আমি ও সাধারণ জ্ঞান

আমি (নভেম্বর ২০১৩)

জি সি ভট্টাচার্য
  • 0
  • ২৬
আমার নাম বরুণ। আমি একজন জুনিয়র প্যাথোলজিষ্ট।

সেদিন ন্যাশনাল প্যাথোলোজী সেন্টারের সামনে মালিকের এ০সী০ গাড়ী এসে থামতেই আমি ছুটে গেলাম হাতের ব্লাড স্যাম্পেলটা টেষ্ট করতে করতে, একদিকে দূর করে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে।

‘আসুন স্যার….’

ড্রাইভারকে সরিয়ে দিয়ে নিজে গাড়ির দরজা খুলে ধরলুম ব্যস্ত হয়ে।।

ড্রাইভিং সীট ছেড়ে ধীরে সুস্থে বিশাল মধ্যপ্রদেশ সামলে নামলেন মালিক।

হেলে দুলে নিজের চেম্বারে গিয়ে বসতেই আমি এ০সী অন করে রুম ফ্রেসনার ও অটো মোডে সেট করে দিলুম। ফ্রিজ থেকে মিনারেল ওয়াটারের বোতল এনে গেলাসে ঢেলে টেবিলে রেখে কভার প্লেট চাপা দিয়ে রেখে এই সব কাজের জন্য নিযুক্ত পিওনকে ডেকে বললুম-‘ও হে রাম, স্যারের গাড়িটা তুমি গিয়ে পার্ক করে রেখে এসো দেখি আগে। রাস্তায় রয়েছে….’

‘তোমার সিনিয়র সাহেব কোথায় হে, বরুণ?’

‘আর সিনিয়র…….যেখানে থাকবার কথা, সেখানেই আছেন তিনি, স্যার। ল্যাবে কে কখন এলো আর কে গেল সে’সবেতে ওনার কি আসে যায়?’

‘তবু ও লোকটা কাজ জানে। সিনসিয়ার, অনেষ্ট আর এক্সপেরিয়েন্স্ড। আজ অবধি কখনো ভূল রিপোর্ট করেনি…কি বলো?’

‘তা…..তা স্যার আপনি যখন বলছেন স্যার তখন সে কথা তো অবশ্যই ঠিক স্যার। আমাদের সেন্টারের সুনাম ও বেড়েছে একটু সে’জন্য,তা ও ঠিক। তবে কি জানেন স্যার?… মানে কি বলে….. গত মাসে আমাদের চেয়ে ওই সুকান্ত প্যাথোলজী কিন্তু তিনগুণ মুনাফা কামিয়েছে, স্যার…..’

‘সে কী কথা হে?...’

‘তবে আর বলছি কি, স্যার? আমাদের ও তো ব্যবসা চালাতে হবে আর যে ডাক্তার সুপারিশ করে আমাদের কাছে টেষ্টের জন্য রোগীর কেস রেফার করবেন, তাঁর দিকটাও তো একটু দেখা উচিৎ আমাদের…’

‘তার মানে…’

‘মানে আর কি বলি স্যার? অপরাধ নেবেন না স্যার, তবে ডাঃ মিশ্র ফোন করেছিলেন খানিক আগে । আমার খুব পরিচিত তো তাই….তবে আমি ফোনটা আপনি এলেই করে জানাবো বলে রেখে দিয়েছি। এখন আপনি যদি অনুমতি করেন…… স্যার…হেঁ…হেঁ…হেঁ….’

‘তা বেশ তো, জানাও। উনি তো খুবই ব্যস্ত মানুষ শুনেছি….অনেক বড় ডাক্তার…

‘হ্যালো… হ্যালো ….হ্যাঁ….স্যার এসে গেছেন…….হ্যাঁ …. আপনি কথা বলুন…’

‘হ্যালো,…হ্যাঁ …ডঃ মিশ্র…বলছেন? হ্যাঁ…তা আর করে দিতে পারবো না কেন টেষ্ট …আমাদের তো সেটাই কাজ স্যার….আপনি পাঠিয়ে দিন রোগীকে এখনই….’
…………………………………………….

‘কি? রিপোর্ট খুব তাড়াতাড়ি …চাই? তাই হবে কি? একটু টেনে দিতে হবে রিপোর্ট….মালদার লোক বলছেন? তা হ’লে বরুণ করে দেবে না উনি রাজী হবেন বলে আমার মনে হয় না….কি? তবে ওনাকে আর রেখেছি কেন? রাখতে হয় স্যার …এটা বিজনেস পলিসী স্যার …ল্যাবের সুনাম বাড়াতে হ’লে অমন এক আধজন সাধারণ জ্ঞানবিহীন নীতিপাগলের ও দরকার আছে বইকি, স্যার……’

………………………………………………………………….

‘হ্যাঁ, তা তো করাতেই পারে রোগী আবার করে টেষ্ট অন্য ল্যাবে গিয়ে। তাতে কি? টাকা আছে তো নষ্ট করুক গিয়ে তারা যত পারে …তবে কোন দু’টো ল্যাবের রিপোর্ট তো এ’দেশে আর এক হবে না কখনো, উল্টে তারা একেবারেই গাছে চড়িয়ে দেবে যে……..তাই শেষে আবার আমার ওপরেই ভরসা করতে বাধ্য হবে….হ্যাঃ…..হ্যাঃ…..হ্যাঃ……’

…………………………………………………………………….

‘ত রোগটা কি? ব্লাড সুগার বলে সন্দেহ…তা ঠিক আছে …না… না …আপনি ভাববেন না? সুগার লেভেল আমি এখনই নর্ম্যাল হ’লেও সেটা দেখাতে যাবোটাই বা কেন? সে প্রশ্নই ওঠে না। ও তো বাড়ে কমে মানুষের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মতন….নাঃ…আমাদের রিপোর্ট কে করবে চ্যালেন্জ? আমাদের ব্যবসার তো এইটুকুই মাত্র লাভ, স্যার………………..’

…………………………………………………………

‘তা করুন না …চালিয়ে যান আপনার চিকিৎসা…আপনি যখন বলবেন তখন আসল রিপোর্ট দিয়ে দেব আমাদের সিনিয়র প্যাথোলজিষ্টকে দিয়ে….এখন মাস ছয়েক ওষুধ চলুক না হয়….প্রতি মাসেই টেষ্ট ও করাতেই হবে তো পেশেন্টকে। বাঁধা খদ্দের। মন্দ কি?’।

…………………………………………………………………………..

‘কি? তা ফিফ্টি ফিফ্টি তো কোন ল্যাবেই চলে না, স্যার। কি বললেন? পনেরোজন রোগী এখনই আছে? …পাঠাবেন? কি কান্ড….? তা আগে বলতে হয়। ঠিক আছে …ঠিক আছে…সবাইকেই পাঠিয়ে দিন। আমি সন্ধ্যাবেলা বরুণকে দিয়ে রিপোর্টের সাথেই পাঠিয়ে দেব…ওই জন্য কোন চিন্তা নেই, ডাক্তারসাহেব। আমি এক কথার মানুষ।। আমার যে কথা সেই কাজ…আচ্ছা এখন রাখছি…নমস্কার…’

‘ও হে বরুণ, তোমার রোগী আসছে পনেরোজন…তুমি তৈরী থেকো…রিপোর্টগুলো একটু……….’

‘ও’সব হয়ে যাবে স্যার, আপনি ভাববেন না। তবে যদি আপনি অনুমতি করেন তবে আমি কাল না হয় ডঃ ধর আর ডঃ সাহার সাথে ও কথা বলিয়ে দিতে পারি…’

‘তা…তা বেশ তো …দিও…..তোমার দেখছি বেশ সাধারণ আর ব্যবহারিক জ্ঞান আছে। ফালতু উদ্যম প্রতিবদ্ধতা মানে …..প্রোফেসনাল এ্যাকাউন্টেবিলিটি আর ব্যবসায়িক নীতিবোধ মানে এথিক্স নিয়ে বিশেষ মাথা ব্যথা মানে পাগলামী নেই। তাই তুমি অনেক উন্নতি করবে জীবনে’।

‘তা এক কাজ করো। তুমি আজ থেকে এমার্জেন্সী ল্যাবটা খুলে নিয়ে ওখানেই বসবে। তোমার মাইনে ও আমি ডবল করে সিনিয়রের সমান করে দেব। ভেবো না। আর ডাক্তার বাবুরা বললে তবেই ফাইন্যাল রিপোর্টটা দেওয়াবে সিনিয়ার প্যাথোলজিষ্টকে দিয়ে কি? পারবে তো? ও০কে০……?’

আমি বললুম-‘কি যে বলেন স্যার….হেঁ….হেঁ…..হেঁ……এটুকু ও যদি করতে না পারি তবে তো ঘর দোর পরিবার ফেলে সন্ন্যাসী হ’তে হয় স্যার আজকালকার দিনে’।

‘স্যার, অবস্থা দেখছেন না…..রোজই দাম বাড়ছে সব জিনিষপত্রের…..বাজেটের আর কোন দাম নেই এখন । মন্ত্রিমন্ডলই সবের মালিক। মাসে তিনবার করে সরকারই রেল, বাস ভাড়া সব সমানে বাড়িয়ে চলেছে আর গরীবী হটাও বলে চেঁচিয়ে মরছে……স্যার ….যে দেশে সরকারের এই অবস্থা……’

‘সে যাক …...এখন আপনি বিশ্রাম করুন একটু, স্যার ….বাড়ি থেকে এই এতোটা পথ আসা কি মুখের কথা না কী স্যার? তায় এই দারুণ গরমে…..
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ভাল! টিকে থাকতে গেলে এসব তো ...। চমতকার লিখেছেন। শুভেচ্ছা রইল।
মিলন বনিক তোষামোদিই অন্যায়ের ভিত তৈরী করে....গল্পটা ভালো লাগলো...শুভকামনা....
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি তোষামদি চাল চিত্র .... অনৈতিক বাস্তবতা ....খুব সুন্দর করে বুনেছেন.......অনেক ধন্যবাদ দাদা..........
এশরার লতিফ এভাবেই কাঠামোগুলো ভেঙ্গে যায়। ভালো লাগলো।
এফ, আই , জুয়েল # বাস্তবতার আলোকে সুন্দর চেতনা জাগানিয়া গল্প ।।
আরাফাত ইসলাম ফাটাফাটি রকরের ভাল লিখেছেন !
মোজাম্মেল কবির এভাবেই চলছে আমাদের সব কিছু। ভালো লিখেছেন।
জাকিয়া জেসমিন যূথী হাহাহা! বেশ জমিয়ে লিখেছেন কাহিনীটা!!

২৩ এপ্রিল - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী