সামনে তাকিয়ে দেখল দিগন্তের দিকে রাস্তাটা বড্ড অগোছালো । এঁকে বেঁকে কোথায় চলে গেছে । কিছুতেই নাগাল পায় না বিহান । কিছুটা এগিয়ে আঁকড়ে ধরা রাস্তার সীমানায় সূর্য ওঠে ডোবে খেলা করে খেলিয়ে যায় মেখে মাখিয়ে হাসিয়ে কাঁদিয়ে যায় আর আসে । বিহান ভাবে এইটাই ঠিক আর ঠিক পর মুহূর্তে পাল্টে গেল রঙ । এত রঙের মেলা দিগন্তে ভাবতেও অবাক লাগে । আজকাল তাই ছেড়ে দিয়েছে ভাবনা । বিহান শুধু বেঁচে আছে । মা বলত – পড়া শেষ হল , যা বাপি একটু বাজার করে এনে দেয় । তোর বাবা সেই বেরিয়েছে কত আর করবে ? একদম খাঁটি কথা । কত আর করবে ? সংসার চালানো যার যেমন তার কাছে তেমনি জিভ বের করা । বাজার গেলে তো হবে না দেখে কেনা । হিসেব বুঝে নেওয়া । বাজারে যাওয়া আসা তাই সম্পর্কের কথাটাও ভাবা । এত সবের মাঝে বেফাঁস কিছু হয়ে গেলেই দিগন্তে রাঙা মেঘের আমদানি । বাজার তো বাজার বিহানের ঘরে এসেও সেই মেঘে কালের হুমকি । তাই সইতে সইতে নিজের সংসারে গোছানোর তোড়জোড় । বউয়ের ফিরিস্তি – কি গো পই পই করে বলা সত্ত্বেও কথা কানে গেল না ? বলি আমি কি কলুর ঘানি টানার জন্য তোমার কাছে দাসখত দিয়ে এসেছি । আর তুমি হুকুমজারি আর বিন্দাস হয়ে সংসারের খড়্গ ধরে বসে থাকলে আর যাই হোক ছেলেমেয়েরা গোল্লায় যাবে ? এরকম কত কথা কানে যায় । বিহানে নিজের কাছে নিজের আর বসা হয় না । ঘুঁটি সাজানো সময় নেয় । এভাবে গড়ব ছেলে এটা হলে আরো ভালো মেয়ে ওটা হলে সুন্দর আগামী । কিন্তু তাতে প্রায় ঘন মেঘ আর কালবৈশাখী । দু এক পশলা বৃষ্টিও হয় । মায়ের কোল ঘেঁষে বসে আকাশ আরো কত চওড়া । সবুজের অনাবিল ঘাসে মাঠময় লুটোপুটি ছেলেটাকে বার বার জিজ্ঞেস করে – বাবা লাগল নাকি ? জোরে হাওয়া বেরিয়ে যাওয়া বল মেরেও এত হাততালি । বলটা ব্যাটে লাগলই না । চিৎকার – চার , চার । পার্কের এককোণ খুঁজতে খুঁজতে বিকেল পেরিয়ে গেল । কথাগুলো গুছিয়ে নিয়েও কিছু বলতে না পেরে লজ্জায় কুঁকড়ে বিহান তাও বৃষ্টিতে ভিজেছিল । কি করে যেন তারই উত্তর পর্বে বাজ পড়েছিল খেয়াল করে নি । দিগন্ত এত নিষ্ঠুরও । কিন্তু এখানেই শুরু এখানেই শেষ । বাঁশি বাজিয়ে দোলায় চাপিয়ে নিয়ে যাবে তা তো হয় না । মায়ের পাশে দাদা দিদি ছিল । টানাপড়েন ছিল । তাতে প্রত্যেকেই সঞ্চয় করতে লাগল আত্মরক্ষা । এক পা এক পা বাইরে বেরিয়েও বিহানের চোখে পরে সবাই কেবল আত্মরক্ষা সঞ্চয় করে জমিয়ে রাখে । না জানি এখুনি কেউ ঝাঁপিয়ে পড়বে । দিগন্ত জুড়ে এত ভয় কেন ? আমি তোমার এমনকি তুমি আমারও শত্রু । বিহানের নিজের মধ্যে ক্রমাগত নিজের দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে । বুকের মধ্যে অজানা দিগন্ত খেলা করতেই থাকে । মেনে নিলেই মানি । কিন্তু তাতে যে তুমি থাকবে আমার কি হবে ? তাই প্রতিবাদী ভাষা নিজের থেকে উগরে উঠে আসে । পাথরের ঘা সহ্য করতে বিহান রাস্তায় নামে । এত দ্রুততায় কেউ সোজা যাচ্ছেই না । সোজা গিয়েও এঁকে বেঁকে দিগন্তে কোথায় যেন হারিয়েই যাচ্ছে । একটু এগিয়ে বিহান নিজেকে পায় । নিজের চেনাদের অচেনাদের খুঁজে পায় আবার হারিয়ে যায় । কিছু বলতে গেলেই সবাই কেমন আত্মরক্ষার সঞ্চয়ী আবরণ বের করে সাহায্য করে প্রত্যাখ্যান করে বা মিলেমিশে যায় । সে সব বুঝতে বুঝতে সময় পেরিয়ে যায় । বিহান পিছিয়ে পড়ে । দিগন্ত চোখের সামনে খেলা করে । সিন্দূরে মেঘ নাচানাচি করে । মেঘের আনাগোনায় আকাশ ভারি হয়ে আসে । বৃষ্টি নামে । কালো মেঘ কালবৈশাখীতেও বিহান ভিজতে থাকে ভিজে যায় । মুখ তুলে আজও আকাশ দেখে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।