আজ বোধহয় আর ঘুম আসবে না জামালের। ঘুমের ঔষধটা শেষ হয়ে যাওয়াতে শোবার সময় খাওয়া হয়নি। কাটাতেই হবে এই বিনিদ্র রজনী। পাশে স্ত্রী তমিনা নিঃসারে ঘুমাচ্ছে। এটাও ঔষধের ফল। কুড়ি বছর হয়ে গেল বিবাহিত জীবনের- নিঃসন্তান। অনেক ডাক্তার- গিয়েছে। এখন সে মানসিক রোগী। ঔষধের জোরেই এখন সে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। নাইট ল্যাম্পের মৃদু আলোয় এক মনে তাকিয়ে ছিলেন তমিনার নিষ্পাপ-দুঃখী মুখটার দিকে। কুড়ি বছর আগের সেই সুন্দরীর মুখে ভাঁজ পড়ে এগোচ্ছে- যেন শিলালিপি। বেঁচে থাকবার আশাটা ক্রমে ক্রমে ক্ষীণ হয়ে গেছে। একটা কাক বোধহয় ডেকে চলে গেল। জামালের সম্বিত ফিরে এলো। দেওয়াল ঘড়িটার দিকে নজর গেল, রাত আর বেশী নেই। একটু পরেই ভোর হবে। ইচ্ছে হল ভোরটা একটু উপভোগ করার। বহুদিন ভোর দেখা হয় না। আস্তে করে দরজাটা খুলে, গ্রিলের তালাটা খুলে রাস্তায় চলে এলো জামাল। ধীরে ধীরে হেটে চলে এলো রাস্তার মোড়ে। দিনের বেলায় এই জায়গাটা কত কলহল মুখর, এখন নিস্তব্ধ। রাতটা চিত হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে নিচ্ছে আজকের শেষ ঘুমটুকু। পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরালো জামাল, যেন একাকীত্ব কাটাবার চেষ্টা। ব্যস্ততা, মান-সম্মান সবই তো মিলল, কিন্তু সুখ যেন মুঠো থেকে উড়ে পালিয়ে গেল চড়াই পাখিটির মতো। এক যুবক বোধ হয় দৌড়ে গেল, শরীর চর্চা করতে করতে। একটা সময় জামালও ভোরে কসরত করত। সে ছিল কলেজের সেরা অ্যাথিলিট। অনেক স্মৃতি ভেসে ওঠে এই সময়টাকে ঘিরে। দিনের শৈশব হল ভোর। একটা নিষ্পাপ আবহাওয়া, একটা সুন্দর স্বপ্ন। জামালের খুব প্রিয় এই সময়টা। কৈশোরে এবং যৌবনে প্রাত্যহিক সাক্ষাৎ হত এই সময়টার সঙ্গে। তখন জীবনটা ছিল অনেক সরল, জটিল আবর্তে নিমজ্জিত হয়নি। স্বপ্ন আর উন্মাদনা ছিল একমাত্র পরিচয়। তারপর চাকরি-বিয়ে। একটা বিরামহীন স্রোতে অসহায়ের মতো বয়ে চলা শুধু। কেরানির চাকুরী, শব্দরাজি আর সংখ্যারাশির মধ্যে ডুবে থাকতে থাকতে কোথা দিয়ে যে কেটে গেল এতগুলি বছর বুঝতেই পারেনি। চোখে মোটা চশমা, রক্তে শর্করা, চুলে পাক- সব নিয়ে এখন আধমরা জীবন। মর্যাদার উন্নতি হয়েছে, ছোট সাহেব থেকে বড়ো সাহেব। উপরি কামাই বেড়েছে, বেড়েছে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সও। কিন্তু সহজ সরল জীবন আস্তে আস্তে করে দূরে যেতে যেতে ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। হঠাৎ চোখ গেল রাস্তার পাশে ড্রেনটির দিকে। আরে কুকুরগুলো কি নিয়ে টানাটানি করছে! একটু এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল একটা কাপড়ের দলা। কুকুরগুলোকে তাড়িয়ে দিয়ে কাপড়ের দলাটি হাতে নিয়ে জামাল তো হতবাক- একটা সদ্যজাত শিশু! আলোয় নিয়ে দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল, কী সুন্দর ফুটফুটে কন্যা সন্তান। কে যে তার অবৈধ সন্তান ফেলে রেখে গেছে, কে জানে? খুব রাগ হল জামালের। এখুনি থানায় জমা দিতে হবে। দ্রুত বাড়ীর দিকে রওনা দিল জামাল। বাড়ীতে পৌঁছে শিশুটিকে বিছানায় শুইয়ে আলমারি খুলে পরিষ্কার কাপড় খুঁজতে লাগল। শিশুটিকে কাপড়ে জড়িয়ে এখন-ই বেরোতে হবে থানায়। না না থানায় জমা দিলে বোধহয় ওর দেখাশুনা ঠিক হবে না, ওকে বরং হাসপাতালেই দিয়ে আসা যাক। একটা শিশু ভোরে আলো দেখার আগেই অন্ধকারে হারিয়ে যাবে এটা হতে পারে না। হঠাৎ একটা গোংরানো আওয়াজ কানে যেতেই দৌড়ে এ ঘরে এলো। না তেমন কিছু হয়নি, তমিনা ঘুমের ঘোরে হয়তো আওয়াজ করেছিল। কিন্তু জামাল দাঁড়িয়ে গেল সৌন্দর্যটা দেখে। তামিনার কোলের পাশে শিশুটিকে কী সুন্দর দেখাচ্ছে, যেন মেরীর কোলে যীশু! জামাল মুহূর্তে মনস্থির করে ফেলল। বিছানার পাশে বসে তামিনার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করতে লাগল। হয়তো এই শিশুই এনে দেবে খুশীর ভোর তামিনার জীবনের, তার সংসার হয়তো হেসে উঠবে এতদিন পর আবার! এই আশা বুকে নিয়ে সে বসেই রইল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য
গল্পের বুনন, নির্মাণ শৈলী খুবই ভালো লেগেছে। গল্পকবিতায় পথচলা মসৃণ হোক আপনার।
মিলন বনিক
চোখে মোটা চশমা, রক্তে শর্করা, চুলে পাক- সব নিয়ে এখন আধমরা জীবন। মর্যাদার উন্নতি হয়েছে, ছোট সাহেব থেকে বড়ো সাহেব। উপরি কামাই বেড়েছে, বেড়েছে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সও। কিন্তু সহজ সরল জীবন আস্তে আস্তে করে দূরে যেতে যেতে ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। অনেক সুন্দ গল্প...খুব ভালো লাগলো....
তাপসকিরণ রায়
ভাই !এ লেখার বিচারে যেতে চাই না--তবে আপনার মধ্যে যে লেখার ক্ষমতা আছে এতা জোর গলায় বলতে পারি--এই সামান্য লেখায় আমি তা খুঁজে পেয়েছি।আপনি লেখা ছাড়বেন না।আমার শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ রইল।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।