আব্বু বা আম্মুকে নিয়ে কিছু লিখতে বা বলতে গেলে দুজনের মধ্য তুলনাটা অটোমেটিক চলে আসে । তো যখনই একজনকে নিয়ে কিছু ভাবতে গেছি, ভাবনার জায়গাটা কখন যেন দুজনই দখল করে বসে । কিশোর বয়সে এটা নিয়ে খুব ঝামেলা হত, আজকাল অবশ্য তেমন একটা সমস্যা হয় না ।
এখন বুঝেছি দুজনের অবস্থান দুই জায়গায় । তুলনা বা পরিমাপের স্থান সেখানে নাই । সাগরের গভীরতা আর আকাশের বিশালতার মাঝে কি কখনো তুলনা হতে পারে ! পারে না । দুজনের স্নেহ মায়া মমতা দুই ধরনের, তার মধ্য তুলনা করা অপ্রতুল ।
আমার আব্বু আমার কাছে অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী এক সুপুরুষ । সেই ছোট থেকে আমি আব্বুর ব্যক্তিত্ব, চলন, বলন সব কিছু অনুকরনের চেষ্টা করতাম । এখনো করি । অবশ্য শৈশবের বেশীরভাগ স্বপ্নপুরুষ বাবাই হয়ে থাকেন । কিছুদিন আগে বাড়িতে গিয়েছিলাম, ঐ খানে আমার এক আপু (ফুফাতো বোন) তার বাচ্চাদের সম্বন্ধে বলছিলেন, তাদের কাছে নাকি তাদের বাবা সুপারম্যান জাতীয় কিছু ! যে কোন কিছুই তাদের বাবার বাঁ হাতের খেল, জগতের সবকিছুই তাদের বাবা পারেন ।
বাবা আসলে এমনই এক মানুষ, যিনি সন্তানের বেড়ে উঠার ক্ষনে প্রতি মূহুর্তে ছায়ার মত কাজ করেন । সর্বক্ষন বাবার প্রভাব সন্তানের উপর বিরাজমান ।
তাই তো বলা হয়, বাপ মরলে বুঝা যায়, বাপ কি !
বছর দুয়েক আগেও আমাকে আব্বু বাজারে যেতে দিতেন না, উনিশ বছরের হওয়ার পরও আমি নাকি রাস্তা পার হতে পারব না ! আব্বুর স্নেহ যেমন লাগামহীন ঠিক তেমনি অভিমানও প্রগাঢ় । শুধু আমি না, পরিচিত কেউই আব্বুর এই অভিমানের প্রকোপে পড়তে চান না । সবাই জানে আমার আব্বু মানুষটা যেমন ভালবাসতে জানেন, ঠিক তেমন রাগও করতে পারেন । উনার কাছে টেনে নেওয়া যেমন পরম আনন্দের, দূরে ঠেলে দেওয়াও তেমনি কষ্টের ।
আমি তাই সদা সচেষ্ট থাকি, অভিমানি আব্বুটাকে অভিমান থেকে দূরে রাখতে ।
আব্বুর রসবোধও প্রবল । আমাদের সাথে বন্ধুর মত মিশতেও পারেন, আবার কঠোর শাসনেও ভয়ংকর রুপে আবির্ভুত হতে পারেন । রসবোধের জন্য সবার কাছে যেমন গ্রহনীয়, তেমনি প্রবল অভিমানের কারনেও সবার কাছে সমাদৃত ।
অনেক সময় এমন হয়েছে যে, আব্বুর রসবোধ অনেকেই বুঝতে পারেন নাই । এখন আব্বুর গুনমুগ্ধ আমার মামারাও প্রথম অবস্থায় রসিকতা গুলো বুঝতে না পেরে কান্নাকাটি করে কত হ্যাপাটাই না পোহিয়েছেন । বর্তমানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, অনেক সময় আব্বুর রাগের কথাও তারা হাসিমুখে রসিকতা মনে মেনে নেন ।
ছোটবেলায় আব্বু আমার সাথে একবার ভীষন রাগ করলেন । তখন বয়স হবে ১২-১৩ বছর । মাস খানেক আমার সাথে পুরা কথা বন্ধ করে দিলেন । পুরো রোযায় আমার সাথে একটুও কথা বললেন না । এটা আমার আব্বু আরো ছোট থেকেই করতেন, ভীষন রাগ হলে অভিমান করে আর কথা বলতেন না । এ সময়টা ছিল আমাদের ভাই বোনের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর ।
তো সেবার ঈদের দুদিন আগে হঠাত রাতে আমায় ডেকে কথা বললেন । গলায় জড়িয়ে ধরলেন । আনন্দে দু চোখে পানি চলে আসার অবস্থা । কোনভাবে সেটা ঠেকানো গিয়েছিল । সেবারই প্রথম বুঝেছিলাম আব্বুর কাঁধে কাঁধ মেলানোর আনন্দ ।
ছোট থাকতে আব্বুর পেটের উপর উঠে শুয়ে থাকতাম । সে দিন গত হয়েছে অনেকদিন আগে । তবে কাঁধ মেলানোর আকুতিটা লালন করি সর্বক্ষন । মাঝে মাঝেই চলে আসে সে সুযোগ ।
বছর দেড়েক আগে আব্বু অফিস থেকে আসার সময়ই মিষ্টি কিনে আনলেন । এসেই ঘরের প্রত্যেককে একবার করে জড়িয়ে ধরলেন । প্রমোশনের আনন্দে যখন আব্বু অশ্রুসিক্ত চোখে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন সত্যিই আমি আবার মধ্যবিত্তের সুখ-দুখের আনন্দ নবরুপে আবিস্কার করলাম । সবার অলক্ষ্যে বাথরুমে ঢুকে অনেক কেঁদেছিলাম, অবশ্যই সুখের কান্না !
আব্বুকে কোন বিষয়ে ভেঙে পড়তে দেখলে ভীষন কষ্ট লাগে । সবসময় দেখতে চাই, প্রবল ব্যক্তিত্ববান রুপে । আমি চাই, তিনি তার ব্যক্তিত্বের প্রলেপে সব বাঁধা মাড়িয়ে যান ।
অহর্নিশ আমার হৃদয় মন্দিরে সুন্দর চেতনার, সমুন্নত সততার, প্রবল ব্যক্তিত্বের যে দ্বীপশিখা জ্বালিয়ে দিয়েছেন, তা যেন কখনো নিভে না যায় । আমি যেন উনার ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে জাগতিক-পারলৌকিক কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যেতে পারি ! এই কামনাই স্রষ্টার তরে রাখি ।
___________#######___________
১৫ এপ্রিল - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
১৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪