ভোর

ভোর (মে ২০১৩)

মোঃ ইয়াসির ইরফান
  • 0
জমানো চার হাজার একশ আর আপার কাছ থেকে নয় হাজার সাথে খুচরো আছে শ'দুয়েক । ব্যাস, এ নিয়েই ঢাকার পথে পা বাড়াল ইরফান । জানে না কোথায় থাকবে, খাওয়ার ব্যবস্থাও কিছু নেই । তবু এই সামান্য সম্বল নিয়ে অজানা-অচেনা শহরে পা রাখতে যাচ্ছে শুধুমাত্র একটা উদ্দেশ্য নিয়ে । আর তা হল কবি হওয়া । না, কবি হয়ে তার অর্থ-যশ খ্যাতি-প্রতিপত্তির কোন বাসনা নেই । সে শুধুমাত্র মানুষের কাছে তার কবিতা পৌছে দিতে চায় । তবে তারও একটা সূক্ষ লোভ রয়েছে, তা হল মানবের হৃদয় । ঐ খানে ঢূকে চুপটি করে বসে থাকতে চায়, কবি হয়ে ।
আব্বা গতকালও ভীষন বকেছিল । সারাদিন পড়ালেখা কিছু নাই । আছে শুধু কবিতা আর কবিতা । হয় পড়ে নয় লেখে আর নয় তো ভাবে । এমন অবস্থায় যে কোন আব্বাই চাইবে তার সন্তানকে কবিতার মত অনিশ্চিত একটা বিষয় থেকে ফিরিয়ে আনতে । আব্বাও তার ব্যতিক্রম নয় ।
রাগের মাথায় সকালে বলে দিয়েছিলেন, হয় পড়ো নয় তো অন্য রাস্তা দেখো ! আমার ঘরে আমার কথা না শুনে কারো জায়গা হবে না ।
টানা দু বছর সে থার্ড ইয়ারে । কবিতার জন্য পড়া একেবারে লাটে । অবশ্য সে চেয়েছিল দুটোই করতে । কিন্তু তার দ্বারা হয়তো চুল বাঁধাটাই হবে, রান্নাটা নয় ।
অনেকটা জেদের বশেই সে ঘরছাড়ার সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলে ।
যখন সিদ্ধান্তটা প্রথম আম্মাকে জানাল, আম্মা ভাবলেন এ নিতান্তই ঝোঁকের সিদ্ধান্ত । সময় গেলে রাগ কমলে বুঝবে, তখন আপনাতেই ঐ সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসবে । কিন্তু একটু কথা বলার পরই বুঝলেন, ছেলে অনড় । তিনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন, বললেন- তোর আব্বা এর আগেও তো তোকে অনেক বকেছে, মেরেছে, গালি দিয়েছে । আব্বা তো শাসন করবেনই, তাতে কি রাগ করতে আছে !
এরকম করিস না বাবা । তুই চলে গেলে আমাদের দেখবে কে ! আমরা কার কাছে থাকব । রাত বারোটায় ওষুধের কথা মনে পড়লে টুঁ শব্দটি না করে কে ওষুধ এনে দেবে, বল বাবা !
তুই না আমার বাপ, কোন বাপের কি মেয়েকে ছেড়ে যেতে আছে ? ও বাবা, তুই মত বদলাই ফেল ।
আচ্ছা যা, তোর আব্বারে আমি বলে দেব । আর কোনদিন যদি তোরে কিছু বলে, তাইলে খবর আছে !
ইরফান প্রবলভাবে চেষ্টা করছিল বাঁধভাঙ্গা আবেগটা রোধ করতে । কিন্তু সে বারংবার ব্যর্থ হচ্ছিল । অনেক কষ্টে কাঁপা কাঁপা গলায় বলেছিল, আম্মা অনেক দিন তো কিছু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারি নাই, সাহস হয় নাই । আজ যখন হয়েছে আমাকে আর বাঁধা দিয়েন না । আব্বার কাঁধে আর কতদিন বসে বসে খাব । এবার নিজের জীবনটা একটু নিজেই খুঁজি নিই । কঠিন পৃথিবীটাকে বুঝতে শিখি । আব্বার উপর রাগ করার মত দুঃসাহস আমার হবে না, আম্মা । আপনি শুধু আব্বাকে বুঝায় বলবেন । তিনি যেন আমাকে ভুল না বোঝেন । আমি সব কষ্ট সহ্য করতে পারি, কিন্তু আপনারা ভুল বুঝলে আমার সহ্য হবে না ।
আর কথা বলতে পারেনি, সে । আবেগটা আর দমিয়ে রাখা যায়নি । ছুটে অন্যদিকে সরে গিয়েছিল সে ।
ফোনে আব্বাকে আম্মা কেঁদে কেঁদে বললেন, শুনছেন ইরফান নাকি ঘর ছেড়ে চলে যাবে ! আপনি ওরে বুঝান ।
আব্বা বলেছিলেন, আরে যেখানে মজা দেখছে সেখানে যেতে বল । ওকে বলে দিও, আমার ঘরে ওর জায়গা আর হবে না । মরুক গা, আমার কি !
আপাটা ওর দেড় বছরের ছোট । কিন্তু ছোট থাকতে ইরফান একটু খাটো টাইপ থাকায়, ছোট বোনটাকে আপা ডাকত । তারপর আপাকে ছাড়িয়ে সে দুই ইঞ্চি লম্বা হলেও আপা ডাকটা আর বদলানো যায়নি ।
আপা শুধু কান্না করে যাচ্ছিল । শেষে যখন ব্যাগ গোছাচ্ছিল, তখন কাঁদতে কাঁদতে এসে বলেছে- ভাইয়া, আমার কাছে জমানো এই ন'হাজার টাকা আছে । তুমি এগুলো নাও । আমি জানি, তুমি আব্বার কাছ থেকে একটা টাকাও নিবা না । তুমি না নিলে আমি কিন্তু পা ধরে বসে থাকব !
আর দাঁড়ায়নি, কথাগুলো বলেই একদৌড়ে বাথরুম । ওর কান্না করার প্রিয় স্থান ।
বাসষ্টেশনে আম্মা আর আপা এসেছিল । আব্বা আসেননি । তিনি চুপ করে শুয়েছিলেন । সালামের জবাবও দেন নি । ইরফানের কেন যেন মনে হচ্ছিল আব্বা কাঁদছেন । অন্ধকার থাকায় কিছুই বুঝা যায়নি ।
রাত ন'টার বাস যখন ষ্টেশন ছাড়ছিল তখনো আম্মারা দাড়িয়েছিলেন ।
ইরফান গাড়িতে উঠার পর থেকে কাঁদছে, নীরব কান্না ! তাই, কেউ বুঝতে পারেনি । ওর কেন যেন মনে হচ্ছে ও কি যেন ফেলে যাচ্ছে । সব তো ঠিকই আছে । ব্যাগ,টাকা,মোবাইল সব । তবুও এরকম কেন মনে হচ্ছে ! তাহলে কি পেছনে মায়া-মমতা শাসন-পীড়ন স্নেহ-আদর-আবদার ইত্যাদি ফেলে যাওয়ার কারনই এই অনুভূতি ? কে জানে ! হবে হয়তো ।
ধীরে ধীরে চট্টগ্রাম ধুসর হয়ে যাচ্ছে । এতদিনের চিরচেনা শহর ছেড়ে ওখানে গিয়ে ও কি ওর স্বপ্ন পূরন করতে পারবে ? উত্তর সময়ের হাতে ।
প্যারেডের আড্ডাটা ভীষন মিস করবে ও । বন্ধুদের তো বলাই হয়নি । শুনে নিশ্চয় তারা অবাক হবে ! বলবে, এ ভীতুর ডিমের এমন সাহস হল কি করে !
সায়দাবাদ ষ্টেশন এসে গেছে । যাত্রীরা নামছে । ইরফানও নেমে এল । এখন ভোর সাড়ে চারটা । আকাশ ফরসা হতে ঘন্টাখানেক লাগতে পারে । ততক্ষন ও কাউন্টারেই বসে থাকবে ।
ও জানে না, ওর নিয়তি কি ! হয়তো সব হারিয়ে আবার আব্বার কাছে আশ্রয় নিতে হবে । অথবা হয়তো ও কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে লাখো-কোটি মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে আব্বার সামনে অপদার্থ অপবাদ ঘুচাবে ।
পূবের আকাশ ফরসা হয়ে উঠছে । অজানা আগামী সম্মুখে দাঁড়িয়ে । আগামী ভোর যেমন জানেনা, আজ সারাদিন রৌদ্রকাজ্জল থাকবে নাকি মেঘাচ্ছন্ন । ঠিক তেমনি ইরফানও জানে না ও কবি হতে পারবে নাকি হারিয়ে যাবে কালের অতল অসীম গহ্বরে ।
ও এখন এসব নিয়ে আর কিছু ভাবছে না । ভাবছে না কোথায় উঠবে কোথায় খাবে !
অচেনা শহর চেনা হওয়ার ভোরে দাঁড়িয়ে ও ভোরের কবিতা নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছে ।


________#######__________
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাফিসা রাফা কিছুটা ভিন্ন চিন্তার প্রতিফলন...ভালোই...
বিপ্লব হায়দার প্রথেমেই বলবো Not Bad . বাস্তবতার সাথে খুব কম মিল বলবো না । আরো চেষ্টা করতে হবে বন্ধু। শুভেচ্ছা রইলো।
ধন্যবাদ, চেষ্টা অবশ্যই চালিয়ে যাবো ।
মিলন বনিক কবি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ইরফানের যাত্রা শুভ হোক....নিজের পায়ে প্রতিষ্টিত হোক...খুব ভালো লাগলো....
এশরার লতিফ ভালো লাগলো গল্পটির স্বচ্ছ বর্ণনা, সাবলীল ভাষার ব্যবহার।
তাপসকিরণ রায় কবিরা এমনি অনেকটা পাগলই হয়--এই ছোট্ট গল্পটি ভালো লাগলো ভাই।শুভেচ্ছা রেখে গেলাম।
রফিক আল জায়েদ লেখক-কবিদের স্বপ্ন নিয়ে লেখা গল্পটি ভালই হয়েছে।

১৫ এপ্রিল - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ১৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪