স্কুলে যাওয়ার পথে ক’দিন ধরে দেখছি এক বয়স্ক মানুষ সূর্যের দিকে তাকিয়ে কেমন হা- হুতাশ করে নিজের মনে একা একাই কি সব যেন বলেই চলেছেন । রোজ দেখতে দেখতে কেমন যেন মনে হল । কেউ এভাবে এই সবুজ মাঠ আর লাল টকটকে সূর্যের সামনে দাঁড়িয়ে দিনের পর দিন কি সব বলেই চলেছেন । মনে তো হয় সুস্থ সবল মানুষ । আর চোখে মুখে কিসের জন্য যেন আক্ষেপের সুর । বাধ্য হয়ে কৌতূহল নিবারণ করার জন্য একদিন এগিয়ে গেলাম – আপনি সামনে দু হাত বাড়িয়ে কি করেন ? কথা শুনতে পেল কি না বুঝতে পারলাম না ; সাড়া না পেয়ে আবার বললাম – সবুজ ধানের মাঠে আপনার কি কিছু হারিয়ে গেছে ? আমার দিকে তাকালেন । অনেক কষ্টের এক চিলতে হাসি হাসলেন । মাথায় হাত দেওয়ার মত ভঙ্গি করে বললেন – তুমি তো স্কুলে যাচ্ছো ? যাও । আরো বড় হও । আমার তো সে অনেক কথা । তোমার সময় হবে ? গলাটা এত মধুর মন ভরে গেল । লোভ ছাড়তে পারলাম না । বললাম – রোজ একটু একটু করে শুনবো । যেমন আমরা রোজ একটু একটু পড়তে পড়তে কত কি শিখে যাই । আমি তোমার সব কথা শুনব । রোজ । উনি বললেন – তোমাকে আমি চিনি না । আমার এভাবে এখানে দাঁড়ানো দেখে কেউ দাঁড়ায় নি । বয়স্ক মানুষ তাই সবাই এড়িয়ে যায় । তোমার বুদ্ধিদীপ্ত কথা আমার ভাল লেগেছে । অনেকেই স্কুলে যেতে যেতে আমাকে ডাকল – চলে আয় গোপলা , দেরি হয়ে যাবে । কি করছিস পাগলের সাথে ? পাগল কথাটা আস্তে বললেও বেশ শোনা গেল । তবুও উনি বললেন – এই সবুজ মাঠ আর লাল টকটকে সূর্য এই আমাদের দেশ । আমি এই দেশের একজন । গর্বের একজন । কিন্তু সেই গর্ব কিভাবে যেন বিচ্ছিন্ন কুক্ষিগত হয়ে গেল । তারই সুরাহায় আমার ওই বিস্তীর্ণ সামনে হয়ে যাওয়া । এবার যাও যদি সুযোগ পাই কাল আবার । উনি আবার সামনে তাকিয়ে কি যেন আনবেন সেই চেষ্টায় লেগে পড়লেন । আমি স্কুলে চলে গেলাম । স্কুলে পড়াশুনায় মন বসল না । স্যারের কাছে বকা খেতে হল । ঘরে এসে মাকে জিজ্ঞেস করতেই একটু ভেবে মা বলল – উনার বয়স কত ? -তা ষাট সত্তরের বেশিই হবে । মা কিছুক্ষণ নিজেকে নিয়ে কি যেন সূত্র মেলাতে চেষ্টা করলেন । তারপর আমাকে বুকে টেনে নিয়ে খুব ধীরে ধীরে বলল – মনে হয় উনি স্বাধীনতার মুক্তি সংগ্রামী । যে শান্তি-সুখ দেশের স্বপ্ন দেখতে দেখতে লড়াই করেছিলেন তার বিন্দুমাত্র এখন আর অবশিষ্ট নেই । কারা যেন সেই দেশ ছিনিয়ে নিয়ে লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে । সুজলা সুফলা দেশ ধ্বংসের মুখে । নিজে একটুও সম্মান না পেয়ে নিজের অন্তরে কাঁদতে কাঁদতে রোজ সবুজ মাঠ আর সূর্যে সামনে দাঁড়িয়ে আগামী খোঁজেন উনি । কথা বলতে বলতে মায়ের আঁচল দিয়ে চোখ মোছা হাঁ করে আমি দেখলাম । দেশ সম্পর্কে এখনো আমার মায়ের মত অনেকের মমত্ব বোধ আছেই আছে । সবাই মিলে আমাদেরকেই তাকে সাকার করে তুলতে হবে । বুকের মধ্যে এক অদম্য সাহস অনুভব করলাম । সুন্দর দেশ গড়বই । সবার আগে জানতে হবে দেশ সম্পর্কে । তাই পরদিন সেই সংগ্রামী আর একই রাস্তার দেশকে নতুনভাবে দেখতে এগিয়ে চললাম সবুজ মাঠ আর সূর্যের সামনে । সোজা হয়ে দাঁড়ানো সামনে দুহাত বাড়ানো বয়স্ক মানুষটির সামনে দাঁড়িয়ে আমি স্যালুট করে দাঁড়ালাম । আর তাই দেখে অনেকটা বিস্ময় আর আগামীর আগমন আশ্চর্যে উনি কিছু বলতে চাইলেন । আমি কিছু বলতে না দিয়ে হাতটা ধরলাম । বললাম – আপনি ভাল আছেন তো ? চলুন আপনাকে আমাদের স্কুলে নিয়ে গিয়ে সবাইকে আমাদের দেশের সঙ্গে নতুন করে আবার পরিচয় করাব । নতুন কিছু পাওয়ার আশায় উনি অনাবিল অপূরনীয় বিজয় হাসি হাসতে লাগলেন । আর আমরা চললাম স্কুলের পথে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।