জীবনের বিনিময়ে অর্জিত

পূর্ণতা (আগষ্ট ২০১৩)

অবাক ভালোবাসা
  • ২৯
ভাল লাগছিল না এই পরন্ত বিকাল বেলা । উদাস দক্ষিন হাওয়ায় বটমূলে বসে ছিলাম আর কত ভাবনা মাথার মধ্যে । সবে মাত্র ক্লাস এইট এ পরি । মাথার মধ্যে শুধু স্বপ্নেরা খেলা করে । আজ পাইলট তো কাল মেজর আবার কখনো কিছুই না । মাঝে মাঝে পড়ালেখা ভাল লাগে না । মন চায় ডানা দুটি মেলে দিয়ে উড়ে যাই অজানায় । ভাবতে ভাল লাগে তাই ভাবি । তবে এটা আমি কখনো ভাবতে পারিনা যে, আমাদের এই দেশে এই মাটিতে অন্য কেও দখল দিবে । কেড়ে নিবে এই প্রান । খুবই তাজ্জব বনে যাই যখন বাবা রাত্রে রেডিওটি চালু করে খবর শুনেন । পাকিস্তানিরা নাকি এই দেশের মালিকানা চায় । আমাদের নাকি বাংলা ভাষায় কথা বলতে দিবে না, উর্দুতে কথা বলতে হবে । নাহ! ভাবতেই কতো খারাপ লাগে । আমি এসব নিয়ে ভাবতে চাইনা । তবুও এই দেশের মানুষতো , ভাবতে হবে দেশের জন্য কিছু করতে হবে । সুনেছি অরা নাকি ঢাকায় যুদ্ধ শুরু করে দিয়ছে । আবার সেদিন শুনলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান একটা লম্বা ভাষণ দিলেন । বাবা রেডিও চালিয়েছিল, তাই শুনেছিলাম । সত্য কথা বলতে কি, এই প্রথম কারো মুখের কথা শুনে আমার দেহের লোম কাটা দিয়ে উঠল । ভাবতেই কেমন লাগে । তখন আমার ইচ্ছে হয়েছিলো ওদের পেলে আমি টুকরো টুকরো করে কেটে কুমার নদীতে ভাসিয়ে দিতাম । কিন্তু বাবা বলেন আমার নাকি যুদ্ধে যাবার সময় হয়নি, বয়স কম ।

দেখতে দেখতে আর ভাবতে ভাবতে কখন যে সূর্য্যি হারিয়ে গেল, টেরই পাইনি । বাসায় ফিরলাম । আমার আসতে দেরি দেখে বাবা-মা খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন । কারন জানতে চাইতেই বাবা বললেন বের হসনা গ্রামে পাকরা এসেছে । তুই সব সময় বাসার ভিতরে থাকবি আর যদি কখনো তুই ওদের দেখিস সালাম দিবি । ওরা তোকে কিছুই বলবেনা ।
গভীর রাত । হটাত! ঘুম ভেঙ্গে গেল গোলাগুলির শব্দে । লাফ দিয়ে বিছনা ছারলাম । খুব ভয় করছিলো । আমি দৌড়ে গেলাম মায়ের কাছে । মা একা বসে কাঁদছে , আমি জিজ্ঞসা করলাম বাবা কোথায় ? আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম মায়ের চোখে বাবার প্রতি ঘৃণা জ্বলজ্বল করছে । আমার আর বুজতে বাকি থাকল না যে বাবা পাকদের সাথে হাত মিলিয়েছে । আমারও মন থেকে বাবার প্রতি ঘৃণার জন্ম নিলো । বাবাকে আর বাবা বলে ডাকতে ইচ্ছে করছিলো না ।

পরের দিন সকালে দেখি চারিদিকে আগুন জ্বলছে, আকাশটা যেন চিৎকার করে বলছে “মানুষ এতো জঘন্য হতে পারে কি করে ।” চারিদিক থেকে শুধু মানুষ পোড়া গন্ধ । বাড়ি-ঘর পুরে ছাই হয়ে গেছে । এসব দেখতে দেখতে স্কুলের দিকে যাচ্ছিলাম । পোড়া কপাল! স্কুলে কুত্তার বাচ্চারা ঘাটি পেতেছে । ওখানে আর পড়ালেখা হবে না । এসব দেখে আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো ওদের খুন করে ফেলি । হটাত! আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো । নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । আমি আমার শরীরে চিমটি কাটলাম । না আমি স্বপ্ন দেখছি না । আমার বাবা ওদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল । বাবা আমাকে দেখে কাছে ডাকলেন এবং ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন । বাড়ি ফেরার সময় দেখলাম একটা লোক মাথায় করে কি যেন নিয়ে যাচ্ছে । আর সে অনেক বেশী ভীত ছিল । কারন সামনেই মিলিটারিদের ক্যাম্প । ওরা সবাইকে চেক করছিলো । আর ওই লোকটা ওই কারনেই ভীত ছিল । আমি দেখার চেষ্টা করলাম তার মাথায় কি আছে, আমি যেটুকু দেখলাম যে তার মাথায় আলু ভরতি একটা ঝাকা । কিন্তু উনি এতো ভয় পাচ্ছে কেন? আমি এগিয়ে গেলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম সমস্যা কী? কিন্তু আমার কাছে বলতে নারাজ । সে আমার কাছে সব গোপন রাখছিল তার প্রধান কারন আমার বাবা । আমার সাথে কথা বলতে বলতে চেক পয়েন্ট পার হয়ে গেলাম । আমাকে দেখে মিলিটারিরা আর চেক করল না । আমার দ্বারা এই সাহায্য পেয়ে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন । এবং অনেক খুসি মনে নিজের পথ ধরলেন । আর তখনি আমার সন্দেহ লাগল । আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপানার মাথায় কি? উনি বললেন আলু । আমি বললাম আমি দেখব । কিন্তু উনি দেখাবে না । আমি নাছোড় বান্দা । অবশেষে বললেন, উনি মুক্তিযোদ্ধা । আমার বাবার কথা বললেন উনি তো রাজাকার । আমি বললাম আমি আমার বাবাকে অনেক ঘৃণা করি । আমাকে মুক্তিজুদ্ধা কাম্পে নিয়ে চলুন । আমি আপনাদের সাথে কাজ করব । আমার দ্বারা অনেক উপকার হবে অনেক তথ্য এনে দিতে পারব । আমাকে নিয়ে চলুন আপনার সাথে, আমাকে বিশ্বাস করুন আমি আপনাদের কোন ক্ষতি করব না । আপনাদের কথা কাওকেই বলব না আমার জীবন গেলেও না । ¬¬¬¬¬¬¬¬¬কিন্তু উনি রাজি হচ্ছিলো না, পরে অবশ্য আমাকে আশ্বাস দিয়ে গেলেন যে উনি কমান্ডার কে আমার কথা বলবেন এবং উনি এও বললেন যে তার মাথায় গোলাবারুদ ।

২ দিন পর । আমি একটা তথ্য নিয়ে গেলাম মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে । তাদের বললাম পাকড়া আজ রাতে মোহনপুরে গ্রামে যাবে এবং গ্রাম জালিয়ে দিবে । এ সংবাদটি পেয়ে সকলেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করল । আমি তাদের সাথে যেতে চাইলাম কিন্তু নিতে চাইল না । আমার জুরাজুরির একপর্যায়ে আমাকে নিতে রাজি হল ।
আজ স্বচক্ষে যুদ্ধ দেখলাম । একটা কুত্তাকেও বাঁচতে দেয়নি ওরা । আমি ঘেমে যাচ্ছিলাম, ভয়ও পাচ্ছিলাম তার পরেও ভাল লাগছিল । হটাত বাবাকে দেখলাম ওদের মাঝে, কিন্তু বাবাকে ওরা মারল না । বোধয় একবার বাচার সুযোগ করে দিলো । ঐ রাত্রে আর বাসায় ফেরা হল না । মা খুব চিন্তিত ছিলেন । কাক ডাকা ভোরে যখন বাড়িতে আসলাম, দেখি মা-বাবা দুজনেই অপেক্ষা করছে আমার জন্য । মা জিজ্ঞসা করল কোথায় ছিলি? আমি ঘামছিলাম আর কাপছিলাম । কাপা কাপা গলায় বললাম মন্তু স্যারের বাসায় ছিলাম । মন্তু স্যারের কথা শুনে মা কিছু বলল না । কারন আমি মাঝে মাঝে পড়ার জন্য মন্তু স্যারের বাসায় জেতাম এমনকি রাত্রে থাকতাম । মা এজন্য কিছু বলল না । কিন্তু বাবা আমাকে সন্দেহ করল এবং কিছু প্রশ্ন করল যার সঠিক জবাব আমি দিতে ব্যাথ হলাম টা

আমাদের গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেন আর জাতায়াত করতে না পারে, সেজন্য ডোবরা আর মোবারকদিয়া গ্রামের মাঝখানের সেতুটি উড়িয়ে দিবে কমান্ডার এমনটাই বলছিল । ঠিক এই মুহূর্তে দৌরে খবর দিলাম আজ রাতে ওরা মোবারকদিয়া গ্রামে যাবে । এ সংবাদ শুনেতো কমান্ডার আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরল এবং আনন্দে সাতখান । তারপর রাতে পাকদের দুটি গাড়িসহ ব্রিজটি উড়িয়ে দিলো । এসব দেখে এদের সাথে থেকে আমার খুব ভালই লাগছিলো, দেশমাতার জন্য কিছু করতে পারছি । পর পর দুটি অপারেশনে হেরে অনেক সৈন্য কমেছে । আর কিছু সৈন্য পাঠানোর জন্য বলে ওদের প্রধান কার্যালয়ে । আর আমি সেটাও জানতে পারি ।দেরি না করে সোজা মুক্তি যোদ্ধা ক্যাম্পে । সবাই নদীর ঘাটে যার যার মত অবস্থান নিয়ে নিলো । আমিও ছিলাম ওদের সাথে । ভর দুপুর বেলা লঞ্চটিকে নদীর ঘাটে আসতে দেখলাম । আমার বাবাও এসেছে ওদের নিয়ে যেতে । হটাতি বাবার সামনে পরে যাই আমি । ঠিক সেই মুহূর্তে শুরু হয় যুদ্ধ । বাবার বুঝতে বাকি থাকল নাজে আমি মুক্তির দলে যোগ দিয়েছি । বাবা আমাকে নিয়ে দৌরে পালায়, এক পর্যায়ে বাসায় নিয়ে রুমে আটকে রাখে । আমার উপর অমানবিক অত্যাচার করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাম্প কোথায় বলার জন্য । কে কে বা কারা কারা যুদ্ধে গেছে আমি কজনকে চিনি আরো অনেক প্রশ্ন । কিন্তু আমি কোন প্রশ্নেরই উত্তর দিচ্ছিলাম না । শুধু মাঝে মাজে “জয় বাংলা” বলেছিলাম । যেটা শুনে আমার বাবা আর রেগে যাচ্ছিলেন । এক পর্যায়ে বাবা আমাকে আটকে রেখে বাইরে বের হয়ে গেলেন ।

কিছুক্ষন পর আবার এলেন আমাকে নিয়ে বের হয়ে গেলেন । মায়ের অনেক কাকুতি-মিনুতি, কিন্তু বাবা শুনলেন না । আমাকে নিয়ে সেই বটমূলের নিচে এনে হাত ও চোখ বেধে বললেন তুই বলে দে মুক্তিজুদ্ধাদের কাম্প কোথায় আমি তোকে ছেরে দিব । না বললে আমি তোকে গুলি করে মেরে ফেলব । আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো । আমার জন্মদাতা বাবা আজ আমাকে গুলি করে মারবে । আর বেশী কষ্ট হচ্ছিলো স্বাধীন বাংলা, স্বাধীন মাটি, স্বাধীন দেশ দেখে মরতে পারলাম না । আমার বাবা পশু হয়ে গেছে । নিজের সন্তানকে মারতে একটুও হাত কাপছে না । আমি বাবার কথার কোন জবাব না দিয়ে শুধু “জয় বাংলা” বলে চলছিলাম । হটাত দুইটা শব্দ । তারপর আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম । আমি অনেক্ষন জীবিত ছিলাম । শুধু কথা বলতে পারছিলাম না আর চোখ দুটি বাধা । হটাত অনুভব করতে পারলাম যে কমান্ডার হাফিজ ভাই আমার চোখ খুলে দিয়ে বুকে জড়িয়ে একটা চিৎকার দিয়ে কেদে উঠল । চোখে ঝাপসা দেখছি, মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না । কষ্ট এখানেই স্বাধীন বাংলা দেখা হল না ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য মুক্তিযুদ্ধের সব গল্পই ভালো লাগে। এটাও ভালো লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ।
মিলন বনিক অল্প বয়েস...এমন একটি বিষয় নিয়ে এত সুন্দর গল্প লিখলে কিভাবে তাই ভাবছি....অভিনন্দন তোমাকে....খুব ভালো লাগলো....
আপনাকেও অনেক ভালোবাসা । ভালো থাকবেন ।
নাজিয়া জাহান তুমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখতে চেষ্টা করেছ দেখে ভাল লাগছে কিন্তু গল্পের ভাষা খুব হালকা..মুক্তিযুদ্ধের আবেগটুকু একদম ফুটেনি।আরেকটু সতর্ক হয়ে বানানের প্রতিও খেয়াল রাখা দরকার ছিল......
আপনাকে অনেক বেশি ধন্যবাদ প্রিয় । আমার বানান ভুল সেটা আমি জানি, এটা আমার চাহিদার বাইরে, আমি যখন অভ্র দিয়ে লিখি তখন এই ভুলটা হয় । ভাল থাকবেন ।

০১ জুলাই - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪