অনিকেত অনিমেষ

শুন্যতা (অক্টোবর ২০১৩)

রক্ত পলাশ
  • 0
  • ১৫
মদের নেশায় পুরোটা শরীর টলছিল। কাঁপা কাঁপা হাতে চেনা চাবিটা ঘুরিয়ে কোনমতে ঘরের তালাটা খুলল অনিমেষ।ঘরে ঢুকে টিউব লাইটটা জ্বালিয়ে দিতে পাশ দেয়ালের সুইচ টিপল।বাতিটা কাঁপছে,জ্বলবে জ্বলবে করছে,তবু জ্বলছে না।এদিকে অনিমেষের যেন আর তর সইছে না।বাতিটা জ্বললে পরেই সে খোঁড়াতে খোঁড়াতে প্রায় ছুটে গেল কালো চাদর গায়ে ঘরের এককোণে পড়ে থাকা টেবিলটার দিকে।হাত বাড়িয়ে তুলে নিল নীল মলাটের ডায়েরীটা।ওটা তার জমা-খরচের খাতা।আজ আরেকটা নতুন গল্প লিখতে হবে।সাদা শার্টের কলারে,বোতামে,গলায় ঝুলানো রূপোর চেইনটায় তাজা রক্তের দাগ লেগে আছে।নপুংশকের রক্ত।থাকুক,লেগে থাকুক।ঐ দাগগুলো তার গল্পের মেজাজটাই বদলে দেয়,অন্যরকম একটা প্রণোদনা দেয়।শব্দগুলো ইচ্ছে করেই লাল রং গায়ে মাখে।ডায়েরীর সাদা পৃষ্ঠাগুলোও ধীরে ধীরে সেই লালিমায় পূর্ণতা পায়।

আজ তার নপুংশক খুনের চক্রপূরণ হয়েছে।গল্প সংখ্যা পঁচিশে গিয়ে ঠেকল।অনিমেষ প্রথম পাতা থেকে শুরু করে।প্রত্যেকটা গল্পের সাথে সে তার শিকারের বিভৎস পরিণতিটা আটকে রেখেছে রঙিন ফটোগ্রাফে। শুরুটা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে।শিকদার প্যালেসের নবম তলায় সে খসিয়ে দিয়েছিল একটা ভূমিদস্যূকে,একটা সৌখিন ধর্ষককে।তারপর একে একে শহরের রহমান প্লাজা,সিটি কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে পুরান লেনের বস্তি আর ভাতালিয়াপাড়ার গলিতে একেকটা নপুংশকের মুন্ডুকাটা লাশের পাশে একটা করে রক্তমাখা চিরকুট খুঁজে পেয়েছে সরকারি পুলিশ,এর বেশি কিছুই না।দুই লাইনের ঐ প্রতিটা চিরকুটে পড়ে থাকত কিছু সাবালক শব্দখরচা।

আজকের গল্পটা পুরান পুলের নিচের ভাঙা বস্তির এক জুয়ারির।ঐ জুয়ারিটা একবার জুয়ায় হেরে গিয়ে মাতাল হয়ে নিজের ভিখারিনী মা-টাকে ট্রেনের তলে ফেলে হত্যা করেছিল।সেদিন থেকেই অনিমেষের করা নপুংশকের তালিকায় জায়গা পেয়ে যায় সেই জুয়ারিটা।আর আজকে গল্প লেখাটা শেষ করে ঐ জুয়ারির নামের পাশে ক্রস চিহ্ন আঁকল অনিমেষ,লাল কালিতে।খুনের সংখ্যাটা আরেকবার গুণে দেখে নিজেই কি একটু অবাক হয়ে যায় অনিমেষ?সে তো আজ একজন সৌখিন সিরিয়াল কিলার।তবুও তার এই খুনী হওয়ার পটভূমিতে একটা ছোট্ট গল্প লুকিয়ে আছে বামপাঁজরের আড়ালে।সেই গল্পটা সে নিজে ছাড়া আর কেউ জানে না।যে গল্পটার একটাই মাত্র চরিত্র ছিল-আরতি দিদি।
অনিমেষের বয়েস যখন পাঁচ বছর,ঠিক সেই প্রজাপতি শৈশবে,একদিন কানাইপুরের মেলা থেকে গ্রামের বাড়ি ফেরার পথে খেয়ালী ভাগ্যদেবীর নির্মম হেয়ালীপনায় মা-বাবা দু’জনকেই তার একসাথে বলি দিতে হয়েছিল একটা উন্মাদ যন্ত্রদানবের কাছে,একটা কালো পিচডালা রাস্তার শ্মশানে।সেই কালো পিচডালা রাস্তার ক্যানভাসে বাবা-মায়ের থ্যাতলে যাওয়া রক্তাক্ত মুখ দুইটার ছবি অনিমেষ কোনদিনও ভুলতে পারবে না।অনিমেষ আজও ভেবে পায় না,হঠাৎ করে ধেয়ে আসা কালো কালবৈশাথী ঝড়ের মতো বিধ্বংসী সেই সড়ক দুর্ঘটনায় সে একা কিভাবে বেঁচে গেল,আর কেনই বা বেঁচে গেল।তারপর ঠিক সেদিন থেকে এতিমের খাতায় নাম উঠিয়ে নিয়ে একসময় অনিমেষ চলে আসে আমাদের এই ভরাপেটের সিলেট শহরটার উপকন্ঠে তাবু গেড়ে বসা এই রায়নগরের মোড়ের ছোট্ট বস্তিপাড়ায়,স্বার্থবাদী এই জল-মাটির দুনিয়ায় তার একমাত্র আত্মীয় ফুলমাসীর কাছে।ফুলমাসীর পাশের ঘরটাই ছিল আরতিদিদের।পাড়াতুতো দিদি থেকে সম্পর্কের সূত্রপাত,এরপর সময়ের দাবি মেনে নিত্যদিনের সুহৃদ-অনিমেষের সেলাই দিদিমণি।শিকদার প্যালেসের ছয়তলার ঐ গার্মেন্টসটায় কাজ করত দিদি। এই আরতি দিদি অন্য সব সাধারণ মেয়েদের মতো হয়েও অনিমেষের কাছে ছিল অদ্বিতীয়া।মা তার বেঁচে নেই।বাবাটা তার আটকে আছে উইল চেয়ারে।আর ছোট ভাইটা,সে তো কবেই ভেসে গেছে নেশার জোয়ারে।কত আর বয়েস হবে?-একুশ কিংবা বাইশ।এইটুকুন বয়সেই তার ছোট্ট কাঁধটা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুরো সংসারের ভার।তবু থেমে থাকে নি এই আরতিদি।নির্মম বাস্তবতার পথে হাঁটতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েও জেগে উঠেছে।গার্মেন্টস মালিকের রক্তচক্ষূ,মাইনে কাটার হুমকি,চাকরি হারানোর ভয় কোন কিছুই দমিয়ে রাখতে পারে না তাকে।ছোট কর্তার লোভাতুর চাহনিটাও আত্মমর্যাদার ভীষণ মজবুত ঢালে প্রতিহত করে সামনে পা বাড়ায় আরতিদি।মনে পড়ে, পথের মোড়ে খামোখাই আড্ডারত বখাটের দল তাকে উপহাস করে যেত প্রতিদিনই।কিন্তু আরতিদি ঐ কটুকথার বাণগুলোকে পথের ধূলোতে মিশিয়ে দিয়ে,আধছেড়া স্যান্ডেলজোড়ায় মাড়িয়ে যেত অবলীলায়।ভাগ্যের এই চরম উপহাসের পরেও আরতিদিকে কোনদিন কাঁদতে দেখেনি অনিমেষ।কিন্তু কান্না ছাড়া একটা মানুষ বাঁচে কি করে?তাই অনিমেষ ধরে নিয়েছিল-হয়তো বা আরতিদি কাঁদতো,লুকিয়ে,সবার অগোচরে।তার দু’চোখ ফেটে হয়তো তখনই কান্না আসত,যখন বাবার ঔষধের বোতলটা শূন্য পড়ে থাকত,অথবা যখন খুব দেখতে ইচ্ছে করত তার মাকে।আরতিদির বাবা তাকে একদিন বলেছিল যে,সে নাকি দেখতে অবিকল তার মায়ের মতো হয়েছে।তাই প্রায়ই ঘরের আধভাঙা আয়নাটার সামনে গিয়ে দাঁড়াত আরতিদি।যখন মাকে দেখার খুব ইচ্ছে জাগত,তখন নিজেরে দেখেই নিজের অদেখা জন্মদাত্রীকে চিনে নিত সে।এই আরতিদি অনিমেষকে একদিন বলেছিল-

“আগুনে পোড়ালেও কিছু রাখে----হতে পারে ছাই কিংবা অন্যকিছু্।তবু মানুষ পোড়ালে কিছুই রাখে না।তাই মানুষকে জানতে দিস না,তোর কি নেই।-----আর বন্ধুর মতো মুখগুলোকে আপন ভেবে কষ্ট বাড়াসনে।সবাই বন্ধু হতে পারে না----।এমনকি কেউ কারো জন্যে মরে গেলেও না।”

মনে পড়ে,আরতিদি তাকে একদিন প্রশ্ন করেছিল---
-অনিমেষ,ভাই,তুই বড় হয়ে কি হবি?
অনিমেষ এর উত্তরে বলেছিল----
-দিদি,আমি বড় হয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার হব।
অনিমেষের এই এম্বিশনের কথা শুনে আরতিদি সেদিন অবাক হয়ে বলেছিল----
-ওমা,কেনরে,তুই পাইলট হবি না?
-না,আমি পাইলট হব না।বললাম তো,অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার হব।অসুস্থ মানুষকে আমার অ্যাম্বুলেন্সে করে উড়োজাহাজের চেয়েও দ্রুতগতিতে হসপিটালে নিয়ে যাব,তাকে বাঁচিয়ে দেব।সবাই আমাকে ‘সাবাস’ দিবে,তাই না দিদি?
অনিমেষের মনে পড়ে যায়,তার সেই ইচ্ছের কথা শুনে আরতিদির চোখের কোণে একফোটা জল জমে গিয়েছিল তার অজান্তেই।আর অনিমেষের মাথায় হাত বুলিয়ে তুলে দিয়েছিল তার শুভাশিষ---

-হবি ভাই,তুই অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারই হবি।

দিদির আশীর্বাদটা বিফলে যায়নি ভবিতব্যে।আজকে অনিমেষ দিনের আলোর পোষাকে একটা অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার।অথচ রাতের আঁধারের কালো পোষাকে সে একজন “ক্রমিক খুনী”।এই দুটো পেশাতেই সে জীবন-মৃত্যুর ফারাকটা খুব কাছ থেকে মেপে নিতে পারে।সে খুব কাছ থেকে অনুধাবন করতে পারে,মরণের কোলাজে অপেক্ষমাণ একটা মানুষের(অথবা নপুংশকের) শেষ নিঃশ্বাসে কতটুকু উষ্ঞতা ধরে,কতটুকু কষ্ট স্বীকার করলে পরে মরণ পাওয়া যায়।

এই আরতিদিই অনিমেষকে শিখিয়েছিল,জীবনটা একটা অগ্নিপথ।এই পথে একা হাঁটার সাহসটা জমিয়ে রাখতে হয় বুকের বৃত্ত পাঁজরে।আরতিদিকে দেখেই অনিমেষ বুঝেছিল-দিন যাপনের গ্লানিটা মুছতে গিয়েই আমরা চাহিদার গল্প বুনি।এই আরতিদিই তাকে জীবনের ডাকনামটা শিখিয়ে দিয়েছিল,বুঝিয়ে দিয়েছিল,মাত্র কয়েকটা নাবালক শব্দখরচায়-----------

“মানুষ বলেই বুঝি-সংশয় দোটানায়-নিয়তির কারসাজি
জীবনের ডাকনাম- শেষ দানে শেষ বাজি।।”

কিন্তু হঠাৎ একদিন সব হিসেব-নিকেষ পাল্টে যায় অনিমেষের কাছে।একটা দিন,একটা ঘটনা,একটা দাগ পৃথিবীর সবকিছুকে ছাপিয়ে হিংস্র সুনামির মতো অনবরত অবধারিত জিঘাংসায় নাড়া দিতে থাকে অনিমেষের বোধে,অনুভবে,অস্তিত্বে।
হ্যাঁ,সেই তারিখটা এখনো মনে আছে অনিমেষের।১৭ এপ্রিল,২০০৮।সেদিনও সে গিয়েছিল আরতিদির বাসায়।পঙ্গু বাবা ঘুমিয়ে ছিল পাশের ঘরে।আর আরতিদির ঘরটা বন্ধ ছিল ভিতর থেকে।অনেক ডাকাডাকির পরও কেউ দরজাটা খুলছিল না।উপায় না পেয়ে অনিমেষ পাশদেয়ালের ছোট জানালার ছিটকিনিটা আলগা করে দিল।জানালাটা খুলতেই ঘরের ভিতরে যা দেখল অনিমেষ,তাতে তার সমস্ত পৃথিবীটা ঘুরপাক খাচ্ছিল অনবরত।শূন্য ঘরের সরু শিলিংটায় নীল ওড়নার এক গিঁড়ো ফাঁসিতে ঝুলছিল আরতি দি।সীমানা পেরুতে গিয়ে আরতি দি তার বাম হাতের তালুতে লিখে গিয়েছিলো তার শেষ স্বীকারোক্তি-------

“কখনো ফিরতে বাড়ি যদি রাত হয়ে যায়
প্রতিবেশী নাগরিক ভ্রূকুটি শানায়
জীবন সেজেছে আজ লোক-সজ্জার সাজে
চিতাতেই পূর্ণ আরোগ্য,
অফিসের অফিসার বক্র চাহনি তার
খেটে খাওয়া মেয়েরা তো ভোগ্য।”

অনিমেষ কোনদিনও ভাবে নি,তার অ্যাম্বুলেন্সে করে সে আরতিদিকে নিয়ে যাবে হসপিটালের মর্গে।ঠিক সেদিন থেকেই, ঐ নীল ওড়নার ফাঁসিটা অনিমেষকে মাতাল কান্নায় পুড়িয়ে পুড়িয়ে ঘাতক করে তুলেছিল।সম্পূর্ণ নতুন একটা জীবনের দরজা খুলে গিয়েছিল তার সামনে,যে জীবন হায়েনার,যে জীবন জিঘাংসার।কেননা,ঐ স্বীকারোক্তিতে অনিমেষের জন্যে লুকিয়ে ছিল একটা প্রতিশোধের বার্তা।শিকদার প্যালেসের সেই গার্মেন্টস মালিক,সেই সৌখিন ধর্ষককে দিয়ে শুরু,তারপর থেকে অনিমেষের করা নপুংশকের তালিকাটা সময়ের আদরে কেবল বড়ই হচ্ছে,কোথায় গিয়ে থামবে কে জানে?

আরতিদির কথা ভাবতে ভাবতে অনিমেষের লাল চোখটা জলে ভরে উঠে অবলীলায়।টেবিলের ড্রয়ার থেকে আরতিদির সাথে তোলা শেষ ছবিটা বের করে আনে সে। ছবিটা দিনমান শুধুই হাসে।সেই হাসিটা হারিয়ে গেছে,পালাবদলের হাত ধরে,ঠুকরো সময়ের ব্যাবধানে।আমাদের দিনযাপনের শত ব্যস্ততার ভিড়ে,হাজারো খবরের আয়োজনে ঠাঁই পায় নি সেই আরতিদির ধর্ষিত হওয়ার খবরটা।কিন্তু কেনো?হয়তো বা খবরটা গুরুত্ব বিচারে এতোটা দামী মনে হয়নি সেই খবরওয়ালাদের কাছে,হয়তোবা সেই ধর্ষণের গল্পটা এতো মুখরোচক ছিল না।অনিমেষ ভাবে আর হাসে,আবার অবাক হয়,আবার ভাবে-আমরা সুরুচির পোষাক গায়ে চাপিয়ে মেট্রোপলিটন দাপিয়ে বেড়ানো নামকোয়াস্তে সুশীলেরা প্রকাশ্যে ধর্ষণকে ঘৃণা করি,অথচ নামী দৈনিকের আড়াল পৃষ্ঠায় গোপন কলামে ছাপা হওয়া ধর্ষণের রগরগে বর্ণনার গল্পটা কামাতুর হয়েই পড়ি।নির্ভেজাল আগ্রহ নিয়ে ধর্ষিতার পরিচয় খুঁজি,ধর্ষকের সাথে তার রসায়ন খুঁজি,অথচ সেই ধর্ষকের পরিচয়টা আমাদের কাছে খুব একটা গুরুত্ব পায়না।দুর্ভাগ্য আরতিদির,তার নিষিদ্ধ গল্পটা বুর্জোয়াদের দেহ-মনে কামনা জাগাতে পারল না।আজ তাই তার হয়ে কথা বলারও কেউ নেই।সেই যে আরতিদি অনিমেষকে একদিন বলেছিল,ঠিক তেমনি করে- সময়ের ইরেজারে আরতিদির দাগগুলো মুছে যাচ্ছে এই সমাজের বুক থেকে,খুব নীরবে,খুব অবহেলায়।

এই ভাবতে ভাবতেই অনিমেষ অগোছালো বিছানাতেই গা এলিয়ে দেয়।তার শার্টে,শরীরে এখনও লেগে আছে সেই রক্ত।কোন কিছুতেই তার বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই।ঘড়ির কাঁটার বায়না মেনে একসময় চোখ বুজে আসে অনিমেষের।তলিয়ে যায় ঘুমের দেশে।

হঠাৎ করেই ভোররাতে পরাবাস্তব ঝটকায় ঘুম ভেঙ্গে যায় তার।একটা দুঃস্বপ্ন।আজকাল স্বপ্নগুলো সম্পূর্ণ হয় না অনিমেষের।ঠিক তেমনি এই স্বপ্নটাও সম্পূর্ণ না। একটা মেয়ের গলাকাটা লাশ,একটা নীল ওড়না,আবার সেই মেয়েটার রক্তমাখা মুখ।কিছুতেই মেলাতে পারছে না অনিমেষ।কে এই মেয়েটা?কেন স্বপ্নে দেখলো তাকে? এই মেয়েটা কি আরতিদি?নাহ!আরতিদি না।তবে?চেহারাটা মিলিয়ে নেবার চেষ্টা করে সে।কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।মগজের চিলেকোঠা ঘরে যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে।তবুও উত্তর আসছে না।বিছানা ছেড়ে নেমে একগ্লাস জল খেল অনিমেষ।নিজেকে শান্ত করার একটু চেষ্টা করল সে।অনেক চেষ্টার পরে হিসেবটা একটু আধটু মিলতে শুরু করে।হিসেবটা মিলে যেতেই যেন আরও স্তম্ভিত হয়ে যায় অনিমেষ। স্বপ্নে দেখা ঐ রক্তাক্ত মেয়ের মুখটা সেই মেয়েটার-যাকে সে প্রত্যেকদিন রায়নগরের মোড়ে রিকশা করে অফিস যেতে দেখে,ঠিক যখন রতন মামার চাঁদনী মিউজিক করিডোরে খেয়ালী চন্দ্রবিন্দু গাইতে থাকে--------

“এইটা তোমার গান,তুমি লোডশেডিংয়ে চাঁদের আলোর স্বর;
তুমি ঝড়ের শেষে সূর্য্য ধোওয়া ঘর------।।”

এরপর স্বপ্নের সাথে বাস্তব মিলতে থাকে এক এক করে।অনিমেষের একে একে মনে পড়ে যায় ঐ মেয়েটার সবকিছু-হ্যাঁ,ঐ মেয়েটা একটা নীল ওড়না পড়ে রোজ।মাঝে মাঝে বেখেয়ালে ওড়নাটা অগোছালো হয়ে প্রায় রিকশার চাকার সাথে জড়িয়ে যেতে চায়।অনিমেষ অনেকদিন চেষ্টা করেছিল,মেয়েটাকে ডেকে সাবধান করে দিবে,কিন্তু সাহস হয় নি!!অসম্ভব মায়াবী একটা মুখ মেয়েটার।কপালে খুব নিয়মিত ছোট্ট একটা নীল টিপ।কাজলছাড়া দুইটা চোখ যেন ছোট্ট দুইটা ছেঁড়া দ্বীপ।তীক্ষ্ণ সুতার দয়ায় ঠিকে থাকা একজোড়া অভাবী স্যান্ডেল।খুব পরিচিত একটা ছবি। কোন এক অজানা কৌতুহল থেকেই হয়তো বা-সেই মেয়েটার নাম-ঠিকানাটাও খোঁজ নিয়ে জেনেছে সে।অনিন্দিতা।বাবা আকাশের শুকতারা হয়ে গেছে সেই কবেই।ঘরে তার একলা মা।প্রেস অফিসে পার্টটাইম কাজ করে।ঐ মায়াবী মুখটা একবার দেখার জন্যে অনিমেষ প্রায়ই রতনকাকুর চায়ের দোকানে অযথাই চায়ের বায়না নিয়ে বসে থাকে।আর অবাক হয়ে ভাবে, সেই মুখটা দেখলে তার মতো ঘাতকেরও কেন বুকটা কাঁপে?মেয়েটা এতো অগোছালো কেনো?প্রশ্নগুলো অনিমেষের পাঁজরের দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে অনেকবার ফিরে ফিরে এসেছে,কিন্তু কোন উত্তর মেলেনি।---------

“একলা পথের একলা পথিক,ছিলাম কতো ভাল
আচানক তুই ডাক দিলি মেয়ে,ভীষণ অগোছালো
------------------------------
পাখির কতো কথা উড়ে কতো স্বপ্ন সাধ
বন্ধুরে তোর চোখে ভাসে আমার সর্বনাশ।”

অনিমেষ ঠিক অনুধাবন করতে পারে। আর বিছানায় শরীর এলিয়ে রাখতে পারে না সে।ছুটে গিয়ে বাথরুমে ডুকে।শাওয়ারটা ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে মিনিট পাঁচেক।রক্তের দাগগুলো মুছে যেতে থাকে তার শরীর থেকে,শার্ট থেকে,রূপোর চেইনটা থেকে।তার গত রাতের লাল চোখটা সাদা হয়ে গেছে,নতুন ভোরের আলোতে।বহুদিন পর নিজের প্রিয় হলুদ টি-শার্টটা গায়ে চাপায় অনিমেষ।হঠাৎ আজকে কোথা থেকে যেন নতুন একটা কবিতা শুনছে সে-------
“আজ জানলার কাছে ডেকে গেছে এক পাখির মতোন সকাল
যেনো রাখালিয়া বাঁশি,এই শহুরে গলার ফাঁসি ছিঁড়ে দেখাবে দুনিয়া-কাল
বলে সুখে আছো যারা সুখে থাকো,এ সুখ সইবে না
দুখে আছো যারা বেঁচে থাকো,এ দুখ রইবে না
বন্ধু এ দুখ রইবে না।-------”

--------তাকে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।টেবিলের উপর থেকে ডায়েরিটা হাতে নেয় অনিমেষ।শেষ বারের মতো পৃষ্ঠা উল্টায় ধীরে ধীরে।তারপর মফস্বলের গলিপথে পা মাড়িয়ে দেয় দ্রুতগতিতে। তাকে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছতে হবে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।মাঝবয়েসী হাতঘড়িটায় সকালের বয়েসটা সাড়ে নয়।অনিমেষ পৌঁছে যায় রামনগর থানায়।ডায়েরীটা তুলে দেয় কর্তব্যরত সাব-ইন্সপেক্টরের হাতে।
হঠাৎ একটা আগন্তুক এসে হাতে একটা ডায়েরী ধরিয়ে দিল-----বিষয়টা ঠিক হজম করতে পারছিলেন না সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব।কৌতুহূলী চোখে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলেন অনিমেষকে।অনিমেষের মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি খেলা করছিল।
-এক্সকিউজ মি,আপনার পরিচয়টা?
-জ্বি,আমি অনিকেত অনিমেষ।
-অনিকেত অনিমেষ?
-জ্বি,অনিমেষ-টা বাবার দেওয়া,আর অনিকেত-টা নিজের দেওয়া।যেদিন বুঝলাম আমার পথেই বাড়ি,পথেই ঘর,সেদিন থেকেই নামের সাথে বিশেষণটা জুড়ে দিলাম ইচ্ছেমতো।কেন?আপনার কি নামের অর্থে সমস্যা , নাকি জাত খুঁজছেন?জাত খুঁজলে বলতে পারি-জন্মসূত্রে শুদ্ধাচারী কুলীন ব্রাহ্মণ,ছয় গুণের পৈতাধারী,আর কর্মসূত্রে জাত-পরিচয়টা জানতে চাইলে হাতের ডায়েরীটার “personal memoranda”-টা খুলে দেখুন,সব জানতে পারবেন।
সাব-ইন্সেপেক্টর সাহেব খুব আগ্রহ নিয়ে ডায়েরীটা খুললেন,চিন্তিত চোখে মাইনাস পাওয়ারের চশমাটা গুঁজে নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠার লেখা গুলো পড়তে শুরু করলেন।সবগুলো শব্দই কেমন জানি রহস্য ঘোলাটে মনে হচ্ছিল তার কাছে----------

NAME- অনিকেত অনিমেষ

ADDRESS-CARE OF ফুটপাত

EDUCATION-অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন।

BUSINESS- (১) অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার,লাইসেন্স নং-সিলেট-জ-৭৭৮৮৪৮(DAY SHIfT)।
(২) সিরিয়াল কিলার, ফাইল পত্রে কোন মামলা নেই,ছদ্মবেশ ধরাটা স্বভাবে নেই,কসাইয়ের কাজটা অপছন্দ করি,রিভলবার মডেল-WALTHUR 0.2 CALLIBUR, লাইসেন্সটা করব করব বলেও করা হল না(NIGHT SHIFT)।

FAX-বিসমিল্লাহ টি স্টল,রতন মামার চায়ের দোকান,রায়নগর মোড়।

EMAIL- ঐ

TELEPHONE- ঐ

WEBSITE- ঐ

BARTHDAYS-(১)১৯৮৫,২৩ জুন
(২)২০০৮,১৭ এপ্রিল-------------------------

ডায়েরীর পাতা থেকে চোখ তুলে সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব একটা প্রশ্নাতুর দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন অনিমেষের দিকে----
-সত্যি করে বলুন তো আপনি আসলে কে? এই সকাল সকাল বড় একটা রহস্যের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন আপনি আমায়। আপনাকে দেখে তো গুণাক্ষরেও মনে হয় না যে আপনি একজন সিরিয়াল কিলার।আর এই সাঁঝ-সকালে হঠাৎ কি মনে করেই বা নিজে থেকে ধরা দিতে এলেন?
অনিমেষ মুচকি হেসে নিচু গলায় ছোট্ট করে উত্তর দেয়-
-স্যার মাফ করবেন,রহস্য-টহস্য কিচ্ছু নেই ।আপনি একটু কষ্ট করে ডায়েরীতে লিখা গল্পগুলো পড়ে দেখুন আর গল্পের সাথে যুক্ত ফটোগ্রাফগুলো ভাল করে লক্ষ্য করুন,তাহলেই আপনার ঘোর কেটে যাবে।আমি নিশ্চিত।
অনিমেষের কথামতো সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব গল্পগুলো পড়তে শুরু করলেন,আর সাথে সাথে ছবিগুলো দেখতে শুরু করলেন।যত সময় যাচ্ছে তিনি ততই উত্তেজিত হয়ে পরছেন,তার নাকটা খুব ঘামছে।
অনিমেষ হঠাৎ সাব-ই্সিপেক্টর সাহেবের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে বসে----
-স্যার,আপনার বউ আপনাকে খুব আদর করে,না?
এস-আই সাহেব প্রশ্নটার প্রতি কোনো আগ্রহ দেখালেন না।তাই এর উত্তরটাও জানা হল অনিমেষের।অনিমেষ বুঝতে পারছে যে,স্যারের সব আগ্রহ এখন ডায়েরীর গল্পে আর ছবিতে আটকে আছে।
একসময় গল্পগুলো পড়া শেষ করে অস্বাভাবিক ভীতু চোখেই ইন্সপেক্টর সাহেব তাকালেন অনিমেষের দিকে।
-এই গল্প আর ছবিগুলো যদি সত্যি কথা বলে থাকে, তাহলে আপনি তো দেখি একজন “সাইকোপ্যাথ কিলার”।
অনিমেষ মুচকি হাসে ।বুর্জোয়াদের ভাষায় সে সাইকোপ্যাথ কিলার।এস.আই সাহেবের মার্জিত আচরনটা লক্ষ্য করে অনিমেষ মোটামুটি অবাকই হয়-স্যারের তো এতক্ষণে উচিত ছিল অনিমেষকে ‘তুমি’ অথবা ‘তুই’-ডেকে সম্বোধন করা।অথচ এস.আই সাহেব এখনো ‘আপনি’-তেই রয়ে গেলেন।আসলে এরা সচরাচর এতো ভাল ব্যবহার করে না,বিশেষ করে কোন খুনীর সাথে।
-আপনি জানেন,আপনার তো নির্ঘাত ফাঁসি হবে?
-জানি স্যার।
-জানেন?জেনে শুনেও ধরা দিলেন?
-হ্যাঁ,দিলাম।
সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব আর কথা বাড়ালেন না।কন্সটেবলকে তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করতে বললেন।অনিমেষ পুলিশের সাথে গাড়িতে উঠল।যখন ছোট্টবেলার প্রিয় জলপাই রংয়ের পাহাড়িকা ট্রেনটা পালাবদলের হুইসেল বাজিয়ে, দিনযাপনের খয়েরী ধূয়া উড়াতে উড়াতে ছেড়ে যাচ্ছিল সকালের স্টেশন-ঠিক বেলা সোয়া এগারো,তখন অনিমেষকে পুলিশি পাহাড়ায় সেন্ট্রাল জেলের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।পুলিশ ভ্যানের সামনের সিটে অনিমেষের সাথে বসলেন এস আই সাহেব।ভ্যানের জানালার আয়ত পাঁজর ফুঁড়ে ছুটে আসা বাতাসটা মনে মাখতে মাখতে নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়াটা সেরে ফেলছিল অনিমেষ।আজ থেকে তার পরিচয়টা বদলে যাবে।তার এই বদলে যাওয়াটা আজ ভীষণ দরকার,যতটা না তার নিজের জন্যে ,তার চেয়ে বেশি ঐ মেয়েটার জন্যে,অনিন্দিতার জন্যে।
এই ভাবতে ভাবতে অনিমেষ যখন অন্যমনে খেয়াল উড়িয়ে দিয়েছিল,তখন হঠাৎ তার সম্বিত ফিরল এস আই সাহেবের একটা প্রশ্নে-
-আপনি কেন স্বেচ্ছায় ধরা দিলেন?আদালতে আপনি কি আত্মপক্ষ সমর্থন করবেন না, অনিমেষ বাবু?
নিজের নামের শেষে বাবু বিশেষণটা ঠিকঠাক হজম করতে পারছিল না অনিমেষ।
-আমায় আপনি ‘বাবু’ সম্বোধন করলেন কেনো স্যার।আপনার আর আমার সম্পর্কটাতো শত্রুত্বের।শত্রুকে এতো কাছ থেকে এতো সম্মান দেখানোর কোন মানে হয় না।
– আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তরটা পাইনি মি.অনিকেত অনিমেষ।আপনি কি আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করবেন না?(দুর্দমনীয় কৌতূহল চোখে বাঁচিয়ে রেখে মোটামুটি অধৈর্য্য হয়ে ফের প্রশ্নটা করলেন এসআই সাহেব।)
-না ,আমি করব না। আত্মপক্ষ সমর্থন করব না।
-কিন্তু কেন?
- আজ যদি আমি আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করি ,তাহলে পরোক্ষে আমার ভোররাতে দেখা সেই দুঃস্বপ্নটাকে সমর্থন করা হবে।স্যার,এই কাজটা আমি কোনদিনও পারব না।আমি ঘাতক,কিন্তু নপুংশক নই।

সাব-ইন্সপেক্টর সাহেবের খুব ইচ্ছে হচ্ছিল,অনিমেষকে আবার প্রশ্ন করার-যে সে কি এমন দুঃস্বপ্ন দেখেছে,কি তার পেছনের গল্প?তবুও এসআই সাহেব নিজেকে নিবৃত করলেন।তার বুঝতে খুব একটা বাকি রইল না যে,অনিমেষ সেই শ্রেণীর পাপী,যে পাপীরা স্বার্থের বাসনায় নয়,বিবেকের তাড়নায় পাপ করে।এরা কখনোই আত্মপক্ষ সমর্থন করে না।এই মাটির দুনিয়ায় এদের সংখ্যাটা খুব কম।

পুলিশ ভ্যানটা মাঝারি গতিতে রামনগরের কালো পিচডালা পথটা পিছনে ফেলে ছুটে যাচ্ছিল সেন্ট্রাল জেলের ঠিকানায়। ফিরতি যাত্রাপথে সেই রায়নগরের মোড় পেরিয়ে যেতে যেতে অনিমেষ খেয়ালী কান পেতে শুনতে পেল,সেই রতন মামার চাঁদনী মিউজিক করিডোরে গীটার হাতে নিয়ে বিচূর্ণ তেষট্টিতে বসে গানওয়ালা গাইছিল----------

“জানি না এ পৃথিবীর ঘাতকেরা গান শুনে কি না।
-----------------------------
জানি না বিচার হলে কেনো গান হয় না শুনানি
উত্তর আসবে না-
তুমি আসবেই আমি জানি।।।।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক ওহ! অসাধারন পলাশ ভাই...অসাধারন...গল্পটা গতরাতে পড়েছি...বিদ্যুত সমস্যার কারনে মন্তব্য করা হয়নি...যতই পড়ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি...িএত সুন্দর গল্পের বুনন আর ধারাবাহিকতা...এক কথায় অনন্য...প্রিয়তে রাখলাম...আমার গল্পটা পড়ার অনুরোধ থাকলো...
হাবিব রহমান খুব ভাল লাগল আপনার গল্পটা। চমৎকার কাহিনী এবং চমৎকার বর্ণনা শৈলি।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন চমতকার বর্ণনা, চমতকার গল্প। খুব ভাল লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল।

১০ জুন - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪