আজ আকাশের অনেক রঙ

ঈদ (আগষ্ট ২০১৩)

রিয়াদুল রিয়াদ
  • 0
  • ৩৭
রাস্তা ধরে হাঁটছে, পিচ ঢালা পথ। কালো। আকাশেও মেঘ, কালো। তার উপর রাতের অন্ধকার। তাও কালো। মনের সাথেও বড্ড বেশি মিল। কালো হয়ে আছে মনটা। রিফাতের কাছে এই মুহূর্তে আলো বলতে সিগারেটের আলোটুকুই। তাও কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে দিচ্ছে। এত রাতে চোর পুলিশ ছাড়া আর কেউ বাহিরে নেই। রিফাত, চোর বা পুলিশ কোনটাই না। তারপর ও হাঁটছে। প্রতি রাতেই হাটে। হঠাৎ একটা মোটর সাইকেল পাশ দিয়ে চলে গেল। মোটর সাইকেল দেখেই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল। এখনও চালাতে পারে না মোটর সাইকেল রিফাত। শেষদিন বিন্দুকে মোটর সাইকেলেই দেখেছিল।




বিন্দু সেদিন আস্তে করে রিফাতের পাশ ঘেঁষে বসে বলল, তুমি মোটর সাইকেল চালাতে পার?
- না তো।
- সাইকেল?
- না।
- সাতার পার?
- না।
- বল কি? আমার ছোট ভাই ক্লাস এইটে পড়ে,ও মোটর সাইকেল চালাতে পারে তুমি পার না?
- না পারি না।
- তুমি যে সাঁতার পার না।ধর আমরা নদীতে ঘুরতেছি, আমি পানিতে পড়ে গেলাম। তখন তুমি বাঁচাবা কি করে আমাকে?
- আমি তোমাকে ওসব জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাব না। আমরা ঢাকা শহরেই ঘুরব, পার্কে পার্কে, রাস্তায় রাস্তায়। এসব জায়গায় কোন নদী নেই।
- এহ, বুঝছি। তুমি মোটর সাইকেল চালান শিখবা। আমি তোমার পিছনে বসে তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকব।
- আচ্ছা, শিখে নিব।



একটা সাইকেলের খুব শখ ছিল ছোট বেলা থেকে রিফাতের। মুখ ফুটে কখনও বাবাকে বলতে পারেনি।মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাইকেল পিছনে চড়ত ছোটবেলা। একবার এক বন্ধু ইচ্ছা করে ফেলে দিল। খুব ব্যথা পেয়েছিল।বাসায় এসে আম্মুকে বলার পর আম্মু বলেছিল, আর কখনও কারও সাইকেলে চড়বি না।
- আম্মু আমার একটা সাইকেল থাকতে পারে না?
- না। সাইকেলে চালাতে গেলে পায়ে চেইন বেধে যাবে। অনেক ব্যথা পাবি।



সেই ছোট বয়সে এই ভয়টুকুর জন্য আর কখনও সাইকেলের আবদার করেনি রিফাত। কিন্তু এখন বুঝে ভয়টা ছিল ছায়া,আর অভাবটা ছিল তার কায়া।


সাইকেল চালান হয়নি কখনও। তাই মোটর সাইকেলও না। তবে মনে মনে একটু ইচ্ছা জেগেছিল এতদিন পর মোটর সাইকেল চালান শেখার। বিন্দুর কথা শুনে। বিন্দু পিছনে বসে জড়িয়ে থাকবে আর রিফাত চালাবে।
সব ঘোলাটে হয়ে গেল সেদিন।গরীব আর মধ্যবিত্তের সম্বল লেগুনায় গাদাগাদি করে সেদিন যাচ্ছিল রিফাত। একটা টিউশনি পাবার কথা। রাস্তায় জ্যামে আটকে গেল গাড়ি। সাথে সাথে চোখ ও আটকে গেল একটা মোটর সাইকেলে গিয়ে।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হচ্ছিল। বিন্দুই তো ওটা। মোটর সাইকেলের পিছনে বসা। জড়িয়ে ধরে আছে পিছন থেকে,যে মোটর সাইকেল চালাচ্ছে তাকে। গালটা কাধের উপর। মুখে সেই মিষ্টি হাসি,যে চালাচ্ছে মোটর সাইকেল তার মুখেও।নিমিশেই পৃথিবীটা রঙহীন লাগছিল।চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল।ভালই হল, মোটর সাইকেল কেনার খরচটা বেঁচে গেল। কেনার সাধ্য হবেও না কখনও। তার চেয়ে বিন্দু নিজেই মোটর সাইকেলওয়ালা খুঁজে নিছে তাই ভাল। নিজের মনকে সান্ত্বনা দেয় রিফাত।এরপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় বিন্দুর সাথে। বিন্দু কয়েকবার চেষ্টা করেছে যোগাযোগ করার, রিফাত সায় দেয়নি।যার মোটর সাইকেল কেনার সাধ্য নেই তার প্রেম করা মানায় না।মোটর সাইকেল ছাড়া দুনিয়ার অনেকেই প্রেম করে। কিন্তু বিন্দুর সাথে প্রেম করতে মোটর সাইকেল লাগে।
অনেক তারাতারি অনেক কিছুর মায়া ছেড়ে দিল রিফাত। বাসা থেকে রাগারাগি করে চলে আসল।মনে মনে ঠিক করে এসেছে আর কখনও বাসায় যাবে না।



প্রতি সপ্তাহের মত সেবারও বাসায় গিয়ে মায়ের কাছে বলল, আম্মু, টাকা শেষ হয়ে গেছে। হল এ খাবারের টাকা দিতে হবে।
-আমি এখন টাকা পাব কই? দেখতেছিস তো ঘরের কি অবস্থা। রাফির স্কুলের বেতনও দেওয়া হয় নায়। পরশুদিন পরীক্ষা ওর। বেতন না দিতে পারলে পরীক্ষা দিতে পারবে না।
- তো, আমাকে কি করতে বল? আমার খাবার টাকা দিতে হবে না হলে?
- টাকা তো নাই। কয়েকজনের কাছে তো চাইলাম। কিন্তু ব্যবস্থা হয় নায়।



বিছানায় শুয়ে থাকা অসুস্থ বাবা চিৎকার করে বলে উঠল- হারামজাদারে একটা থাপ্পড় মার তো। দামড়া পোলা ,ভার্সিটিতে পড়ে ,এখনও বাসা থেকে টাকা নেয়।বাসায় কি টাকার গাছ আছে?উনি আইসা হুকুম করবে আর টাকা পরবে সেখান থেকে।



কথাটা খুব গায়ে লাগল রিফাতের। বাবা কখনও এভাবে কথা বলে না।রিফাত ইচ্ছা করে টাকা নিচ্ছে না।একটা টিউশনি অনেক দিন থেকেই খুঁজছে। কিন্তু পাচ্ছে না। ঢাকা শহর। পরিচিত ছাড়া কে দিবে টিউশনি?বাবা তো ঠিকই বলেছে, এত বড় ছেলে এখনও যদি বাসা থেকে টাকা নেয় কেমন দেখায় জিনিসটা?আত্মসম্মানে জিনিসটা লাগাতে, ব্যাগটা কাধে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। মা পিছন পিছন ছুটে আসল, কই যাস বাবা?
- আর আসব না এখানে তোমাদের জ্বালাতে।আমি আমার খরচ নিজেই চালাতে পারব।
-দাড়া, বাপ মায়ের কথায় রাগ করে না এভাবে। আমি আরও কয়েকজনের কাছে টাকা চাচ্ছি , ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
-লাগবে না আমার কিছু।



ঘর থেকে সেদিন বের হয়ে এসেছে,আজ ৩ মাস এখনও যায় নি।এক বড় ভাইকে অনেক বলে কয়ে একটা টিউশনি জোগাড় করেছে।সপ্তাহে ৬ দিন পড়াতে হয়।কিন্তু টাকার পরিমান অনেক কম। থাক এখন যা পায় তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।টিউশনিতে প্রথম দিন যাবার দিনই বিন্দুকে মোটর সাইকেলে দেখল। অনেক তারাতারি আসলেই অনেক কিছুর হিসাব বদলে গেছে।



সিগারেটের আলোটা হালকা বৃষ্টির আঁচে নিভে গেল।বদ অভ্যাসটা বাসা থেকে চলে আসার পর থেকেই হয়েছে।বুকের কষ্টগুলো সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে বের করে দেবার চেষ্টা করে, কিন্তু কষ্টগুলো আরও বেশি বুকের ভিতর ঝেঁকে বসছে, আরও গাঢ় হচ্ছে।

-------------------------------------

-আমার প্রতিবেলায় মরিচ ভর্তা আর আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে ভাল লাগে না।



ঝালে ফুসতে ফুসতে ছোট্ট মুখটা লাল করে কথাটা বলল রাফি। ক্লাস ৫ এ পড়ে। ভাল ছাত্র অনেক।স্যারদের অনেক আশা ভরসা ওকে নিয়ে, বৃত্তি পাবে। থানার ভিতর প্রথম দ্বিতীয় হবে। মা একটু হাসি দিয়ে বললেন- আব্বু, এখন তো রোজা। রোজার সময় কম খেতে হয়। তাহলে আল্লাহ খুশি হয়।
- তাই,কি প্রতিবেলায় আলু ভর্তা আর মরিচ খাব? সেহরিতেও, ইফতারিতেও। আমার ঝাল লাগে। একটু চিনি দাও না আম্মু।
-চিনি তো নাই ঘরে। একটু লবণ লাগা জিহ্বাতে দেখবি ঝাল চলে গেছে।



রাফি জিহ্বাতে একটু লবণ লাগাল।মা বলল, ঝাল চলে গেছে?



ঝাল থাকার পরও রাফি বলল, হ্যাঁ, আম্মু।



হাতটা ধুয়ে মায়ের পাশে গিয়ে বসল রাফি। মুখটা নিচু করে বলল- আম্মু, ঈদ চলে আসছে। সবাই জামা কাপড় কিনছে। আমি কিনব না?



মা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন। ছোট্ট মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, তোর গত বছরের জামা কাপড় গুলোই তো এখনও নতুন আছে। আর তোর পহেলা বৈশাখ লেখা যে পাঞ্জাবিটা ঐটা পরে নামাজ পরতে যাবি। ঐটা অনেক সুন্দর।
- না,এখন ঈদ। আমি ঐটা পরবো না।ঐটাতে বৈশাখ লেখা।আমার বন্ধুরা সবাই নতুন জামা কাপড় পরবে আমি পুরনো গুলো পরবো কেন?
- তুই না কত্ত লক্ষ্মী ছেলে। তুই না সব বুঝিস। দেখিস না আব্বু অসুস্থ।এইবার জামা কাপড় পুরনোগুলো দিয়ে চালা। আগামীবার নতুন কিনে দিব। ঠিক আছে?



রাফি আস্তে করে মাথা নেড়ে বলল, আচ্ছা।
মাকে জড়িয়ে ধরে মাথাটা কোলের উপর রাখল। মায়ের বুকের ভিতর খুব কষ্ট হচ্ছে। বড় ছেলেটা কতদিন হল বাসায় আসে না। ফোন দিলেও ধরে না।শুধু কয়েকদিন পর পর টাকা পাঠায় মোবাইল এ।ছেলেকে বাবা মা একটু বকা দিতেই পারে। তাই বলে এভাবে রাগ করে থাকবে? ঘরে আসবে না?
------------------------------------------
ঈদের আগেই টাকাটা পেয়ে গেল টিউশনির রিফাত।টাকাটা হাতে নিয়ে হাঁটছে। বাসার কথা খুব মনে পরছে।মোবাইলে রিংটোন বেজে যাচ্ছে।হাতে নিয়ে দেখল,বাসা থেকে মোবাইল করেছে।কয়েকবার কেটে দিল। তাও করে যাচ্ছে।কেটে দিলে আর কল করে না বাসা থেকে। আজ করছে।একটু অন্যরকম লাগল। কোন বিপদ হয়নি তো?
কলটা তাই রিসিভ করল।ওপাশ থেকে মিষ্টি গলায় ছোট ভাইটা বলছে, হ্যালো, ভাইয়া, আমি রাফি।



এতদিন পর ছোট ভাইটার গলা শুনে বুকের ভিতর টনটন করে উঠল। কতটা স্বার্থপর হয়ে নিজেকে নিয়ে আছে রিফাত।ছোট ভাইটার সাথের দুষ্টামি,মারামারি সব ভুলে গেছে।ভুলে যায় নি।নিজে থেকেই মায়াশূন্য জীবন কাটাতে চাচ্ছে।তবুও এতদিন পর কণ্ঠটা শুনে চোখের কোণায় কোথা থেকে যেন পানি চলে আসল।আকাশে কোন মেঘ নেই। বৃষ্টি ও নেই যে চোখে সেখান থেকে পানি পরবে।বুকের ভিতর ঝড় বইছে।ঝড় ঝাপটায় একটু বৃষ্টি হয় ই।আর বুকের ভিতরের সেই বৃষ্টির জল চোখের কোণে এসে জমা হয়েছে।কাঁপা কাঁপা গলায় রিফাত বলল, কেমন আছিস ভাইয়া?
- ভাল। তুমি ভাল আছ?
- হ্যাঁ, ভাল।
- ভাইয়া, জানো, আমি রোজা রাখছি।আগে একদিনে ৩ টা করে রাখতাম না?তুমি রাখতে একটা। আমিও এখন দিনে একটা করেই রোজা রাখি।
- বাহ, তুই তো অনেক বড় হয়ে গেছিস। রোজা রাখতে কষ্ট হয় না?
- এহ, প্রতিবেলা আলু ভর্তা খাওয়ার চেয়ে রোজা রাখা ভাল।



রিফাত একটু চুপ হয়ে গেল।গাল বেয়ে পানি পরছে।ভালবাসার মানুষের কষ্টের সময় তাদের পাশে থাকতে হয়।রিফাত থাকে নি।কাপুরুষের মত কষ্ট থেকে নিজের গা বাঁচিয়ে রেখেছে।এখন এই মায়াময় কথাগুলো শুনে, ঝড়ের বৃষ্টি আর থেমে থাকল না। সজোরে ঝরা শুরু করে দিল।



- ভাইয়া, তুমি আসবা না?আমার তোমাকে ছাড়া ভাল লাগে না। আমি আর তোমার সাথে ঝগড়া করব না। আমি আর মারব না তোমাকে। তুমি আমাকে মাইর দিও পড়া না পারলে। আমি চুপ করে থাকব। আব্বু কে আর বিচার দিব না। আসো না ভাইয়া।



রিফাত এখনও চুপ করে আছে। বুকের ভিতর ঝড়ের বেগ বাড়ছে। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।মনে হচ্ছে গলার কাছে কেউ যেন টিপে ধরে রাখছে।একটা চিৎকার দিয়ে কাঁদলে সব কষ্ট বের হয়ে যাবে।



- ভাইয়া, হ্যালো, ভাইয়া। কথা বল না কেন?
- আচ্ছা, দেখি ভাইয়া। আমার এখানে একটু কাজ আছে তো। শেষ করতে পারলে আসব। তোর জন্য কি আনব বল?
- আমার কিছু লাগবে না। তুমি আসো। ভাইয়া আমাকে না আব্বু মোবাইল করতে বলছে। আব্বু বলে, উনি বললে নাকি তুমি আসবা না। তাই আমাকে ফোন করতে বলছে। তুমি না ধরা পর্যন্ত করতে বলছে।



ছোটবেলা থেকে এই মানুষটাকে দেখে আসছে রিফাত।কত কষ্ট করে বড় করেছে।পড়ালেখা করিয়েছেন।রাগ বেশি, তবু রাগারাগি করার একটু পরই এসে আদর করে বুকে টেনে নিয়েছেন।এখনও রাগ ভাঙানোর জন্য, কি কাজটা না করছেন।যে ভালবাসে সে শাসন করতেই পারে। তাই বলে রিফাতের এমন করাটা উচিৎ হয়নি।নিজের ভিতর অনুসুচনা হচ্ছে খুব।মরে যেতে ইচ্ছা করছে।



-রাফি,আব্বু কই রে? একটু আব্বুকে মোবাইলটা দে তো।



রাফি মোবাইলটা নিয়ে আব্বুর কাছে গেল।হাতে দিয়ে বলল, ভাইয়া কথা বলতে চায়।
-বল যে আমি কথা বলব না।



রিফাত জানে বাবা উপরে উপরে অভিমান দেখাচ্ছে।



রাফি মোবাইলটা বাবার হাতে দিয়ে দৌড় দিল।বাবা কানের কাছে নিয়ে হ্যালো বললেন।
-কেমন আছ আব্বু?
- ভাল। তুই ভাল?
-হ্যাঁ, শরীরের অবস্থা কেমন?
- ভাল এখন একটু।তুই কি বাসায় আসবি না আর? তুই আমার কথায় সেদিন কষ্ট পাইছিস?
- না আব্বু, কষ্ট পাইনি। আমাকে মাফ করে দাও আব্বু।একটু বকে দাও না। তাহলে আসব।



বাবা ওপাশে কিছুক্ষণ চুপ থেকে পরে বললেন, এইবার বাসায় আয়, হাত পা ভেঙ্গে রেখে দিব। আর কোথাও যেতে দিব না।



চোখে পানি নিয়েই অল্প একটু হেসে উঠল রিফাত।অনেক দিন পর হাসছে।একই সাথে ২ টি আবেগ ধরে রেখেছে। একটা চোখে আর একটা মুখে।
--------------------------------------
কাল ঈদ। রিফাতের আসার কথা। এখনও আসছে না।সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। মা ফোন করে চলছে। ধরারও খবর নেই। কিছু একটা তো বলবে মোবাইলটা ধরে।



রাত ১১ টা। মা মুখে চিন্তা নিয়ে এসে রাফিকে বলল, রাফি, তোর ভাইয়া তো আসল না এখনও।
- আসবে তো বলছে।
- এখনও আসল না, বুঝলাম না।



খানিক পরেই রিফাত কতগুলো ব্যাগ নিয়ে এসে ঘরে ঢুকল।রাফি ব্যাগ গুলো হাত থেকে নামিয়ে নিল।এতদিন পর ছেলেকে দেখে চোখের কোণে অকারনেই পানি চলে আসল মায়ের।
এতদিন পর ছেলেকে দেখে অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা করলেও কিছুই বললেন না। শুধু ভাত বেড়ে খেতে দিলেন।
রিফাত মুখ নিচু করে খাচ্ছে।কারও দিকে তাকাচ্ছে না। সাহস হচ্ছে না।
খেয়ে উঠে চুপিচুপি ছোট ভাইটাকে ডেকে একটা পাঞ্জাবি হাতে ধরিয়ে দিল।
নে এটা পরবি।কাল সকালে ঘুম থেকে উঠবি।উঠে গোসল করেই এটা পরে আমার আর আব্বুর সাথে নামাজে যাবি। আর এই যে শাড়িটা এটা আম্মুকে দিবি, আর এই বড় পাঞ্জাবিটা আব্বুকে। যা ভাইয়া দিয়ে আয়।
রাফি আস্তে করে মাথা নেড়ে জিনিস গুলো হাতে নিল। রিফাত বলে যাচ্ছে, ঘরে সেমাই আনে নায় তাই না? এই সেমাই আম্মুকে দিয়ে বলবি সকালে রান্না করতে।



রাফি হাত থেকে সবগুলো নিয়ে চলে গেল মায়ের কাছে। আর রিফাত চুপ করে শুয়ে পড়লো। বুকের ভিতরটা অনেক ফাঁকা লাগছে। মনে হচ্ছে অনেক দিনের কষ্ট পাথরের মত জমে থাকা, তা সরে গেল।টিউশনির সব টাকা দিয়ে এগুলো কিনে আনল।পরে কি হবে , কিভাবে চলবে ভাবার সময় নেই। এখন কিছুটা অমূল্য সুখ পাওয়া গেল, সেটাই বড় কথা।এত কষ্টে থাকার কোন মানে হয় না।বুকের কষ্ট ঝেরে নিশ্চিন্তে অনেকদিন পর একটা ঘুমযুক্ত রাত কাঁটালো।একটা নির্ঘুম রাতের অবসান ঘটল।



সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে রিফাত আর রাফি পালা বেধে আব্বু আম্মুকে সালাম করতে গেল।আব্বু বুকের সাথে জড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে রাখলেন।আর মা এত অভাবের মাঝেও রিফাতের হাতে লুকিয়ে কিছু টাকা গুজে দিলেন। রাফিও ছোট্ট দুটি হাত দিয়ে বড় ভাইকে সালাম করল।



হাতের ভিতর টাকাগুলো নিয়ে বাবা, মা, ছোট ভাইটার সাথে সেমাই খাচ্ছে রিফাত। এত বেশি আনন্দে , বড্ড বেশি কান্না পাচ্ছে। নীরবে কাঁদছে রিফাত।কিছু সুখ পাওয়ার আগে পরে কান্না পায়।যে কান্নায় আগের পরের কষ্টগুলো হারিয়ে যায়,ধুয়ে যায়।
বাবা একটা খোঁচা দিল রিফাতকে। তারপর মাকে বলল, একটা থাপ্পড় মার তো ওকে। এত বড় দামড়া ছেলে, এখনও ফ্যাত ফ্যাত করে কাঁদে।



রাফি হেসে দিল কথা শুনে।রিফাতও আরেকবার,চোখে আর মুখে দুই আবেগ ধরল।হেসে দিল রিফাত। ওপাশে নতুন শাড়িতে বসে থাকা মহিলাটাও আস্তে আস্তে হাসছেন। বাহিরে অনেক আনন্দ । আজ ঈদ। সবাই হয়ত অনেক দামি পোশাক পরে ঘুরছে, দামি খাবার খাচ্ছে।কিন্তু এই ভাঙ্গা ঘরের কোণে যে ভালবাসা তা সবাই পাচ্ছে না। এই ভালবাসা, এই সুখ, অনেক দামি।পোশাকের দামে বা খাবারের দামে তা কেনা যায় না।৪ টা মুখের হাসিতে এই ঘরের কোণটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখের জায়গা বলে মনে হচ্ছে।এখানে দুঃখের স্থান বা ইশারা কিছুই নেই।এই সুখে চোখের জল থাকতে পারে, মুখের হাসি থাকতে পারে।খুনসুটি আর ভালবাসা থাকতে পারে।



সেমাই খেয়ে তিনজন মানুষ পাঞ্জাবি পরে হেঁটে যাচ্ছে। রিফাত, রাফি আর তাদের বাবা। তিনজন হাত ধরে হাঁটছে নামাজে যাবার জন্য, আর রিফাত রাফির মা পিছনে দাঁড়িয়ে তা দেখছেন।আজ আকাশে কোনো কালো মেঘ নেই।আজ আকাশটা রিফাতের কাছে অনেক রঙিন। জীবনটা আকাশের মত রঙিন লাগছে। এখানে আর কালো কিছু আসতে দিবে না রিফাত। আজ আকাশের অনেক রঙ, শুধু কোন কালো রঙ নেই। মনের কোণেও না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাজিয়া জাহান অনেক ভাল লেগেছে..........।

১৪ এপ্রিল - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪