সাউদার্ন প্রবলেম

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (সেপ্টেম্বর ২০১৪)

জি সি ভট্টাচার্য
  • ৩১
‘ওহে আলফ্রেড, একবার এ’দিকে আসতে পারবে, এখনি?’

‘তা পারব, যদিও আমার এখন হয়েছে ডিউটি অফ এবং আমি চাই ছ’টার গ্রীণ লাইন বাসখানাকে পাকড়ে তাড়াতাড়ি নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে খানা মানে ডিনার টিনার
খেয়ে একটি জম্পেস রকমের ঘুম দিতে’…

‘ঘুমি ও তুমি পরে। আগে খান কয়েক ফটোগ্রাফ বেশ ভালো করে দেখে যাও এসে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এসেছে…আমাদের সাউথ পোলার এক্সপেডিশান, অবজারভেশন ও রিসার্চ সেন্টার থেকে...’

‘তাই না কী? তা বেশ, এই আমি হলুম হাজির…চটপট বলো কি বলবে আর দেখাও কি দেখাবে?’

কথা হচ্ছিল সে’দিন সন্ধ্যায় নাসার স্পেস রিসার্চ কন্ট্রোল সিস্টেম ইউনিটের দুই বৈজ্ঞানিকের মধ্যে।

এই টেলিস্কোপিক লেন্সের ক্যামেরায় তোলা গত দিন কয়েকের মধ্যের অর্থাৎ জুলাইয়ের ৪ থেকে ১২ তারিখের অল্টারনেট ডে নাইটের ফটোগুলো ভালো করে দেখ দেখি আগে …এ’গুলো সবই সিক্রেট এ ক্যাটেগরির ফটো…’

‘কিন্তু এতো স্রেফ পোলার আইস আর অনডুলেটেড ল্যান্ডস্কেপের মানে বরফের প্রান্তর আর পাহাড়ের সাধারণ সব ফটো হে। এতে সিক্রেটের কি আছে?…’

‘আছে কিছু, তোমার সাথে আমি একমত নই…’

‘যা চ্চলে, তা তুমি ইউনিটের ইনচার্জ যখন তখন তোমার কথা তো মানতেই হবে বাপু কিন্তু আমি ও খাঁটি ইয়াংকি …হ’তে পারি অ্যাটমিক বিজ্ঞানে স্পেশালিষ্ট…কিন্তু যতক্ষণ না ব্যাপারটা আমার এই মুন্ডুতে ঢুকছে…’

‘ঢুকলে কিন্তু অসুবিধেই হবে তোমার কেননা তখন আর এই শীতে তোমার গরম মাংসের শুরুয়া দিয়ে রুটি খেয়ে নরম বিছানায় ঢুকে পড়বার ইচ্ছেটা হয়তো উঠবে মাথায়…’

‘তা উঠুক গিয়ে…’

‘বেশ। তবে দেখ, তুমি দিন অনুসারে এই ফটোগুলোর পৃষ্ঠভূমি মানে ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছ কি?’

‘কিছুমাত্র না…সব তো দেখছি ও০কে০…উঃ….আমার বাসটা হয়তো গেলো। ক্ষিধেও পা্ছে বেশ। কিছু খাবার দাবার মানে পানীয় না হ’লে এখন এই ইয়াংকি মগজ খুলবে বলে তো মনে হয় না…’

‘নাঃ, তোমাকে নিয়ে আর তো দেখি পারা যায় না। তা বেশ, তুমি গিয়ে ওই কেবিনেটটা খোল। দেখ, খানকয়েক স্যান্ডউইচ আর দু’টো বোতল ছিল। নিয়ে এসে বসে পোলার স্কাই মানে আকাশের গায়ে এই ছোট্ট কালো স্পটটায় একটু নজর দাও দেখি…’

‘ওঃ তাই নাকী? তোমার স্টকে কিছু আছে এই অসময়েও? গুড…ভেরী গুড… আঃ বাঁচালে বাবা। এজন্যেই তুমি ইউনিট ইনচার্জ হ’তে পেরেছ। দাঁড়াও… আগে একটু চাঙ্গা হয়ে নিই আমি। মনে হয় আমার এইবারের উইক এন্ডটা ও গেলো গোল্লায় তোমার পাল্লায় পড়ে…’।

‘হুম, এইবার বলো, কি বুঝলে?’

‘স্পটটা দিনের ফটোতে কালো আর রাতে বেশ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে আর ক্রমেই একটু যেন বড় হয়ে উঠছে…’

‘এই তো ইয়াংকির মগজ খুলেছে দেখছি… এখন বলো তো ভাই ওই স্পটটা কোন ন্যাচারাল ফেনোমেনার জন্যে তৈরী হ’তে পারে কি?

‘মনে হয় তা হ’তেই পারে। পোলার এয়ার মাস ড্রিফ্টের ফলে তৈরী হয়েছে’।

‘পোলার রিজনে সেটা হয় তা মানছি কিন্তু এতো দিন ধরে তো তা থাকবে বলে মনে হয় না..’

‘কেন বলো দেখি?’

‘তা আর বুঝলে না। আরে বাবা, সে’সব কিছু হ’লে রাতের আকাশে তো ওটা দেখা যাবার কথাই তো নয়। ওই আলোটা গজায় কোথা হ’তে রে বাবা? চাঁদ বাবাজির যখন পাত্তাই নেই…’

‘তুমি কি সন্দেহ করছো?’

‘তুমি গত বছরে নর্থ ক্যারোলিনার আকাশে যে UFO দেখা গিয়েছিলো তা হয়তো খবরে পড়েছো আর তোমার মনে ও আছে?’

‘এটা কি তবে UFO?’

‘হয়তো….কিংবা হয়তো একটা আস্ত স্পেসশিপ। আমি স্পেস মেসেজিং ও করিয়েছি ইতিমধ্যেই…কিন্তু নো রেসপন্স…’

‘তার মানে? তুমি আজ আমার জীবনটাই মাটি করতে চাও নাকি?’

‘ও তো হয়েই আছে মাটি। আমি আর নতুন করে কিছু করবো, সাধ্য কি? একে কট্টর ইয়াংকি কনেক্টিকাটের তায় ব্যাচেলর, তার আবার জীবন বলে ছাই কিছু এখন ও বসে আছে নাকি?’

‘হুম…ঠাট্টা হচ্ছে? তা তুমি যাও না এখন তোমার আদরের গার্লফ্রেন্ড লিলির কাছে আর আমাকেও রেহাই দাও …’

‘সে গুড়ে ও বালি হে ভায়া…আমাদের কপালে নাচছে সাউথ পোলের মানের আন্টার্কটিকার বরফ…’

‘তার মানে?’

‘মানে তুমি লেগে পড় অর্ডার বার করে যোগাড়যন্ত্র সব করতে। দিন তিনেকের মধ্যেই আমি বেরিয়ে পড়তে চাই তার আমি আগে সে’খানের আন্ডারগ্রাউন্ড মানে আন্ডার আইস সেলটারটা রিজুভিনেশন করাতে লাগছি। আর তুমি তো নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট…দরকারে কতো শীঘ্র তুমি একটা রেডিও অ্যাকটিভ রে গান বা অ্যাটমিক লঞ্চার বানাতে পারবে তাই বলো.দেখি……………..’

‘কি গেরো রে বাবা? তুমি তো দেখি মশা মারতে কামান দাগতে চাও। হুম, তবে আমি ভাবছি একটা মিনি অ্যাটমিক রিয়াক্টরের কথা…আরে বাবা .নিউক্লিয়ার .চেন রিঅ্যাকশন কন্ট্রোল করা হয় যাতে সে’টাই তো রিঅ্যাক্টর আর তা নাহ’লেই অ্যাটম বোম্ব….আমি বানাতে চাই একটা মিনি অ্যাটমিক বম্ব ক্যারিইং মিশাইল…’

‘বেশ তো, তুমি লেগে পড়….যতদিনের আমাদের এই রিসার্চ এক্সপিডিশান চলবে তার ডবল দিনের ছুটি ও স্যালারী মিলে যাবে…সাথে দশহাজার ডলারের গিফ্ট পারচেজ ভাইচার আর খানদুয়েক রিটার্ণ এয়ার টিকিট বা ট্যুর প্যাকেজ ও থাকবে …আমি কালই চার লাখ ডলার আগাম স্যাংশন করিয়ে নিচ্ছি প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে.’

‘নাঃ, তুমি হচ্ছ একটি যাচ্ছেতাই বস। কিন্তু এই হতভাগা দেশের অলিখিত আইন হচ্ছে বস ইজ অলওয়েজ রাইট কেননা কোন অযোগ্য লোক বস হতেই পারে না এই সিস্টেমে। বেশ, এই উঠলো আমার ঘুম শিকেয় গিয়ে। চললুম এই ঝামেলার দফা গয়া করতে। আমি হার মানবার পাত্র নই হে। আমরা আমেরিকান…একটা বিশ্বযুদ্ধ জিতেছি সামান্য দিনকয়েকের মধ্যে অ্যাটম বোমা বানিয়ে…’ ।

দ্বিতীয়বার যবনিকা উঠলো সাত দিন পরে সাউথ পোলার অবজারভেশান ও রিসার্চ স্টেশনে। আমাদের রবার্ট ও আলফ্রেড ছাড়াও সে’খানে উপস্থিত রয়েছে স্টেশন ইনচার্জ মাইকেল, সহকারী যোসেফ ও স্ক্রিন অপারেটার জন। সে আছে পাশের প্রোজেকশান রুমে। পোলার ক্লাইমেটিক কন্ট্রোল্ড জেনারেটার চলছে..আর তাইতে ব্লোয়ার চলছে গোটা আষ্টেক ঘরে। ফলে ঘরটার বাইরে যে তখন দারুণ রকমের তুষার ঝড় চলছে তা বোঝাই যাচ্ছে না।

ইন্টারকম তুললো মাইকেল।

‘জন, রাতের আকাশের ফটো ডায়রেক্ট প্রোজেক্ট করো স্ক্রিনে…’

‘ও কে স্যার। করছি.’
খানিকক্ষন সেই দুর্বোধ্য ফটো দেখবার পরে আলফ্রেড তুললো ইন্টারকম-‘ওহে জন, তুমি কি স্পটটার ওই নীলচে রেডিয়েশান ব্লক করে জুম করতে পারবে?’

‘ইয়া…’

এইবার স্ক্রিনে ফুটলো একটা বিশাল কালো আকৃতি ।

‘কি সর্বনাশ…ওটা আসলে কি?’

‘হয়তো অ্যান্ড্রোমিডা নক্ষত্রপুঞ্জ বা গ্যালাক্সির সজীব মানে জীবনের লক্ষণযুক্ত একমাত্র গ্রহ অ্যারিয়েনের বিশালকায় মহাকাশযান…’ বললো রবার্ট।

‘জানছো কি ভাবে যে ওটা একটা কমেট বা ধূমকেতু নয়?’

‘অনুমানে। কমেটের চেহারা অন্য রকম হয় আর তার একটা আলোর লেজ থাকে। আর এখন অবধি জীবনের সম্ভাবনা আমরা জানতে পেয়েছি অ্যারিয়েনেই আছে মাত্র। তাই দুই আর দুইয়ে চার….’

‘তা যেন হ’লো কিন্তু ওরা কি চায় বলোতো?’

‘মনে হয় ওরা বিজ্ঞানে অনেক উন্নত আমাদের চেয়ে…’

‘কি করে বুঝলে বলো তো?’

‘কেননা মহাকাশযান এখন ও পৃথিবির মাধ্যাকর্ষণ সীমার মধ্যেই আসেনি বায়ুমন্ডলে তো আরও পরে ঢুকবে কিন্তু যানটার আয়তন যে অতি বিশাল তা তো দেখাই যাচ্ছে এখনই…একটা শহরের মতন বড় হবে হয়তো। কতো পাওয়ার চাই এই যানকে প্রোজেক্ট করতে বা চালাতে আর তার টেকনোলজি কতোটা অ্যাডভান্স হওয়া উচিৎ…. ভাবো?’

‘তা হয়তো ঠিক তবে আমার মনে হয় যে ওরা বন্ধুভাবাপন্ন নয় মোটেই কেননা ওরা আমাদের স্পেস মেসেজের কোন জবাব দিচ্ছে না। এটা স্পেশ সায়েন্সের নিয়ম নয়। মেসেজের ডি কোডিং সমস্যা হয়েছে বলে ও মনে হয় না কেননা এখন যান্ত্রিক ডিকোডারের যুগ। কম্প্যূটারই করে ফেলে সেই কাজ। তাই মনে হয় হয়তো ওরা গোপন কোন মিশন নিয়ে এগিয়ে আসছে পৃথিবির দিকে…হয়তো আর্থ এক্সপেডিশান… কিংবা অবৈধ ভাবে ইনঅর্গানিক বা লাইফ স্পেশিমেন কালেকশান করা ওদের উদ্দেশ্য.. যাতে মানুষ বা ছোট বাচ্ছাদের ধরে নিয়ে গিয়ে টেস্টের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে’।

‘তা হ’তেই পারে কিন্তু পোলার এরিয়া কি উপযুক্ত সেইজন্যে’

‘আরে ওরা তো আর তা জানে না যে এটা পৃথিবির পোলার এরিয়া…’

‘কিংবা ঠিক তার উলটো ও হওয়া সম্ভব…ওরা সব জেনেশুনেই আসছে…’

‘কেন?’

‘পোলার রিজনে পৃথিবী বেশ চ্যাপ্টা আর ভূগর্ভ কাছে। এরিয়াটা নির্জন আর সমুদ্রের নীচে sial বা sima র স্তর নেই…’ রবার্ট বললো।

‘মানে? ওরা কি পৃথিবির সামুদ্রিক বা ভূগর্ভের দুর্লভ খনিজ সম্পদ লুঠ করতে চায়? কি সর্বনাশ? তবে আমাদের স্পেশ ফাইটিং ক্র্যাফ্ট পিজিয়নকে তৈরী থাকতে বলি?’

‘অবশ্যই তা তৈরী রাখতে পারো। তবে ওরা যদি রে গান ব্যবহার করে আমরা তখনই কাৎ হয়ে পড়বো কেননা এমন অনেক রে আছে যা পদার্থের ইন্টার মলিক্যুলার অ্যাট্রাক্টিভ ফোর্সকে জিরো করে দিতে পারে আর তার পরিণাম সহজেই অনুমেয়’।

‘তবে উপায়?’

‘রেডিও অ্যাক্টিভ বিটা রে দিয়ে হয়তো সেই সর্বনাশকে ঠেকানো যায় কেননা ইন্টার মলিক্যুলার ফোর্সকে বাড়ায় এই রে আর আমাদের অণু হয়ে ভেসে নাও যেতে হ’তে পারে কিন্তু এখন অবধি সেটা আমরা তৈরী করে উঠতে পারি নি’।

‘বেশ। স্টার্ট রিসার্চ। একটা বিটা রে গান আর অ্যাটমিক মিশাইল হ’লেই তো হবে। আমি এই চললুম পাশের ল্যাবে। দেখি কি করা যায়’? বলে ফ্রেড উঠে গেলো।

‘আমাদের আন্ডার গ্রাউন্ড সেল কি রেডী?’

‘প্রায়…এখন চলো সবাই। খাবার দাবার স্টক করে ফেলা যাক সে’খানে এইবার’।

তৃতীয় দৃশ্য।

আরো সাত দিন কেটে গেছে। চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি।

বিশাল সেই মহাকাশযানকে দিনের বেলায় ও এখন খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে। বায়ুমন্ডলে ঢুকলে ও তা আগুনের পিন্ডে পরিণত হয়নি হয়তো থার্মাল শিল্ড লাগানো আছে।

গবেষণা ও চলছে তবে বিটা রে উৎসর্জিত হয়নি এখনো কাচের নোজল দিয়ে।

অ্যাটমিক রকেট লঞ্চার প্রায় রেডি।

এক গভীর রাতে একটা হলুদ আলোর বৃত্ত এসে ছড়িয়ে পড়লো বরফের ওপরে আর তাই দেখেই সবাই সেলারে নেমে গেল সঙ্গে সঙ্গে। শুধু জন ওপরে রইলো এমার্জেন্সী ডিউটিতে প্রহরী হয়ে কেননা সবাই ভূগর্ভস্থিত সেলারে যাবার নিয়ম নেই। সেলারে লাগানো স্ক্রিনে ফুটলো বিচিত্র এক দৃশ্য। হলদে রঙের একটা বৃত্তের মধ্যে জেগে উঠছে সবুজ এক রশ্মিস্তম্ভ।

‘স্যার, ওটা আবার কি?’

‘বুঝলে না। হলুদ রশ্মিটা হ’লো প্রোটেক্টিভ জেটা রে আর সবুজটা হ’লো ডি বা ড্রিলিং রে। এখন এই সব আয়োজন দেখে তো আমার মনে হয় যে ওরা গভীর সমুদ্র বা আর্থ কোর থেকে নিকেল কোবাল্ট ও অন্য সব ভারী ধাতুর ভান্ডার লুঠ করতে চায়। কিন্তু তার পরিণাম কি হবে বুঝতে পারছো, মাইকেল? ভয়ানক …অতি ভয়ানক। লাখ লাখ টন খনিজ একঘন্টায় টেনে নিতে পারে অনায়াস ওই সাংঘাতিক ডি রে….’

‘তার ফলে পৃথিবী ভারসাম্য বা ব্যালান্স হারাবে। পোল বদলে যাবে। বদলাবে জলবায়ু মানে ক্লাইমেট ও আর জিও ম্যাগনেটিক ফোর্স কমে যাবে। গুরুত্ব বা মাধ্যাকর্ষণ বল ও কমবে। আমরা মহাশূণ্যে ভেসে যাবো পালকের মতন। কিছু বুঝলে? ওদের গ্রহে হয়তো নেই ওই সব ভারী ধাতু…’

‘কি আশ্চর্য, দেখ দেখ…….ররফের স্তর ভেদ করে নেমে যাচ্ছে ওই সবুজ রশ্মি’।
‘আশ্চর্য আর কি? প্রচন্ড প্রেসারে নীচের বরফ গলিয়ে নামছে ওই রশ্মি ছুরী নীচে আর ও নীচে ক্রমাগত আর ও’ধারে দেখ…আর একটা সবুজ থাম নামছে সমুদ্রের গভীরে’ ।

‘নাঃ মাইকেল, আর দেরী করা চলে না। তুমি পিজিয়নকে বলো অ্যাটাক করতে’

একটা নীল সুইচ টিপলো মাইকেল কন্ট্রোল প্যানেলের। তখনি শূণ্যে উৎক্ষিপ্ত হয়ে ছুটলো পিজিয়ন সেই বিচিত্র যানের দিকে….মেশিনগানের শব্দ জাগলো বরফের শান্ত প্রান্তরে…তারপরে একটা লাল রেখা ছুটলো তীরের মতন যান লক্ষ্য করে….এটা ইন্ফ্রা রেড রে….এটা খালি চোখে দেখা যায় না শুধু স্ক্রিনে মডিয়ুল করে দেখানো হয়েছে।…

দারুণ এক কড় কড় শব্দ করে সবুজ রশ্মি অদৃশ্য হয়ে গেলো। যাক খনন বন্ধ হয়েছে কিন্তু হলুদ রশ্মি তখনি লাফিয়ে উঠলো বরফের প্রান্তর থেকে আর ছুটলো পিজিয়নকে লক্ষ্য করে……….গোঁত্তা মেরে সরে গেল পিজিয়ন …হলুদ রে এসে পড়লো বাইরের অবজার্ভেশন স্টেশনের ওপরে …সঙ্গে সঙ্গে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল পৃথিবী থেকে…।

‘কি সর্বনাশ? আমরা জনকে হারালুম ওই স্টেশনের সাথে…..ও ওপরে ছিলো’

মাত্র পাঁচ মিনিটের লুকোচুরী খেলার পরে হলুদ রশ্মি নিশ্চিহ্ন করে দিলে পিজিয়নকেও…….

মাইকেল আবার হায় হায় করে উঠলো ।

‘ওঃ মাই গড………যোসেফ ও গেলো। রবার্ট আর কতক্ষণ আমরা কজনই বা টিকবো?’

‘বেশীক্ষণ নয়….ফ্রেড, তোমার বিটা রে কি বলে?’

‘বস, ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই আপনি কালো বোতামটা টিপতে পারবেন । রেডিয়েশন এইবার শুরু হচ্ছে….’

‘কিন্তু এই রেডিয়েটেড বিটা রে কি পারবে ওই মারণ রশ্মি জেটাকে থামাতে?’

‘হয়তো …পারবে…হয়তো পারবে না….ইকোয়াল প্রোবেবিলিটি………..আমার রকেট লঞ্চার ও তৈরী আপনার পরেই আমি টিপবো লাল বোতামটা এমার্জেন্সী অবস্থায়….’

‘ততক্ষণ কি টিকবো আমরা? আরে….আরে সাবধান….মাইকেল …দেখ সবুজ ডি রশ্মি আবার ছুটে আসছে …এ’বারে ড্রিলারের লক্ষ্য মনে হয় আমাদের এই আন্ডার গ্রাউন্ড সেলার…’

হঠাৎ ফটাস করে একটা জোর শব্দ হয়ে সেলারের কঠিন পুরু ধাতুর ছাদ উড়ে গেল

ডি রে উড়িয়ে দিয়েছে ছাদ আর ওপর থেকে ক্রমাগত বরফ এসে ঝপ ঝপ করে গড়িয়ে পড়ে ভরিয়ে দিচ্ছে সেলার। তখন তেড়ে এলো হলদে আলো সঙ্গে সঙ্গে আবার

‘সবাই বরফের আড়ালে চলো….কুইক’

এসে পড়েছে জেটা রে ….ফ্রেড আর রবার্ট আত্মগোপন করতে না করতে মাইকেলের মাথা সমেত আধখানা শরীর উড়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো….সেলারের মধ্যে তখন ও ঘুরছে মারণ রশ্মি আর তাল তাল বরফ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে…….

বাইরে তখন হচ্ছে নর্থ পোলের শীতার্ত রাতের প্রবল হিমপাত তাই আর ও বরফ সমানে এসে নীচে পড়ছে এই যা রক্ষা। তার মধ্যেই তখন ও প্রাণভয়ে দুটি মানুষ সেই বরফের আড়ালেই দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে কোনমতে আত্মরক্ষা করছে…..

বলা বাহুল্য যে তারা হচ্ছে বব মানে রবার্ট আর ফ্রেড মানে আলফ্রেড.

‘ওঃ গড আর পাঁচটা সেকেন্ড রক্ষা করো আমাদের.’

হঠাৎ আবার একতাল বরফকে উড়িয়ে দিলো হলুদ রশ্মি আর গিয়ে পড়লো তার নীচে চাপা পড়ে থাকা কন্ট্রোল প্যানেলর ওপর।।

ভয়ংকর বিস্ফোরণে উড়ে গেলো গোটা প্যানেলটাই এইবার।

‘যাঃ….সব গেলো ফ্রেড আর আমাদের কোন আশা রইলো না। নাউ গেট রেডি ফর কুইক ডেথ….তোমার খাওয়া আর জম্পেস ঘুমটা পেন্ডিং রয়ে গেলো হে…..কি করি বলো? অ্যাম ভেরী ভেরী স্যরি….’

‘নাঃ …এই ইয়াংকি এতো কাঁচা ছেলে নয় বস…..এই নাও আমার রিমোট। দু দুটো তৈরী আছে …অ্যারিয়েনের ইয়ার্কি না ঘুচিয়েছি তো আমার নাম ফ্রেড নয় । ফাইটেতে তো বেকায়দায় পড়তে হতেই পারে। তাই আমি এই সব আগেই ভেবে রেখেছি যে এমার্জেন্সিতে কি করবো? নাও টেপো বোতাম…..’

‘সুঁইইইইইইই…………’

.মুহূর্তে অদৃশ্য হয়ে গেলো মারণ রশ্মিযুগল।

এইবার আমাদের মার্কিন প্রেসিডেন্টের নামে শপথ করে আমি ফ্রেড এই টিপছি শেষ বোতাম মরবার আগে ….এই…করলুম খটাস ’

‘আরে আরে পালাচ্ছে পালিয়ে যাচ্ছে ওরা যে ……….বিটা রেডিয়েশনে রে মেশিন অকেজো হয়ে যেতে হয়তো ভয় পেয়েছে..’

পরমুহূর্তেই হ’লো এক বিষম বিস্ফোরণ………… ………..আবার…….রকেট লঞ্চার অ্যাটমিক মিশাইল লঞ্চ করেছে …দারুণ আণবিক বিস্ফোরণে সেই পলায়মান বিশাল যানের একাংশ তারাবাজী হয়ে ঝরে পড়লো নীচে বরফের ওপরে……কালো ধোঁয়ার মেঘে বাকিটা পড়ে গেলো ঢাকা………..আবার .আবার হ’লো প্রচন্ড বিস্ফোরণ………’

‘নাও হে বস, ওই চেন রিঅ্যাকশান আর এখন থামছে না ব্যাটাদের কোন অস্তিত্ব বজায় থাকতে……….তা তুমি এখন ব্যবস্থা করো দেখি আমার ছুটির…..আগে হেলিকপ্টারটা আনো…কোনমতে দেখি যদি উঠতে পারি। শীতে জমে মরতে আর বিশেষ দেরী নেই আমার তা ঠিক………উঃ …..আমার ঘুমটুকু এখন ও পেন্ডিং পড়ে আছে …বাড়ী ফিরে খেয়ে দেয়ে একটা জম্পেস ধরণের ঘুম এখন আমার লাগানো চাইই চাই……….দূর দূর ……….এই একটা চাকরী না জীবন? ছ্যাঃ…’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সহিদুল হক বেশ লিখেছেন গল্পটি, অনেক শুভ কামনা, আমন্ত্রণ জানাই আমার kobitay
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
শামীম খান ভাল লাগলো লেখাটি , যাক পৃথিবী বেঁচে গেল । শুভ কামনা ।
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

২৩ এপ্রিল - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪