সহবত

উপলব্ধি (এপ্রিল ২০১৬)

দীপঙ্কর বেরা
  • ১১
  • ১৭
ঘরের কাজগুলোকে এলোমেলো রেখে বাইরে খুব দক্ষ তা হয় না । যে ঘরে দক্ষ সে বাইরেও দক্ষ । মিনতিদি যে কাজটুকু করে খুব গোছালো হয় । আমাদের ঘরে সেদিন এসেই ঢোকার মুখে খবরে কাগজগুলো দেখেই বলল - এ রকম কেন গোপলা , একটু গুছিয়ে রাখতে পার না ?
বলতে বলতেই অত্যন্ত তৎপরতায় সেগুলো গুছিয়ে দিলেন ।
আমি বললাম - এ কি ! না না । আমার কোন কথাই শুনলেন না । আমার পুরো ঘরই অগোছালো । উনি কিছু কথা বার্তা বলার পর আমার চা বসানো দেখে বলল - আমি করি । তুমি চুপ করে বস ।
- এ মা ! আমাদের ঘরে এসে এ কি !
- এই ঘর ওই ঘর বাইরে ভেতরে এসব আবার কি ? পুরোটাই তো আমাদের নিজেদের ঘর নিজেদের সমাজ । এখানে কিছু করলে তার প্রভাব সারা সমাজে ছড়িয়ে পড়বে ?
আমি কথা বাড়ালাম না । জিজ্ঞাসা করলাম না কিভাবে ছড়িয়ে পড়বে ? মিনতিদিকে যতটুকু জানি তাতে আমাকে যেভাবে বোঝাবে তাতে আমার পিলে চমকে যেতে পারে । উনি চায়ে জল বসিয়ে সারা ঘরটায় ঘুরে ঘুরে কি সব করতে লাগলেন । আমি টিভি চালিয়ে দেখছি । যেন মনে হয় আমি এ ঘরে বেড়াতে এসেছি ।
আমাদের এই পাশাপাশি ঘরগুলোতে এভাবেই আমরা থাকি । এ পাড়ায় মিনতিদির খুব একটা মান্যি আছে বলে মনে হয় না । ছেলেদের দুপুরে খেলতে দেখলেই বকাঝকা করে । কারো ঘরের সামনে নোংরা পড়ে থাকলে আমরা না দেখার ভান করে চলে যাই । মিনতিদি তাদের ডেকে বকবেই । কারো ঘরে ঘরোয়া ঝগড়া বা আলোচনা যাই হোক না কেন নাক গলাবেই , সমাধান করে দেয় আবার পারে না কিন্তু প্রসঙ্গটা পাল্টে দেয় । নিজের ছেলেমেয়ে নেই বলে বাচ্চাদের পড়াতে বসে খুব বকে খুব ভালোবাসে । কোনটাই কারো পছন্দ হয় না । লুকিয়ে লোকে উনাকে শাঁকচুন্নি , কুচুটি বলে । আমি কি ভাবি আমিও ঠিক জানি না ।
- এই নাও চা ।
এক চুমুক দিয়ে বললাম - বাহ ! সুন্দর । বাড়ি থেকে চা এনেছ ।
- কেন না তো । তোমারই চা , একটু এলাচ দিলাম । এলাচ গুলো অনেকদিন আগে কিনেছ ?
- হ্যাঁ । বলেই ঘরের ভেতরটা চোখ পড়তেই অবাক । ওয়াল ক্লকটা কি সুন্দর করে ক্যালণ্ডারের নীচে গুছিয়ে রাখা । কাপ হাতে এগিয়ে গেলাম । বিছানা ,আলনা , পাপোষ আলমারির পর্দা এত সুন্দর করে গোছানো । সময়ও বেশি লাগে নি । সদ ইচ্ছা থাকলেই হল । দেখি টিভি বন্ধ করে তার কভার ঠিক করছে । বললাম - তুমি চুপ করে বসতে থাকতে পার না ।
- আমি একদম অগোছালো দেখতে পারি না ।
আমার মায়ের কথা মনে পড়ে গেল । মা ঘর গোছাতে খুব সময় দিত । একটুও বিরক্ত হত না । আমি যতবার বই জামা কাপড় এ দিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিতাম । মা গুছিয়ে দিত । বাবাও করত কিন্তু বকতে বকতে করতো । যা আমার কাছে রূঢ় মনে হত । মা কিছু বলত না কিন্তু কষ্ট দেখেই আমি ধীরে ধীরে সে সব শিখে যাই ।
- দিদি , তোমার কোন অসুবিধা হবে না । আমি দেখে দেব । খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবে ।
- তোমার উপর ভরসা আছে । তুমি তো ভাল ছেলে । ঠিক আছে আসছি । মিনতিদি বেরিয়ে গেল ।
সন্ধ্যে হতে দেরী আছে । টিভির সিরিয়াল শুরু । দেখি না , আজ সময় পেলাম দেখা যাক । একটু বাদেই কোলাহল । বেরিয়ে দেখি মিনতিদি । তিন চারটে ছেলেকে বকছে । তাই দেখে তাদের মা বেরিয়ে এসেছে । বলছে - তোমার মত চললে আমাদের ছেলেরা বিবেকানন্দ হয়ে যাবে ।
- চেষ্টা করতে বাধা কোথায় ।
-তুমি তোমার নিজের ছেলেকে করে দেখাও না !
উনি জেনে বুঝে মিনতিদিকে জেনে বুঝে ঠেস মারলেন । এক কথায় সব চুপ । এখানেই কোন কারণে মিনতিদির পরাজয় । এই সত্যকে মিনতিদির মেনে নিতে কোন কষ্ট নেই । কিন্তু অন্যেরা সুযোগ পেলেই খোঁটা দেবেই । ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বকার পেছনে যে ভালোবাসা কাজ করে সবার পক্ষে তাই বোঝা সম্ভব হয়ে ওঠে না ।
সব ব্যাপারেই নাক গলাবে । আর ভাল করো আরো ভাল করো বলে খিটিমিটি করলে কার বা ভাল লাগে । মাঝে মধ্যে মদ খাব না , সিগারেট টানব না , মেয়েদের সাথে খুনসুটি করব না , মাঝরাতে হল্লা করব না তা কি হয় ? সবেতেই মিনতিদি - কি রে গোপলা কি শুনছি । কাল রাতে কে ছিল সঙ্গে । মেয়েদেরকে সম্মান করতে শেখ ।
আমি পড়াশুনায় ভাল বলে এত নরম । অন্য কেউ হলে ----
উনাকে তাই কেউ পছন্দ করে না । কিন্তু কোন কাজে ঘরে বাইরে বিরক্তিবোধ নেই । রক্তদান শিবিরে সারাক্ষণ কাজ করতে দেখেছি আমাদের ক্লাবের ক্যাম্পে ।
দিন কয় পরে উনার স্বামীর সঙ্গে দেখা - কেমন আছেন ।
- ভাল , তুমি কেমন ।
- ভাল । মিনতিদির কাজ করে দিয়েছি । কোন অসুবিধা হয় নি ।
- সে তো ঠিক আছে । কিন্তু ওর জন্য যা প্রবলেম হচ্ছে , কি যে করি ।
- কেন ? কি হল আবার ?
- এই যে আবার বললে কেন ? কেন না মিনতি মানেই প্রবলেম । কি পরিশ্রান্ত । আর পারছি না । এ রকম মেয়ের থেকে মুক্তি চাই ।
আমি হাসির সাথে একটু অন্য ভাবনায় নিয়ে যেতে চাইলাম – দাদা । মিনতিদি সাচ্চা মনের । যা দেখে তা সমাজের জীবনের ভাল হবে না ভেবেই প্রতিবাদ করে । আমরা ঘুষ নেয় জেনেও অনেকে চুপ করে থাকি । বুঝতে পারি অন্যায় হচ্ছে তাও প্রতিবাদ করতে পারি না । সেখানে মিনতিদি ঠিক মাথা তুলে দাঁড়ায় । যেটা আমাদের ভীরু সমাজ মানতেই পারে না । বলে খারাপ । অনেক অন্যায় সমাজের অনেক বাধ্যবাধকতাকে আমরা ভবিতব্য ভেবে বসে আছি । তা ঠিক নয় । সে কাজটা কিন্তু ঘর থেকে নিজের পাড়া থেকে শুরু করতে হবে । সবাই এ ভাবে ভাবলে একদিন তাই সারা সমাজে ছড়িয়ে পড়বে । মিনতিদি বা মেয়েরাই সমাজকে সুস্থ স্থিতিশীল করার জন্য এগিয়ে না এলে কি করে হবে ?
শুনতে শুনতে ভদ্রলোক বলে উঠলেন – তোমার মত আমি ভাবতে পারি না । চারদিক থেকে এত কথা আমার পক্ষে শোনা সম্ভব নয় । আমি সাধারণ । অনেক হয়েছে , চললাম ।
আমি মিনতিদির ভবিষ্যৎও চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম । ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
দীপঙ্কর বেরা পাঠকের বিচারে প্রায়ই ভাল নম্বর পাই কিন্তু বিচারকের মন জয় করতে পারছি না তাই বার বার পিছিয়ে পড়ছি। বিচারকের ভাল নম্বরের প্রত্যাশায় লিখে যাই আমি লিখে যাই। সবার জন্য শুভকামনা।
রেজওয়ানা আলী তনিমা কষ্টকর বাস্তব। স্রোতের বিপরীতে চলা মানুষকে ভালো হলেও মানুষ মেনে নেয় না। গল্প খুব ভালো লাগলো।
মোহাঃ ফখরুল আলম ভাল লেগেছে। ভোট দিতে মন চায়। আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
কেতকী অামরা শুভকে দূরে রেখে অশুভের বন্ধু হই। লেখায় ভোট রইল।
ফেরদৌস আলম ভালো লাগলো তো !
রুহুল আমীন রাজু অনেক ভালো লাগলো গল্পটি...শুভেচ্ছা. আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো.
সেলিনা ইসলাম আমাদের সমাজে মিনতিদির মত মানুষের এখন বড় অভাব বলেই না সমাজের এই হাল! একটা সময় ছিল মহল্লায় বাবা মা ছাড়াও বাড়তি শাসন করার জন্য মিনতিদির মত কেউ না কেউ একজন থাকত। এই ধরনের মানুষকে সাধারণতঃ দেখা যায় অন্য পিতা মাতাদের মাঝে কেউ কেউ অপছন্দ করে আবার কেউ কেউ অনেক বেশিই পছন্দ করে। এই ধরনের মানুষের প্রিয়জনেরা যেখানে গর্ব করা উচিৎ সেখানে বিরক্তি হয়। আর সমাজের সবার যেখানে প্রশংসা ও শ্রদ্ধা করা উচিৎ সেখানে ধিক্কার জানায়। সমাজের মানুষের এই উপলব্ধিই সমাজ থেকে মিনতিদির মত মানুষদের শেষ করে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। চমৎকার পটভূমিত,এবং গল্প লেখার ধারাবাহিকতা। খুব সুন্দর উপাস্থাপনা। অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
তাও কিছুতেই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হচ্ছে না। লেখার ইচ্ছে থাকছে না।
দাদা যদি পুরস্কারের চিন্তা মাথায় নিয়ে লেখালেখি করা হয় তাহলে কিন্তু লেখায় আনন্দ না থাকাটাই স্বাভাবিক। নিজের মনের আনন্দে লিখে যান...একদিন পুরস্কার নয় আত্মতৃপ্তি পাবেন পাঠকের ভালবাসায়। প্রতিটি লেখকের লেখায় মাঝে যে ম্যাসেজ থাকে বিকেককে জাগ্রত করা জন্য। সেই ম্যাসেজ মনে প্রাণে যদি একজন পাঠককেও নাড়া দেয়-এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে লেখকের জন্য। আপনি লিখে যান দাদা একদিন অবশ্যই ভালো কিছু পাবেন। নিরন্তর শুভকামনা।
শামীম খান সত্যি এমন চরিত্র আজো মাঝে মাঝে দেখা যায় । পাড়ার সবাই বলবে , ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছে । কিন্তু আসলে তারা সমাজের কুপ্রথা আর কুশিক্ষা তাড়াচ্ছে । সুন্দর লেখা । ভোট রইল , রইল শুভ কামনা ।
ইমরানুল হক বেলাল ভালো লিখেছেন। লেখার নমুনা চালচলন অপূর্ব। ভোট রইল। শুভেচ্ছা•••।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন এই হচ্ছে মিনতিদিদের পরিণতি। তবে তাদের জন্যই জগতটা এখনো ঠিক আছে। ভাল লিখেছেন। শুভেচ্ছা রইল।

১৫ জুন - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৬৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ডিসেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী