যতই বেলা গড়িয়ে আসছে ছাফিনের মানসিক যন্ত্রণা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝে মধ্যেই হৃৎপিন্ডটা কেঁপে উঠতেছে। সূর্য পশ্চিম দিকে পৌঁছেছে । পশ্চিম আকাশে রক্তিম আভাস। আঙিনায় জলচৌকির উপর উপুর হয়ে শুয়ে আছে ছাফিন। ক’দিন ধরে জ্বরে ভূগছে সে। এত ছোট ছেলে হলেও সেও বুঝতে পারতেছে একজন মানুষের শেষ মুহুর্তের কথা। যদিও তার অত ভয়ংকর অবস্থা না। ওরা দুই ভাই। প্রাইভেট শেষ হয়েছে ছাকিবের। দক্ষণিরে ঘর থেকে জোরে একটা আওয়াজ করে বের হওয়ার সময় দরজায় হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল ছাকিব। মা আঙিনায় তারকারি কাটতেছে। পড়া থেকে ছুটি পেলে সব ছোট ছেলে-মেয়েরাই এভাবে চিৎকার করতে ভালবাসে। মাথা উপরে উঠিয়ে প্রথমে উঁকি মারল ছাকিব তাকে কেউ দেখতেছে কিনা। ছাফিন নিজেকে আর রক্ষা করতে পারল না। অসুস্থ হওয়া সত্তে¡ও সে হেসে ফেলল। তা দেখে ছাকিব কান্নার ভান করল। ছাকিব ভ্যাঙচাতে ভ্যাঙচাতে দুই হাত দিয়ে মারতে আরম্ভ করল ছাফিনকে। পাঁচ বছরের শিশু বোঝে না তার বড় ভাই অসুস্থ। ছাফিন দেড় বছরের বড়। সে ক্লাস থ্রীতে পড়ে। স্নেহ জিনিসটা তার ভিতরেও জন্মায়নি এখনও। ধপ করে থাপ্পর মেরে বসে ছাকিবকে। একটা দু’টা করে দু’জনেই গায়ে হাত তুলতে লাগে পরস্পরকে। হঠাৎ মা দৌঁড়ে এসে তরকারি কাটারটা বসিয়ে দিল ছাফিন এর গলায় এবং মা বলতে লাগল- “আজকে তোকে আমি মেরেই ফেলবো ”। ছাফিন একটু সাদা-সিদে ধরণের। এই অবস্থায় বড় কথা হচ্ছে সে অসুস্থ। ছাকিব দৌঁড়ে পালিয়েছে। ও খুব চালাক। মা ওকে খুবই ভালবাসে। এর আগেও শত শত বার মার খেতে হয়েছে ছাফিনকে তার মায়ের হাতে। কখনও প্লটে, কখনও গামলা, কখনও বা ঝাড়– হাতে যখন যা থাকে। উপুর হয়ে পড়ে যাওয়ায় গলার ঠিক উল্টো পেশে কেঁটে গেছে ছাফিনের। তখন র্পযন্ত সে বুুঝতে পারেনি। শুধু মনে হচ্ছিল গলার পিছনে চিনচিন করে কোথায় যেন জ্বালাপোড়া করতেছে। ছাফিন হাতটা পিছনে নিয়ে যায় এবং জ্বালাপোড়ার অংশটাতে হাত বুলিয়ে দেয় ব্যথা কমানোর জন্য। কিন্তু হঠাৎ সে দেখতে পেল তার হাতে রক্ত। ছাফিন হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে এবং মা বলে চিৎকার করে।
ছাদেক সাহেব মাগরিবের নামাজের প্র¯—ুতি নিচ্ছে। ওজুর ফাঁকে ছাফিনের মায়ের গলা “ভাইজান!” ছাদেক সাহেব তাড়াতাড়ি ওজু শেষ করে বলল, “কি হয়েছে?” “ভাইজান আমি ছাফিনকে....”। “ছাফিনকে! কি?” ছাদেক সাহেব দৌঁড়ে যায় ছাফিনের কাছে। সেই মুহুর্তে কি করা উচিৎ মাথায় আসছে না তাহারও। ছাফিনকে পিঠে নিয়ে সরাসরি হাঁটতে থাকে বাজারের দিকে ডাক্তারখানায়। একটু হাঁটতেই পথে ছাফিনের ছোট চাচার দেখা। ছাফিনের কাঁধে রক্ত দেখে স্থির থাকতে পারলেন না তার ছোট চাচা। ছাফিনকে বললÑ“এ অবস্থা কে করেছে তোমার ছাফিন? বাবা আমার। কে তোমাকে ছুড়ি মেরেছে?’’ ছাফিন ব্যাকুল গলায় বলে উঠে - “মা” ছোট চাচা।
ছাদেক সাহেব কাটা জায়গাটাতে সেলাই দেওয়ার অনুমতি দিলেও ডাক্তার নিজেই দিল না। শুধু ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ঔষধ দিয়ে দিল। ডাক্তারের কাছ থেকে ফিরার সময় ছাফিন নাছোরবান্দা আর কখনও ঐ মায়ের মুখ দেখবে না সে। বাসায়ও যাবে না কোনদিন। ছাদেক সাহেবও বুঝতে পারল এ সময় ওর মেনটাল সেটিসফেকশন দরকার। তাই তিনি ছাফিনদের বাসার অদূরে তার নানুর বাসায় রেখে আসে ছাফিনকে।
ওদিকে ঘটেছে অন্য ঘটনা। ছোট চাচা ছাফিনের মাকে মারতে মারতে পা প্রায় ভেঙ্গে দিয়েছে। ছাফিনের বাবা অফিস থেকে বাসায় ফিরে প্রায় এগারোটায়। ছাফিনের মনটা কেন যেন ছটফট করতেছে। তার মনে হচ্ছে কে যেন তার কলিজাটা ছিড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলতেছে। এই মুহুর্তে হঠাৎ করে বুলির মা খবর দেয় ছাফিনের মায়ের পা ভেঙ্গে দেওয়ার ঘটনা। ছাফিনকে এক সেকেন্ডও আটকে রাখতে পারল না কেউ। ঘুচঘুচে অন্ধকার রাত্রে জ্বর শরীর নিয়ে দৌঁড় দেয় ছাফিন। অনেক মানুষ জড়ো হওয়ায় কোলাহলের সৃষ্টি হয়েছে তাদের বাসায়। সেই কোলাহলের শব্দ দূর থেকে শুনতে পাচ্ছে ছাফিন। ভিড়ের ভিতর দিয়ে তাদের দক্ষণিরে ঘরটাতে ঢুকতেই দেখে তার মা এলোমেলো চুলে, মায়ামাখা সেই মুখখানার উপর চোখের জল নাক বেয়ে থুতনী হয়ে মাটিতে পরতেছে। মায়ের মুখের দিকে তাকাতেই আজ ছাফিনের মনে পড়তেছে কনকনে শীতের সময়ে মায়ের কোলের ভিতরে লুকিয়ে থাকা, মা নিজে না খাইয়ে তাকে খাইয়ে দেয়া। বড় কষ্টের কথা হল অসুখে যখন কাউকে কাছে পাওয়া যায় না মা_ই ছিল তার একমাত্র অবলম্বন। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ছাফিনের নিরীহ সেই চোখ দুটো আজ চুপশে আসছে কিন্তু ক্ষোভটা ! ক্ষোভটা আর সামলে নিতে পারল না সে। হাতে রামদা নিয়ে দৌড় দেয় ছোট চাচার বাড়ির দিকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এশরার লতিফ
বেশ লাগলো, অল্প পরিসরের গল্প কিন্তু ব্যাপক মারামারি.
বখতিয়ার উদ্দিন
আপনার গল্পতা আমার খুব ভাল লেগেছে । প্রথম লেখা হিসেবে আপনার গল্পের চমৎকার ধারাবাহিকতা আছে। আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন। লেখা চালিয়ে যান, সাফল্য আসবে ইনশাআল্লাহ্...।
আব্দুর রহমান
পূর্ণ ভালবাসা দেখে বোঝা যায় না, অনুভব করতে হয়।,ছেলের প্রতি সুপ্ত ভালবাসা দিয়ে যে পূর্ণ ভালবাসার পরিচয় পাওয়া যায় তা আপনি এই গল্পে স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন। এ থেকে বোঝা যায় পূর্ণতায় আপনার লেখা সার্থক হয়েছে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।