একটি নাবালক ইচ্ছা

ইচ্ছা (জুলাই ২০১৩)

সুপণ শাহরিয়ার
  • 0
তেঘরিয়া বাইতুস্ সালাম জামে মসজিদের ঈমাম সাহেব, মুহাম্মদ তৌহিদুর রহমানের আসরের নামায শেষ করে হাতে কোনো কাজ থাকে না। এই সময়টাতে হয় তিনি মসজিদে বসে কোরান তেলাওয়াত করেন, নয়তো ঘুরতে বের হন স্কুলমাঠের দিকে। স্কুলমাঠে ছোটো ছোটো বাচ্চারা বিচিত্র ধরণের সব খেলা করে- তাঁর দেখতে ভালো লাগে, খুব আনন্দ লাগে। বালকবেলার উচ্ছ্বল দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। মাগরীবের আযান পড়া অবধি সময়টা তিনি বাচ্চাদের খেলা দেখা আর অতীত স্মৃতি মনে করার কাজেই নিজেকে ব্যাস্ত রাখেন।
আসরের নামায শেষ হয়েছে।
তৌহিদুর রহমান সাহেবের আজ কোরান তেলাওয়াতের মন নেই- তিনি মসজিদ থেকে বেরিয়েই স্কুলমাঠের দিকে পা বাড়ালেন। মাঠে পৌঁছুতেই চার-পাঁচ বছর বয়সের কয়েকটা ছেলে খেলা ভেঙে ছুটে এসে তাঁকে ঘিরে ধরলো। তাদের আবদার- তাদেরকে গল্প শোনাতে হবে।
একটা কথা বলা হয় নি। কেবল বাচ্চাদের খেলাধূলা দেখা আর অতীত স্মৃতি রোমন্থনের কাজেই যে তিনি আসর থেকে মাগরীব পর্যন্ত এই মাঠে অবস্থান করেন, এমন না- আরো একটা কারণে তিনি এখানে আসেন। কারণটা হলো- উপরে উল্লেখিত চার-পাঁচ বছরের বাচ্চাগুলোর সাথে তাঁর ইদানীং খুব বন্ধুত্ব। তাঁকে দেখলেই বাচ্চাগুলো খেলাধূলা সব ভুলে যায়, ‘হুজুর’, ‘হুজুর’ বলে তাঁর কাছে ছুটে আসে সবাই একসাথে। তিনি প্রতিদিন তাদেরকে নবী-রাসূলদের জীবনী থেকে একটা করে গল্প বলে শোনান। নূহের প্লাবনকাহিনী, মূসা ও ফিরাউনের কাহিনী, নমরুদের কাহিনী ইত্যাদি গল্পগুলো ইতোমধ্যে তারা শুনে ফেলেছে। আজ নতুন একটা গল্প তাদেরকে শোনাতে হবে।

‘আচ্ছা, তোমরা সবাই শোনো- আজ আমি তোমাদেরকে গল্প শুনাবো না। আজ তোমরা আমাকে গল্প শুনাবা। কেমন?’
তৌহিদুর রহমান সাহেবের কথার জবাবে কেউ কিছুই বললো না। তিনি আবার বললেন, ‘কি- কেউ কোনো গল্প শুনাবা না?’
এবারও কেউ কিছু বললো না- সবাই নিশ্চুপ।
‘শিহাব, তুমিই প্রথমে শুরু করো।’
শিহাবকে শুরু করতে দেখা গেলো না কিছু। বাচ্চাগুলোর ভিতর আরো আছে সায়েম, রেহান, ইবু, নাঈম এবং নাম না জানা বোকা বোকা টাইপের একটা ছেলে- কাউকেই কিছু শুরু করতে দেখা গেলো না।
‘আচ্ছা যাও, তোমাদেরকে গল্পটল্প কিছু বলতে হবে না। তোমরা বরং এক এক করে বলো বড়ো হয়ে তোমরা কে কী হবা। প্রথমে শিহাবই বলো- বড়ো হয়ে তুমি কী হতে চাও?’
বাচ্চাদের সবার ভেতর এবার বেশ আগ্রহ দেখা গেলো। সবাই নড়েচড়ে বসলো। বোঝা গেলো সবার ভেতরেই একটা করে স্বপ্ন আছে- বড়ো হয়ে সে কী হবে, তার পরিচয়টা কী হবে।
তৌহিদুর রহমান সাহেবের কথার জবাবে শিহাব বললো, ‘আমি বড়ো হয়ে ডাক্তার হবো।’
‘তুমি ডাক্তার হবা। ভালো। খুব ভালো। তা তুমি কি বড়ো লোকের ডাক্তার হবা, নাকি গরীব লোকের ডাক্তার হবা?’
‘আমি গরীব লোকের ডাক্তার হবো। আম্মু বলেছে গরীব লোকের কাছ থেকে আমি কোনো টাকা-পয়সা নেবো না।’
‘খুব ভালো। আল্লাহ তা’লা তোমার আশা পূরণ করুক। আচ্ছা এবার রেহান বলো। বড়ো হয়ে তুমি কী হবা, তুমিও কি ডাক্তার হবা?’
‘না। আমি ডাক্তার হবো না। আমি হবো ইঞ্জিনিয়ার।’
‘ভালো। খুব ভালো। আল্লাহ যেনো তোমাকে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার তৌফিক দেন।’
‘ইবু, তুমি বড়ো হয়ে কী হবা?’
‘আমি বড়ো হয়ে পাইলট হবো। বিমান চালাবো। আমার বিমানে আমি একদিন আপনাকেও চড়াবো।’
‘ভালো। খুব ভালো। আল্লাহ পাক তোমাকে যেনো পাইলটই বানান। আচ্ছা, ইবু’র পরে এবার কে? তুমি। কিন্তু তোমাকে তো চিনলাম না। বাবু, তোমার নাম কী?’
নাম না জানা ছেলেটা কিছু বলবার আগেই ইবু বলে উঠলো, ‘হুজুর, ওরা আমাদের বাড়ি নতুন ভাড়া এসেছে। ওর নাম সাব্বির।’
তৌহিদুর রহমান সাহেব সামান্য কৌতুক করলেন। বললেন, ‘তা সাব্বির, ইবু তো বড়ো হয়ে বিমান চালাবে। তুমি বড়ো হয়ে কী করবা? তুমি কি রকেট চালাবা?’
সাব্বির ছেলেটা কেমন যেনো অপ্রতীভ বোধ করলো, কেমন যেনো লজ্জা পেলো। কিছু একটা বলতে গিয়ে একটু ইতস্তত করলো, থেমে গেলো তারপর।
তৌহিদুর রহমান সাহেব আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি সাব্বির, কিছু বলছো না যে, বড়ো হয়ে তুমি বুঝি সত্যি সত্যিই রকেট চালাবা?’
সাব্বির এবার কথা বললো। লাজুক লাজুক চেহারা করে সে যা বললো, তা’ শোনার পর তৌহিদুর রহমান সাহেব এতোটাই অবাক হলেন, যে ‘নাউযুবিল্লাহ’ বলতে পর্যন্ত তিনি ভুলে গেলেন।
এবং, তিনি, তেঘরিয়া বাইতুস্ সালাম জামে মসজিদের ঈমাম সাহেব, মুহাম্মদ তৌহিদুর রহমান, তখন কল্পনাও করতে পারলেন না- সাব্বির নামক অবোধ বালকটার এই না বুঝে বলা কথাগুলোই একদিন তাঁর জন্যে কতো বড়ো একটা দুঃসংবাদ বয়ে নিয়ে আসবে!

সাব্বির লাজুক লাজুক চেহারা করে বলেছিলো- “আমি বড়ো হয়ে আমার মা’র জন্যে একটা লাল টুকটুকে শাড়ি কেনবো। মা সেই শাড়িটা পরে লাল টুকটুকে বৌ সাজবে। তারপর আমি মা’কে বিয়ে করবো।”




* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *
৭ বছর পর
* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *
বন্ধুত্বের বন্ধনটা সব সময় এক রকম থাকে না। শৈশবের অনেক বন্ধুই দেখা যায় কৈশোরে এসে হারিয়ে যায়- কেউ পারস্পরিক বোঝাপড়ায় পার্থক্য থাকার কারণে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, কেউ বাবা’র চাকরির ট্রান্সফারজনিত কারণে দূরে সরে যায়, কেউ বা অনাকাঙ্ক্ষিত প্রয়াণে হারিয়ে যায় চিরতরে।
মুহাম্মদ তৌহিদুর রহমান সাহেব দীর্ঘ ৭ বছর পরে এসেও দেখলেন শিহাবদের বন্ধুত্বটা (শিহাব, সায়েম, রেহান, ইবু, নাঈম এবং সাব্বিরের বন্ধুত্ব) আগের জায়গাতেই রয়ে গেছে। তারা বালকবেলার মতোই এখনো একই সঙ্গে স্কুলে যায়, একই সঙ্গে খেলাধূলা করে, নামায পড়ার জন্যে সবাই একই সঙ্গে মসজিদে যায়, কোথাও বেড়াতে যেতে হলে একই সঙ্গে বের হয়। এবং আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো জেএসসি পরীক্ষা শেষে তারা কোরান শরীফ পড়া শিখবে- এখানেও সব বন্ধু একই সাথে শিখবে বলে ঠিক করা।
জেএসসি পরীক্ষা শেষ হবার দু’ তিন দিন পর, একদিন আসরের ওয়াক্তের আগে আগেই তারা আরবি-আমপারা নিয়ে চলে এলো। কোরান শিক্ষার প্রথম দিন তাদেরকে আরবি-আমপারার কিছুই খুলতে দেখা গেলো না, বিচিত্র সব গল্প নিয়ে আড্ডা জমে উঠলো তাদের মধ্যে। তৌহিদুর রহমান সাহেবও প্রথম দিন তাদেরকে তেমন কিছু বললেন না, বরং আগ্রহ করে তাদের গল্প শুনতে লাগলেন। গল্প শুনতে শুনতে তিনি খেয়াল করলেন সাব্বির ছেলেটা সবার থেকে একটু আলাদা- কেমন চুপচাপ, কেমন গম্ভীর। সবাই মজার মজার সব গল্প করছে, আর সে চুপচাপ বসে আছে, গল্পে হাসির কিছু আসলে ঠোঁট প্রসারিত করে সামান্য হাসছে, ব্যাস্ এপর্যন্তই। পরপরই আবার চুপ।
‘সাব্বির, তুমি কিছু বলছো না যে?’
তৌহিদুর রহমান সাহেবের কথা শুনে সাব্বির কিছু বললো না। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সায়েম ঠাট্টা করে বলে উঠলো, ‘হুজুর, ও তো কথা বলতে পারে না, ও তো বোবা।’
এই কথার পরও সাব্বিরকে বোবা হিসেবেই দেখা গেলো। সে কোনো প্রতিবাদ করলো না কথাটার। একটু মুচকি হাসলো, তারপর চুপ করে গেলো আবার।
সায়েম আবার বললো, ‘দেখলেন হুজুর, আমি কি মিথ্যে বললাম?’
সায়েমের কথা শেষ হতেই শিহাবও ঠাট্টা করে বলে উঠলো, ‘হ্যাঁ হুজুর, ও শুধু শোনে, দেখে, আর হাসে।’
হুজুর বললেন, ‘না না, ও বোবা হতে যাবে কেনো? ওকে নিয়ে তোমরা ঠাট্টা করছো কেনো? তোমরা কেউ কাউকে নিয়ে ঠাট্টা কোরবা না। ঠাট্টা করা আল্লাহ তা’লা পছন্দ করেন না।’
ঠাট্টা করা আল্লাহ তা’লা পছন্দ না করলেও এই মুহূর্তে নাঈম ছেলেটা অপছন্দ করলো বলে মনে হলো না। নাঈম বললো, ‘না হুজুর, ও বোবা না। কিন্তু ও হঠাৎ হঠাৎ এমন এমন সব বোকা বোকা কথা বলে, যে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়। যেমন- ...।’
‘নাঈম তুই থাম, থাম বলছি, আমার একটা মজার কথা মনে পড়েছে।’
নাঈমকে কথা শেষ করতে না দিয়ে হড়বড় করে ইবু কথা বলে উঠলো। এবং পুরোপুরিভাবে সে যা বললো, তাতে বোঝা গেলো আল্লাহ তা’লা পছন্দ না করলেও এই মুহূর্তে ইবুও ঠাট্টা করাটাকে অপছন্দ করলো না।
ইবু বললো, ‘হুজুর আপনার মনে আছে- ও ছোটো বেলা একবার কী বলেছিলো? আপনি আমাদের সবাইকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে আমরা বড়ো হয়ে কে কী হবো। ও কী বলেছিলো আপনার মনে আছে হুজুর? ও বলেছিলো যে, ও বড়ো হয়ে লাল টুকটুকে একটা শাড়ি কিনে সেই শাড়ি পরিয়ে বৌ সাজিয়ে ও ওর মা’কে বিয়ে করবে।’
ইবু’র কথা শেষ হতে না হতেই শব্দ করে সবাই হেসে উঠলো। এবং সে হাসি শেষ হবার আগেই সাব্বির উঠে দাঁড়ালো। হাসি থামিয়ে কয়েকজন তাকে বাঁধা দেবার চেষ্টা করলো। তৌহিদুর রহমান সাহেবও তাকে বাঁধা দিতে চাইলেন। কিন্তু তিনি দেখলেন তাঁর বাঁধাকেও উপেক্ষা করে ঘর থেকে মুখ কালো করে বেরিয়ে গেলো সে। তিনি শুধু মনে মনে উচ্চারণ করলেন- নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক।
সাব্বির বের হয়ে যাবার পর কাউকে আর কোনো কথা বলতে শোনা গেলো না- ঘরের ভেতর নিশ্চুপ নীরবতা। সে নীরবতা ভাঙিয়ে দিতে মসজিদের মাইক থেকে মুয়াজ্জিনের আযান ভেসে আসলো কয়েক মুহূর্ত পর।
আসর ওয়াক্তের নামাযের সময় হয়ে গেছে।

আসরের নামাযের জামাত শেষে তৌহিদুর রহমান সাহেব দেখলেন, শিহাবরা সবাই জামাতে হাজির হয়েছে। কিন্তু সাব্বিরকে কোথাও দেখতে পেলেন না তিনি।
মাগরীবের ওয়াক্ত গেলো, এশা গেলো, এবং রাত শেষে ফজরের ওয়াক্তও পার হয়ে গেলো- কোনো ওয়াক্তের জামাতেই সাব্বিরকে দেখা গেলো না। যে ছেলে আর যা-ই মিস্ করুক- কখনো কোনো ওয়াক্তের জামাত মিস্ করে না।



* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *
পরিশিষ্ট
* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *
ফজরের নামায শেষ করে এসে ঘরের দরজায় পা রাখতেই তৌহিদুর রহমান সাহেব মসজিদের মাইকে আবার মুয়াজ্জিন সাহেবের কন্ঠ শুনতে পেলেন। তেঘরিয়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব পরপর তিন বার একটা সংবাদ প্রচার করলেন।
“একটি শোক সংবাবাদ, একটি শোক সংবাদ, একটি শোক সংবাদ- অত্র অঞ্চলের উত্তর পাড়া নিবাসী মুহাম্মদ তাহাজ্জত হোসেনের পুত্র মুহাম্মদ সাব্বির হোসেন গতকাল রাত্রিবেলা ইন্তেকাল করিয়াছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”



* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *
পুনশ্চ
* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *
সাব্বিরের মৃত্যুটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলো না, মৃত্যুটা ছিলো আত্মহত্যার মৃত্যু। গভীর রাতে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে সে আত্মহত্যা করে। ফাঁস পরার আগে সে তার মা’র উদ্দেশ্যে একটা চিঠি লিখে টেবিলের উপর রেখে যায় (চিঠিটা সম্ভবত অসমাপ্ত চিঠি, কারণ, চিঠির শেষে সমাপ্তিসূচক কিছু নেই, ইতি-টিতিও কিছু নেই)। মৃত্যুর পরদিন তার দাফনকার্য সমাপ্ত হবার পর তৌহিদুর রহমান সাহেব হাতে পান সেটা। চিঠিটা পড়া শেষ করে পাঞ্জাবির পকেট থেকে তিনি রুমাল বের করেন। রুমাল দিয়ে তিনি তাঁর অশ্রুসিক্ত চোখ মোছেন।

মা,
তোমাকে দু’টো গল্প বলি- শোনো।

১ম গল্প:
‘তুমি বড়ো হয়ে কী করতে চাও?’
পরপর কয়েক জন ছেলেকে এই প্রশ্নটা করা হলো। ছেলেগুলো একে একে তাদের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করলো। তাদের মধ্য থেকে বড়ো হয়ে কেউ ইঞ্জিনিয়ার হবে, কেউ পাইলট হয়ে বিমান চালাবে, কেউ ডাক্তারি করবে। একটা ছেলে কেবল জবাব দিলো সম্পূর্ণ অন্য রকম। তার ইচ্ছা- বড়ো হয়ে সে লাল টুকটুকে একটা শাড়ি কিনবে, সেই শাড়ি পরিয়ে বৌ সাজিয়ে সে তার মা’কে বিয়ে করবে।

২য় গল্প:
কখনো নোংরা কিছু কল্পনা না করলেও একটা অতি নোংরা স্বপ্ন দেখে ছেলেটার ঘুম ভেঙে গেলো। ছেলেটা স্বপ্নে দেখলো তার যেনো বিয়ে হয়েছে। অসংখ্য ফুল দিয়ে একটা পালঙ্ক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। পালঙ্কের মাঝখানে লাল টকটকে একটা বেনারশি শাড়ি পরে লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে নতুন বৌ। হঠাৎ স্বপ্নদৃশ্যটা চেঞ্জ হয়ে গেলো- দ্বিতীয় দৃশ্যে যা দেখা গেলো তা’ হলো- সাজসজ্জাবিহীন একটা ঘরের ভিতর সাধারণ একটা খাটের উপর সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে একটা মেয়ে হাসি হাসি মুখে বসে আছে (সম্ভবত এই মেয়েটাই আগের দৃশ্যের বৌ সেজে বসে থাকা মেয়েটা)। ছেলেটা এক ধরনের নেশা নিয়ে এগিয়ে গেলো মেয়েটার কাছে। গিয়েই দেখলো নগ্ন হয়ে বসে থাকা মেয়েটা আর কেউ না- মেয়েটা তারই জন্মদাত্রী মা।

উপরের গল্পদ্বয়ে মা’কে বিয়ে করতে চাওয়া ছেলেটা এবং নোংরা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে জেগে ওঠা ছেলেটা আর কেউ না- এই আমি- তোমারই ছেলে।
মা, প্রত্যেক বেলা তুমি না মেখে দিলে আমার ভাত খাওয়া হয় না, দিনের ভেতর যতোবার বাড়ি থেকে বের হই, কপালে আর দু’চোখের পাতায় তোমার চুমু না নিয়ে বের হলে আমি স্বস্তি পাই নে, রাতের বেলা শিয়রে বসে যদি তুমি চুলের ভেতর হাত দিয়ে বিলি কেটে না দাও, তাহলে আমার ঘুম আসে না- সেই তোমাকে আমি লাল শাড়িতে সাজিয়ে বিয়ে করতে চেয়েছি। সেই তোমাকে নিয়ে আমি নোংরা স্বপ্ন দেখেছি।
মা, আমার বারবার কেবল মনে হচ্ছে তোমার সামনে আমার আর যাওয়া হবে না। এতো লজ্জা নিয়ে তোমার সামনে আমি আর যেতে পারবো না।

মা, ঘুম ভেঙে যাবার পর থেকে আমার যেনো কেমন হচ্ছে- নিজের প্রতি বড্ডো ঘেন্না লাগছে। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে, ঘর-জানালা-দেয়াল কাঁপিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আমার এমন হচ্ছে কেনো? মা, মাগো, তুমি কোথায়? আমার কাছে একটু আসবে? আমাকে একটু আদর করবে? আমাকে খুব শক্ত করে তোমার বুকের মধ্যে একটু জড়িয়ে ধরবে?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক ধাপে ধাপে এগিয়েছে গল্পের ধারাবাহিকতা....ভালো লাগলো...গল্পের শেষ দিকে ছেলের মাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাটা কেমন যেন মনে হলো....
তাপসকিরণ রায় sundar,natun bhaabnaay lekha galp--maner gabheertaa chhunye ney.
এফ, আই , জুয়েল # সুপার কোয়ালিটির একটি গল্প । রহস্য আর উন্মদনায় ভরা । লেখককে ধন্যবাদ ।।
লেখা পড়ে মন্তব্য করবার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত khub valo laglo... apni admin er sathe mail er madhyome kotha bolun, change kore dewar jonno naam ta
ইন্দ্রাণী (বানান ভুল হলে মাফ করবেন) আপু, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ- লেখাটা পড়ার জন্যে, মন্তব্যের জন্যে, পরামর্শের জন্যে।
সুপণ শাহরিয়ার নিজের লেখাটা ওপেন করেই বড়ো ধরনের একটা ধাক্কা খেলাম- গল্পটার নাম দিয়েছিলাম 'লজ্জা', কিন্তু সে 'লজ্জা' নামটা কোথায় গেলো? "একটি নাবালক ইচ্ছা" ছিলো জাস্ট গল্পটার একটা পয়েন্ট, '৭ বছর পর' যেমন একটা পয়েন্ট, 'পরিশিষ্ট' যেমন একটা পয়েন্ট, 'পুনশ্চ' যেমন একটা পয়েন্ট, "একটি নাবালক ইচ্ছা"ও ছিলো ঠিক তেমন একটা পয়েন্ট। গল্পটার প্রথম পয়েন্ট।

২১ মে - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ভালবাসা”
কবিতার বিষয় "ভালবাসা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জানুয়ারী,২০২৫