঁড়ায়ে থাকুম।”
“তুই যাবি না?”
“না।”
কথাটি বলামাত্রই কিছু বোঝার আগে দারোয়ান তার মাথায় বিশাল লাথিটা দিয়ে আঘাত করে। ব্যাথার তীব্র যন্ত্রণায় রহিম মাটিতে শুয়ে পড়ে।দারোয়ান চিৎকার শুরু করে। রহিম অস্পষ্ট চোখে দেখে, সাহেব ছুটে আসছেন। সে অচেতন হয়ে পড়ে।
জ্ঞান ফিরলে রহিম নিজেকে একটি বদ্ধ ঘরে আবিষ্কার করে। কি ঘটে গিয়েছে তা আবছা আবছা মাথায় আসছে। মাথায় আঘাত পাওয়া অংশে হাত বোলানোর চেষ্টা করলে সে বুঝতে পারে, তার হাত দুটি শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধা। বাইরে অস্পষ্ট কণ্ঠস্বর শোনা যায়। মনে হয়, সাহেব ও দারোয়ান কথা বলছে।
“স্যার,ওই বেটা সাংঘাতিক চোর,আগে মনে হয় মানুষও খুন করসে, আমাকে চাকু দিয়ে ভয় দেখাল আর বলল, সকাল সকাল যাতে কোন হাঙ্গামা না হয়, আমি ত ভয়ই পাইছিলাম। শুধু সাহস করে লাঠিটা দিয়া দিলাম কইসসা এক বাড়ি - বললাম, বেটা চুরি করার আগে বাড়ি খেইয়ে যা। আর কুপোকাত ”
“সাবাশ, এই জন্যই তো তোমাকে রাখা।তুমি না থাকলে যে কি হতো চিন্তা করতে পারছি না।” সাহেব দারোয়ানের আরও প্রশংসা করতে থাকে। রহিম বুঝতে পারে যে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। কিন্তু তাকে এক্ষুনি ছাড়া পেতে হবে। তার স্ত্রী আর সন্তান হয়ত তার পথ চেয়ে বসে আছে। সে চিৎকার করে উঠল।
“স্যার, আমারে শুনতে পাইছেন স্যার ?”
সাহেবের কণ্ঠ শোনা যায়,”কি হয়েছে?”
“স্যার, আমি চোর না। আমি রিকশা চালাই। আপনারে দিতে আইসসা...” রহিমের কথার মাঝখানে কলিংবেল বেজে উঠল।সাহেব কথা না শুনেই দরজা খুলতে গেলেন।
বদ্ধ ঘরের দরজা খুলল একজন লম্বা চওড়া পুলিশ। দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রহিমকে দেখে নেয়।পুলিশের কথা ফুটে,”শালা চোর। এবার জেলে চল।”
রহিমের আর্তনাদ,”আগে একটা কথা শোনেন স্যার, একটু কইতে দেন”
“কোন কথা নেই। চুরি করেছিস আবার কথা কি ?”
পুলিশের গাড়িটি রহিমের বস্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছে।রহিম উপলব্ধি করছে তার প্রিয়তমা স্ত্রী আর সন্তানের কষ্টকে। আরেকটি কষ্ট তার মনে জেগে থাকে- মানুষের উপকার করতে গিয়ে তার প্রতিদানের কষ্ট। সে অনুতপ্ত নয়, কারণ সে জানে সে ভুল কাজ করে নি,হয়ত আশেপাশের মানুষের ভুল বোঝার কারণে নিয়তির বেড়াজালে সে ফেঁসে গেছে। সে সবাইকে ক্ষমা করে দেয়, কারণ সে একজন ভাল মানুষ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জায়েদ রশীদ সুন্দর গল্প। যদিও ঈদ সংশ্লিষ্ট নয়, ভাল লিখেছেন।

২৬ জুলাই - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪