১০ জুলাই, বিকেল
চাবাগানকে কোলে করে গড়ে ওঠা ছোট্ট একটা বাংলো বাড়ি। বাড়ি বলা ভুল যেন উচুনিচু ঢেউ তোলা পাহাড় স্রোতে বিদ্ধস্ত কোন নৌযান। একসময় বেশ ছিল দেখতে। আজ শ্রীহীনতার বংশবৃদ্ধি সর্বত্র স্পষ্ট। আর এর দোষটাও পুরোপুরি মনিবের ভাগেই যায়। মনিব তদারক না করলে আর বাড়ির দোষ দিয়ে লাভ কি?
পৌঢ় নারীর চোখজোড়া যেমন অতীত সৌন্দর্যের স্মৃতি বহন করে, এই পুরনো বাংলো বাড়ির দোতলার বারান্দাটাও ঠিক তেমন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সূর্যোদয় পাহাড়ের আড়ালে রইলেও সূর্যাস্ত তার মায়াবী কোমল পরশ থেকে এই অংশকে বঞ্চিত করে না। আর মনিবও সব ভুলে বসে থাকলেও - এই মুহূর্তটির রস হাতছাড়া করবার নয়। আরাম কেদারায় আধশোয়া হয়ে এখানে জীবনের বহু বসন্ত পার করে আজও তিনি এই রক্তিম পরশের মায়া ছাড়তে পারেননি। বিকেল থেকে শেষ গোধূলি অবধি তাঁর এখানে থাকা চাই–ই চাই।
রঘুচরণের মাঝে মাঝে মনে হয় – ওসব স্মৃতি-ফ্রিতি কিছু নয়, মনিব তার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। আছেন তো দিব্যি সুস্থ। বসে বসে দিদির কথা ভাবছেন নিশ্চয়ই। ...তবু মানুষটা বুড়ো হয়েছেন। তাঁকে দেখার তো কেউ নেই। তাই এই অসহায় বৃদ্ধের ওপর রঘু রাগতে পারে না। নিত্য দিন তাঁরই সেবাযত্ন করে যাচ্ছে। কিন্তু আজকে চা পরিবেশন করে বারান্দাটাও পেরোতে পারেনি, মনিব ডেকে উঠলেন,
“রঘু, চায়ে ইদানীং চিনি বড্ড বেশি দিচ্ছিস। গতকাল কিছু বলিনি তাই ভেবেছিস আজও বলব না?”
“ইয়ে, ভুল হয়ে গেছে চৌধুরীবাবু। মনে মনে সদাইয়ের হিসেব করছিলাম তো!”
“ঠিক আছে যা। কাজকর্ম মন দিয়ে করিস। আবার ভুল না হয়।” গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন ওয়াজেদ চৌধুরী।
রঘুচরণ সামনে থেকে চলে যায় কিন্তু মাথায় ওর চিন্তা যায় না। কি হল এটা! চৌধুরীবাবু গতকালের কথা কি করে মনে করলেন! রঘু নিজেই তো প্রায় ভুলে গিয়েছিল। তবে কি...! নাহ, এমন একটু আধটু তো হতেই পারে। রঘু ভুলে যায়।
১১ জুলাই, দুপুর
ওয়াজেদ চৌধুরী কেবলই খাওয়া দাওয়া শেষ করলেন। বিকেলের নাস্তার আয়োজন শোনার পর তিনি বললেন,
“আচ্ছা তুই দিন দিন এত ভুলো মনা হচ্ছিস কেন বলতো?”
“কেন চৌধুরীবাবু?” রঘুর কণ্ঠে উৎকণ্ঠা।
“তোকে পরশুদিন সকালে বলেছি জুতো জোড়া কালি করিয়ে রাখবি। তা তো করিসই নি, নতুন একটা ছাতা কিনতে বলেছিলাম তাও কিনিসনি।”
রঘুচরণ লজ্জায় জীভ কেটে উঠলেও মনে বেজায় খুশি হয় ওর মনিবের স্মৃতিশক্তির চমৎকারিতায়। ওয়াসিম বাবুকে জানান দরকার। ছোট ভাই হলে কি হবে, তিনিই তো এখন সব দেখাশোনা করছেন।
১১ জুলাই, রাত
গঞ্জের আড়ত থেকে ফিরে ওয়াসিম চৌধুরী খেতে বসেছেন। ব্যবসায় দিনভর ব্যস্ত থাকায় রাত ছাড়া বাংলোয় তাঁর দেখা মেলে না। রঘুচরণ অন্য দিন পরিবেশনের পর চলে যায়। আজ পাশেই দাড়িয়ে রইল।
“কিছু বলবি?”
“জী বাবু।”
“বাজার খরচ?”
“না বাবু, আগে যা দিয়েছেন তাই এখনও চলছে।”
“তবে?”
“ইয়ে, চৌধুরীবাবু।”
“ও, ওষুধ লাগবে?”
“জী না, বাবু।”
“তবে কী? খুলে বল।”
“বাবু, আমাদের চৌধুরীবাবু মনে করতে পারছেন।” অনেক উত্তেজনা নিয়ে রঘু বলে।
“কি যা-তা বকছিস?”
“আগে চৌধুরীবাবুকে সব মনে করিয়ে দিতাম। এখন উনিই আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন।”
“তুই... ঠিক বলছিস!” ওয়াসিম চৌধুরী ঘুরে তাকালেন।
“বিকেলে ছোট সাহেবের কথাও জিজ্ঞেস করলেন। আমি আর দেরী করিনি। সঙ্গে সঙ্গে ছোট সাহেবকে ফোন করে জানিয়েছি।”
“ওসমানকে ফোন করেছিলি!” ওয়াসিম চৌধুরীর কণ্ঠে বিস্ময়।
“জী বাবু, ছোটসাহেব বলেছে এই সপ্তাহেই চলে আসবে।”
“এই সপ্তাহেই! এত দূর থেকে?” ওয়াসিম চৌধুরী আরও অবাক।
“জী বাবু। বাবু জানেন, চৌধুরীবাবু আমেরিকা নামটাও ঠিক ঠিক বললেন!”
“ঠিক আছে, আমি দেখছি। তুই এখন যা।” ওয়াসিম চৌধুরীর কাঁপা হাতটা পানিভর্তি গ্লাসের দিকে এগিয়ে যায়।
১৭ জুলাই, বিকেল
একটা স্মরণীয় মুহূর্ত। ...না-না, পিতাপুত্র পাশাপাশি আগেও অনেক বসেছে, কিন্তু আজকের বসাটা অন্যরকম। অন্যসময় ছেলের গৎবাঁধা কিছু প্রশ্ন আর নির্দেশনার প্রত্যুত্তোরে বাবার দু’একটা হু-হাঁয় আলাপচারিতার ইতি ঘটে। আর আজ ওসমানের অনবরত কৌতূহল মেটাতে ওয়াজেদ চৌধুরী হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল তিনি প্রথম দেখাতেই ছেলেকে নাম ধরে ডেকেছেন! দীর্ঘ প্রায় তিরিশটি বছর পর যা ছেলের জন্য পরম পাওয়া। তাই আজ আর্দ্র আবেগের অতিসজ্জে প্রায়ই সে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে।
“বাবা, তুমি কি সত্যিই আমাকে চিনতে পেরেছ, বাবা!”
“হ্যাঁ রে, ওসমান। সত্যিই।”
“মা-কেও মনে পড়ছে নিশ্চয়।”
এ কথায় ওয়াজেদ চৌধুরী একটু বিচলিত হয়ে পড়লেন। সত্যি বলতে স্ত্রীর ছবির দিকে তাকালে এক নারীর উপস্থিতি মনে পড়ছে কিন্তু যে অর্ধাঙ্গীর স্মৃতি তিনি হাতড়ে ফিরছেন তার দেখা নেই। ওসমান কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে সামলে নেয়,
“ও কিছু না, বাবা। আমাকে যখন মনে করতে পেরেছ তখন মাকেও মনে পড়ে যাবে। তুমি ব্রেইনে প্রেশার দিও না। লেট ইট কাম ন্যাচারালি। কই রঘুচাচা যাও যাও জলদি ওয়াসিম চাচাকে খবর দাও আর বাবার পছন্দের সরিষা ইলিশ রাঁধ। ঠিক আছে না, বাবা?”
“ইয়ে, বাবু তো জরুরী চালান আনতে ঢাকা গেছে। ট্রাঙ্কে করে কাপড়-চোপড় নিয়ে গেছে, দেরী হবে হয়ত।” রঘু তাড়াতাড়ি বলে।
“আমি এতদূর থেকে আসলাম আর চাচার এখনই যাবার দরকার হল? আচ্ছা ঠিক আছে তোমাকে যা যা বললাম ব্যবস্থা কর।” ওসমান একটু মনঃক্ষুন্ন হয়।
২০ জুলাই, বিকেল
আজ বাংলো ভর্তি মানুষ। ওসমান দেশে এসেই আত্মিয় স্বজনকে ফোন করে জানিয়েছিল। তাই সবাই দেখা করতে এসেছে। এসেছে সেই সকালেই, এখন বিদায়ের পালা। ওদের মধ্যে ওসমানের মামাও এসেছে, ঢাকা থেকে। চোখাচোখি হলেই মনে হয় কি যেন লুকোচ্ছেন। একে একে সবাই চলে যাবার পর মামা ওসমানকে বললেন,
“ওসমান তোমার বাবার সঙ্গে একটু কথা ছিল।”
“হ্যাঁ... হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। আসুন।”
“... মানে, একটু প্রাইভেট।”
“ও, শিওর। যান না, বারান্দায়ই আছে।”
এর কিছু বাদে স্বয়ং ওয়াজেদ চৌধুরীই ওসমানকে ডাকলেন।
“জী বাবা।” ওসমান বারান্দায় এসে দেখে টিটেবিলের দুপাশে দুজন বসা। বাবা আর মামা।
“ওসমান, আই ওয়ান্ট ইউ টু জয়েন উইথ আস।” এরপর মামার দিকে তাকিয়ে বললেন,“হ্যাঁ, আবার বল।”
“না মানে”, একটু ইতস্তত করে ওসমানকে বললেন,“তুমি তো জান আমি ঢাকায় থাকি অনেক আগে থেকেই। তোমার মা তখনও বেঁচে। আই মীন, ফিউ ডেজ বিফোর হার ডেথ। আমি একটা চিঠি পাই।”
মামা টেবিলের ওপর থেকে একটা হলদেটে মলিন কাগজ তুলে ওসমানের হাতে দিলেন। ওসমান কাগজটা পড়ে খুবই অবাক হয়। মামা আবার শুরু করেন,
“হ্যাঁ, চিঠিটা পড়ে আমিও অবাক হই। ওতে ছোট একটা প্রাচীন আমলের বাক্সের কথা লেখা রয়েছে আর বাক্সটায় নাকি সেই আমলের প্রচুর স্বর্ণমুদ্রাও আছে। সেটা আছে তোমার বাবার ঘরেই কোথাও। কিন্তু একজ্যাক্ট প্লেসটা বলা নেই।”
“বাবা, কি শুনছি এসব? সত্যি নাকি!” ওসমান খুবই বিস্মিত।
“হ্যাঁ রে, সত্যি। তুই সেদিন বলছিলি তোর মাকে মনে পড়ছে কিনা। আসলে তোর মামার বাক্সের কথায় আমার সব কিছু মনে পড়ে যায়। যদিও চিঠির বিষয়টা আমার জানা ছিল না। বিয়ের কিছুদিন বাদেই আমি ওকে বাক্সের কথাটা বলি। কিন্তু তারপর তো ওর অসুস্থতা আর ক্রমেই আমার বিস্মৃতি – এসব কারণেই বোধ হয় ও চিঠি লিখে...।”
“আর সেই বাক্স... স্বর্ণমুদ্রা...!”
“হ্যাঁ ঐ বিষয়টাও পরিষ্কার করা প্রয়োজন। আমি তখন অনেক ছোট। সবাই আমাকে আদর করত, পছন্দ করত, কিন্তু দাদা সবাইকে হার মানাতেন। সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন আমাকে। যখন দাদা একেবারে মৃত্যুশয্যায়, আশেপাশের সবাইকে চলে যেতে বললেন আর ডেকে পাঠালেন আমাকে। আমি দাদার খাটের পাশে গিয়ে দাড়াতেই আমার কানে কানে বাক্সটার কথা বললেন। এও বলে দিলেন যেন বড় হবার আগে না খুলি। দাদাকে খুব ভালবাসতাম বলেই হয়ত কথা রেখেছিলাম। চল, দেখবি চল।”
দিনের আলো তখন প্রায় নিভে এসেছে। ওসমান ওর মামাকে নিয়ে ওয়াজেদ চৌধুরীর পিছু পিছু তাঁর ঘরে ঢুকলেন। ঘরে ঢুকে লাইট জ্বালিয়েই তিনি রঘুচরণকে ডাকলেন। তারপর রঘু এলে কোণের বড় স্টিলের আলমারিটা দেখিয়ে সরাতে বললেন। রঘু একা না পারায় ওসমানও হাত লাগাল। দুজনে মিলে আলমারিটা সরাতেই দেয়ালে একটা ছোট্ট গোপন দরজা দেখা গেল। প্রকাণ্ড আলমারিটা এতকাল যেন এই রহস্যের ঢাল হয়ে দাড়িয়েছিল। ওয়াজেদ চৌধুরী নিজে গিয়ে সেটা খুললেন। কোন তালা নেই শুধু বিশেষ একটি কায়দায় টানতেই খুলে গেল। সবাই গলা বাড়িয়ে দিল দেখার জন্য। কিন্তু খুলেই বোবা বনে গেলেন ওয়াজেদ চৌধুরী। কিছুই নেই প্রকোষ্ঠের ভেতর। খাঁ খাঁ করছে চৌকোণা গর্তটা।
“বাবা, এটা কি হল?”
“আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না! এখানেই তো ছিল।”
“মামা, তুমি কি আর কাউকে বলেছিলে?”
“দেখ ওসমান, আগেই বলেছি আমি ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকায় থাকি। এই প্রথম এখানে আসলাম। ইভেন তোমার মার মৃত্যুর পরও আসিনি কারন তুমি জান ডেড বডি ওখানেই নেয়া হয়েছিল। আর তোমার মার চিঠির কথা আমি কাউকে বলিনি।”
“দিদির সেই চিঠি!” রঘুচরণ বিস্মিত।
শুধু রঘুচরণ কেন ঘরের প্রতিটি মানুষেরই বিস্ময়ের ঘোর কাটতে কিছু সময় চলে গেল।
“কোন চিঠি?” ওসমান চোখে রাজ্যের সন্দেহ নিয়ে ঘুরে তাকায়।
“ও চিঠি তো আমিই নিজ হাতে ডাকে দিয়েছিলাম, ঠিক যেমনটি দিদি বলেছিল!”
“দুলাভাই, রঘুকে কি আমরা...?” মামার কণ্ঠে অবিশ্বাস।
“আউট অভ কোশ্চেন! রঘুর বাবা ওসমানের দাদার চাবির ছরা পাহারা দিত। যদ্দিন আমার স্মৃতি ছিল আমার আলমারির চাবিও ওর কাছে ছিল। ছোট থেকেই ও বিশ্বস্ত।” ওয়াজেদ চৌধুরী আশ্বস্ত করেন।
“চৌধুরীবাবু, একটা কথা ছিল।” রঘু ভয়ে ভয়ে বলে।
“কী, বলে ফেল।”
“দিদি চিঠি লিখেছিলেন দুটো।”
ঘরে মধ্যে বিস্ময়ের আর একটা ঢেউ বয়ে গেল। তিন জোড়া অবাক চোখ রঘুচরণের ওপর নিবিষ্ট হল।
“কী বলছিস তুই, রঘু?” ওয়াজেদ চৌধুরী ধীর স্বরে।
“জী চৌধুরীবাবু, দিদি বলেছিলেন দুটো চিঠি যেন একসঙ্গে ডাকে না দিই।” মামাকে দেখিয়ে রঘু বলে,“উনি দ্বিতীয় চিঠিটা পেয়েছিলেন।”
“তাহলে প্রথমটা?” ওসমানও যার পর নাই অবাক।
“প্রথম চিঠিটা নিয়ে বের হতেই বাবু বলেছিলেন, তিনি গঞ্জে যাবেন; পাশেই ডাক অফিস, তিনিই দিয়ে দিবেন। আমাকে কাজে যেতে বলেছিলেন। আমার সন্দেহ হয়েছিল তাই পরদিন সদাই করতে গিয়ে দ্বিতীয় চিঠিটা নিজেই ডাকে দিয়েছিলাম। আজ বুঝলাম সেই প্রথম চিঠিটা তিনি দেননি!”
“ওয়াসিম।” ওয়াজেদ চৌধুরী হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন।
“অর্থাৎ ওয়াসিম চাচা চিঠিটা পড়েছিল আর বাক্সটাও...।” ওসমান বলে।
“তাই তো মনে হচ্ছে।” মামাও দুঃখিত।
“মার বুদ্ধির তারীফ করতে হয়। চিঠি একটা লিখলে মামা আর বাক্সের কথা জানতে পারত না।”
“তবু শেষ রক্ষা আর হল কই?” ওয়াজেদ চৌধুরীর আফসোস।
“আচ্ছা বাবা, চিঠিতে তো উল্লেখ নেই যে বাক্সটা কোথায় ছিল। চাচা কী করে বুঝল?”
“সেটাই তো ভাবছিরে, ওসমান। একমাত্র আমিই জানতাম আর আমিই ছিলাম বিস্মৃত।”
“হুম... কিন্তু এমন কি হতে পারে না যে, বিস্মৃতির অতলে নিমজ্জিত কোন স্মৃতি ক্রমাগত জিজ্জাসাবাদে একসময় বাধ্য হয়ে মনে পড়েছে।”
ওয়াজেদ চৌধুরী অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। বুঝতে চেষ্টা করলেন ও কী বলতে চায়। ওসমানও খানিক বিরতি দিয়ে আবার বলে,
“...আর ওয়াসিম চাচা সেই সুযোগটার সদ্ব্যবহার খুব ভালভাবেই করেছে। আর ঘন ঘন স্মৃতিচর্চার ফলে তুমিও পুরন স্মৃতি মনে করতে পারছ।”
“ব্রাভো মাই সান! দিস কুড বি দ্য মোস্ট ল্যজিক্যাল এক্সপ্ল্যানেশন।” ওয়াজেদ চৌধুরী গর্বিত চিত্তে ছেলের কাঁধে হাত রাখেন।
“ওকে, যদি তাই হয়, আমার মনে হয় ঘটনাটা বেশি দিনের নয়।” মামা বলে ওঠে।
“রাইট, আমারও তাই মনে হয়। সেক্ষেত্রে বাক্সটা চাচার কাছেই ছিল। আচ্ছা রঘু চাচা, তুমি বললে আমি আসার আগের দিনই ওয়াসিম চাচা ঢাকায় গেছে, তুমি ট্রাঙ্কের কথা কি যেন বলছিলে?”
“বেশ কদিন থাকতে হবে তাই বাবু জামা কাপড় ট্রাঙ্কে করে নিয়ে গেছেন।” রঘুর উত্তর।
“বাবা, ঐ বাক্সটা কি ট্রাঙ্কে ধরবে?”
“ইজিলি, কিন্তু আমি ভাবছি, ওয়াসিমের সংসার-ছেলেপুলে নেই। তার ওপর তোর আপন চাচা হয়ে কেমন করে...!”
“যা দেখছি তাতে সন্দেহ ওয়াসিম চাচার দিকেই গড়াচ্ছে। তাছাড়া লোভ সবসময় পরিবার কেন্দ্রিক হয় না, বাবা।” ওসমান রিসিভার তুলে ফোনে ডায়াল করে।
“কোথায় কল করছিস?”
“ঢাকায়। পুলিশে।”
“কেন?”
“বাবা, ইট ইজ রিভেইলড! ওয়াসিম চাচা ইজ আ কালপ্রিট অ্যান্ড হি ইজ নাউ ইন ঢাকা।”
“ঢাকায় কোন কালেও আমাদের কেউ ছিল না। তুই এখানেই খোঁজ।”
“তুমি ঠিক বলছ!” ওসমান একটু অবাক হয়।
“হ্যাঁ আর ওয়াসিমকেই বা কী দোষ দেব, সব তো আমার স্মৃতিভ্রংশের জন্যই। বাক্সটার কথা... শৈশবের স্মৃতি - যদি ভুলে না যেতাম...!”
“না বাবা, এর জন্য তোমার স্মৃতিভ্রংশ দায়ী নয় বরং দায়ী মানবতার অপভ্রংশ।”