দ্বিতীয় ইনিংস

ইচ্ছা (জুলাই ২০১৩)

পান্থ ইসলাম
  • ১৬
গল্পের প্রারম্ভে ১৯৯৬ সালের শেয়ার মার্কেটের যৎকিংচিৎ বর্ণনা না দিলে গল্পটির প্রতি অবিচার করা হবে। তখন হঠাৎ করে শেয়ার মার্কেট পাগলা ঘোড়ার মতো উর্দ্ধমুখী হয়ে বি¯—ৃত গগণের দিকে ছুটে চলেছে! আচানক এক যাদুমন্ত্র গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে যে, ‘শেয়ার কিনলেই বড় লোক!’ শর্ট টাইমে বড় লোক হওয়ার আশায় সে সময়ে হাজার হাজার যুবক এ পাগলা ঘোড়ার পিছনে উ™£াšে—র মতো ছুটাছুটি করেছে! মতিঝিল ‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ’ চত্বর থেকে উত্তরে শাপলা চত্বর এবং দ¶িণে ইত্তেফাকের মোড় পর্যš— বিশাল রা¯—ায় অগণিত তর“নের হাতে ছিল শেয়ার নামক একটুকরো কাগজ আর চোখে-মুখে ছিল বড় লোক হওয়ার নেশা! সে এক অসাধারণ দৃশ্য!

সে সময়ে শামিম শাšি—বাগের এক মেসে থেকে টিউশনী করতো আর একটা চাকুরীর আশায় ঢাকার এক প্রাš— থেকে আরেক প্রাšে— ছুটে বেড়াতো। হঠাৎ একদিন বিকেলে সিলেটি করিম হš—দš— হয়ে মেসে ঢুকে শামিমকে বললো, ‘‘খিতা করস বে, হক্কলে শেয়ার কিইন্না বড় লোক হইয়া গেল! আমরা খিতা চাকুরী খুজরাম নি? দেইখ্যা আইছি মতিঝিলে মাইনসের মাথা মাইনসে খাইন!’’ আধ শোয়া থেকে সোজা হয়ে বসে, হাতের বইটা টেবিলে রাখতে রাখতে শামিম বললো, ‘‘তুই কি শেয়ার মার্কেটের কথা বলছিস?’’ চৌকিতে বসে পায়ের মোজা খুলতে খুলতে করিম বললো, ‘‘শালা এইডা শেয়ার মার্কেট না বে, এইডা একটা সোনার খনি!’’

সোনার খনিতে বিনিয়োগের প্র¯—াবে শামিম প্রথমে রাজি না হলেও পরবর্তীতে ‘ভয়ঙ্কর’ প্রলোভনে অল্প সময়ে বড় লোক হওয়ার লোভে রাজি হয়ে যায়। মা-বাবা এবং আত্মীয়-¯^জনের কাছ থেকে টাকা ধার করে তুলে দেয় করিমের হাতে। করিমও গ্রামের জমি-জমা বিক্রি করে টাকা-পয়সা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মতিঝিলের সোনার খনিতে! সেখানে সারাদিন শেয়ার নামক একটুকরো কাগজ বিক্রি করে রাতে মেসে আসার সময় ‘মিষ্টি পাগল’ শামিমের জন্য নিয়ে আসতো লোভনীয় মিষ্টি। তার হাবভাবে ফুটে উঠতো ‘পয়সাওয়ালার’ আলামত! করিমের বড়লোকি ভাব দেখে শামিমও গোফে তা দিতে শুর“ করে। ‘এইম অব লাইফ’ পরিবর্তন করে ঢাকায় বাড়ি-গাড়ীর ¯^প্ন দেখে শামীম!

কিছু দিন পর করিম বললো, ‘‘শামীম, ঢাকায় তো শেয়ার ব্যবসা সুবিধা যাচ্ছে না, তাই এখন থেকে ঢাকায় শেয়ার কিনে চট্টগ্রাম নিয়ে বিক্রি করবো তাতে লাভ হবে বেশী।’’ প্রথম প্রথম হলোও তাই। চট্টগ্রাম থেকে আসার পথে কুমিল­া থেকে রসমালাই নিয়ে আসতো করিম। গভীর রাতে দু’বন্ধু মিলে রসমালাই খেতে খেতে ¯^প্নের জাল বুনতো। করিমের ঠোঁটের কোণে লেগে থাকতো হাসির ঢেউ! সেই তৃপ্তির হাসি দেখে শামীমের হৃদয়ে লাগতো সুখের দোলা! চৌকিতে ক্লাš— শরীরটা এলিয়ে দিয়ে বুক ভরা আশা নিয়ে করিম প্রায়শঃ বলতো, ‘‘দো¯— আর কয়টা দিন সবুর কর। কিসের টিউশনী? কিসের চাকুরী? আমরাই কতজনকে চাকুরী দিবো!’’

প¶কাল পর করিম আর রসমালাই নিয়ে আসতো না। কথাও বলতো কম। রাতে ঘুমাতো না। চিৎ হয়ে শুয়ে চেয়ে থাকতো উপরের দিকে। রাত পোহালে বুক ভরা আশা নিয়ে চলে যেতো মতিঝিলে আর শামিম রসমালাইয়ের আশা নিয়ে দোয়া করতো শেয়ার বাজারটা যেন চাঙ্গা হয়। কিন্তু দিন শেষে রসমালাইয়ের দেখা পেতো না শামিম। বরং মেসে ফিরে করিম বিড়বিড় করে বলতো শাইন পুকুরটা সর্বনাশ করে দিল। এ বিষয়ে জ্ঞান কম থাকায় শামিম ভাবতো সে বুঝি পুকুরে পড়ে গিয়েছিল! সরল মনে জানতে চাইতো শাইন পুকুরটা কোন দিকে? করিম রেগে বলতো, ‘‘খিতা বে তুই আমার লগে তামাশা করস নি?’’

মাঝে মাঝে সে চট্টগ্রামেই দু’তিন দিন থেকে যেতো। যখন ফিরে আসতো তখন আর তার মুখের দিকে তাকানো যেতো না। শুকনো মুখটা দেখে মনে হতো কতোকাল মাছ-ভাতের সাথে দেখা নেই তার! কষ্টের দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে একদিন করিম বললো, ‘‘শামীম, চট্টগ্রামেও লস খেলাম।’’ শামিম বললো, ‘‘শেয়ার যা আছে তা বেচে দিয়ে মার্কেট থেকে বেরিয়ে এসো। গত কয়মাস রসমালাই যা খেয়েছি তাতে বাকী জীবন আর মিষ্টি না খেলেও চলবে।’’ কিন্তু আশাবাদী করিম আশা ছাড়তে নারাজ। নেশাখোরের মতো প্রতিদিন চলে যেতো মতিঝিলে আর ফিরে আসতো রাতে হতাশার ঝুলি সমৃদ্ধ করে।

দুপুরে খেয়ে সবে মাত্র গা-টা বিছানায় এলিয়েছে শামিম। এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে কিছুটা বিরক্তির ¯^রে জানতে চাইলো - কে? ¶ীণ কণ্ঠে অপরাধীর মতো করিম বললো, ‘‘ঘুমাই গেছ নি বা।’’ করিমের কন্ঠ শুনে তাড়াহুড়া করে দরজা খুলে শামিম দেখে - করিমের কাঁধে ভর দিয়ে দাড়িয়ে এক হুজুর। হুজুরের চেহারায় রাজ্যের ক্লাšি—। মনে হয় ক্যান্সারের রোগী। করিম হুজুরকে তার সিটে শুয়ায়ে বললো, ‘‘শামিম, জলদি খানার ব্যবস্থা করো।’’ করিমকে ইশারায় বারান্দায় নিয়ে রাগতঃ ¯^রে ফিস ফিস করে শামিম বললো, ‘‘মিয়া আমরাই তো ঠিক মতো খেতে পারি না আবার এই ‘আপদ’ কইত্তাইকা নিয়া আইছো?’’ ¯^াভাবিকভাবে করিম বললো, ‘‘তাইন আমার শেয়ার মার্কেটের বন্ধু, তাইন বড় কষ্টে আছুইন!’’

এবার হুজুরের পরিচয়টা দিয়ে গল্পের মূল বক্তব্যে চলে যাবো। তার পুরো নাম তাকিউল ইসলাম। ডাক নাম জনি। কুমিল­ার মুরাদ নগরে এক কৃষক পরিবারে তার জন্ম। ১৯৮৩ সালে এসএসসি পরী¶ায় কুমিল­া বোর্ডে মানবিক শাখায় ঈর্ষণীয় ফলাফল করে এলাকায় হৈচৈ ফেলে দেয়। এইচএসসিতেও ভালো রেজাল্ট করে ভর্তি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সাহিত্যে। তৃতীয় বর্ষে এসে এক প্রেমিকার আহŸানে সাড়া দিয়ে লেখা পড়ার তাল হারিয়ে ফেলে। ফলে আশানুরূপ রেজাল্ট করতে পারেনি অনার্স এবং মাস্টার্সে। বিশেষ বিসিএস শি¶ায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকার উপকন্ঠে একটি সরকারী কলেজে শি¶কতা শুর“ করে। এক পর্যায়ে তাবলিগ জামাতে জড়িয়ে লেবাস পাল্টিয়ে হয়ে পড়ে পাক্কা ‘হুজুর’।

প্রায় সপ্তাখানেক মেসে থেকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠে জনি। শামিমদের মেসের মামুন খুব আমুদে এক ছেলে। আবুজার গিফারীতে অনার্স পড়ছে সে। মূলত সে-ই জনিকে দিন-রাত হাসি তামাশায় মাতিয়ে রাখে। এরই মধ্যে মামুনের সাথে জনির সখ্যতা গড়ে উঠে। একদিন চাঁদনী রাতে ছাদে বসে গল্প করার এক পর্যায়ে মামুন বললো, ‘‘জনি ভাইয়া, আপনার মতো একজন মানুষ শেয়ার মার্কেটের মতো একটা ফটকা বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন, তা ভাবতেও আবাক লাগে।’’ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে জনি বলে, ‘‘মামুন, মূলত তোমার ভাবীর উৎসাহে বড় লোক হওয়ার আশায় শেয়ার মার্কেট তথা মতিঝিলের রা¯—ায় নেমে পড়ি। অনেক কষ্টে সাভারে একটুকরো জমি কিনে ছিলাম। সেই জমি এবং তোমার ভাবীর ¯^র্ণালঙ্কারগুলো বিক্রি করে পুরোটাকা বিনিয়োগ করি শেয়ার মার্কেটে। মার্কেট যখন পড়তে শুর“ করে তখন শেয়ার বিশেষজ্ঞদের (?) পরামর্শে ‘লস’ পুষিয়ে নেওয়ার আশায় গ্রামের কৃষি জমিগুলো বিক্রি করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি করি।’’ মামুন ল¶ করলো, কথা বলার শেষের দিকে জনির কণ্ঠ ভারী হয়ে উঠে, গলা কেঁপে উঠে।

বাম হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে জনি বললো, ‘‘পুঁজি হারিয়ে আমি যখন দিশেহারা তখন তোমার ভাবী শুর“ করে মানসিক নির্যাতন। কথায় কথায় সে হুমকি দেয় - ‘তোমার মতো অপদার্থ ফকিরের সাথে আর সংসার করবো না’। বোবার মতো ওর সকল উৎপীড়ন নিপীড়ন সহ্য করেছি। কিন্তু সত্যি সত্যি একদিন সে আমাদের সোনামণি তামান্নাকে নিয়ে চলে যায় বাপের বাড়ি।’’ কষ্টের নিঃশ্বাস ছেড়ে জনি বলে, ‘‘পরের ঘটনা আরো কষ্টের, আরো বেদনা দায়ক।’’ এক পর্যায়ে জনি শিশুর মতো হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে, ‘‘শেয়ার মার্কেটে ঢুকে আমি সব হারিয়েছি মামুন, সব হারিয়েছি।’’ শাš—না দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলে মামুন। পিছন থেকে করিম বলে উঠে-‘‘ইতা বউয়ের পাছাৎ লাথি মারি!’’ করিমকে ল¶ করে শামিম বলে উঠে-‘‘শালা তোর পাছাৎ গর“র দাগা দেওয়া দরকার!’’ মামুন পিছনে ফিরে বলে, ‘‘আরে শামীম ভাই আপনারা কখন এলেন?’’

এবার জনির বউয়ের একটু পরিচয় দেওয়া যাক। তার নাম ইফ্ফাত আরা শাম্মি। কমলাপুর কবরস্থানের গলিতে তাদের বাড়ি। বাবা ব্যবসায়ী। শাম্মিরা তিন ভাই বোন। সে মেঝো। ইডেন থেকে ইন্টার পাশ করে ইতিহাসে ভর্তি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। হাসলে গালে টোল পরে। দেখতে অনেকটা বিশিষ্ট নাট্য শিল্পী ‘অপি করিমে’র মতো। তার ম্যানেজ করার ¶মতা প্রখর। কথা বলে চমৎকার ভঙ্গিতে। শাম্মির চোখের দিকে তাকিয়ে কথার বলার মতো ‘পুর“ষ’ সৃষ্টি কর্তা আদৌ সৃষ্টি করেছেন কি না সন্দেহ আছে। একদিন শাহবাগের আজিজ মার্কেটে কফি খেতে খেতে এ চোখের দিকে চেয়ে ভালোবাসার চুরাবালিতে হারিয়ে গিয়েছিল জনি। সেদিন আজিজ মার্কেটের সামনে দিয়ে হেঁটে কাটাবনের দিকে যাচিছল জনি। শাম্মি চট করে ওর হাত ধরে বলেছিল, ‘‘গতকাল টিএসসিতে গান গাইছিলে তুমি না? চলো কফি খেতে খেতে গল্প করবো।’’ জনিকে কথা বলার কোন সুযোগই দেয়নি সে।

মুখোমুখি বসে শাম্মি তার পরিচয় দিয়ে জানতে চায়- তুমি? কিছুটা জড়তার সাথে জনি বলে, ‘‘আমি জনি, ইংরেজী সাহিত্যে পড়ছি।’’ মুচকি হেসে শাম্মি বলে, ‘‘তুমি খুব সুন্দর গাইতে পারো। গতকাল টিএসসিতে যখন গাইছিলে- ‘মন চাইলে মন পাবে, দেহ চাইলে দেহ’ আর তোমার বন্ধুরা তোমার সাথে সুর মিলিয়ে হেলে-দুলে হাত বাজাচ্ছিল তখন খুব দার“ন লাগছিল।’’ কাপে চুমু দিতে দিতে শাম্মি জনির দিকে চেয়ে মুনালিসার মতো রহস্যময় এক হাসি দিয়ে অপলক নয়নে চেয়ে থাকে। জনি তাকালেও মুহুর্তেই চোখ নামিয়ে ফেলে! ‘‘আরে না, সেটাকে গাওয়া বলে না, এমনিতে বন্ধুরা মিলে দুষ্টুমি করছিলাম’’ বলেই জনি কাপে চুমুক দেয়। শাম্মি জনির চোখের দিকে তীর্যকভাবে চেয়ে ঠোটের কোণে দুষ্টু হাসির রেখা তুলে বলে, ‘তুমি যা গাইছিলে তা চাইলে কি দিবে?’ লজ্জায় জনির মুখ লাল হয়ে উঠে। শাম্মি কফির কাপ মুখের কাছে নিতে নিতে বলে, ‘‘কী ব্যাপার মেয়েদের মতো লজ্জায় মরে যাচ্ছো যে!’’

সে দিনের পর থেকে ‘পাড়া পড়সি বলে আমায় ভুতে ধরেছে’ অবস্থা হলো জনির। ‘কী হতে কী হয়ে গেল’ সেটা জনি নিজেও বুঝতে পারে না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে অনার্স ফাইনাল পরী¶ায় সকলকে অবাক করে দিয়ে সে কোনো রকম সেকন্ড ক্লাস অর্জন করে। শাম্মির নেশা মাতাল করে ফেলে জনিকে। মাস্টার্সের ফাইনাল পরী¶ার আগেই সে বিয়ে করে ফেলে তাকে। সেই শাম্মি আজ জনির বিপদের সময় সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে তো দাঁড়ায়ই নি বরং তার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। সে তার আত্মীয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে জনিকে সবুজবাগে তার খালার বাসায় ডেকে পাঠায়। সেখানে পেটকাটা জব্বারসহ আরো অনেক সন্ত্রাসীকে দেখে জনি ঘাবড়ে যায়। তারা জনিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। টেলি সামাদের মতো দেখতে এক ছোকরা জনিকে বলে, ‘‘এই বেটা শাম্মি আপুর বাবার সম্পত্তির লোভে তাকে পটিয়ে বিয়ে করেছিস না?’’ ছোকরা হাত উচিয়ে থাপ্পর দেয়ার ভঙ্গি করে বলে, ‘‘চটকানা দিয়ে কান ভুতা করে দিবো!’’

হতভম্ব জনি শাম্মির দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেলে। অপমান আর মানসিক নির্যাতনের পর তারা জনিকে তালাকনামায় সই করতে বাধ্য করে। তালাকনামায় জনির সইয়ের পর শাম্মি আনন্দে উদ্ভেলিত হয়ে উঠে! উচ্ছ¡সিত শাম্মি নিজ হাতে সন্ত্রাসীদের মুখে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছে! একেকটা মিষ্টি যেন জনির হৃদয়ে এটম বোমের মতো আঘাত করছে! পরম সুখে মিষ্টি বিলিয়ে শাম্মি যেন তার সুখ-উল­াসকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। এ দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে বিমূঢ় জনি বেরিয়ে আসার জন্য দাঁড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু সে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারি নি। ধপাস করে পড়ে যায় মেজে। ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে একসপ্তাহ থাকার পর জনির ঠাঁই হয় শেয়ার মার্কেটের বন্ধু করিমের মেসে।

বন্ধের দিন তাই আজ করিমদের মেসে একটু ভালো রান্না হয়েছে। জুমা’য়ার নামাজের পর সবাই একসাথে খেয়ে কেউ বসে, কেউ শুয়ে, কেউ আধ শুয়ে খোশ গল্পে মেতে উঠে। হাসানোর উ¯—াদ মামুন মাঝে মাঝে এমন সব চুটকি বলছে, যা শুনে হাসতে হাসতে একেকজনের পেটে খিল ধরেছে! করিম বলে, ‘‘ও-বা মামুন আর হাসাইয়ো না, পেঠে ব্যাথা হইগেছে!’’ সবাইকে ল¶ করে জনি বলে, ‘‘এখানকার দিনগুলো আমার খুব ভালোই কাটছিল, কিন্তু সারা জীবন তো আর তোমাদের সাথে থাকতে পারবো না তাই আমি সিদ্ধাš— নিয়েছি আজ আছরের নামাজের আগে চলে যাবো।’’ ‘‘কোথায় যাবেন?’’ আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইলো মামুন। ভারী গলায় জনি বলে, ‘‘আপাতত কাকরাইল মারকাজ মসজিদে যাবো তার পর সেখান থেকে ‘জীবন চিল­ায়’ বেরিয়ে পড়বো।’’ দৃঢ়তার সাথে মামুন বলে, ‘‘আপনি একটা কাপুর“ষ! সমাজ সংসার ছেড়ে দিয়ে জীবন চিল­ায় যাওয়া মানে আপনি কার“ষের মতো পালিয়ে যাচ্ছেন!’’

অর্ধেক হাসি দিয়ে ভারাক্রাš— হৃদয়ে জনি বলে, ‘‘মামুন, আমার কি আর জীবন সংসার আছে? সবই তো খরস্রোত যমুনার পাড়ের মতো হঠাৎ ভেঙ্গে হারিয়েগেছে উত্তাল অথৈ জলরাশির তলদেশে!’’ অধৈর্য এবং কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে মামুন বলে, ‘‘আপনার মতো একজন উচ্চশি¶িত ব্যক্তির প¶ে এভাবে হতাশায় ভেঙ্গে পড়া মোটেই শুভা পায় না। আপনি একজন শি¶ক। আপনার সুনিপুণ দ¶ হাতে আবার সেই ভেঙ্গে পড়া পাড় গড়ে তুলবেন। সেই পাড়ে চাষ করে ফুলে-ফলে ভরে তুলবেন। তাহলেই না আপনি একজন ¯^ার্থক শি¶ক!’’ শামিম বলে, ‘‘জনি ভাই, মামুন ঠিকই বলেছে, আপনি আবার সংসার করেন এবং কলেজের চাকুরিটা কন্টিনিউ করেন। মানসিক প্রশাšি—র জন্য চিল­ায় যেতে চান যাবেন, সেটা না হয় পরে এক সময় এক চিল­ার জন্য গেলেন।’’

জামালপুরের তছলিম। কামিল পাশ। এ মেসে থেকে বিভিন্ন বাসায় ছোট বাচ্চাদেরকে আরবী পড়ায়। সে বললো, ‘‘আমি গুলবাগে যে বাচ্চাটাকে পড়াই ওর নানি সেদিন বললো- ‘‘ভালো ছেলে পেলে বাচ্চাটার মাকে বিয়ে দিবে। একটা ছেলে দেখার জন্য আমাকে অনুরোধ করেছে।’’ এক লাফে বসে বড় বড় চোখ বের করে করিম বলে, ‘‘মিয়াসাব ইতা খিতা কইন, বাচ্চার মাকে বিয়া দিবা কিলাখান?’’ করিমের কথায় সবাই হেসে উঠে। হাসতে হাসতে তছলিম বলে, ‘‘ব্যাপারটা হচ্ছে, বাচ্চাটার বাবা নাকি গত বছর ধামরাইয়ে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তার পর থেকে ওরা এখানে আছে। এতো দিন বাচ্চাটার মা বিয়েতে রাজি ছিলো না। সম্ভবত এখন রাজি হয়েছে।’’ মামুন বলে, ‘‘ভালো কথা, চলেন আমরা কালই বিয়ের প্র¯—াব নিয়ে যাই। সাথে বাড়িওয়ালা খালুকে নিয়ে যাবো।’’

জামান সাহেবের গুলবাগের বাসায় আনন্দঘন পরিবেশে দীর্ঘ¶ণ কথা বার্তার পর তার একমাত্র বিধবা মেয়ে শাইলার সাথে জনির বিয়ের দিন¶ণ ঠিক হয়। আগামী জুমা’বার জুমা’য়ার নামাজের পর জামান সাহেবের বাসার ছাদের উপর বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। মিষ্টি মুখের পর পান মুখে দিয়ে মুর“ব্বিগণ চলে যায় অন্য র“মে। সুযোগ পেয়ে মামুনরা শাইলা এবং জনির সাথে দুষ্টুমিতে মেতে উঠে। জনিকে ল¶ করে করিম বলে, ‘‘আপনার কপাল-রে-বা, কী জাত সুন্দর ভাবী আল­া মিলাই দিলা!’’ করিমকে এক পাশ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে শামিম বলে, ‘‘তোর কি হিংসা হচ্ছে নাকি?’’ শাইলাকে ল¶ করে মামুন বলে, ‘‘ভাবী, এটা কিন্তু আপনাদের দ্বিতীয় ইনিংস! সুতরাং বেটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সর্বত্রই সাবধান থাকতে হবে যাতে অল্পতেই ইনিংস গুড়িয়ে না যায়!’’ মুচকি হেসে শাইলা ¶ীণ কণ্ঠে জবাব দেয় ‘‘দোয়া করো ভাই।”
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন শেয়ারের ব্যাপারটা একটু পুরানো হলেও বাকি অংশটার সাথে দারুণ খাপ খেয়েগেছে। খুব ভাল লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল।
শাহীন মাহমুদ দীর্ঘ লিখা------- ধারাবিহিকতা সুন্দর ---উপন্যাস লিখতে পারবেন------- ধন্যবাদ
মিলন বনিক দীর্ঘ এবং গল্পের ধারাবাহিকতা খুবই চমৎকার....ভালো লাগল...সময়ের সাথে চরিত্রগুলো সুন্দর মানিয়েছে....
এফ, আই , জুয়েল # দারুন একটি গল্প ।।

১৬ মে - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪