এই যাত্রার শুরু কবে হয়েছিল কে বলতে পারে? অনন্তকালের পথে পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে হাঁটছি আমরা বুকে নিয়ে আজন্ম লালিত সাধ, কিছু হতে পারার বাসনা। কিছু দিতে পারার ইচ্ছে। এই যাত্রার শুরু যদি হয় অজানা, শেষটা তবে অসীম। তবুও আমরা ছুটে চলেছি কখনো দৌড়ে, কখনো হেঁটে। কিন্তু পাশ ফিরে কখনো কি দেখেছি? কতটা তার পূরণ হয়েছে, বাকি রয়েছে কতকটা?
খুব, খুব ভোরে যখন পুরো পৃথিবীর আড়মোড়া দিয়ে জেগে ওঠার কথা, কর্মব্যস্ত একটি দিন শুরু হওয়ার তাড়া, তখনো আমি দৌড়চ্ছি। কখনোবা হাঁটছি। ক্লান্ত হচ্ছি। বিশ্রামের সময়টা কোথায় পাচ্ছি? তবু চলছি। যদিও জানি এই পথের নেই কোনো শেষ!
কখনো চলে যাই, এই ছোট্ট শহরতলীর শেষ মাথায়। নদীর পাশে টিলামত যেই ছোট্ট পাহাড়টা আছে, তার উপর গিয়ে দাঁড়াই। মাথার উপর দিয়ে যখন সাদা কালো মেঘেরা ভেসে বেড়ায়, মনে হয় হাতটা আর একটু বাড়ালেই তাদের ছোঁয়া যায়। সেই সাদা কালো মেঘেরা কখনো বৃষ্টির গান শোনায়, কখনোবা ঝড়ের আগমনী বার্তা জানায়। আমি তখন আবদার জুড়ে দেই! তোমাদের দলে ভেড়াও আমায়! আমি মেঘ হয়ে বৃষ্টি ঝরাবো, বহু দিনের খরা ক্লান্ত ফসলের জমিতে। আমি ঝরে পড়ব কোনো কিশোরীর পায়ের নূপুর হয়ে। আমি ধুয়ে দেব কর্মক্লান্ত কৃষকের দেহের ঘাম। মেঘেরা মৃদু হাসে। হাসতে হাসতে এপাশ ওপাশ ছুটোছুটি করে। তারপর দিনের সবটুকু আলো নিভে গিয়ে সন্ধ্যা নামে।
কখনোবা ছুটে যাই বাড়ির পাশেই শানবাঁধানো পুকুর পাড়টায়। রোজ সন্ধ্যায় সেখানে জল নিতে আসে এক কিশোরী বধূ। কখনো তার নাম জানা হয়নি। যেমন হয়নি জানা তার ভেজা আঁচলের সবটুকু জল কি ওই পুকুরের নাকি তার কান্নার! আমি বলি, ভেজা শরীরে জ্বর বাঁধাবে তুমি! সলজ্জ হাসিতে কিশোরী দৌড়ে চলে যায়। আমি তখন তার শাড়ির আঁচল হয়ে বাঁচতে চাই। আঁচলের সবটুকু জল শুষে নিয়ে তাকে ঘুমোনোর জন্য একটুকরো শুকনো জমি দিতে চাই! আর আদ্র জল বাষ্প হয়ে আমি দূর আকাশে ভেসে বেড়াবো!
যখন প্রাণভরে একটু শ্বাস নিতে ইচ্ছে করে, তখন চলে যাই যতীনদের ফুল বাগানে। শুধু কি ফুল! নাম জানা অজানা কত গাছ সেখানে। শরতের মিঠে রোদে, বাতাসে তখন মুক্তির ঘ্রাণ! আমি পরিষ্কার বাতাসে শ্বাস নিয়ে গাছগুলোকে ছুঁয়ে দেই। তারাও ঠিক ডাল পাতা নাড়িয়ে সাড়া দেয়! আমি তাদের জানাই, আমাকে টেনে নাও বুকে, আঁকড়ে জড়িয়ে বেঁধে রাখো সাথে। ভেঙ্গেচুরে আমায় গ্রহণ করো তোমরা। আমি প্রান হয়ে বাতাসে ছড়াতে চাই। আমি প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাসে মানুষের বুকে জমে থাকা সহস্র বছরের বিষাক্ততা পরিষ্কার করতে চাই।
তারপর এক হিমশীতল মাসে, এক রাতে চলে যাই শহরতলীর বস্তিতে। জরাজীর্ণ শতছিন্ন মাথা গোঁজার ছোট্ট জায়গাটুকুর পাশে আগুন জালিয়ে একটু উম নিচ্ছিল, তারও চেয়ে জরাজীর্ণ, দুঃখে ক্লিষ্ট, রোগ শোকে ভেঙ্গে পড়া কিছু মানুষ। আমি পাশে গিয়ে দাঁড়াই। সেই আগুনটুকু আলিঙ্গন করে বলি, পুড়িয়ে নাও আমায়। আমি সহস্র প্রান মাঝে উষ্ণতা হয়ে বাঁচব।
আমি চলে যাই হেমন্তের মাঠ ভরা ফসল মাঝে। নতুন ফসলের ঘ্রানে কৃষকের বুকের আহ্লাদ হয়ে বেঁচে থাকতে। চলে যাই ঘন বর্ষায় বয়সের ভারে ক্লান্ত, তারচেয়েও বিবর্ণ এক বৃদ্ধার কুটিরে। আমার শরীরের সবটুকু অনু পরমাণু বিচ্যুত করে ছড়িয়ে দেই শীর্ণ কুটীরের চালে। যখন রাত নামে, তখন সেই বৃদ্ধার নির্বিবাদ ঘুম মাঝে আমি একটুখানি শান্তি হয়ে যাই। তারপর আমি……………………………………………………………….
এখন কখনো আমি কিশোরীর সামান্য বিলাসিতা, আলতা রাঙ্গানো পা,
শক্তিমান যুবকের বুকের খোলসের স্বাধীনতা।
আমি, নবপরিণীতা তোমার স্নিগ্ধ লজ্জা,
আমি এখন উন্মাদিনী কাল, নদীর পাশে টিলামত ছোট্ট পাহাড়।
আমি ঘন কালো মেঘ, আবির রাঙ্গানো আকাশে,
আমি এখন তাই, যা আমার ইচ্ছে।
১৬ এপ্রিল - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪