এক জাহিদনা ! যাসকই? দরখাস্ত চাচা।দরখাস্ত... জাহিদ হাঁটা থেকে নিমিষেই দৌড়ানো শুরু করল। গলায় ফিতাওয়ালা একটা ব্যাগ ঝুলছে। ঐ মুহূর্তে জাহিদকে ঠিক বাসের হকারদের মতলাগছে। মলম লাগবে মলম আর কি। আরে বাবা একটু শুনে যানা। কথা আছে…. আসছি চাচা আসছি, দৌড়দেয় জাহিদ…… কয়েক দিন পর। কিরে হয়েছে টাকি তোর বলতো। ইদানিং বেশ কিছু দিন ধরে দোকানে আসিসনা। আবার ভরা দুপুরে দেখি ছুটাছুটি করিস। কয়েকদিন দেখলাম চায়ে চুমুক দিয়েই বিদায়ের ঘণ্টা বাজিয়ে দিস। কথায়বলিস না। শুধু একটা চাদাও তো। এ পর্যন্তই। ব্যাপার কি বলতো। তুই তো এমন না। তুই অনেক পাল্টে গেছিস রে। কি যেন একটা হয়েছে তোর। একদিন সন্ধ্যায় জাহিদ রফিক চাচার দোকানে না গেলে রাতের ঘুম হারাম। আলাদা একটা মায়া জন্মেছে তার প্রতি।বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-ছাত্রীই রফিক চাচার দোকানে আড্ডায় মেতে উঠে।চলে গল্প গুজব।জীবনের কত যে গল্প।বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে।নানান গল্পে মেতে উঠে তারা।জাহিদ একটু অন্যর কম।ওরএই সব ভাল লাগে না।যার বর্তমানের কুল-কিনারা নেই, সে ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে কি ভাববে।যে যারমত।এখানে বন্ধু-শত্রু বলতে রফিকচাচা ছাড়া জাহিদের কেউ নেই। আছেতো অনেকেই। কে কার খোঁজ রাখে। রফিকচাচার দোকানে দিনে অন্তত চার পাঁচ’শ মানুষ তো আসেই। চাখায়।জমিয়ে আড্ডা মারে। কিছু সংখ্যক লোক চাচাকে ছাড়বে না। তাকে নিয়ে চাখাবেই। এদের সংখ্যা খুব কম হলে পঞ্চাশ ষাটহবে। চা বানানো বিরক্ত চাচা কত আর চাএ চুমুক দিবে। তাই এক কাপ আমার জন্য বরাদ্দ রেখেদেয়। দুই জাহিদ চুপচাপ বসে রইল। তার চোখ-মুখ কি যেন বলতে চাচ্ছে। আজকে জাহিদ চা চুমুকে মজা পাচ্ছে না। যেন বিষে চুমুক দিচ্ছে। রাবণের চিতাসম যেন জ্বালিয়ে হৃদয় মমে। হঠাৎ গলার আওয়াজ। চাচা? রাশভারি গলা। জ্বিবাবাবল। আমার শুধু কি যেন একটা হয়েছে তা না চাচা। অনেকগুলি কি যেন একটা হয়েছে। বল না আমায় বাবা। ধুর। বাদ দাও তো চাচা। এই সব শুনে তুমি কি করবা। জাহিদরে! আমি জানি তোর মনের ব্যাথা। ব্যাকুল কন্ঠে বলল রফিক চাচা। কি জানো চাচা? এই পৃথিবীতে তুই বড়ই একা। চাকরীর পিছনে অনেক ছুটাছুটি করছিস। তোর নিয়তি বড়ই নিষ্ঠুর। কি আর করার। পৃথিবী তার নিজ গতিতে চলছে। রাখো তোমার ঐ সব গল্প। নিয়তি কি আমার একার নিষ্ঠুর। আমি বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করেছি। রাসূল (সঃ) এর আদর্শকে লালন করেছি। দাঁড়ি রেখেছি। সবাই হুজুর বলেও ডাকে। কি যে সম্মান চাচা। শুনেছি হুজুর অর্থ সম্মানিত ব্যাক্তি। আল্লাহ্ এত সম্মান রেখেছে এতে। সারা দিনে একশতরও বেশি সালাম পাই। এর চেয়ে আর বড় কি সুখ থাকতে পারে চাচা।বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষায়তো পাশ করে এসেছি। প্রিলি পাশ করি নাই তাতে কি হয়েছে। আমাদের ডিপার্টমেন্টর ফার্স্ট মেয়েটাও তো ফেল করেছে। তবে হ্যাঁ ও কৃষি ইন্সটিউট এর সরকারি অফিসার। হুম। ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট মেয়েটাও প্রিলি ফেল করে, লাস্ট বেঞ্চের ছেলেটাও পাশ করে। আমার লেখাপড়া কম। মেট্রিক ফেল। পারিবারিক কারণে দ্বিতীয় বার দেয়া সুযোগ হয় নি। যাজ্ঞে কি যে সব বকে যাচ্ছিস। একটু শান্ত হনা বাবা। চেষ্টা করলে বাঘের দুধও মেলে। তোকে আমি ভাল করেই চিনি। খুলে বলতো সব কি হয়েছে তোর? তিন প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা কাউকে না বললেও এই লোকটা কে বলতেই হয় জাহিদের। রক্তের সম্পর্ক থাকলেই যে মানুষ আপন হয় তা না বরং জীবনে চলার পথে কিছু কিছু মানুষ রক্তের সম্পর্কের চেয়েও অনেক বেশিআপন মনে হয়। রফিক চাচা হয়তো এমনি একজন মানুষ। গেলো কয়েক দিনের ঘটনা জমা রেখেছে জাহিদ। বলে নি। বললে হয়তো বাঁধা দিত রাফিক চাচা। তাই সে এখনবলতে বিব্রত বোধ করছে। এবার তো বলবি কাস্টমার চলে এসেছে। ন্যাকামোর সুরে জাহিদ বলল বলবো না।থাক তোমার কাস্টমার নিয়ে। জাহিদ দূর থেকে দেখল বশির আসছে।তাই জাহিদ উঠে চলে গেল। কি রফিক মিয়া? কেমন আছো? এইতো আছিমামা। গরীবের দিন। ক’দিন আর বাঁচবো। গরীবের একেকটা দিন মানে একেকটা যুদ্ধ। তো বশির মামা আপনের খবর কি? এইতো আছি আলহামদুলিল্লাহ্। শুনলাম প্রিলিতে নাকি পাশ করেছেন? হুম। কোনোরকমে আরকি। তো জাহিদের খবর কি? লজ্জায় লাল হয়ে যায় রফিক চাচা। মনে হচ্ছিল যেন জাহিদ তারই সন্তান। কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। জাহিদ মানে আমার দোকানে যে নিয়মিত আসে? একটু এড়িয়ে যাওয়ার যাওয়ার চেষ্টা করল রাফিক সাহেব। আজ দেখি তোমায় নতুন লাগছে মিয়া...হুম। বুজলাম। চা দাও দু’কাপ। চার চাচা? জ্বি বল। আমি তোর সাথে কথা বলবো না। কেন চাচা? তা তুই ভাল করেই জানিস। যাহোক বলছি বাপু। আগে বলো বশির সেদিন তোমাকে কি বলেছে? মুখ ফিরিয়ে নেয় রফিক চাচা। কিছু না। আমার কথা জিজ্ঞেস করে নি চাচা?বশির একসময় আমার অনেক ভাল বন্ধু ছিল চাচা। তারপর সময়ের পরিবর্তনে......... তা আমি জানি। থাক তোর কিছু বলা লাগবে না। আমার শুনতে ইচ্ছে করছে না। রফিক সাহেবের মন ভীষণ খারাপ মনে হচ্ছে। জাহিদ ভাবল এভাবে এড়িয়ে চললে চাচা হয়তো আর কোন দিন তার সাথে কথা বলবেনা। জাহিদবলল- চাচা আজ আমি তোমাকে কি যেন একটার গল্প শুনাব। এটা শুনতে ইচ্ছে করবে না? সত্যি!! সত্যিই বলছিস তুই? হ্যাঁ চাচা। সত্যি বলছি চাচা। তাহলে দেরি কেন। বলনা তোর জীবনের গল্পগুলি......... তাহলে শুনো চাচা... ঢাকায় তো আসছি মাত্র দু বছর হল। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বিয়ের প্রস্তাব। হ্যাঁ আমি জার্মানিতে স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। মাস্টার্স ও পি এইচ ডি একসাথে। শেষ করতে আট ন বছরের কম লাগতো না। তাই বাবা বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।আপনিইবলেন চাচা ঐ সময় বিয়ের জন্য কে তৈরি থাকবে। আর তাছাড়া বিয়ে করে বউকে রেখে গেলে ঐ বিয়ে করার মূল্যই বা কি থাকে। শুনেছি ঐ দেশগুলোতে মসজিদ খুবই অল্প। তিন-চার কিলোমিটার পর মসজিদ। কোন জায়গায়আবার মসজিদের চিহ্নও নেই। তুমিতো জানো চাচা পাঁচবার মসজিদে না গেলে আমার পেটের ভাত হজম হয় না। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, লালন-পালন করছেন, খাওয়াচ্ছেন, সুস্থ রেখেছেন তার আদেশ-নিষেধ না মানলে বেঁচে থাকার অর্থই হয় না। ঐ দেশগুলিতে নাকি নারী-পুরুষের কোন ভেদাভেদ নেই। কখন যেকাকে জিম্মি করে ফেলে। তারপর রাত কাটানো। এগুলি নাকি ওদের নিত্যদিনের কার্যকলাপ। অপরদিকে আমার দেশ বাংলাদেশ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এখানে বিরানব্বই শতাংশ মুসলমানের বসবাস। তাছাড়া এই দেশের প্রধান শহর রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দরবারে মসজিদের শহর নামে পরিচিত। পি এইচ ডি করতে গিয়ে যদি আমি আমকেই হারিয়ে ফেলি তাহলে তা অর্জন ভূতের ব্যাগার ছাড়া আর কিছুই না। ঝুকি নিতে গেলাম না। তাই মুছে ফেললাম মন থেকে ঐ সব। তখন থেকেই শত্রুতে পরিণত হলাম আমার পরিবারের কাছে। টিউশনির রসদ দিয়ে দিব্যি কাটিয়ে দিলাম বাকি সময়টুকু। এর পরে শুরুটা। চাকরির খোঁজে বের হলাম। একপর্যায়ে ঢাকায়। পুরদমে শুরু হয়ে গেল ছুটাছুটিটা। জগৎটা টাকার খেলা চাচা। যেদিক পানে যায় টাকা আর টাকা। মেধা থাকলেই যে কেউতার প্রয়োগ দেখাতে পারবে, সে অবস্থা আর এই দেশে নেই চাচা। পাঁচ এত কথা বলার পরও যেন রফিক চাচার মন ভরছে না। আবার হঠাৎ প্রশ্ন করে বসল- তো ঠিক আছে বুঝলাম। কিন্তু গেল কয়েকদিন কথায় ছিলি বলতো? জাহিদ লুকাতে চেয়েছিল। তার বই বের করার কথা। যে সময় দরখাস্ত করাটা জাহিদের জন্য খুব জরুরী সেই সময় জাহিদ ব্যায় করেছে বিশ হাজার টাকা। বইয়ের পিছনে। এ সমাজে যে লেখকের কোন মূল্যই নেই। টিউশনির টাকা। দুই বছরের জমানো। এটা কি জাহিদ তার জন্য করেছে। নিশ্চয়ই না। শুধু তার ভিতরের প্রতিভা প্রকাশ করেছে। যেখানে থাকতে পারে শিক্ষণীয়, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। কিন্তু সে এটা কিভাবে বলবে রফিক চাচাকে। মিথ্যা বলে না সে। তাছাড়া নাবললেএই একই কথা পরবর্তী প্রতিদিনের সঙ্গী হবে রফিক চাচার। বলেই ফেলল সে... জাহিদএকটুইতঃস্ততবোধকরেবলতেলাগলো- ঠিক দরখাস্ত না চাচা। প্রকাশনীর পিছনে ছুটেছিলাম। তুমি তো জানো আমি সাহিত্য চর্চা করি। বেশ কিছু লেখাও জমানো আছে।তাইমনটা আর মানল না চাচা। বই মেলা গেলে খুব খারাপ লাগতো। কত লেখকের বই। তার মধ্যে হাজারো নবীন লেখকের আবির্ভাব। মাঝে মাঝে চিন্তা করি সমাজকে কি দিলাম, এই দেশকে কি দিলাম। আজ আমি আছি। কাল হয়তো থাকব না। কিন্তু আমার ভিতর লালন করা ক্ষুদ্র প্রতিভা গুলো। হয়তো নতুনদের কাজে লাগতে পারে। কেউ হয়তো দু’লাইন শিখতেও পারে। আমি হয়তো পারবো না কিন্তু তারা একদিন জয় করবেই ইনশাআল্লাহ্। জানিনা চাকরি পর্যন্ত বাঁচব কি না। তাই জমানো অর্থটুকু দিয়ে ক্ষুদে এই লোকটাকে পৃথিবীতে রেখে গেলাম। আমার সাহিত্যিক হওয়ার যোগ্যতা নাই, শুধু দু এক কলম লিখতে পাই, তাই মুসলিম সাহিত্যিক হতে চাই। কেননা সাহিত্য হল আলোর মশাল যার আলোয় খুব সহজেই ও দ্রুত অন্ধকার দূর হয় সমাজ, জাতি, দেশ এককথায় গোটা পৃথিবী থেকে। দুর্নীতিতে ভরা এই সমাজে আমার হয়তো চাকরি নাই, তাতে কোন দুঃখ নাই, ভবিষ্যতে আমার ভাইয়ের চাকরি চাই, দুর্নীতি ছাড়াই।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কাজী জাহাঙ্গীর
থীমটা ভালো ছিল কিন্তু ঠিক গল্পের নাটকীয়তায় ধরা দেয়নি ভাল করে। তার উপরে সমস্যা হয়েছে কম্পোজিং এর সমস্যা। মাঝখানে লেখা জড়িয়ে এক হয়ে গেছে, মনে হয় আর একটু পড়া বাড়াতে হবে, অন্য লেখকের পাতায় গিয়ে পড়ার সময় বের করা দরকার, এখানে বেশ ভালো ভালো লেখা আছে, পড়লে আরো বেশ আইডিয়া পাবেন এবং সমৃদ্ধ হবেন। আপনার জন্য শুভকামনা আর আমার পাাতায় আমন্ত্রণ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।