বাদলকে সঙ্গে নিয়ে ভোরের ভ্রমণ কিন্তু মোটেই সহজ কাজ নয়।
একদিনের একটি ঘটনার কথা বললেই ব্যাপারটা মনে হয় বেশ স্পষ্ট হবে । বাদল যে বড় অসাধারণ আর অদ্ভূত ছেলে, তা ঠিক।
সে’বার শীতে হঠাৎ আমি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।
ডাক্তার বাবুর হুকুম হ’লো ভোরে বেড়াতে হবে ওই শীতে। আমি আবার বিলক্ষণ শীতকাতুরে জীব আর তেমনি আমারই কপালে এসে জোটে যতো সব গেরো ঠিক সময় বুঝে।
আমার একমাত্র ভাইপো পরীর দেশের রাজকুমার পরম রূপবান ছেলে চঞ্চল ও যে আমার ধারাই পাবে তার আর আটক কি? ফলে তার একমাত্র বন্ধু বারো বছরের অতি বুদ্ধিমান ও সুন্দর ছেলে বাদলকেই ভোরের ভ্রমন সাথী বানাতে হ’লো আমাকে। কি আর করা? একলা কাশীতে বেড়ানোও তো সহজ আর নিরাপদ কাজ নয়। তীর্থস্থান শহরের নানান জ্বালা।
তা সে ছেলের সময়জ্ঞান ও দেখি দারুন। অত শীতে মাত্র একটা সাধারণ নীল প্যান্ট আর শাদা শার্টের ওপর পাতলা জ্যাকেট পরে ভোর হ’বার আগেই ছেলে এসে বাড়িতে হাজির।
‘চলো, কাকু’।
‘এখনি? আরে, সকাল তো হোক আগে’।
‘সে তো কখন হয়ে ও গেছে, কাকু। আজ মেঘলা আকাশ আর কুয়াশার জন্য বোঝাই তো যাচ্ছে না’।
‘তবে তাই চলো যাই। কিন্তু তার আগে তোমার ওই পোষাক বদলাও দেখি। ওরে বাপরে, আমার দেখেই যে শীত করছে । চঞ্চলের একটা গরম কাপড়ের ফুল প্যান্ট ও ডবল লাইনিং দেওয়া জ্যাকেট দিচ্ছি, তুমি পরে নাও দেখি। মাথায় দাও টুপি।
নইলে ঠান্ডা লেগে আর এক কান্ড হবে। এস দেখি ড্রেস রুমে’।
বাদল রাজী নয়। খালি না না করছিল ছেলে। তা আমি তার কথা বা আপত্তি কিছু শুনলে তো।
তখন ঘরে রুম হীটার চালিয়ে দিয়ে বাদলকে নিয়ে গিয়ে তার পোষাক বদলাতে বসলুম আমি তাড়াতাড়ি করে।
অত করে ও বাইরে এসেই আমার চক্ষু চড়ক গাছে উঠলো।
‘ওরে বাবারে সে কি ঠান্ডা হাওয়া বাইরে। নাঃ, বেনারসে কি বেড়াবার মতন জায়গা আছে না কি কোথাও? যাবোটা কোথায়? ও বাদল…’
‘আজ গোধুলিয়া থেকে সোনারপুরা অবধি সড়ক ধরে হাঁটলেই হবে…’
তাই গেলাম।
মাফলার, জ্যাকেট কিছুতে যদি সে ছাতার ঠান্ডা আটকায়।
ছ’টা বেজে গেলে ও ভোরের আলোর দেখাটি ও নেই। হিম জলে দেখি রাস্তা ভিজে উঠেছে। স্ট্রীট লাইট ও জ্বলছে সমানে। কিন্তু গোটা পথ এক্কেবারে জনহীন। সব বাড়ির দরজা জানলা বন্ধ। ঘরে ঘরে সবাই এ০সি০/ হীটার চালিয়ে আরাম করে লেপ ও কম্বলের তলায় শুয়ে তখন ও ঘুমে অচেতন।
আর আমার কি গেরো বলোতো। কুয়াশায় একটু দূরের জিনিষ কিছুই দেখা যায় না। সব ঝাপসা। একটা কাক ও ডাকছে না। কাশীর বিখ্যাত কুকুরের দল ও মনে হয় সন্ধ্যেবেলায় যে সব আগুন তাপবার জন্য কাঠ জ্বালানো হয়েছিল তার গরম ছাই গাদায় শুয়ে ঘুমোচ্ছে আরাম করে। চায়ের দোকান খুলতে ও অনেক দেরী তখন। এই না কি ভোর? কোথায় ভোরের মিষ্টি মধুর হাওয়া আর কোথায় বা মন মাতানো মিষ্টি ফুলের সুবাস। এ’হচ্ছে আধুনিক মহানগরীর ভোরবেলা। এই আধুনিক ভোরেতে বেড়িয়ে আমার স্বাস্থ্যলাভ হবে না ঢ্যাঁড়স হবে।
বাদল নির্বিকার হয়ে পথ চলছে। পেছনে আমি।
পাঁড়ে হাউলি বা পান্ডে হাবেলিতে বাঙালী টোলা স্কুলের কাছে আসতে একটু বেশ দিনের আলো হ’লো।
বাদল সোজা চলেছে।
কোন স্কুলেই শীতের ছুটি তখনও শুরু হয়নি তাই এক আধটা ভ্যান রিক্সা স্কুলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ছেলেদের আনতে যাবে বলে।
বাসের জন্যে অভিভাবকদের হাত ধরে সাদা স্কুল ড্রেস পরা ছেলে মেয়েরা একটি দু’টি করে এসে দাঁড়াতে শুরু করছে। অনেকদূরে কোথাও একটা কাকের কা কা রব শোনা গেল এতোক্ষনে। মনে হয় ব্যাটাদের এই দারুণ শীতে ঘুমই ভাঙে নি এতোক্ষন।
আমি আরো এগিয়ে গেলুম। হ্যাঁ, কোচবিহারের কালীবাড়ির বাগানের গাছে বসে কাক ডাকছে। অন্য কোথা ও গাছ থাকলে তবে তো কাক থাকবে আর ডাকবে। বেনারসে সব বাড়ী হয়ে গেছে, গাছ কোথায়?
দেখতে দেখতে এসে হাজির হলুম সোনারপুরা চৌমাথায়।
সেখানে স্কুল বাস যাত্রী বাচ্ছা বেশ কয়েকজন অপেক্ষারত। সব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ফিটফাট দামী পোযাকের ছেলেমেয়ে। পথের ধারে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্কুল বাসের অপেক্ষায়। অভিভাবকেরা মানে বাবা, কাকা বা দাদারা দেখি ছেলে মেয়েদের কচি হাত ধরে দাঁড়িয়ে বার বার ঘড়ি দেখছেন। মায়েরা কেউ আসেননি এই ঠান্ডায় বাচ্ছা নিয়ে। হয়তো বিছানা ছেড়ে ওঠেননি। খুবই স্বাভাবিক।
একটা বাচ্ছা ছেলে আবার একদম একলাই এসেছে। সে ঠিক চৌমাথায় ল্যাম্পপোষ্টের নীচে ভারী স্কুল ব্যাগ পিঠে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ফর্সামতন ছেলেটা বছর পাঁচেকের হবে মনে হ’লো।
বাদল সে’দিকে চেয়ে একটু থমকে দাঁড়ালো।
মাথায় জ্বলন্ত হ্যালোজেন বাতি ওয়ালা ল্যাম্পপোষ্টটাকে বাদল দেখলো অকারণে। পোষ্টের গায়ে লাগানো কালো বক্সটাকে ও দেখলো সে বেশ সন্দেহের দৃষ্টিতে। মনে হ’লো কেবলের জয়েন্ট বক্স হবে সেটা। কান পেতে কি যেন শোনবার ও চেষ্টা করলো ছেলেটা। তখনি বাদলের সুন্দর ভ্রু জোড়া ধনুকের মতন হয়ে উঠলো।
বাদল যে সাধারণের কল্পনার ও বাইরে, এমন সব বেশ কিছু ক্ষমতার অধিকারী তা তো আর সবাই জানে না। তাই অনেকেই ছেলেটাকে ভূল বোঝে। পাগল ও হয়তো মনে করে। করতেই পারে। এই জন্যেই যুগে যুগে জিনিয়াসেরা পাগল আখ্যা পেয়ে এসেছেন। গ্যাললিও গ্যালিলির মতন বৈজ্ঞানিক ও তো বাদ যান নি।
মনে মনে আমি বললুম-‘এই রে। সেরেছে। কিছু তো দেখি নেই কোথাও। বাদলের অতি সেন্সেটিভ মাথায় কি সন্দেহ ঢুকলো রে বাবা? নাঃ, বেশী বুদ্ধিমান বা বেশী সুন্দর দু’টোর কোন ছেলেই দেখছি আমার ভোরের ভ্রমণের সঙ্গী হ’বার উপযুক্ত নয় মোটেই’।
নাঃ কিছু হয় নি ঘটনা। বাদল এগিয়ে যেতে আমিও নিশ্চিন্ত হ’য়ে চলা শুরু করলুম।
কিন্তু বিধি বাম।
হরিশচন্দ্র ঘাট চৌমাথায় সোজা গিয়ে পৌঁছবার অনেক আগেই বাদল আবার থেমে গেলো।
পিছন ফিরে তাকালো আর দৌড়ে এলো আবার। আমাকে ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলো চৌমাথায় দাঁড়ানো সেই ছেলেটার দিকে।
কি হচ্ছে যে ব্যাপারটা তা কেউ কিছু বোঝবার ও সময় পেলো না। বাদল বিদ্যুতের বেগে ছুটল সেই ছেলেটার দিকে।
‘সবাই শিগ্গীর সরে যান এইখান থেকে’…. বলে চেঁচিয়ে উঠে বাদল গিয়ে হাত ধরলো সেই বাচ্ছাটার। ওপর দিকে মুখ তুলে তাকালো একবার আর তারপরেই ছেলেটাকে সে’খান থেকে টেনে নিয়ে ছুটে চলে আসতে সচেষ্ট হ’লো বাদল।
কিন্তু পরক্ষণেই কেমন সোঁ চড়বড় করে একটা জোরালো শব্দ শোনা গেল সেই ল্যাম্পপোষ্ট থেকে আর পরক্ষনেই আচমকা শূন্যে ঠিক যেন ফুলঝুরী বাজি শুরু হয়ে গেলো সে’খানে।
বিদ্যুতের তীব্র আগুনের ফুলঝুরী।
আগুন ঝরা সেই কালো বাক্সটা থেকে শুরু হয়েছে দেখে আমি ও ছুটে গেলুম সেইদিকে কিন্তু তখন গিয়ে আর বাদলের ধারে কাছে ও যেতে পারলুম না আমি।
চকচকে সাদা আর নীলচে গোলাপী রঙের আগুনের ফোয়ারা এসে দু’টি ছেলেকে ঢেকে দিলো ওপর থেকে মুহুর্তের মধ্যে।
দৌড়ে পালাবার ও আর সময় নেই। গোটা ল্যাম্পপোষ্টাই ততক্ষণে ধূ ধূ করে জ্বলে উঠেছে। সর্ট সার্কেট বা হেভী লোডে কেবল জয়েন্ট গরম হয়ে ওঠার জন্য আগুন ধরে গিয়েছে মেন পোষ্টটাতেই। সকলের ঘরে ঘরে রাতভোর হীটার জ্বালিয়ে রাখবার ফল আর কি? আধুনিক সভ্য যুগের আরাম দায়ক ব্যবস্থার অনিবার্য পরিণতি।
বাদল দ্রুত নীচু হয়ে ছেলেটার পিঠ আর হাঁটুর নীচে দু’হাত দিয়ে একটানে বুকে তুলে নিলো পাঁজাকোলা করে আর পরক্ষনেই দিলে এক লাফ নিজের পুরো শক্তি সংহত করে ।
পাঁচ হাত পেরিয়ে এলো বাদল ছেলেটাকে নিয়ে একলাফে কিন্তু আগুনের ফোয়ারাও তৎক্ষণাৎ এমন বেড়ে উঠল সেই সাথে যে রেহাই মিললো না। ছেলেটাকে আড়াল করে রাখার ফলে বাদলের পিঠে এসে সমানে ঝরে পড়ছে ফুলঝুরির আগুন তখন ।
তাই দেখে আমার মুখ দিয়ে আর্ত চীৎকার বেরিয়ে এলো। কি সর্বনাশ। কি করি আমি এখন?
তৎক্ষণাৎ সেই টানে আবার লাফ দিল বাদল।
এইবার সে পেরিয়ে এলো আগুনের গন্ডি।
ততক্ষনে ব্যাপারটা বুঝে নিয়ে সবাই বাবা রে মা রে বলে যে যেদিকে পেরেছে দৌড় দিয়েছে যে যার নিজের ছেলে মেয়ের হাত ধরে। বাদলকে সাহায্য করতে যেতে বড় বয়েই গিয়েছে কারো। উল্টে দেখি যে বাদলকে কেউ কেউ পালিয়ে যেতে ও উপদেশ দিচ্ছে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে থেকে।
খুব ঠিক কথা। চাচা, আপনা প্রাণ বাঁচা। সেই গান আছে না—করতা হুঁ মৈ জো বহ তুম ভি করো জী….। বাদলের মতন ক্ষ্যাপা ছেলে ক’টা আছে দুনিয়াতে? তা কে জানে?
বাচ্ছা ছেলেটাকে নীচু হয়ে নামিয়ে দিয়ে নিজের ধোঁয়া ওঠা জ্যাককেটাকে খুলে ফেলে দিয়ে আমার কাছে দৌড়ে এসে হাঁফাতে হাঁফাতে বাদল বললো-‘কাকু, কুইক। দু’টো একটাকার কয়েন আর ফায়ার ব্রিগেডের নম্বর দাও দেখি। সব দাঁড়িয়ে যারা বাজি দেখছে তারা একটু পরেই ঠ্যালা বুঝবে …’
‘নম্বর মুখে বলছি বাদল, লিখব কিসে?’
যা মনে ছিল বাদলকে টাকা দিতে দিতে সেই নম্বরটা দ্রুত বলে গেলুম আমি।
বাদল দৌড়ল পি০সি০ওর দিকে। একবার মাত্র নম্বরটা শুনে নিয়েই বাদল নির্ভূল নম্বরে ডায়াল করলো ভেলুপুরার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে। এমার্জেন্সী কল। দ্বিতীয়বার ডায়াল করলো সে আমার দাদাকে।
শান্ত গলায় বেশ ধীরগতিতে বাদল বললো-‘কাকু, আমি… বাদল… বলছি। সোনারপুরা চৌমাথায় পুলিশ পাঠাও এক্ষুনি। ব্যারিকেটিং করতে হবে। সব স্কুল বাসকে আটকাতে হবে। এখুনি বার্স্ট করবে ট্রান্সফর্মার। সেন্ট্রাল পোলে আগুন লেগেছে আর হরিশচন্দ্র ঘাট রোডের মেন ট্রান্সফর্মারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিপজ্জনকভাবে। গোটা এলাকায় আগুন লেগে যাবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে। লোকেরা দাঁড়িয়ে বাজী দেখছে কিন্তু, কাকু। বি কুইক। রাখছি’।
স্টীল নার্ভ বাদল ছেলেটাকে আমার পুলিশ অফিসার দাদা বিলক্ষণ চেনে।
বাদলের পাঁচ মিনিট মানে যে চার মিনিট ষাট সেকেন্ড তাও জানে। কি কলকাঠি নাড়লো কে জানে ঠিক আড়াই মিনিটের মাথায় দূরে জাগলো পুলিশ জীপের সাইরেণ আর দমকলের একটানা ঢং ঢং ঢং ঘন্টা ধ্বনি।
ঠিক যেন উড়ে এলো বিরাট লাল রঙের অতবড়ো ভারী ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িখানা ভেলুপুরার দিক থেকে। বিকট শব্দে ব্রেক কষে তেরছা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল চৌমাথায়। লাফিয়ে নামলো মুখোশপরা দমকল কর্মী দু’জন। টেনে নামিয়ে ফেললো সবুজ রঙের পাতলা মতন চ্যাপ্টা প্ল্যাস্টিকের পাইপ। তৃতীয় জন সেট করলো দু’টো ব্লোয়ার। গর্জে উঠলো পাম্প। তারা হাতে তুলে নিল ব্লোয়ার আর রেগুলেটার ঘুরিয়ে দিলো।
মুহুর্তে জলের ফোয়ারা গিয়ে পড়লো জ্বলন্ত পোলের মাথায় আর প্রায় পনেরো হাত এগিয়ে যাওয়া জ্বলন্ত আগুনের তারের ওপরে। আরও জোরে চললো পাম্প। ফুলে উঠলো সবুজ পাইপ আর তার তিন চারটে ফুটো দিয়ে জলের সরু ফোয়ারা বেরিয়ে এসে রাস্তা ভিজিয়ে দিলো। তিনতলা সমান উঠে গেলো জলের ধারা। কিন্তু আগুন তার অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে তখন ও। ট্রান্সফর্মার আর বেশী দূরে নেই । ততক্ষনে চারদিক ধোঁয়ায় আর জলবাষ্পে অন্ধকার হয়ে উঠেছে।
পুলিশ এসে ভীড় সরাতে শুরু করলো গোটা জায়গাটা ব্যারিকেটিং করে নিয়ে।
আমি সেই ভীত বাচ্ছা ছেলেটাকে নিয়ে সরে এলুম। চারদিকের জলস্রোত বাঁচিয়ে। তাকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল যে তার বাড়ী সেই কামাখ্যায়। পৌঁছে দেব কি করে ভাবছি ততক্ষনে বড় একটা গাড়ী এসে থামলো সে’খানে। ইঊনিফর্ম পরে দাদা নামলো লাফ দিয়ে। পুলিশ গুলো শশব্যস্ত হয়ে স্যালুট ঠুকছে তখন।
দাদা দ্রুত আমার কাছে এগিয়ে এসে বললো-‘মাষ্টার বন্ড কোথায়? আমি আসতে দেরী করিনি তো? পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এসেছি তো ঠিক । এখন আর কি করতে হবে?’
বাদল এগিয়ে এসে দাদাকে প্রণাম করে বললো-‘কাকু, ও’দিকে দেখ না তুমি। তিনখানা সানবীমের স্কুল বাস এসে পুরো রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে আছে। অন্য স্কুলের গুলো ও আসছে। জ্যাম হয়ে যাবে সড়ক আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা ঠিক। ওরা ও মজা দেখছে সব। সবগুলোকে তাড়াও’।
‘যথা আজ্ঞা, নেক্স্ট…’
‘এই বাচ্ছা ছেলেটা ভগবানের অসীম দয়ায় আজ প্রাণে বেঁচে গিয়েছে, কাকু। তাই আমি এগিয়ে গিয়েও আবার পেছন ফিরে চাইতেই কালো বক্সটার মধ্যে ঝিলিক দিয়ে ওঠা স্পার্কিংয়ের আলো এক মূহুর্তের জন্য দেখতে পাই হয়তো। সুতরাং আমার কোন ও বাহাদূরী কিন্তু নেই। এখন একে তো বাড়ী পাঠাতে হবে’।
‘ডান। তৃতীয় কাজ বলো মাষ্টার বন্ড…’
‘আচ্ছা তুমিই দেখ না, কাকু । বলো তো ওইভাবে কখনো এই বিদ্যুতের আগুন সহজে নেভে, কাকু? তিনবার তো নিভেছে এখন অবধি আর জল বন্ধ হলেই তো দেখছি আবার দাউ দাউ করে জ্বলে ও উঠছে । অন্তত পক্ষে লাইনটা তো আগে ডিসকানেক্ট করবে ওরা । নইলে তো এখুনি টান্কির জল ফুরিয়ে পাম্প বন্ধ হয়ে যাবে, কাকু’।
‘হুম্, সে ও আমাকেই করতে হবে দেখছি। সব তো অতি বুদ্ধির ঢেঁকি এ’খানে। কেউ যদি একবিন্দু কাজের হয়। অকর্মার সব ধাড়ী আর কি? পাড়ায় যাদের আগুন লেগেছে তাদের তো কোন হুঁশই নেই। ফোন অবধি করবে একটা বেপাড়ার বাচ্ছা ছেলে এসে নিজের পয়সা খরচ করে’।
‘কনস্টেল রাম সিং, জল্দিসে ফোন মিলাও বিজলী উপকেন্দ্র ভদৈনী কো। পহলে লাইন কাটনা হোগা’।
বাদল ঠিক অপরাধীর ভঙ্গিতে তখন আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
খুব সংকুচিত ভাবে ছেলেটা মুখ নীচু করে বললো-‘ ভেরী সরি কাকু, আমার জন্য তোমার ভোরের ভ্রমণ মাটি তো হ’লোই উল্টে চঞ্চলের দামী জ্যাকেটটা ও পুড়ে আর এই জল কাদায় নষ্ট হয়ে গেলো। আমি তো এই সব কারণেই দামী পোষাক কখনোই পরতে চাই না । তুমি তো শুনলেই না তখন আমার কথা। আমার মতন অকর্মা ছেলেকে কেউ এইসব দামী পোষাক পরায় কখনো, কাকু? আমার মাথায় তো পোকা আছে। ঘুণপোকা। চঞ্চল বলে শোননি, কাকু। এখন কি হবে?’
আমার তাই শুনে তখন খেয়াল হ’লো যে ছেলেটা এই শীতে এতক্ষণ ধরে বিনা জ্যাকেটেই ঘুরছে। তাড়াতাড়ি করে নিজের শালটা খুলে নিয়ে বাদলের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আমি বললুম-‘আপাতত এই দিয়েই কাজ চালাতে হ’বে। এবং মিডিয়া নামক আপদ এসে এ’খানে হাজির হবার আগেই আমাদের এখান থেকে সরে পড়তে ও হবে’।
‘দাদা, তুমি ছেলেটাকে পৌঁছে দিও। আমি বাদলকে নিয়ে এখন বাড়ী যাই। অনেক হয়েছে আমার শহরের পথে ভোরের ভ্রমণ। আর কাজ নেই আমার বেশী স্বাস্থ্যলাভে’ ।
‘ওই আগুন বৃষ্টির বেড়াজালে পড়ে ভয়ে বা নার্ভাসনেসের দরুণ মাথা ঠান্ডা না রাখতে পেরে আর একটু মানে কয়েক সেকেন্ড ও দেরী করলেই বাদলকে আজ আর দেখতে হতো না। বাচ্ছা ছেলেটা বা অন্য কেউ কিছু তো বুঝতেই পারে নি তখনও। অনেক ছেলেমেয়ে ও তাদের অভিভাবকদের ও আজ নির্ঘাৎ করে আগুনের ওই বেড়াজালে জড়িয়ে পড়তে হ’তো বাদল ছুটে গিয়ে আগুন বৃষ্টি শুরু হ’বার ঠিক আগেই সময়মতন সবাইকে সতর্ক না করে দিলে’।
২৩ এপ্রিল - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
২০ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪