করিম মিয়া, গ্রামের দারিদ্র কৃষক, কালেভদ্রে কখনও দিনমজুর। অন্যের জমি বর্গা চাষ করে যা পায় তাতে কোনমতে ভাতের ব্যবস্থা হলেও ডালের জন্য অন্যের কাজ করে ব্যবস্থা করতে হয়। সে বছর খরা আর অতিবন্যায় ফসল ঘরে উঠানো সম্ভব হয়নি। দুই সন্তান নিয়ে একটু বিপাকেই পরে যায় করিম মিয়া। ছোট ছেলেটার চিকিৎসা করাতে হয়। নিয়মিত ঔষধ ক্রয় করে ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা করা আরও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তবু ছোট্ট মেয়েটার কচি মুখের হাসি ঘরে ফিরলে গলা জড়িয়ে ধরে কত ধরনের বায়না ধরতো ছয় বছরের মেয়েটি। এরই মাঝে প্রতিবেশীর মেয়ে টুনি এসেছে বেড়াতে ঢাকায় নাকি বড় চাকরী করে, স্বামীও পুলিশের বড় অফিসার। এসেই করিম মিয়ার বাড়িতে খোঁজ- খবর নিতে এসেছে। বর্তমান অবস্থা জেনে জিজ্ঞেস করে, 'ছেলের চিকিৎসা করাও না কেন ? ভাল ডাক্তার দেখাও।' 'ভাল ডাক্তার দেখাইলে তো টেকা লাগে এত টেকা পামু কৈ ?' করিম মিয়া অশ্রু ঝরা চোখে আর কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে উত্তর দিল। পরের দিন টুনি ৩০০০ টাকা করিম মিয়ার হাতে দিয়ে বলে, 'যাও ছেলেটাকে ভাল ডাক্তার দেখাও।' করিম মিয়া এই সময় এতগুলো টাকা পেয়ে কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আমি আপনার এই টাকা কিভাবে শোধ করব ? টুনি হাস্যজ্জল মুখে জবাব দিল টাকা দিতে হবে না। শুধু দোয়া করো আমার জন্য। এর মধ্যে টুনির সাথে করিম মিয়ার মেয়ের সাথে ভাল একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। চকলেট ভাল বিস্কিট বাড়িতে ভাল রান্না হলে ওর জন্য একটা ভাগ থাকে। ঢাকা আসার আগের দিন রাতে টুনি করিম মিয়াকে বলে তোমার মেয়েটাকে আমি ঢাকায় নিয়ে যেতে চাই! দেখ ও খুব ভাল একটা মেয়ে পড়াশোনা করলে অনেক ভাল করবে এখানে তো ভাল স্কুল নেই। আমার মেয়ের সাথে ও স্কুলে যাবে খাবে ও খেলাধুলা করবে একসাথে। আমার আর একটা মেয়ে থাকলে যেভাবে থাকত ঠিক সেভাবে ভালই থাকবে। করিম মিয়া বুঝতে পারে না কি বলা উচিত। ৩০০০ টাকার কথা চিন্তা করে বলে, 'আপনি যা ভাল মনে করেন।' পরের দিন টুনির সাথে করিম মিয়ার মেয়ে করিমন(গ্রামে প্রচলিত আছে যে মেয়েদের নাম বাবার নামের প্রথম বর্ণ দিয়ে শুরু করা আর ছেলে হলে মায়ের ) অচেনা ঢাকায় পাড়ি জমায়। ঢাকা এসে করিমন কান্না জুড়ে দিল মায়ের কাছে যাবে। টুনি আদর করে বুকে তুলে নিয়ে চুমু দিতে লাগল দু'গাল ভরে। তারপর এভাবেই চলছিল টুনি ও করিমনের জীবনের গতি। প্রথম যেদিন ঢাকায় এসে জানতে পারল যে এত বড় মানুষের নাম টুনি সে কি হাসি পেয়েছিল ওর! আর আফরোজা আক্তার টুনিও করিমনের গাল টিপে বলেছিল বাব্বাহ! তোর নামটা বুঝি খুব ছোট মেয়ের ? তোর নামটা তো একটা বুড়ির নাম। করিমন অবশ্য মন খারাপ করেনি একটুও। আজ আফরোজা আক্তারের বড় মেয়ে এসেছে বাড়িতে। পড়ে ইউনিভার্সিটিতে নাম তমা। এসেই দেখে ড্রয়িং রুমে বসে টিভিতে কার্টুন দেখছে প্রমা ও নতুন একটি মেয়ে। কিরে প্রমা এটা কে ? তমা জিজ্ঞেস করে। আপু ও করিমন, আম্মু গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছে। ওহ তাই ? তমা যখন জানতে পারল যে করিমনকে স্কুলে ভর্তি করে দিবে এনিয়ে মায়ের সাথে ঝগড়াও হল বেশ। সেদিন কি এক বিষয় নিয়ে প্রমা করিমনের গায়ে হাততোলে করিমনও ধরতে গেলে নখের আছরে একটু রক্ত বের হয়। সেটা দেখে তমা করিমনকে কী এক অমানবিক নির্যাতনটাই না করল। ব্লেড দিয়ে করিমনের হাতের একটা আঙ্গুল কেটে দেয়। করিমনের সেকি চিত্কার! তমার সাবধান বাণী আবার যদি চিত্কার করস তো একবারে মেরে ফেলব তোকে। তমার মা বাড়িতে আসলেই তমা বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে অনেক কিছু বলল, যার ফলে করিমন আর কিছু মার খেল মানবাধিকার সংস্থাতে চাকরী থেকে ফেরা আফরোজা আক্তার টুনির হাতে। সেদিন থেকে করিমনের জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু হল। এখন আর কেউ আদর করে করিমনের গাল টিপে দেয় না। কান্না করলে চোঁখ মুখে বুকে জড়িয়ে ধরে না। এভাবেই চলে গেল নির্যাতন আর অঘটনের মধ্য দিয়ে আরও একটি বছর। শেষে যেদিন নির্যাতনের এক ভয়ঙ্কার চিত্র ফুটে ওঠে। তমার রুম পরিস্কার করতে গিয়ে একটা কাঁচের সুন্দর পুতুল দেখে হাতে নিয়ে ভাবে কত সুন্দর পুতলা ! কি যেন ভাবতে থাকে আর হাত থেকে পুতুলটি পড়ে ভেঙ্গে যায়। এখন কি করবে ? ভেবে পায় না কিছুই। অমনি রেখে চলে যায় রান্না ঘরে। বাথরুম থেকে তমা এসে দেখে সখের পুতুলটা খন্ডবিখন্ড হয়ে পড়ে আছে ফ্লোরে। সোজা রান্না ঘরে গিয়েই ঐ পুতুল ভাংলি কেন ? তোদের বাড়ি বিক্রি করলে তো ঐরকম একটা পুতুল কিনে দিতে পারবি না। চুলাতে গরম তৈলের কড়াই ছিল সঙ্গে সঙ্গে চামিচে করে ছুড়ে মারে করিমনের দিকে। চোখে লাগে আর চিত্কার করে কান্না করতে থাকে আপা কি করলেন চোখে তো কিছু দেখি না। একটা পুতুলের জন্য একটা মানুষের জীবন এতটাই তুচ্ছ ? বয় ফ্রেন্ডের গিফত বলে এত দামী হয়ে গেল ? করিমন দৌড়াতে দৌড়াতে রাস্তার দিকে আসে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ঢাকা শহরের অট্টালিকা যেমন বড় তাদের বজ্র লার ড্রেনগুলো ছোট হবে কেন ? করিমন এমনই এক ড্রেনে পড়ে যায়। শেষ হয়ে যায় অন্ধকার জীবনের অন্ধকার পরিসমাপ্তি। পরের দিন করিমনের ছবি দিয়ে সবগুলো জাতীয় দৈনিকে সংবাদ এসেছে তবে নির্যাতনের চিত্র অঙ্কন করে নয়। 'নিখোঁজ সংবাদ' হিসেবে বর্ণনা ছিল গতকাল সন্ধে ৭টা নাগাত বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। যাওয়ার সময় সাথে দশ ভরি স্বর্নের গহনা ও দশ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। সন্ধানদাতাকে আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রদান করা হবে......
পুনশ্চ : মোবাইল থেকে লেখা বর্ণের সীমাবদ্ধতায় গল্পটি ছোট করতে হয়েছে। বাস্তবেও এমন গল্পগুলোর পরিশেষ অর্থের গরিমার অন্ধকারে হারিয়ে যায়। সংবাদপত্রগুলো ভাবে এমন একটি ক্রাইম রিপোর্ট করে কী লাভ ? মেয়ের বাবাতো এক কপি পত্রিকাও কিনবে না। আর মানবাধিকার ! সেতো ধনীর দুলাল-দুলালীর স্বপ্ন পুরনে ব্যস্ত।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক
নির্মমতা আর আমাদের সভ্য সমাজের বাস্তব দৃষ্টান্ত...খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন...খুব ভালো লাগলো....
কথা সত্যি যে পুরোনো গল্পে নতুনত্ব আনতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা। গল্পটাকে পূর্ণাঙ্গ চিত্রায়িত করতে গিয়ে শেষের দিকে এসে শব্দ সীমাবদ্ধতায় পড়ে যাই। ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।
সূর্য
মর্মান্তিক পরিণতি, সন্তানের একটু সুখের জন্য বাবা-মা সন্তান বিচ্ছেদ মেনে নেয়। অথচ সমাজের ধনী অংশের কাছে সেটা কোন ব্যপারই না। যতসব যত্ন শুধু দামী জড় পদার্থের। গল্প ভালো লাগলেও বলব গল্পের প্লটটা পুরনো এবং পরিণতিও প্রায় একই রকম। সেই হিসেবে আবেদন খুব জোড়ালো ছিল না।
কথা সত্যি যে পুরোনো গল্পে নতুনত্ব আনতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা। গল্পটাকে পূর্ণাঙ্গ চিত্রায়িত করতে গিয়ে শেষের দিকে এসে শব্দ সীমাবদ্ধতায় পড়ে যাই। আপনার সত্য সমালোচনা আমাকে ঋণী করে দেয়। ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।