শীতের সকালে ভাপা পিঠার একটা অন্যরকম উষ্ণতা থাকে। টাটকা খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি এমন জিনিস জাবের কখনো মিস করতে চায় না। শীত এলেই কয়েক দিনের জন্য গ্রামে চলে আসে সে। স্মৃতিচারণ করে বেড়ায়। স্মৃতির উষ্ণতায় নিজেকে নতুন করে চিনে নেয় জাবের। এবার তার বাবা মা ছেলেকে বিয়ে করাবে বলে মনস্থির করেছেন। কিন্তু জাবের বিয়ের জন্য একদম প্রস্তুত নয়। ব্যবসা করতে গিয়ে বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তবুও ভেঙ্গে পরেনি। নতুন করে আবার একটু একটু করে শুরু করেছে মাত্র। এখন বিয়ে নিয়ে তার কোনো চিন্তা ভাবনা নেই।
জাবের গ্রামে এলেই খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সবুজ সমারোহের সাথে মিশে যেতে গ্রামের মেঠোপথে হেঁটে বেড়ায়। আজ সকালে উঠে খেজুর রসের সন্ধানে গাছি খুঁজতে বের হয়েছে। কিন্তু আজ বড্ড কুয়াশা পড়েছে। কখন যে সূর্য উঁকি দিয়ে কুয়াশা তাড়াবে সে আশায় বসে থাকতে চায় না জাবের, নয়তো খেজুর রসের আসল আমেজ মিস করে ফেলবে। শিশির ভেজা ঘাস মাড়িয়ে সে হেঁটে যাচ্ছে মেঠোপথ ধরে। হঠাৎ ধাক্কা লেগে হাঁড়ির রস ছিটকে পড়লো জাবেরের উপর। কিছু বোঝার আগেই খিলখিল হাসি শুনতে পেল কুয়াশার ভেতর হারিয়ে যেতে যেতে। জাবের নিস্তব্ধ হয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। আবারও ধাক্কা খেল। লাঠিওয়ালা এক বৃদ্ধ। জাবেরের গায়ে খেজুর রসের ঘ্রাণ পেয়ে বৃদ্ধ চেঁচিয়ে উঠলো, চোর ধরছি রে! চোর ধরছি!
-চাচা আমি চোর না। আমাকে ধরেছেন কেন?
-চোরের মার বড় গলা। শইলে রসের ঘেরান আইলো কই থিকা পুত?
-আরে চাচা, আপনার সাথে যেভাবে ধাক্কা লাগছে। চোরের সাথেও লাগছে। তখন শরীরে রস ছিটকে পড়ছে।
চাচা জাবেরের মুখ দেখতেই চিনতে পারলো।
-তুমি আবু ছিদ্দিকের পোলা জাবের না?
-জী চাচা, আমি জাবের।
-তুমিতো ভাল পোলা, শহরে থাকো। এইরাম ভর কুয়াশায় এহানে কী করো বাপ?
-রস খাওয়ার জন্য গাছি খুঁজতে বের হয়েছিলাম। তখন সম্ভবত চোরের সাথে ধাক্কা লাগে। একটা মেয়ে মনে হল।
-ও! বুঝছি! শিউলির কাম। থাক বাবা, তোমারে চোর ভাবছি। কিছু মনে কইরো না। চলো তোমারে রস খাওয়াই।
জাবের খুশি হয়। চাচার সাথে যেতে থাকে আর শিউলির কাহিনী শুনতে থাকে চাচার মুখে। জাবেরের মনে পড়ে শিউলির কথা। মেয়েটাকে পছন্দ করতো জাবের। কিন্তু জাবের কিছু করতোনা বলে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারেনি। মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু তার স্বামী নেশাগ্রস্থ। যৌতুকের টাকার জন্য মারধর করতো। এরকম মারধরের ঘটনায় শিউলি মাথায় আঘাত পায়। তারপর থেকে মেয়েটা কেমন যেন হয়ে গেছে। শিশুদের মতো। পাগল হয়ে গেছে বলে শিউলিকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। মেয়েটা শ্বশুর বাড়ি আর ফিরে যেতে পারেনি। বুকের ভেতর একটা চিনচিন ব্যথা অনুভব করে জাবের। ভুলে থাকতে চায় কিন্তু পারেনা। চাচা জাবেরকে খেজুর রস দেয়। জাবের খেতে পারেনা শিউলির কথা ভেবে। চাচা বলে, বাজান রস কি মিঠা লাগে না?
-জী চাচা, রস মিষ্টি আছে।
-তাইলে খাও না কেন?
অন্যমনস্ক হয়ে জাবের রসে চুমুক দেয়। কুয়াশা কেটে যেতে থাকে। সূর্যের উষ্ণতায় সবুজ ফুটে উঠতে থাকে। কারও জন্য জমানো বুকের উষ্ণতা মলিন হতে থাকে একটু একটু করে...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
সব মানুষের মধ্যে একটা ভাল লাগা থাকে, একটা একান্ত নিজের স্বপ্ন থাকে হৃদয়ের উষ্ণতা দিয়ে সাজানো।
০২ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৪২ টি
সমন্বিত স্কোর
৩.৯১
বিচারক স্কোরঃ ০.৯১ / ৭.০পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।