কৈফিয়ত

উপলব্ধি (এপ্রিল ২০১৬)

মোজাম্মেল কবির
  • ১১
আমি
===
বার বার তার মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজন হয়। তার সামনে দাড়াতে আমার খুব ভয়। আজব আজব সব প্রশ্ন করে। জানা উত্তর গুলো তালগোল পাঁকিয়ে ফেলি। সে একই সাথে যেমন নিষ্ঠুর তেমনই উদার আবার ভয়ঙ্কর।
সেদিন সে হঠাৎ জানতে চাইলো-তুই কি স্রষ্টাতে বিশ্বাস করিস?
এমন একটা প্রশ্নের জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমাকে হ্যা না মানে এমন করে আমতা আমতা করতে দেখে ধমক দিলো - হ্যা বা না কিছু একটা স্পষ্ট করে বল। উত্তর হ্যা হলে সমাধান এক আর না হলে আরেক।
-আমি হাতের মুঠো শক্ত করে বুক ফুলিয়ে বললাম -হ্যা বিশ্বাস করি।
-তাহলে ধৈর্য ধর। সাত দিন পর আবার দেখা হবে। আজ আর কথা বাড়াতে চাই না। মনে রাখিস সাত দিন পর দেখা হবে।
তার থেকে পালিয়ে বাঁচার সুযোগ নেই। সময় মতো ঠিক ধরে ফেলবে। তার তিনটা কথা বার বার মনে হলে বুক কেঁপে উঠে -লোভ হিংসা অহংকার এই তিনটা তোকে ধাওয়া করছে! সাবধান! আমি আসলে বুঝতে পারি না কোনটা লোভ কোনটা হিংসা আর অহংকার কাকে বলে। অন্যের সম্পদ যে কোন কৌশলে নিজের করে পাওয়ার আকাংখা কি লোভ? অন্যের ভালো কিছু অর্জনে মনে মনে বিদ্ধেষী হওয়া কি হিংসা? নিজের অর্জনে অন্যকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা কি অহংকার? কোন কালে কি আমার এই সব ছিলো? না! তার পরও বার বার সতর্ক করার কি আছে? আছে হয়তো। সে নিশ্চই আমাকে আমার চাইতে ভালো চিনে। অথবা আমাকে খুব বেশী ভালোবাসে তাই এতো বেশী সাবধানী। দৈন্যতা আর প্রাচুর্য দুটোই মানুষকে বন্য করে। বন্য হলে ন্যায় অন্যায় বিবেচনা বোধ লোপ পায়। আমার তো দৈন্যতা আর প্রাচুর্য কোনটাই নেই! তবে কেন আমাকে এতো সন্ধেহ তার? আমিও শুধুই মানুষ বলে হয়তো। অথবা মানুষ হতে আরো কিছু বাকী।






মা
==
পয়তাল্লিশ বছর ধরে আমি মানুষ হওয়ার চেষ্টাতে আছি। তখন মাত্র ছয় বছর বয়স। ছয় চাচার পরিবারে একটি পুকুর। এই পুকুরের পানিতে রান্না গোসল আর সুতি কাপড়ে ছেকে খাওয়ার পানি। থালা বাসন এই পানিতেই ধুয়া হয়। আমার মায়ের তিন ছেলের বড় সন্তান আমি। ছোট একজন হাটতে শিখেছে আরেকজন হামাগুড়ি দেয়। মা যখন রান্না ঘরে তখন ছোট দুই ভাইকে পাহারা দিতে হয় কখন পুকুরের কাছে চলে যায় কখন পনিতে পড়ে... লেংটু ছোট ভাই কোলে নিতে নিতে কোমরের ডানে বায়ে ফোস্কা পড়ে। মায়ের রান্নার জন্য লাকড়ি কেটে দিতে হয়। মা খুব আশা করেছিলো তার প্রথম সন্তানটি কন্যা হলে তার রান্নার কাজে সাহায্য করতে পারতো। তার কিছু কাজ আমাকে দিয়ে করিয়ে নিয়ে কিছুটা দুঃখ ঘুচাতে চেষ্টা করে। বাজার থেকে মাছ তরকারি কিনে আনা। আটার মিল থেকে গম ভাঙ্গিয়ে আনা। মাছ তরকারি কেটে দেয়া রুটি বিনিয়ে দেয়া। আমি কখনোই রুটি গোল করে বানাতে পারিনি। তিন চার পাঁচ কোনা হতো। তাতেই মা খুব খুশী। ছোট ভাই গুলো আখের গুড় দিয়ে শুকনো রুটি থালায় নিয়ে বসে থাকতো। খেতে চাইতো না। প্যানপ্যান ঘ্যানঘ্যান করতো। আমি খুব মজা করে খেতাম। মা আমাকে দেখিয়ে ওদেরকে বলতো -বড়ডারে দেখ। নিজের হাতে বানানো রুটি বলেই হয়তো অর্ধেক ভুসি মিশানো আটার রুটি এতো মজা লাগতো।
পুকুর ঘাটে থালা বাসন ধুয়ে দেয়া আমার দৈনন্দিন কাজের অংশ। সন্ধ্যার আগে কেরোসিন এর বোতলে দোকান থেকে কেরোসিন কিনে এনে দেয়া। এভাবে সংসারের বেশ কাজের মানুষ হয়ে উঠতে থাকি দিন দিন। মায়ের একটু খুশি অনেক আনন্দের কারণ হয়। মা বাবার খুব আশা ছিলো আরেকটা সন্তান হলে বুঝি কন্যাটি হবে। আল্লাহ পরিকল্পনা করেছেন অন্যকিছু। ছয় ছয়টি পুত্র সন্তানে ধন্য হলেন মা বাবা। কন্যা সন্তানটি ঘরে আসলো সাত নাম্বারে।
ছিয়াত্তর সালে ইউনিসেফ থেকে একটা টিউবওয়েল দেয়া হলো। ছয় চাচার পরিবারের জন্য একটি টিউবওয়েল। আমরা বলতাম চাপকল। সোজা হাতলে প্রথম প্রথম অনভ্যস্ত হাতে চাপকল চেপে পানি তুলতে বাড়ির কতো ঝি বউ এর দাঁত ভেঙেছে। তার পর থেকে আর পুকুরের পানি খেতে হয় না। ঘরে ঘরে পেটের অসুখ কমে গেলো। কোন কোন পরিবারে বারোমাস লেগে থাকতো পেটের অসুখ।

বাবা
====
গুইল্যার বিলে বরশীতে শিং মাগুর মাছ শিকার করতেন বাবা। বাবার মাছ ধরার খুব শখ। নদীতে বর্ষার পানিতে পুকুরে। সারা বছর মাছ ধরতেন বাবা। তবে বরশী দিয়ে ধরা মাছ মা খেতো না। মায়ের ধারনা বাবা কেচো দিয়ে শিং মাগুর মাছ ধরেন। আমি বাবার সাথে খালুই নিয়ে বসে থাকতাম। খালুই ভর্তি বড় বড় শিং মাগুর নিয়ে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে দিলে মা মাছ গুলো অন্য মানুষকে কাটতে দিতো। যেনো মাছ গুলোই কেচো। জালে ধরা মাছ ঠিকই খেতো মা।
আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন বাবাকে দোকানের কাজে সাহায্য করতে শিখলাম। বাবার একটু শরির খারাপ হলে দোকানে বসি। দুপুরে খাওয়ার সময় হলে দোকানে বসতে হয়। বাবাকে দুপুরে খেয়েদেয়ে একটু বিশ্রামের সুযোগ করে দিতে হয়। এভাবেই শিখে নিলাম চাল ডাল পিয়াজ রসুন কিভাবে মাপতে হয়। তের টাকা বিক্রি করে ক্রেতা একশ টাকার নোট দিলে তাকে সাতাশি টাকা ফেরত দিতে হয়।
আব্বা অনেকটা নিশ্চিন্ত হলেন আর অনেকটা নির্ভরশীল হলেন। আমি যে পড়াশোনা করি তা এক পর্যায়ে বাবা প্রায় ভুলেই গেলেন। রাতের বেলা দোকানে ঘুমাতে হয়। দোকান বন্ধ করে বই খাতা খুলে বসে বই গুলোকে পর পর লাগে। বই খাতা কলম আমার অধিকারের বাইরে চলে যেতে থাকে ক্রমেই। সংসার চলে এই দোকানের আয় রোজগেরে। ছোট ছোট ভাইদের পড়াশোনা ভাত কাপড় সব। দুই দুইটা বছর আমার পড়াশোনা বন্ধ থাকলো। অস্থিরতায় রাতে ঘুম হয় না। বছর বছর স্কুলের পরিক্ষায় পাশ করে মিনু কাকার পারুল লাইব্রেরীতে যেতাম নতুন বই আনতে। নতুন বই এর গন্ধ খুব ভালো লাগতো। প্রতি বছর বই আনতে গেলে মিনু কাকা জানতে চাইতেন -কোন ক্লাসে উঠলা? আমি লাজুক হেসে বলতাম -নাইনে। কাকা বই এর দাম নিতেন না বাবার কাছ থেকে। দুই বছর বই পড়ি না। মনের মধ্যে অনেক জ্বালা বাড়তে থাকে। পুরাতন বই যোগার করে রাতে দোকানে বসে বসে পাতা উল্টাই। এভাবেই এস এস সি পাশ করি টেনেটুনে। দোকানে আমার বয়সী অনেক ভালো ছাত্র আড্ডা দিতে আসতো। তারা আমার বন্ধু হয়ে যায়। একদিন তাদেরকে দল বেঁধে সকাল সকাল যেতে দেখি। আমি বললাম -কই যাও তোমরা? মানিক বলে -আনন্দ মোহন কলেজে ভর্তির ফর্ম তুলতে যাই।
-কয় টেকা লাগে?
-দশ টেকা।
-তাইলে আমারেও লইয়া যাও। আমিও ফরম কিনাম।
ভর্তি পরীক্ষা দিয়া চান্স হয়। ভর্তি হই। মিনু কাকা প্রতিদিন সকালে বাজার করতে এসে একদিন জানতে পারে আমি আনন্দ মোহন কলেজে ভর্তি হয়েছি। আমার সামনে বাবাকে বলে -দোস্ত আপনে মানুষ বেশী সুবিধার না।
-ক্যা দোস্ত?
-পোলাডারে দিয়া এহনও দোহানদারী করাইন?
বাবা সেদিন দুপুরে খেয়ে বাসায় আর না ঘুমিয়ে ভর দুপুরে দোকানে চলে আসে। আমি অবাক হই আমার কিছু ভুল হলো কি না! আদর করে বলে -বাবা তোমার আর দোকানদারী করার দরকার নাই। তুমি পড়াশোনা করো। অনেক বড় হও।
অনেক বড় হওয়ার আশায় অনার্স পাশ করে ঢাকায় চলে আসি। একটা কোম্পানির চাকরী জুটে। সারাদিন কাজ শেষে আবার রাতে পড়াশোনা। মাস্টার্স পাশ করতে হবে। নতুন বউ মা বাবার কাছে রেখে ঢাকায় নিজ হাতে রান্না করে খাওয়া। রাত দশটায় দোকান থেকে মশুরির ডাল ডিম আর তেল নুন এনে নিজ হাতে রান্না করে খেয়ে ঘুমাতে রাত বারোটা কি একটা বেজে যেতো। সে আরেক জীবন। গুন গুন করে গান গেয়ে পিয়াজ রসুন কাটা।
প্রতি সপ্তাহে বাড়ি যেতে হয়। যাওয়া আসা অনেক খরচ শরীরে অনেক ধকল। বাবা একদিন বললেন -বাবা তুমি বউ ঢাকায় নিয়া যাও। তোমার তো অনেক কষ্ট হয়। আমি শুধু বললাম -না আব্বা। মনে মনে বললাম মানুষ হতে অনেক কষ্ট করতে হয়। আমার মানুষ হতে হবে। লোক দেখানো মানুষ না সত্যিকারের মানুষ। জীবনে অনেক অন্যায় অনেক পাপ জমা আছে। পাপের শোধ দিতে যতোটুকু কষ্টের দরকার তা করতেই হবে। পাপের ক্ষমা চাওয়া মানে নিজের অপরাধ ছাই চাপা দিয়ে ঢেকে রাখা। ঋণ শোধ মানে দায় মুক্তি। দায় মুক্তির দায়িত্ব বড় কঠিন দায়িত্ব। এই দায় শোধে জীবন তুচ্ছ।
বাবার ব্যাবসা মন্দ। তার উপর ছোট ছোট ভাই বোন। আমার সময় একটু ভালো বলে সবাইকে বাদ দিয়ে ভালো থাকা? আমার সম্ভব হয়নি। ঢাকায় যেই খরচে আমি ছোট্ট পরিবার নিয়ে ভালো থাকবো সেই একই খরচে যদি মা বাবা ভাই বোন আমার স্ত্রী সন্তান সবাই ভালো থাকে তাতে অনেক সুখ। এক রুটি দশজনে ভাগ করে খাবো। সেই মহা আনন্দ।

বউ
==
গুনে গুনে ছয় দিনের ওষুধ ব্যাগে ভরে দেয় বউ। সপ্তাহ শেষে বাড়ি ফিরে গেলে যখন দেখে পাঁচ দিনের ওষুধ রয়ে গেছে অবাক না হয়ে রেগে যায়। আরে আমার শরির খারাপ না হলে ওষুধ খেতে হবে কেন! এই কথা আমি তাকে বুঝাতে পারি না। একটা সুস্থ মানুষকে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত ঔষধ খেতে হবে এটা কোন জীবন হলো? আমার ভায়েরা জানে আমি প্রায় কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রেখে মুখে নাই নাই করি। ডাক্তার যে তালিকা দিয়েছে তাতে মাসে অনেক টাকার মামলা। তারচে বরং এমনি এমনি ভালো থাকা মন্দ কি?
হুজুগে দুই দুইটা জীবন বীমা পলিসি করেছিলাম। তখন যদি জানা থাকতো শেষ দিকে এসে প্রিমিয়াম চালাতে পারবো না তাহলে কি এই আকাম করতাম? সেদিন এজেন্সী ম্যানেজারের সাথে ফোনে কথা হয়। খুব হাসি খুশী মানুষ। সুন্দর একটা হাসিতে মানুষের মন জয় করে নেয়। আমি পলিসি দুটো ভেঙ্গে ফেলার বিষয়ে ফোন করি। আমি তাকে বলি-ভাই আমার দুটো পলিসি মেয়াদ শেষ হতে তিন চার বছর বাকী আছে। এখন এক সাথে যদি বাকী প্রিমিয়াম পরিশোধ করে দেই তাহলে কি পুরো টাকা একসাথে তোলা যাবে? আমার কথা শুনে জহির ভাই হা হা করে হাসে কিন্তু সেই হাসিতে কোথায় যেন এক মাদকতা আর সম্মোহনী শক্তি আছে।
-ভাই ধান ক্ষেত দেখছেন? জানতে চাইলেন জহির ভাই।
-হ্যা দেখছি তো।
-আচ্ছা ধান পাকতে কয় মাস লাগে?
-মাস চারেক।
- যদি দুই মাস পরে আপনে ক্ষেতে চার মাসের সার কীটনাশক সব একসাথে দিয়া বলেন পনেরো দিনের মধ্যে পাকা ধান চাই। তাইলে কি ধান পাকবো?
-আমিও তার সাথে একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম -তাইতো!
তখন বুঝলাম লাইফ ইন্সুরেন্স করে মরে গেলেই বরং লাভ।


আবারও আমি
========
আমার শোবার ঘরে বিছানাটা ছিল পূর্ব পশ্চিমে। বিছানায় শুয়ে ডান দিকে তাকালে লিচু গাছের ঢালটা চোখে পড়তো। এখন জানালাটা আমার পায়ের উপরে। লিচু গাছের ঢালে দুটি কাক প্রতিদিন বসে সময় করে কা কা করে উড়ে যায় আবার আসে। কাক দুটি দেখতে আমাকে আর কষ্ট করে ডানে তাকাতে হচ্ছে না। শুধু চোখ খুলে দেখতে পাচ্ছি বাতাসে গাছের পাতা গুলো নড়ছে। গাছটা আমার চাইতে অনেক বেশী বৃদ্ধ। আমার দাদা ইসমাইল শেখ শেষ বয়সে নিজ হাতে লাগিয়ে ছিলেন। এই লিচু গাছের ফল দাদা খেয়ে যেতে পারেননি। আমার বাবা ভোগ করেছেন। বাবাও চলে গেছেন। এখন আমার যাওয়ার পালা। গাছটি নিরবে হয়তো টিকে থাকবে আরো কয়েক যুগ। আমার সন্তানদের জন্য। এই লিচু গাছের জীবন ধন্য। কথা নেই বার্তা নেই নিরবে প্রযন্মের পর প্রযন্ম সেবা করে যাচ্ছে। মানুষের জন্ম হলে শর্তযুক্ত জীবন যাপনের দায় বাড়ে গাছের দায় নিঃশর্ত সেবার।
সেদিন রাতে জানালার বাইরে তাকিয়ে বাতাসে সেই লিচু গাছের পাতা নড়তে দেখছি। এছাড়া আমার আর দেখার কিইবা আছে? তখন সে আবার আমার মাথার কাছে এসে বসলো। -জীবনে কয়টা গাছ লাগিয়েছিস?
-একটাও না...। হা করে বোকার মত তাকিয়ে রইলাম।
-তুই মানুষ হয়ে মরতে চেয়েছিলি?
-হ্যা...
-কই মানুষ তো হতে পারলি না রে... তোর জন্য বড়ই আফসোস হয়... জীবনে কয়টা মানুষকে খুশী করতে পেরেছিস তুই?
-খুশী...?
-একসাথে এতো মানুষকে খুশী করা যায় না রে বোকা। মা ভাই বোন স্ত্রী সন্তান সবাই তোর প্রতি বিরক্ত। তুই পারলিনারে বোকা!
একটা বাদুড় উড়ে গেলো। অনেক ব্যাস্ত বাদুড়টি। অনেক কাজ। অনেক দায়িত্ব।
আমারো অনেক দায়িত্ব ছিলো সবাইকে খুশী করার দায়িত্ব। মা বাবা ছোট পাঁচ ভাই এক বোন তাদের স্ত্রী সন্তান... সবাইকে খুশী করতে সবার অতৃপ্তি দেখতে হলো। সবাইকে খুশী করতে চাওয়া মানে সবার অসন্তুষ্টি অর্জন করা। এক রুটি দশ জনে ভাগ করে খেলে আসলে কারো ক্ষুধাই মিটে না। সবাই ক্ষুধার্ত থাকে। ক্ষুধার্ত মানুষ হিংস্র হলে অন্যায় নেই। এমন একটা সময়ে এসে তা বুঝতে পারলাম যখন তার আর কোন সমাধান নেই।
মৃত্যু। একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। অথচ কতোটা নিকটে আসলে তা প্রত্যাশিত হয়ে উঠে। ভাবতে খারাপ লাগলেও সবাই মনে হয় আমার বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছে। ছোট কাল থেকে দেখে আসছি বাঁচার আর কোন আশা না থাকলে মানুষকে উত্তর দিকে মাথা রেখে বিছানায় শুইয়ে রাখা হয়।
সব চাইতে বেশী কষ্ট হচ্ছে আমার মায়ের। সন্তানের মৃত্যুর মতো কষ্টকর আর কিছু নেই পৃথিবীতে। মায়ের জন্য আমারো কষ্ট হয়। আমি মরে যাচ্ছি এই জন্য না। মায়ের ভালোবাসা নিয়ে সন্তানদের মধ্যে কাড়াকাড়ি দেখে। মা খুব অসহায়া। সবাই মায়ের কাছে বেশীই আদর প্রত্যাশা করে। ছোটরাও মায়ের কাছে বড় সন্তানদের মতো সমান অধিকার চায়। মা খুব বিব্রত। আমি মরে মুক্তির স্বাদ পাচ্ছি। আমার জন্য বরাদ্দ ভালোবাসাটুকু ভাগ করে নিবে সবাই। আমার নাকি আতুড় ঘরেই বাঁচার আশা ছিলো না। মরতে মরতে বেঁচে গিয়ে ঝামেলা বেধেছ সংসারে।

ছোট ভাই একজন এসে আমার বিছানায় বসে আমার একটি হাত চেপে ধরলো। আমি তার চোখের দিকে চেয়ে স্পষ্ট বুঝতে পারছি সে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে চেষ্টা করছে। কিন্তু মন থেকে কথা গুলো গুছিয়ে মুখে আসছে না তার। ক্ষমা চাওয়া অনেক কঠিন কাজ। তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে কয়েক ফোঁটা জল পড়লো তবু ক্ষমা আসলো না মুখে। শেষে জানতে চাইলো -তোমার কি কিছু খেতে মন চাইছে দাদা?
-কিছু না। আমি বললাম। মনে মনে হাসলাম। আমার সময় শেষ এই কথাটা আবার মনে করিয়ে দিলো ভাই আমার।
মা কোন কথা বলতে পারলো না। স্ত্রী সন্তানও না। তারা শুধু আড়ালে চোখের জল ফেলছে। সামনে এসে নিরবে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকছে অভিমান করে। যেন এই যাওয়া আমার স্বেচ্ছায় যাওয়া। এই যাওয়ায় আমার হাত আছে। একবার আড়ালে সরে কাঁদছে। আবার সামনে আসছে।

রাত ক্রমেই দীর্ঘ হয়।
চোখ বন্ধ করে আতড়ের গন্ধ পাই... মাটির তীব্র গন্ধ নাকে এসে লাগে...রাত যতো বাড়ে আমার থেকে আমি ক্রমেই দূরে চলে যাই। নিজেকে চিনতে ভুল করি অহরহ... আড্ডা কোলাহলে আগন্তুক আমি..."আমি" শব্দটি বিলুপ্তির অপেক্ষায় আমি...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাঃ ফখরুল আলম ভাল লেগেছে। ভোট দিতে মন চায়। আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
রুহুল আমীন রাজু anek valo laglo golpoti.shuveccha.
শামীম খান সুন্দর গল্প । একজন বঞ্চিত মানুষের শেষ সময়ের উপলব্ধি , যিনি সারা জীবন আত্মত্যাগ আর সংযমের সাধনা করে অন্যের অভাব মিটিয়ে গেছেন , অন্যের মুখে হাসি ফোঁটাতে চেষ্টা করেছেন । শেষ মুহূর্তে কিছুটা হতাশ , আবার রেখে যাওয়া স্বজনদের ভাবনায় কিছুটা উদ্বিগ্ন । সব মিলিয়ে দারুন লেগেছে গল্পটি । শুভ কামনা রইল ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা শামীম ভাই...
এশরার লতিফ সুন্দর লেখা, মনে হলো গল্পের অনেক অংশই অভিজ্ঞতালব্ধ।
অনেক ধন্যবাদ এশরার লতিফ ভাই। আপনার মতো একজন বিদগ্ধ লেখক আর মনযোগী পাঠকের উপলব্দি মিথ্যে নয়...
সেলিনা ইসলাম চমৎকার পটভূমি...পৃথিবীতে কিছু মানুষ আসে শুধুই দিতে...দেয়াতেই যেন তাঁদের সব আনন্দ! ভালো লাগল বড় ভাইয়ের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে তা উপলব্ধি করে ছোট ভাইয়ের ক্ষমা চাইবার যে বর্ননা লেখক দিয়েছেন এই জায়গাটা। খুব বেশী ভালো লাগল একজন দায়িত্বশীল ছেলে মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে মায়ের কষ্টের কথা অনুধাবন করার বিষয়টি। শেষে এসে চরম সত্য উপলব্ধি...সব মিলিয়ে খুব ভালো একটা গল্প। তবে নতুনত্ব রাখার চেষ্টা সফল লেখকের। শুভকামনা নিরন্তর।
অনেক ধন্যবাদ আপা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গল্পটি কতোটা গুরুত্ব দিয়ে পড়েছেন তার যথার্থ প্রমাণ মন্তব্যে রেখে ধন্য করলেন লেখককে। ভালো থাকুন আপা।
অনেক ধন্যবাদ আপা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গল্পটি কতোটা গুরুত্ব দিয়ে পড়েছেন তার যথার্থ প্রমাণ মন্তব্যে রেখে ধন্য করলেন লেখককে। ভালো থাকুন আপা।
ইমরানুল হক বেলাল একটি ভিন্ন স্বাদের গল্প। গভীর আবেগ প্রবণ উপলব্ধি দিয়ে লেখা। মিথ্যা প্রসংশা নয় আসলে সত্যিই ভালো লেগেছে। ভোট দিয়ে গেলাম। আমার "জীবন চলার পথে" গল্পটি পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা ভাই আপনাকে। সময় করে আপনার লেখা অবশ্যই পড়বো। ভালো থাকুন।
Fahmida Bari Bipu জীবনের 'গভীরতম' উপলব্ধি। আপনার 'মনের কথা' সিরিজেরই কোন লেখা পড়ছি বলে মনে হলো। ভালো লাগলো, শুভকামনা রইল।
আপা ঠিক বলেছেন। গল্পের শেষ অংশটুকু "নতুন গল্পের সমাপ্তি" শিরোনামে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। ভালো থাকুন।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন আহ! ...চমতকার লিখেছেন। ভাল লেগেছে। শুভেছা রইল।
আপনার মন্তব্যের জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। ভালো থাকুন।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রন রইল।
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

২৫ মে - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৪৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪