উত্তুরে

শীত / ঠাণ্ডা (ডিসেম্বর ২০১৫)

দীপঙ্কর বেরা
  • ১০
  • ৬১
এক্কেবারে পুকুরের ধারে বাড়ি । উত্তুরে হাওয়ার অবাধ যাতায়াত । দখিনা এ বাড়ির দরজা ভুলেই গেছে । প্রতিবারের মত এবারও ছিটে বেড়ায় আরও কিছু মাটি লেপে খড় ত্রিপল দিয়ে একেবারে টান টান করে দিয়েছে । কিন্তু মাটি ফুঁড়েও যে যাতায়াত আছে । একটামাত্র নড়বড়ে খাট । বুড়ো পাতুলাল শোয় । অগ্রহায়ণ পেরনোর পরেই সন্ধ্যেতে সেই যে তিন তিনটে ছেঁড়া ক্যাঁথা পর পর চাপিয়ে গুটিসুটি মেরে যায় আর সকাল আটটার আগে ওঠে না। পাশ ফিরলে ক্যাঁচকোঁচ শব্দ হয়ে। দু চার মুঠো মুড়ি পেলে খায় না হলে নয়। বাথরুমে যাওয়ার ভয়ে জলও কম খায়।
আর বিকি বুলুকে নিয়ে শিবম সিনা এবারও মাটিতেই। কিছুতেই সংস্থান করে উঠতে পারেনি। বিকি ছোট তাই মাকে জাপটে ধরে গরম শুষে নিয়ে ভোর প্রার্থনা করে। বুলু আর একদিকে সে লেপ্টে থাকে। শুধু শিবম একা শোয়। পাশাপাশি। একটু রাত বাড়লে শিবমদের মত সারা পাড়াটাই নিঝুম হয়ে যায়। শুধু হু হু উত্তুরে বইতেই থাকে। মাঝে মাঝে গাছে পাতায় জমে যাওয়া শিশির টুপ টুপ শব্দে নামতে থাকে।
আজ যেমন রাজমিস্ত্রির জোগালীর কাজ সেরে এসে পেটের ভেতরে জ্বলতে থাকা আগুন এই উত্তুরে নেভাতেই পারেনি। আধপেটা বিকি বুলু মুখের কথা শব্দে বলতে পারিনি। তাই এপাশ আর ওপাশ। শিবমের পেট গলাতে এসেই আটকে যাচ্ছে। বলতে পারেনি। আর কাকেই বা বলবে ? পাশ ফিরলে সিনা যদি প্রশ্ন করে – রাতটা কাটাতে পারব তো?
তার উত্তরও জানা নাই। পাতুলাল আজ দুবার ক্যাঁথার বাইরে মুখ বের করে অবস্থা বুঝতে চাইছিল। এক আঁচলামত চাল। আর গোটাতিনেক আলু। বাদ বাকী ঘরে অষ্টরম্ভা! বলতেই হল –আজ পেটটা কেমন করছে। খিদে নেই। তাও সিনা বলেছিল – বিভুদের বাড়ি থেকে একটু মুড়ি ধার করি। কালকে দিয়ে দেব।
পাতুলাল জানে কাল বলে কিছু হয়। যাদের আগুন জমা থাকে। তারাই উত্তুরের সাথে লড়াই করে। বাদ বাকী কেবল ঠেলা দেওয়ালে ঠেকে যায়। বা পরের দেওয়ালে জমাট বেঁধে যায়। তাই না বলেছিল। কিন্তু রাতের এই উত্তুরে আগামীকাল হতে দেবে তো? খাটের একটু শব্দ হলনা কিন্তু পাতুলাল মুখ বের করে দেখছে। পর পর আগামী কিভাবে উত্তুরের সাথে লড়াই করছে।
বিকি আজ মায়ের বুকের মধ্যে ঢুকে। অন্যদিন এভাবে জাপটে ধরলে বিকি মুখটা বের করে হাঁপাতে থাকে – বাপরে! নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এল। আজ চুপচাপ। জানে নড়লেই মা বলবে – স্কুলে যেতেই হবে? জেগে থাকলে ভোর ঠিক মত ভোর হয়না। বলেই গুনগুন গান ধরবে। মাথায় হাত বোলাতে থাকে। বিকি তখন শূন্যের দোলায় দোলে।
আজ সিনার পিঠ বেয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বইছে। এত উত্তুরে কোথা থেকে আসে। চামড়া কুঁকড়ে যাচ্ছে। ঠোঁট ফাটছে। বুলু ক্রিম চেয়েছিল দেবো দেবো করে প্রায় ভরা উত্তুরে এসে গেল। এবার বোধ হয় হবেনা। আজকের রাতটুকু কাল ভাবার সুযোগ দেবে কিনা কে জানে? চেপে ধরছে উত্তুরে। হু হু করে বাড়ছে। পেটে মধ্যে খাবারের চেয়ে জলের বেশি গড়াগড়ি কিছুতেই এই উত্তুরেকে সামাল দিতে পারছে না।
অনেকটা দূরে শোনা যাচ্ছে আকাশী গান। হৃদয়ের খোঁচায় সূর্য আকাশেই গুঞ্জন করছে। কিন্তু এই শিবমের ঘরে উত্তুরে পেরিয়ে আসছেনা। এক ফোঁটা গরমের ছোঁয়া দিচ্ছেই না।
তা হোক। শিবম আশা ছাড়েনা। জাপটে ধরে এই ঘর বারান্দা। উত্তুরে সরিয়ে ভোর হবেই । একটু গরমের ছোঁয়া পাবেই।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ধ্রুব সত্য ভাল লিখেছেন । শুভেচ্ছা রইল ।
ভালো লাগেনি ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫
অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন
ভালো লাগেনি ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫
রাণী মন খারাপ করা অসামান্য ছোট গল্প । ভোট ও সাম্মানিকের জন্য শুভেচ্ছা রইল।
এশরার লতিফ সুন্দর গল্প, শীতের সঙ্গে দারিদ্রের যুদ্ধ. শুভেচ্ছা রইলো.
ভালো লাগেনি ১২ ডিসেম্বর, ২০১৫
ভাল থাকবেন দাদা।
ভালো লাগেনি ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫
শ্রী সঞ্জয়--- দারুন কাহিনী আছে গল্পে .
ভালো লাগেনি ১২ ডিসেম্বর, ২০১৫
ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
ভালো লাগেনি ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫
ইমরানুল হক বেলাল ?????? ???? ??????? ???? ???? ?????
এটা কি? মন্তব্য দিতেই হবে এমন তো কথা নেই। যাই হোক ভাল থাকবেন। আর ধন্যবাদ নেবেন।
ভালো লাগেনি ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫
Fahmida Bari Bipu অসাধারণ লাগল গল্পটি। ছোটগল্পের সার্থক রূপায়ণ। অনেক শুভেচ্ছা ও যথাযোগ্য ভোট রইল গল্পটির জন্য।
ধন্যবাদ। খুব ভাল থাকবেন।
হুমায়ূন কবির ভালো লাগল আপনার গল্পটি। শুভেচ্ছা আর ভোট সাথে আমন্ত্রন আমার কবিতায়।
দেবজ্যোতিকাজল হু খুবই ভাবগম্ভীর/\/
শামীম খান দারুন লিখেছেন দাদা । সাবলীল কাহিনী । চরিত্রগুলো বাংলাদেশের পথে ঘাটে হর হামেসা ঘুরে বেড়ায় । তাদের দুঃখগুলো গভীর মমতায় তুলে এনেছেন দারুন কলমের টানে । গল্প শেষে ছমিরনের নিথর শরীরের পাশে দাঁড়িয়ে পাঠকের চোখে দেশের সভ্যতার লেবাসধারী তথাকথিত উঁচুতলার মানুষগুলোকে ভীষণ নোংরা আর অসভ্য দেখায় । গল্পটা অনেক দূর এগিয়ে যাবে সন্দেহ নেই । শুভ কামনা আর ভালোবাসা রইল । অবশ্যই ভোট ।
এম,এস,ইসলাম(শিমুল) অনেক ভালো লাগলো, আমার শুভেচ্ছা জানিবেন কবি। আমার পাতায় আপনার আমন্ত্রণ রইলো।

১৫ জুন - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৬৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪