ভবেশ মাস্টার

শিক্ষা / শিক্ষক (নভেম্বর ২০১৫)

সুখেন্দু মল্লিক
  • ১০
সকাল দশটায় ইস্কুলে পৌঁছায়
ভবেশ মাস্টার।
গ্রামের ও আশেপাশের একমাত্র
প্রাইমারি ইস্কুল।
আগে আটচালা ছিল – তারপর মাটির দালান
আর এখন পাকা।
কত ঝড়বাদলের পালা পেরিয়েছে
রাজনীতির ওঠাপড়া সাঙ্গ হয়েছে
সে ইস্কুল এখনও দাঁড়িয়ে আছে
শক্ত হয়ে।
ইস্কুল বাড়ির দেওয়াল – দালান
বাপ ঠাকুরদার ইতিহাসের গল্প বলে
আমাদের কানে।
সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে
আমাদের সামনে দাঁড়ায় – ভবেশ মাস্টার
আরও শক্ত হয়ে।।

আমরাও তৈরী করি আমাদের ইতিহাস
কারিগর হই অলীক ভবিষ্যতের
বইয়ের ঝোলা গলাই ভাঙা জানলায়
এক দৌড়ে নদীর চড়ায়
শীতকালে কড়াই শুঁটি
গরমকালে খালের জলে লুটোপুটি
ডাক দিয়েছে সে যেন এক মুক্ত আকাশ।।

ইস্কুল পৌঁছে এক পলকে মেপে নেয় আজকের উপস্থিতি
‘শশাঙ্কবাবু – পড়ানত, আমি একটু ঘুরে আসি’
না আসা আর স্কুল পালানো ছেলে ধরতে
পাড়ায় পাড়ায় বেরিয়ে পড়ে – ভবেশ মাস্টার।
‘বউমা বউমা, বলি মিঠুটা কি ইস্কুল যাবে নি?’
‘আজ্ঞ্যে কাকাবাবু যায় নি!
বইয়ের বাক্সটা লিয়ে গেল যে।
তাহলে ঠিক তালতলায় নাহলে দোকানগোড়ায়
হয় গুলি না হলে লাটুম
দেখি তো চলুন’।
তারপরের নাটকীয় দৃশ্য
সে যায় না ভোলা
মা আর মাস্টার মিলে
ছাত্র ধরার এক আভুতপূর্বখেলা।
ভবেশ মাস্টার পৌঁছায় অন্য পাড়া – অন্য বাড়ি
‘বলি সাধন বাড়িতে আছ
ফেকোটা যে আজও ইস্কুল যায় নি
ছেলেটা মূর্খ হবে যে’!
‘কি করি বলুন তো
কথা শুনে নি মোটে
দন ফেলে মাছ ধরার বড্ড নেশা
আর দেখো না বাবু - আমাদেরও তো এই দশা’।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিফল ফেরে - ভবেশ মাস্টার
তবে ক্লান্ত নয়
হেরে যাওয়া ন্যুব্জও নয়
হয় হাবলু না হয় বাবলু
এক হাতে লাঠি – আর একহাত
শক্ত করে কারও না কারও কানে
এভাবেই ইস্কুল ভরে অর্ধেকদিনে।।

সাদা ধুতি – সাদা পাঞ্জাবি
বেশ জোরালো পায়ে হেঁটে আসছে
পালা পালা ছুটে পালা
ওই যে ভবেশ মাস্টার আসছে
দেখতে পেলে বাবাকে বলবে
ধরতে পারলে পীঠে লাঠি পড়বে
চোখের নিমেষে অতগুলো ছেলের জটলা
কোনদিকে যে দৌড়ে পালাল
এদিক ওদিক দেখেও
কিনারা করতে পারে না ভবেশ মাস্টার
গুলি আর লাটুম গুলো তুলে নেয়
আবার হাঁটা দেয় ইস্কুলের দিকে
ছেলে মেয়েরা পড়তে আসেনা
বাপমায়েরা জোর করে না
ভবেশ মাস্টার মনে মনে হাসে
কি হবে এই পোড়ার দেশে!

সে কোন পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু
ইস্কুলের খাঁচাটা অল্প বদলেছে
সমাজের ধাঁচাটা বিশেষ বদলায় নি।
তবে তারই মাঝে কেউ কেউ
জোর করে দিয়ে যায় ছেলেকে
কোনও মা বলে যায়
‘মাস্টারমশাই, না পড়লে মারুন
শুধু আপনি একটু দেখুন’।
ভবেশ মাস্টারও মনে বল পায় তাতে
ইস্কুলকে শেষদিন পর্যন্ত ধরেছিল
শক্ত হাতে।।

সেদিনের ভয় – সম্ভ্রম
দূর থেকে দেখতে পেলে
পালাতাম তখন।
সময়ের সাথে কেমন বদলে যায়
আজ যখন ভাবি ভবেশ মাস্টার
ভালবাসায় শ্রদ্ধায়
মন আপনি ঝুঁকে যায়।
কলেজ ইউনিভার্সিটি – সে এক দৌড়
কারও সময় কোথা ঘুরে দেখার
কে রইল কতদূর?
তখন আমি আবার ভাবি – ভবেশ মাস্টার
এ শুধু চাকরি নয় তাঁর
জীবন - এক অসীম সাধনার।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল # দারুন ভাবনার অনেক সুন্দর একটি কবিতা ।।
তৌহিদুর রহমান অনেক অনেক সুন্দর একটি কবিতা। ভাল লাগল।শুভেচ্ছা নিবেন। আর সেই সাথে আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রন রইল। ভাল লাগলে ভোট করবেন প্লিজ।।।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ তখন আমি আবার ভাবি – ভবেশ মাস্টার এ শুধু চাকরি নয় তাঁর জীবন - এক অসীম সাধনার।।--------------- এমন মাষ্টার এখন মেলা ভার ! খুব ভাল লিখেছেন । ভোট রেখে গেলাম ।
রেজওয়ানা আলী তনিমা সুন্দর হয়েছে। শুভেচ্ছা রইলো।
গোবিন্দ বীন সেদিনের ভয় – সম্ভ্রম দূর থেকে দেখতে পেলে পালাতাম তখন। সময়ের সাথে কেমন বদলে যায় আজ যখন ভাবি ভবেশ মাস্টার ভালবাসায় শ্রদ্ধায় মন আপনি ঝুঁকে যায়। ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।পাতায় আমন্ত্রন রইল।

২৮ মার্চ - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪