কাল্লুজীর হিসেব

পূর্ণতা (আগষ্ট ২০১৩)

জি সি ভট্টাচার্য
  • 0
কাল্লুজীর বা কাল্লুরামের হিসেব বলা হয়তো ঠিক নয়। বলা উচিৎ পরিপূর্ণ হিসেব বা হিসেবের পূর্ণতা।

হিসেব পূর্ণ হওয়া মানে হিসেব মিলে যাওয়া, আর কি?

নাঃ, যা ভাবছেন তা নয় মানে ব্যাপারটা জটিল নয় খুব একটা।

খুলেই বলছি ব্যাপারটা একটু।

বেশ কয়েকদিন ধরে কাল্লুপত্নী সমানে অভিযোগ করছিলেন।

নাঃ , কাল্লুর সম্বন্ধে ও কোন কিছু অভিযোগ নয়, তবে কাল্লুর দুধের ব্যাপারে।

এই রে, সেরেছে। আবার শব্দ বিভ্রাট। নাঃ, আমার দ্বারা আর দেখছি লেখা টেখা চলবেই না মনে হয়। আমার পরীর দেশের রাজকুমার ছেলে চঞ্চলকেই ভার দিতে হবে মনে হয়।

আসলে ঠিক কথাটা হলো কাল্লু যে গয়লাকে রোজ বাড়ীতে এসে সন্ধ্যাবেলায় দুধ দিয়ে যাবার জন্য ঠিক করে রেখেছিল, তার দেওয়া থুড়ি মানে দিয়ে যাওয়া দুধের ব্যাপারে অভিযোগ।

দুধে না কী বেহিসেবী ভাবে জল ঢালছে গয়লা।

গয়লা যখন দুধ দেয় মানে গয়লার গরু বা মোষেতে দেয় তখন সে নিজে দুধ দিতে না পারবার দুঃখ ভূলতেই বোধ হয় জল দিয়ে আশ মিটিয়ে নেয় ।

গয়লাদের এই অভ্যাস হচ্ছে মজ্জাগত তাই তাদের এই দুঃখ ও মনে হয় আদ্যিকাল থেকেই আছে। আর সে হয়তো থাকবেও যত দিন মানুষের বা তাদের বাচ্ছাদের মানুষ হয়ে ও গরু বা মোষের দুধ খাওয়া এই দুনিয়ায় টিঁকে থাকবে।

অন্য কোন জীবের এই ঝামেলা তো নেই। তাই তাদের ভিতর গয়লা নামক জাতের অস্তিত্ব ও নেই।

গয়লাদের কি কম কষ্ট? খামোকা গরু মোষ পুষতে হয়, তাদের খাওয়াতে হয়, চরাতে ও হয়, সেবা করতে হয়, দুধ দুইতে হয় আর সাথে দুধেল গরু মোষের লাথি ও খেতে হয় ক্যাঁত ক্যাত করে…. সেই সব দুঃখ কি কিছু কম?

কিন্তু কাল্লুপত্নী সে সব দুঃখ ছাই বুঝলে তো। পানির ওপরে এক্কেবারে গরম।

তা কাল্লুও বলে—‘তাই না কী? দাঁড়াও, বেটাকে আমি দেখাচ্ছি মজা। কাল্লুর দুধে জল ঢালা?’

চাচা চৌধরী না কার কাছ থেকে সে এক টেষ্টার এনে তৈরী।

সেদিন ছিল মাস পয়লা। দুয়ারে দাঁড়ায়ে গয়লা তো হবেই।

গয়লা দুধ দিয়ে ও বসেই আছে। যাবার তাড়া নেই।

কাল্লু একটু দুধ ডেকচি থেকে গেলাসে ঢালছে দুধ নেবার পরে টাকা আনতে ঘরে না ঢুকে আর গয়লা অবাক হয়ে দেখছে।

‘এই হয়েছে …এইবার তুমি নিজেই দেখ, ভাই…’

‘এই হ’লো তোমার দুধ আর এই হচ্ছে শুদ্ধতা পরীক্ষক যন্ত্র মানে টেষ্টার। এই ডুবিয়ে দিলুম আমি দুধের নমুনাতে। এ’বারে দেখ কি কান্ড’।

‘দুধে প্রায় ৭০ ভাগ জল তো থাকেই কিন্তু এই দুধে দেখাচ্ছে যে ৯৮ ভাগই জল।
তার মানে হচ্ছে যে বাড়তি ২৮ ভাগ জল তোমার মেশানো, গরুর নয়। শুদ্ধ কর্পোরেশানের কলের পানী। আর এই পানী গরম হয়ে উড়ে গেলে তবেই দুধ ওতলাবে, তার আগে নয় । মানে গ্যাস পুড়বে ডবল। ফলে তোমার দুধ হয়ে যাবে আধা আধি বখরার। ফিফ্টি ফিফ্টি। আর ২ ভাগ দুধ তত্ত্বের জন্য সেই দামই নেবে তুমি যা ৩০ ভাগের জন্য নেওয়া উচিৎ। বুঝলে কিছু?????????’

‘গয়লার বয়ে গিয়েছে বুঝতে কাল্লুজীর জটিল হিসেবের তত্বকথা। বোঝা সম্ভব ও নয় তার পক্ষে ।

তাই সে বলল—‘বাবুজী, হামিতে কি লিখাপঢ়ি জানে যে বুঝবে । হাপনি পয়সাঠো দিয়ে দিন, হামি চলিয়ে যায়…’

‘মানে? তা বেশ….তোমার তাড়া আছে তাই ৩০ ভাগ দুধ তত্ত্বের দাম পনেরো টাকা হ’লে ২ ভাগের দাম কত হয়, জিজ্ঞাসা করছি না আর। তবে সে হয় মাত্র একটাকা। মানে মাসে তিরিশ টাকা।

সে কথা থাক, তুমি এখন বলো এ’মাসে কতো পাওনা হয়েছে তোমার?’

বিনয়ে বিগলিত হয়ে গয়লা বললো--‘জি বাবুজী….বেশী আর কি হবে? মাত্র একশো সাড়ে বারো টাকা। মোটে তো পাও ভর মানে এক পোয়া করে দুধ নেন ।আপনি একশো বারোই দেবেন’।

‘বটে আধুলির উদারতা ও দেখানো হচ্ছে আবার । দিচ্ছি অর্দ্ধচন্দ্র তোমাকে আজ। তা এই টেষ্টারে দেখে না ও তুমি যে দুধ দু’ভাগ হয়ে গেছে তো । মোটামুটি আধা পানী আধা দুধ। দেখেছো? এটা বুঝছো তো?’

‘হ্যাঁ সাহেব…’

‘তবে ওতেই হবে। বেশী জটিলতায় কাজ নেই। এই নাও ছাপান্ন টাকা, তোমার খাঁটি দুধের দাম, জলের দাম কাল্লুরাম দেয় না। যাও’।

‘এটা কি আপনার ন্যায় বিচার হ’লো সাহেব?.....ব্যাজার হয়ে গয়লা বললো—‘না সাহেব, এটা সরাসরি অন্যায়…’

খাপ্পা হয়ে কাল্লুজী বললো—‘কি বললে? অন্যায়। তা কেন শুনি?’

‘আরে এই পানিই তো রোজ সকালে কর্পোরেশানের কলে আসে তাও এতো ধীরে সূতোর মতন আসে যে ওপরে ও ওঠে না। নীচেই পানী ভরতে হয় এসে আর টেনে নিয়ে ওপরে তুলতে ও হয় হাপনাকেই । ভাবিজী থোড়াই না অত কষ্ট করে। সে হামিতে ঠিক জানে হাঃ হাঃ হাঃ । আর তারপরে কি না দৌড়ে গিয়ে পানির ট্যাক্স ও জমা করে আসতে হয় অফিসে তাদের। রিক্সাভাড়া ও হয়তো লাগে। আর হামি কি না এতো কষ্ট করে মাথায় হান্ডা বয়ে বাড়িতে এনে সেই পানিই সময় ধরে হাপনাকে রোজ দিয়ে যাচ্ছে, তার কোনই দামই দেবেন না হাপনি। সে ঠো অন্যায় হবে না তো কি হবে?’

‘তার মানে তুমি পানী বেচবে দুধের দামে? সেটি খুব ন্যায় কর্ম হবে না? আমার নাম ও কাল্লুরাম। হিসেব জানি। সে টি আর হচ্ছে না’।

‘দুধের দাম না হলে ও জলের দামে ও তো বেচবে হামি। সাহেব, জলই হচ্ছে সবচেয়ে দামী জিনিষ এই দুনিয়াতে। মরুভূমিতে যান না হাপনি একবার চলিয়ে, পানীর দাম মালুম হবে…’

‘বেশ, এই নাও তিরিশ টাকা আরো। তোমার ও পানী ট্যাক্স। তবে খুব সাবধান। ভূলে ও কেউ যে না জানে যে আমি তোমার এই কি বলে পানী ট্যাক্স ও দিয়েছি। এমন কি আমার শ্রীমতী মানে মিসেস ও নয়। বুঝলে??”

‘জি সাহেব। হামি সব বুঝিয়ে গেলো’।

‘বেশ। এ’বারে তবে তুমি এখন যেতে পারো;।

‘জী সাহেব, তা তো ঠিক বাত……তবে…….’

‘কি গেরো…আবার তবেটা কিসের? অ্যাঁ…’

‘মানে, কুছ না সাহেব। কুছ ভি তো না। কিন্তু সাহেব, কম সে কম এই কথাটা কেউ ভি না জানে মানে ঠিক যাতে গোপন থাকে সে ঠো ভি তো হামাকেই দেখতে হবে কি না।হামি অবশ্য করে দেখবে, সাহেব। অন্যের গোপন কথা পরকে বলে বেড়ানো হামার স্বভাব ভি না আছে, সাহেব। তবে কিরপা করে সে’জন্যে হামাকে অন্তত ত্রিশঠে রুপিয়া বকশিষ বলে না দিলে কি চলে সাহেব?….তা হাপনি না হয় ছাব্বিশই দিলেন। হাপনাকে চারঠে রুপিয়া হামি ডিসকান্ট করিয়ে দিলোম সাহেব…..’

কাল্লুজী কিছুক্ষণ ভেবে পকেট থেকে গুনে গুনে আরো ২৬ টাকা বার করে দিলেন সুড় সুড় করে চুপচাপ মুখখানাকে আলুর চাটনীর মতন করে।



গয়লা উঠে দাঁড়িয়ে দুধের হান্ডা টেনে মাথায় তুলতে তুলতে একগাল হেসে বলল-‘বহুৎ মেহরবাণী সাহেব। সেলাম সাহেব। হিসেবটা হাপনি দয়া করে হর মহীনা ইয়াদ রাখবেন সাহেব। অন্তত পক্ষে ঈদ তক তো বটেই। আর তারপরেই বা কি? দুধ নেওয়া হাপনি বন্ধ করিয়ে দিতে পারেন । তা না হয় দিবেন। হামি আর কি করবে তার? তখন দুধের দাম দিবেননা, পানী ট্যাক্স ভি লাগবে না হাপনার দিতে। তবে হামার বকশিষঠো হাপনি জরুর দিবেন, সাহেব। না হ’লে কারো গোপন বাত দুসরা কোই অপর লোক জানলে কি সে ঠো ভালো হবে? কভি নেহী। আচ্ছা,….রাম রাম সাহেব…’।

গয়লা বাণী শুনে কাল্লুজী চুপ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এশরার লতিফ চমৎকার রম্য গল্প, ভালো লাগলো অনেক।
মিলন বনিক আপনার কাল্লুজী সিরিজ ভালো লাগছে...চালিয়ে যান দাদা...
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ব্যাটা উকিল না হয়ে গয়লা হয়ে গলার কাঁটা হল কেন? জানা আছে কিছু আপনার? হাঃহাঃহাঃহাঃহাঃ...। মজা পেলাম। শুভেচ্ছা রইল।
অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা।
রনীল ওরে খাইছেরে... এমন গয়লার পাল্লায় পড়লে ফতুর হতে দুইদিন ও লাগবেনা। তাও ভালো, আমাদের এখানে (ঢাকা) গয়লা বলে কোন প্রজাতিই বেঁচে নেই। গয়লা কাল্লুজিদের মাঝখানে চতুর বিপণন কোম্পানিগুলো ঢুকে গেছে, গলা কাটার কাজটা এখন ওরাই সারছে। রম্যে আপনি সপ্রতিভ। গল্পটা ঠিক কোন সময়ের প্রেক্ষাপটে লিখেছেন?মুকুল ভাইয়ের বিদায়ের অনেক দিন পর মানসম্পন্ন কোন রম্য পড়লাম।
ধন্যবাদ নেবেন। এ'খানে এখন ও গয়লাদের দৌরাত্ম সমানে চলছে আর ইয়ু০পী০ তে তো এখন ওদেরই সরকার। শুভেচ্ছা রইলো।

২৩ এপ্রিল - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪