১ সিরিয়াল নাম্বার নয়। আট নাম্বার রুগী ভিতরে আছে। এর পরই হামিদের ডাক পরবে। ডাক্তার সাহেবকেও আসল সমস্যাটার কথা বলা সম্ভব না। এমন কথা কি করে বলা সম্ভব! ডাক্তার গোটা চারেক টেস্ট দিয়েছে। রিপোর্ট হাতে নিয়ে বসে আছে হামিদ।
নাম্বার নয় আব্দুল হামিদ সাহেব... রিসিপশন থেকে ডাক পরে। হামিদের রিপোর্ট গুলো ডাক্তার সাহেব দেখছেন। আব্দুল হামিদ বয়স বায়ন্ন... আরেক বার রক্তচাপ মেপে দেখলেন। একশ ষাট বাই একশ... ডাক্তার হামিদের দিকে তাকিয় জানতে চাইলো -রাতে ঘুম হয়? -দুই তিন ঘন্টা। -ধুমপান করেন? -না। -কি কাজ করেন? -একটা পত্রিকায় কাজ করি। -চাকুরী নিয়ে কোন ঝামেলা চলছে? -না। -বস খারাপ ব্যাবহার করে? -না। -যা বেতন পান তাতে সংসার চালাতে বেগ পেতে হয়? -না, যা পাই তাতে বেশ সুন্দর চলে যায়। -কিছু ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করতে চাই। -জি স্যার করেন। -বিয়ে করেছেন কতো বছর হলো? -উনিশ বছর। -স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক কেমন? -ভালো। -প্রেমের বিয়ে? -জি স্যার? -ছেলে মেয়ে কজন? এই প্রশ্ন শুনে হামিদের বুকটা চমকে উঠে। এই বুঝি গোপন যায়গাতে হাত দিয়ে ফেললো ডাক্তার সাহেব! -একজন মাত্র মেয়ে সন্তান। উত্তর দেয় হামিদ। -বয়স কতো? -পনের বছর চলছে। -কিসে পড়ে? -ক্লাস নাইনে পড়ে স্যার। -মেয়ের কি কোন ছেলে বন্ধু আছে? প্রেমট্রেম করে? -না স্যার। -খোজ নিয়েছেন? -জি স্যার। তেমন কোন সমস্যা নেই। -মেয়ে কি তার মায়ের সাথে তর্ক করে? -না স্যার। -আপনার এই সমস্যা কতো দিন ধরে হচ্ছে? -মাস খানেক হলো। -আর্থিক দেনা আছে? -না। ঠিক আছে। আপাতত এক মাসের অষুধ দিলাম। এক মাস পর আবার আসবেন।
২ নাজমা স্বামী সংসার নিয়ে বেশ সুখী। তেমন বাড়তি চাহিদা নেই। ছোট এই মফস্বল জেলা সদরে একটা দোতলা বাড়ি। স্বামীর বেতনের বাইরেও হাজার পনেরো টাকা বাসা ভাড়া। বেশ স্বচছল সংসার। একমাত্র মেয়ে পাখির যে কোন চাহিদা অনায়াসেই পূরণ করতে পারা বেশ সুখের। মেয়ের খুব সখ ছিলো একটা ল্যাপটপ কম্পিউটার ইন্টারনেট লাইন একটা স্মার্ট ফোন। স্বামীর কাছে আবদার করলে কিনে দেয়। আজকাল নাজমা বেশ বুঝতে পারছে স্বামীর মন খুব বেশী ভালো যাচ্ছে না। এই সব নিয়ে বেশী ঘাটতে চায় না নাজমা। পুরুষ মানুষের মাথায় অনেক ঝামেলা থাকে। তবে শরীর খারাপ থাকলে বেশ চিন্তা হয়। রাতে ঘুম হয় না বলে স্বামীর চুলে আঙ্গুল চালিয়ে বিলি কাটতে কাটতে নিজেই এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে। হামিদ ভোর রাত পর্যন্ত ডান বাম করে। সারা রাত ধরে মাথার মধ্যে ঘুর পাক খায় নানা জটিল হিসাব নিকাশ। ক্রমেই মানুষের মধ্যে থেকে ন্যায় অন্যায় বোধ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। পাল্টে যাচ্ছে ভালো আর খারাপ কাজের সংজ্ঞা। সভ্যতা পশুসুলভ কর্ম গুলোর বৈধতা দিচ্ছে। সানি লিওন এখন নাকি আবার নতুন করে হটকেক। মহল্লার মোড়ের দোকানে পাঁচ দশ টাকায় স্কুলের ছেলে মেয়েদের এক্সট্রা মেমোরি কার্ডে বিক্রি হচ্ছে ভিডিও। তারা খোঁজ রাখে কার হাতে নতুন রিলিজ পাওয়া ভিডিওটি আছে। মুহূর্তেই বিনা পয়সায় শেয়ার করে নিচ্ছে shareit এর মাধ্যমে। রাষ্ট্র আর সমাজ নির্বিকার। কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। হামিদের মনে হচ্ছে সব মাথা ব্যাথা যেন তার একার।
৩ ডাক্তার ঘুমের ওষুধ দিয়েছে। হামিদ কয়েক দিনের ছুটি নিয়েছে ডাক্তারের পরামর্শে। দিনের বেলায়ও ঘুম হচ্ছে আজকাল। শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ সেই গানের সুরে ঘুম ভেঙে যায়। পাশের রুমে পনেরো বছরের পাখি তার ল্যাপটপে দেখছে -ইয়ে দুনিয়া পিত্তলদি... ও বেবী ডল মে সোনেদি... পর্ণ সুপার স্টার সানি লিওন এর ফিল্ম সুপার স্টার হয়ে উঠা নাকি নতুনদের বেশ আকর্ষণ করছে। এখন নাকি অনেকেই উল্টো পথে উঠে আসার সহজ পথ খুঁজে। আজ রাতেও ঘুমের ওষুধ কাজ করবে না বলে মনে হচ্ছে হামিদের।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সেলিনা ইসলাম
সমাজ,সন্তান,পরিবেশ নিয়ে প্রতিটি বিবেকবান মানুষের মনের কোণায় কোণায় ভয় একেবারে জেঁকে বসেছে! তবে সবচেয়ে বেশী ভয় কিছু করতে না পারা,কিছু বলার মত সাহস হারিয়ে ফেলা! গল্পের ম্যাসেজটা বেশ চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে গল্পে। শুভকামনা সতত।
অনেক ধন্যবাদ আপা। মানুষের মনে পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে ভয় যুগে যুগে ছিলো এবং থাকবে। কিন্তু বর্তমান সময়ের মতো এতোটা তীব্র ব্যথা মনে হয় কোন কালে ছিল না। আমাদের সমাজের মঙ্গল হোক। আপা আপনি ভালো থাকুন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।