তুমি আছ হৃদয়ে

ঈদ (আগষ্ট ২০১৩)

মামুদ নাহিদ
  • 0
  • 0
  • ৩৬
মোবাইল ফোনটা বাজছে,ক্রমাগত বেজেই চলছে,বাঁ হাতে ওটা তুলে নিয়ে দেখলাম দিপার ফোন ।
: হ্যালো
: হ্যাঁ শোনো,তোমাকে যা বলছিলাম সব মিথ্যা ।আমার বিয়ে হয়নি ।দুর পাগল ! তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারি ।এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে কেটে দিলা ।
: তুমি কী বলছো এসব,সত্যি তোমার…
আর কিছু বলতে পারি না ।গলা জড়িয়ে আসে আমার ।
: হ্যাঁ,সত্যি ।কাল তোমার সাথে দেখা হবে ।তখন সব বলবো ।এটুকু বলে ফোন রেখে দিলে ।কি যেন বলবো কিন্তু বলা হয়না ।
হ্যালো….
ঘুমটা ভেঙে যায় ।প্রায়ই এই স্বপ্নটা দেখি ।কদিন পর পর হুবু হু একই স্বপ্নে ঘুম ভাঙে ।
তোমার নাম্বারে ডায়াল করি,দুঃখিত,আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারে….
তোমার নাম্বারটা বদলে গেছে,সেই সাখে অনেক কিছুই বদলে গেছে ।তোমার ঘর হয়েছে,সংসার পেতেছ ।আর আমি বোকার মতো এখনো তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি ।কেন এমন হয়,বুজতে পারি না ।তবে কি তোমাকে ভুলতে পারছি না আমি ?প্রশ্নগুলি আমাকে বড্ড তাড়িয়ে বেড়ায় ।
দিপার সাথে আমার পরিচয় ফোনে ?
হোষ্টেলের দিনগুলি বড় এগগুয়েমি লাগতো ।বড় অসহ্য মনে হতো তখন ।এরই মাঝে একদিন মোবাইল এ ভুলে দিপার সাথে কথা হয় ।দিপার কথা গুলো বড় ভালো লাগে সেদিন ।মনে হয় আমার ১৯ বছরের জীবনে এমন কাউকেই খুজছিলাম ।কিন্তু সে সময় ও ব্যাস্ত থাকতো ওর বন্ধুদের নিয়ে ।কিন্তু যাকে আমি খুজতাম সেকি দুরে থাকতে পারে ।আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব হলো ।দিপাকে SM S করতাম,ও SM S করতো ।এভাবেই আমরা পরস্পরকে সহজেই বুঝে নেই ।জীবনটা সহজ হতে লাগলো ।হঠৎ একদিন শুনলাম দিপা একজন কে ভালোবাসে,তাকে বিয়ে করতে চায় ।কিন্তু আমি তাকে বলতে পারিনি,আমি ও তাকে ভালোবেসে ফেলেছি ।এ কথা শুনার পর ভুলে ও যেতে পারিনি,দুরে সরিয়ে দিতে পারিনি ।দিপার সাথে কথা বলতাম,তার কষ্টের কথা,আনন্দের কথা,তার ভালোবাসার কথা শুনতাম ।হঠাৎ একদিন দিপা ইন্ডিয়াতে চলে যায় ।চলে যাওয়ার সময় ওর সাথে কথা বলতে পারিনি ।এর পর প্রতিদিন দিপাকে ফোন দিতাম কিন্তু ওর ফোন বন্ধ পেতাম ।এভাবে হঠাৎ একদিন আবার দিপার সাথে কথা হয় ।ততোদিনে দিপার জীবনের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে ।তার পর থেকে প্রতিদিন দিপার সাথে কথা বলতাম ।কখনো আমি আবার কেখনো ও নিজেই ফোন করতো ।এভাবে লেখাপড়ার মাঝে দিপার সাথে কথা বলে একাকি জীবনটা কেটে যাচ্ছিল ।প্রতিদিন দিপার সাথে কথা বলতেই হতো,ও খোজ রাখতো আমার ।এভাবে যোগাযোগটাও বেড়ে যায় ।পারিস্পারিক নির্ভরশীলতা দিন দিন বাড়তে লাগলো আমাদের মাঝে,হাজার হাজার মাইল দূরত্বটা মুঠোফোনের কল্যানে মুখোমুখি মনে হতো ।এলোমেলো আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দ্রুত নিজেকে গুছিয়ে নেওয়া শুরু করলাম ।এমন করে একদিন দিপা বললো ও দেশে আসবে ।দেখা হবে আমাদের মাঝে ।তখন থেকেই আমার স্বপ্নের ঝাপি নিয়ে বসি,প্রথম দেখাতে দিপাকে কি বলবো,ওকে কি দিব উপহার ।এমনি করে একদিন মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো ।
: হ্যালো
: ইমন,আমি এখন দেশে ।কাল তোমায় দেখতে চাই ।
তুমি আসবে না আমার কাছে ?
: বললাম আসবো তোমায় দেখতে ,আর সাজাবো তোমায় নতুন সাজে ।তুমি তৈরি থেকো ।কাল আসছি তোমার শহরে ।
: আচ্ছা,আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো নতুন কিছু নিয়ে ।
আমাদের দেখা হলো পরিচয়ের তিন মাসের মাথায় ।ওকে দেখে আমার আরো বেশি ভালো লেগে যায় ।মনে মনে বলি,এমন একজনকেইতো আমি খুজছিলাম ।সারাটা দিন পাশাপাশি থাকলাম,আমাকে পাশে পেয়ে যেন ও প্রাণ ফিরে পেয়েছিল ।অনভ্যস্ত আমি সঙ্গে নিয়ে আসা কাচের চুড়ি গুলো ওর কোমল দুটি হাতে পরিয়ে দেই ।ব্যথা পেয়েছিল একটু,তবু ওর দৃষ্টিতে যে তিপ্তির রেখা ফুটে উঠেছিল তার বিবরন আজো নির্নয় করতে পারিনি ।চুড়ি গুলি খুব মানিয়েছিল ওর হাতে ।আমি কিছুক্ষনের জন্য নীরব হয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে,আমার এই সামান্ন চুড়ি গুলো থাকবে তো ওর হাতে ?ও আমায় একটা টি-শার্ট দিলো আর বললো যেখানেই থাকো ভালো থেক ।বলে কেঁদে ফেললো,বুজতে পারলাম না কাঁদলো কেন ?এর পর তাকে বাসায় পেীঁছে দিয়ে আমি আমার হোস্টেলে ফিরে আসি ।এর পর থেকেই প্রতিদিন দিপার সাথে কথা বলতেই হতো ।আমি কি খেলাম,কোথায় আছি,কি করছি ।লেখাপড়া কেমন চলছে তার খোজ নেওয়া ।
ক্লাস,পড়া ইত্যাদি নিয়ে সারাদিন ব্যাস্ত খাকতাম আর অপেক্ষায় থাকতাম কখন দিপা ফোন করবে ।আর দুজনে বসবো ভালোবাসার ডালি নিয়ে ।আমি অসুস্ত থাকলে ওর ঘুম হতোনা ।এমনি করে দিন গুলি ভালোই কেটে যাচ্ছিল ।এরিই মাঝে দিপার ইন্ডিয়া যাওয়ার সময় এগিয়ে আসে ।যাওয়ার আগে বলে তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তুমি একটু আসবে ?বললাম আমার সামনে পরিক্ষা কি করে আসবো বলো ?দিপা বললো Please একবার আসনা,আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তোমায় আমি আর দেখতে পাবো না ।আমি তখন কি করবো বুঝতে পারছিলাম না,সামনে পরীক্ষা আর এই সময় ওর সাথে দেখা করা ।তবু ভাবলাম দেখা করবো দিপার সাথে ।দোকানে গেলাম ওর জন্য কিছু কিনবো বলে ।একটা আংটি,একটা টিকলি কিনলাম ।ফোনে জানালাম দেখা হবে নির্জন কোন পথে শুধু দু’জনাতে ।বললো থাকবে আমার সাথে,অনেক কথা নাকি বলার আছে আমার সাথে ।
পরের দিন সকালেই পেীঁছাই ওর শহরে ।দেখা হয় আমাদের ।দিপা সেজে এসেছিল এক নতুন সাজে ।নীল শাড়ি,মাথায় টিকলি,কপালে লাল টিপ দেখতে যেন নীল পরী ।আমার নেয়া আংটি তার হাতে পরিয়ে দিলাম ।বললাম আজ থেকে তুমি আমার শুধুই আমার হলে ।ও আমার কোলে মাথা রেখে কাঁদলে,বললে সেই দিন কি আসবে ?আমি কি পারবো তোমাকে সুখি করতে ?আমি বললাম,সে দিন আসুখ আর না আসুখ আজতো বর্তমান ।আজ আমি তুমি পাশা পাশি । অনেক কথা বললো দিপা,ওর প্রিয় গান গাইলো ।বললাম এ গান শুধু তোমার গলায়ই মানায় ।এমনি ভাবে সময় পার হয়ে যায় ,আর আমার আসার সময় হয়ে যায় ।ও আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে চলে গেলে ।তখন ও বুঝিনি আমি কি ফেলে আসলাম,আর দেখা হবে না ওর সাথে ।ওকে রেখে আশার পর থেকেই আমার ভিতর এক অযাচিত অস্তিরতা ভর করছিল ।পরের দিনই ওর ফোন পাই ।আমি বাইরে ছিলাম ।
: তোমাকে একটা গুরুত্বপূর্ন কথা বলি ।আজ রাতেই আমার বিয়ে ।তুমি আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে না ।এর চেয়ে আর বেশি কিছু তোমাকে বলতে পারবো না ।তবে এইটুকু শুনে রাখ আমার মা বাবার কথা রাখতে গিয়ে আমাকে বাধ্য হতে হয়েছে ।আমাকে ভুলে যেও ।খুব দ্রত কথাগুলো বলে ফোনটি কেটে দিলে ।আমি ফোন করি কিন্তু ওর নাম্বার বন্ধ ,নিমিষেই হারিয়ে যাই ।ভাবতে পারিনা,আমার কি করা উচিত ।ঠিক ঘন্টা দুয়েক পর ওর নাম্বার থেকে একটা SM S আসলো তাতে লেখা-তোমাকে ফোন করার মতো সাহস আমার নেই ।জানি অনেক কিছুই ভাবছো আমার সর্ম্পকে ।কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোমাকে ঠকাইনি ।ব্যাপারটা এতো দ্রত ঘটে যে তোমাকে বলার মতো সময় পাইনি ।আর বললে তুমি বা আমি কি করতে পারতাম ?একটা অনুরোধ করবো জানি না রাখবে কিনা ?তুমি আমাকে ভুল বুঝো না,ভালো ভাবে লেখা পড়া করো আর ভালো থেক ।নিজের অজান্তেই আমার চোখে জ্বল আসে ।দু-ফোঁটা জ্বল গড়িয়ে পড়ে ।আমি চোখে ঝাপসা দেখি কিছু সময়ের জন্য ।চোঁখ থেকে চশমাটা খুলে মুছতে মুছতে আনমনে হাঁটতে থাকি ।অনেক রাত হয়ে গেছে,আমাকে হোস্টেলে ফিরতে হবে ।আমি ভাবছি তোমার শেষ কথাটি রাখতে পারবো কিনা ।আমাকে যে পারতেই হবে ।কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি ।তোমাকে কথা দিলাম,তুমি অহনির্শ মিশে থাকবে আমার কল্পনায়,আমার হৃদয়ে ।কারন তুমি আছ হৃদয়ে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

১৩ জুলাই - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪