মরণ আসবেই। কিন্তু মরণটা যে মায়ের সাহসের এক সর্বোচ্চ আনন্দের দিনে হবে তা আজও বিশ্বাস করতে পারছে না। সাহস তার আই,এস,সি পরীক্ষা শেষ করে বাড়ি আসছিল। এসেই শুনতে পেল তার মায়ের কান্না। কোন কারন না জেনে সে মায়ের সাথে কাঁদতে লাগলো। মা যে কাঁদে তার বুক ছিড়ে যায় কলিজায় যেন মান্দার কাঁটা বিধায় তাই মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে কাঁদে। হঠ্যাৎ তার বাবা তাকে বলে ওঠলো কাঁদা বন্ধ করে তোর মায়েরে ডাক্তার দেখা। বাবার কথা শুনে তার কান্না পালালো।
ঠিকতো মায়ের সাথে কাঁদলে তো মায়ের কান্না থামবে না। মাকে তো হাসপাতালে নিতে হবে। তার আগে মায়ের কাঁদার কারণ জানা দরকার। সাহস চোখের পানি মুচে আর বাবাকে বলে- মা কাঁদে কেন?
তোর মায়ে ওযু করতে গিয়া আচার খেয়ে পরে গেছে মাজায় ব্যথা পাইছে।
বাবার কথা শুনে আর মায়ের কান্নার ভাব দেখে সাহস নিশ্চিত হল তার মায়ের মাজা আর স্বাভাবিক নাই হয়তো ভেঙ্গে গেছে। নিজে মুখে কিছু না দিয়ে মাকে একটা সিএনজি করে বোন লাভলির বাড়ি নিয়ে গেল সে। সেখানে মায়েরে প্রাথমিক চিকিৎসা করায় সাহসের শ্রদ্ধে দুলা ভাই রাজু। সাপ্তাহ কয়েক পার হল কিন্তু সাহসের মা ব্যথা থেকে পাড় পেল না। পরে মাকে সে ও তার মেঝ ভাই সাগর কুমিল্লা সিডিপ্যাথ হাসাপাতালে নিয়ে গেল। চিকিৎসক চিকিৎসা দেওয়ার আগে ক’টা পরীক্ষা দিল যেন মাকে সে পরীক্ষা করিয়ে আনে। আনলোও। ক’টা পরীক্ষার মাঝে মনে হয় মাঝের পরীক্ষাটা প্রয়োজন ছিল না তাই ডাক্তার তরিগরি করে সাহস দেখার পূর্বে মার্কার দিয়ে মুছে পেলে সাহস তো দেখেছে কিন্তু কোন রূপ প্রশ্ন করেনি কেন না মাথা ঠিক নাই ওর মা তো শুধু কাঁদে। মায়ের কান্নায় তাল দিবে না চিকিৎসকের কসাই ভাব দূর করবে। কুমিল্লা থেকে মায়েরে চিকিৎসা করিয়ে আনলো। গেল দিন পনের মায়ের ব্যথা গেল কই। গাঁয়ের লোকেরা সাহসকে বলে তোর মায়েরে ঢাকা নিয়ে যা। সাহস ভাবলো ঠিকতো মায়েরে ভালো চিকিৎসা করাতে হবে। তাই মায়েরে বাড়িতে না রেখে ঢাকা নিয়ে গেল। চিকিৎসায় মগ্ন ছিল মায়ের চিকিৎসক। কিন্তু আসল চিকিৎসকের নজর তো আর মায়ের দিকে নাই তাহলে দুনিয়ার চিকিৎসক মায়েরে কি চিকিৎসা দেবে?
সময় যাচ্ছে দিন পার হচ্ছে সাহসের মায়ের ব্যথা আর শেষ হল না। আই,এস,সি পরীক্ষা দিয়ে মায়েরে ঢাকায় এনেছে সাহস। দুদিন পর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হবে। কারও সাথে যোগাযোগ করতে পাড়েনি। তার অনেক মধুবাসী বন্ধু আছে কিন্তু তার খবর কেউ নেয় নি শুধু মায়ে ছাড়া। মার হাত পা বাঁধা আর সারাক্ষন থাকে অজ্ঞান হয়ে। যখন জ্ঞান ফিরতো শুধু বলতো সাহস কই? আমার জামাই রাজু কই? কতক্ষন ডাকতো পরে অজ্ঞান হয়ে থাকতো। তার তালাশ নেওয়ার মত কেউ ছিল না। তবুও তার সাধ্য অনুযায়ী সবার তালাশ নিতো সে। তার পরীক্ষার ফল প্রকাশের আর একদিন বাকী। হঠ্যাৎ করে অপরিচিত নাম্বার থেকে তার মোবাইলে ফোন আসলো সে ধরলো অপর প্রান্ত থেকে সাড়া আসলো- কে সাহস?
জ্বি কে বলছেন?
আমি রাজীব
ও! কিরে কেমন আছিস?
আছি! তোর কি অবস্থা বল?
কালতো ফলপ্রকাশ হবে শুনছিস?
কিসের ফলরে?
আই,এস,সি পরীক্ষার ফল। ভুলে গেছিস নাকি?
যে অবস্থায় আছি ভুলে যাওয়ার কথা।
কেন কি হয়েছে?
রাজীব ফোনটা রাখ আমাকে মায়ের চিকিৎসক ফোন দিয়েছে তোরে আমি পরে ফোন দিবো।
তোর মায়ের কি হয়েছে?
তোরে পরে সব বলবো এখন রাখ ভাই।
ঠিক আছে ভাল থাক।
রাজীব ফোন রাখেই ধরলো মায়ের চিকিৎসকের ফোন।
কে সাহস বলছ?
বলছি স্যার
তুমি তরিগড়ি হাসপাতালে আসো আর তোমার অভিভাবক যারা আছে তাদেরও নিয়ে আইসো।
কেন স্যার?
আসলে বলবো।
চিকিৎসকের কন্ঠস্বর শুনে তার কেমন যেন খারাপ লাগছিল! বোধ হয় মায়ের বিশেষ কোন সমস্যা ধরা পরেছে তাই চিকিৎসক নিজেই আতংকিত। পরে তার বাবা ও বড় ভাই নয়নকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে চলে গেল। তাদের দেখে চিকিৎসক মনগড়া অবস্থায় বলে ওঠলো সাহসকে লক্ষ করে তোমার মায়ের অবস্থা বেশি ভাল না আমরা তোমার মায়ের কোন রোগ চিহ্নিত করতে পাড়ছি না।
তাহলে এখন কি করা স্যার?
তোমার মাকে আই,সি,ইউ তে নিতে হবে। সেখানে এক ঘন্টার মাঝে তোমার মায়ের রোগ চিহ্নিত করা যাবে। সেখানে তোমার মাকে দুএক দিন রাখলে তোমার মা সুস্থ্য হয়ে যাবে।
তাই! তাহলে আমার মাকে সেখানে নিয়ে চলেন।
নিবো সেজন্যই তোমার অভিভাবকদের আনতে বললাম।
আমার ভাই নয়ন বলে ওঠলো আমি অভিভাবক কি করতে হবে বলেন?
চিকিৎসক নয়নকে যা বললেন তাতে সবার মন খারাপ হয়ে গেল। আই,সি,ইউ তে একজন রোগী রাখতে এতো খরচ সাহস পুর্বে কখনও শুনেনি জানেনি। তবুও তারা ভেঙ্গে পরেনি। তাদের মাকে গায়ের রক্তের বিনিময় হলেও চিকিৎসা করে সাড়িয়ে তুলবে। নয়ন সাহসের পণ।সাহসের ভাই নয়ন তাকে বলে-আমাদের বাড়ি ঘর সব বিক্রি করে দিবো আমাদের ঘর বাড়ি দরকার নেই। মা বাঁচলে মাকে নিয়ে আমরা ঢাকায় বাসা ভাড়া করে থাকবো। তোরা মাকে নিয়ে আই,সি,ইউ তে যা আমি বাড়ি যাই দুএকদিনের মধ্যে বাড়ি বিক্রি করে আমি আসতাছি।
সাহসের বাবা ও সাহস তার মাকে এ্যাম্বুলেন্সে ওঠাচ্ছে আর তার নয়ন ভাই রোডের পাশে দাঁড়িয়ে বাসের আশায় আছে তিনি বাড়ি যাবে বলে। হঠ্যাৎ পকেটে হাত দিয়ে দেখে একটা টাকাও তার পকেটে নাই পরে সাহসের কাছে এসে বলে- তোর কাছে কোন টাকা আছে দে?
সাহস পকেটে হাত দিয়ে দেখি মাত্র ৫০ টাকা আছে কিন্তু ভাইয়ের বাড়ি যেতে লাগে ১২০ টাকা। পরে বাবার পকেটে যা ছিল তা মিলিয়ে ভাইকে বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল সাহস। সাহস মাকে নিয়ে ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালের আই,সি,ইউ বিভাগে নিয়ে গেল। মাকে তার সুরক্ষিত আসনে নিয়ে গেল কয়েক জন সেবক সেবিকা এসে কিন্তু তাদের কাউকে মায়ের সাথে থাকতে বা দেখা করতে দেয়নি। এমন কি তার বাবা ও তাকে রাতে ঘুমাতে কোন কক্ষ বা সিট দেয়নি কর্তৃপক্ষ। পরে বাবা ও সে হাসপাতালের ফ্লোরে কাথা বিচিয়ে শুয়ে রইল। চোখে ঘুম আর কই? এমনই চোখ বুধে রইল সারা রাত। রাতে একবার নয়ন ভাইকে ফোন দিয়েছিল সাহস। তখনও নয়ন বাড়ি পৌছায়নি। বরং নয়ন সাহসকে বলেছিল তিনি বাড়ি গিয়ে তাকে ফোন দিবে সে যেন ফোন না দেয় বলেছিল।
খুব ভোর বেলা সাহস ঘুম থেকে ওঠে দেখে সে একা ফ্লোরে শুয়ে আছে। বাবা কই যেন গেছে তখনও সে জানে না। পরে ঠিক মত চোখ মেলে দেখলো তার পাশে বসে তার বাবা তবজির ছড়া হাতে নিয়ে কি যেন পড়ছে আর কাঁদছে। মাঝে মাঝে বকতেছিল- আরে আল্লাহ। সারা জনম রোজকার করলাম। বাড়ি করলাম ঘর করলাম ছেলেদের দোকানপাট করে দিলাম। আজ আমার স্ত্রীর অবস্থা ভালো না মনে হয় আজই মইরা যাইবো তার আর কি চিকিৎসা করামু আমাগো তো সকালে নাস্তা খাওয়ার টাকা নাই। নয়ন কখন আসে কে জানে?
বাবার কথা শুনে সাহস বাবাকে বলে ওঠলো- কি হয়েছে বাবা কি বলছেন। বাবা চোখের পানি তাড়াতারি মুছে তাকে বলে ওঠলো- ওঠ। নামাজ পড়। তোর ভাইয়ের কাছে ফোন দে টাকা পাইছেনি জান। বাবা কথা বলতে না বলতে মেঝ ভাই সাগর তাদের কাছে চলে আসে। সাহসের বাবা সাগরকে দেখে তার মনটা যেন তাজা হল। পরে বাবা সাহস ও সাগর আই,সি,ইউ বিভাগে গিয়ে তাদের মাকে দেখে আসে। তখনও সাহসের মা ভাল। মাকে দেখে এসে তারা নাস্তা খেতে গেল। নাস্তা খেয়ে এসে যখন হাসপাতালে আসলো তখনই বড় ভাই নয়ন বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে হাজির তাদের সামনে। সাগর নয়ন সবার টাকা সাহসোর দুই পকেটে। সে সব দেখাশুনা করে তাই টাকা তার কাছে থাকে।
কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক আসলো। চিকিৎসকের সাথে সে গেল মায়ের কাছে। চিকিৎসক তার মাকে দেখে নিজেই হতাশ হয়ে গেল। তাকে কান্নাস্বরে বলে ওঠলো- তোমার মায়ের তো অবস্থা খুবই খারাপ। যা হোক দোয়া কর আল্লাহ তো আছে। বলে এই চিকিৎসক চলে গেল কিছু ঔষধের কথা বলে। তাকে কিছু টাকা দিল সাহস তার পর মায়ের কাছ থেকে নীচতলায় চলে আসলো। সবাই তার কাছে এসে বলে ওঠলো কিরে মায়ের কি অবস্থা? সে কি বলতে পারে তখন? নীচু কন্ঠে বলে ওঠলো ভাল। পরে কাঁদতে লাগলো বলতে বলতে নয়ন ভাই মায়ের অবস্থা খুব খারাপ মা বাঁচবেনা চিকিৎসক বললো শুধু দোয়া করার জন্য। তার কথা শুনে সবাই হতাশ হয়ে গেল। সবাই ছুটলো আই,সি,ইউ বিভাগে মাকে দেখার জন্য। কিন্তু গেলে কি হবে সেখানে কাউকে ডুকতে দেয়না কর্তৃপক্ষ। সব বাঁধা পরিহার করে সাহসের বাবা ডুকে গেল তার স্ত্রীকে দেখার জন্য। পরে সাহসদের এসে বললো তোদের মা এখনও আছে তবে মনে হয় থাকবে না রে। বাবার এ কথা শুনে সাহসের বোন লাভলি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। বোনের কান্না শুনে হাসপাতালের অন্যান্য রোগীও কাঁদতে লাগলো। ঠিক ঐ সময় সাহসের মোবাইলে একটা এসএমএস আসলো। এসএমএস-র নাম্বারটা তার পরিচিত শিক্ষাবোর্ডের নাম্বার সেটি। সে আই,এস,সিতে পাশ করছে এটাই তাকে এসএমএস-র মাধ্যমে বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। পরীক্ষায় পাশ করা যে কত আনন্দময় ঠিক সেই অনুভব করতে পারে যার জীবনে পরীক্ষা পাশের সময়টা আসে। বাঁধন হারা খুশির ধারায় সে ভাসে। সাহসের খুশির ধারায় ভাসার সময় আসলেও তা সে উপভোগ করতে পারছে না। তার আপন হারানোর সময়টা খুশির ধারাকে কুলষিত করেপেলেছে। সাহস তার মোবাইলের এসএমএস টা পড়ে কাঁদতে শুরু করলো। এ কান্না কেন কেউ বুঝতে পারলো না কেন না সবাই জানে সে কাঁদছে তার মায়ের জন্য কিন্তু কান্নাটা মাকে উৎসর্গ করে পরীক্ষা পাশের আনন্দময় কান্না। তাকে কেউ প্রশ্ন করেনি কান্নার কারন কি। সময় যত পার হচ্ছে একের পর এক চিকিৎসক আসছে সুচিকিৎসা দেওয়ার প্রত্যয়ে কিন্তু সাহসের মাযের অবস্থা দেখে কি চিকিৎসা দেবে তারা নিজেরাই মন খারাপ চলে যায়। যাওয়ার সময় বলে সাহসকে তোমার মায়ের অবস্থা খুব খারাপ আমরা কোন চিকিৎসা দিতে পারছি না। শুধু দোয়া কর আল্লাহ যদি মাফ করে। সাহসের পরিবারের সবাই হাসপাতালে হাজির বাকী শুধু সাহসের দোলা ভাই রাজু সে এখনও অনেক দূরে আসার পথে। কিছুক্ষন পর পর ফোন করছে। মা কেমন আছেন। সাহসের জবাব একটাই মা ভাল আছেন আপনি আসতে থাকেন ভাই। রাজু যখন হাসপাতালে আসলো সময় তখন বাদ মাগরিব। রাজুকে দেখে লাভলি কাঁদতে লাগলো চিৎকার করে। সাগর নয়ন কাঁদতে তখনও শুরু করেনি। রাজু লাভলিকে বলে ওঠে কাঁদিস কেন আয় মাকে দেখে আসি। আই,সি,ইউ তে দুজনের বেশি এক সাথে ডুকতে পারে না। পরে সাহস আর রাজু গেল দেখতে। সাহস গিয়ে মায়ের কানে কানে বলে ওঠে-মা আমি আই,এস,সিতে পাশ করছি। আমি পাশ করছি শুনতাছেন মা?
গাহসের কথা শুনে তার মা হঠ্যাৎ চোখ খুললো। যেন মায়ের পেট থেকে সন্তান বুঝি ভুমিষ্ট হল। পরে সাহসের মা সাহসের মাথা হাত ভুলাতে শত চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন কেননা তার গায়ের শক্তি তখনও শূন্য। তবুও হাত ভুলাতে চেষ্টার কমতি করে নি সন্তান সাহসেন জন্য তার মা। হাত ভুলাতে না পেরে তার মা আকাশের দিকে হাত উচিয়ে চোখ দিয়ে কি যেন বললো সাহসের মা। রাজু পাশে থেকে তা শুধু দেখেই রইলো পরে বলে ওঠলো মা কেমন আছেন। কোন জবাব নাই। রাজু তার হাত দিয়ে জননীর সমান শাশুড়ির মাথায় হাত ভুলাতে লাগলো। সাহস মায়ের পায়ের কাছে তখন মাথা রেখে কাঁদছিল তৎক্ষনাত একজন সেবিকা এসে বলে ওঠে- আপনাদের সময় শেষ এখন যান। রোগীকে একা থাকতে দিন। পরে সাহস রাজু চলে আসলো। রাজু বাহিরে এসে নিঃচুপ রইলো। স্বামীর গায়ে ধাক্কা দিয়ে বার বার লাভলি বলে ওঠে মা কেমন আছেন? মা ভাল হয়ে যাবে তো? রাজু এ সময় কি জবাব দেয় একমাত্র মেয়ের কাছে মায়ের জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনের কথার? কিছু না বলে সাহসের হাত ধরে বাহিরে গিয়ে একটার পর একটা সিগারেট টানছে আর টানছে। প্রায় তিরিশ কি বত্রিশটা সিগারেট এক দাড়ানোতে শেষ করলো। হাতে একটা সিগারেট আছে রাজুর টেনে অর্ধেক শেষ করলো এমন সময় সাহসের মোবাইলে ফোন আসলো ফোনটা দিয়েছে আই,সি,ইউ বিভাগের প্রধান কর্মকতা। সাহস ফোন ধরে কিছু বলার আগেই অপর প্রান্ত থেকে শব্দ আসলোÑ এখন আপনাদের রোগীকে দেখতে পারবেন যতলোক আছে সকলকে এক সাথে নিয়ে আসেন। বলেই ফোন রেখে দিল। সেচ্ছায় ফোন করে রোগী দেখে যাওয়ার জন্য বলাটা সাহসের কাছে সন্ধেহ মনে হল তবও হাসপাতালে গিয়ে সাহস তার পরিবারের সকলকে বলে ওঠলো সকলে আসেন মাকে দেখবেন ফোন দিয়ে বলেছেন মার কাছ থেখে চিকিৎসক। সাহসের কথা শুনে সকলে সাহসের সাথে চলে গেল সাহসের মায়ের কাছ গিয়ে সকলের শত ভাগ নিশ্চিত হয়ে গেল সাহসের মা নেই কিন্তু সাহস তখনও বিশ্বাস করেনি তার মায় নাই। পরে সবাই চলে আসলো নীচে। চিকিৎসক সাহসকে ডেকে নিয়ে এক হিংস্র কন্ঠে বলে ওঠলো তোমার মা অনেক রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছেন। বিগত ক,দিন আগে তোমার মাকে কোন চিকিৎসক ভুল চিকিৎসা দিয়েছিল। তোমার মায়ের হাড় ক্যন্সার ধরা পরেছে। তোমার মায়ের রক্তের জমাট বাধা বন্ধ হয়েগিয়েছিল। যার ফলে তোমার মায়ের কোন চিকিৎসা দিতে পারি নাই। কেমনে চিকিৎসা দিবো। কোন চিকিৎসা বা ঔষধে কাজ করছে না তোমার মায়ের শরীরে। বলতে যদিও কষ্ট হচ্ছে তবুও সত্য প্রকাশ হবেই। বাবা তোমার মা আর নাই। বলেই চিকিৎসক চলে গেল। পরে সাহস নীচে চলে গেল সাহসকে দেখে সবাই তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো কেন কাঁদছে সাহস আগেই জেনে পেলেছে।
অনেক কান্না কাটির অবসান ঘটিয়ে সবাই সাহসের মাকে নিয়ে বাড়ি চলে গেল। মায়ের দাফন শেষ করে কবরের পাশে সাহস দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাঁদতে ছিল। তার এ কান্নার কারন হয়তো সবার জানা কিন্ত শান্তনা কে দেবে? ঘন্টা কয়েক আগে সাহস তার পরীক্ষা পাশের কথা শুনে আনন্দে ভাসার কথা কিন্তু আপন হারার ব্যথার জোয়ারে ভাসছে সাহসের জীবন। আনন্দ মাখা সময়গুলো উপভোগ করার পরিবর্তে হাড় ক্যান্সার নামের মৃত্যু থাবা কেঁড়ে নিয়েছে সাহসের সব আনন্দ। মরন অনিবার্য কখন মরন আসে তা কারও জানা নাই কিন্তু সাহসের মায়ের মরন কয়েক দিন পরে আসলেও হতো। হয়তো মাকে নিয়ে সাহস তার পরীক্ষা পাশের আনন্দময় সময় গুলো উপভোগ করতে পারতো তার পর না হয় আপন হারার ব্যথাটা তার জীবনে আসতো! আপন হারার ব্যথা সবাই ভোগ করতে হবে কিন্তু এ ব্যথা যদি আনন্দের পর আসে তাহলে কিছু হলেও ব্যথা হালকা হয়। কিন্তু সাহস মায়ের অভাব সাধরের বরন করেনিয়েছে তার আনন্দ বিসর্জন দিয়ে। এ অভাব কখনও পূরন হবে না। সাহস যদি পরীক্ষায় পেল করে যদি তার মাকে ফিরে পেত তাহলে হয়তো তার কোন কষ্ট থাকতো না কেন না পরীক্ষায় একবার পেল করে ফের পরীক্ষা দিয়ে পাশ করা যায় কিন্তু মানুষ একবার চলে গেলে সে তো আর ফিরে আসে না তাই হয়তো আর সাহসের আনন্দ মাখা পরীক্ষা পাশের সময়টুকু প্রকৃত আনন্দে পরিণত হল না। সাহসের মা তিন ছেলে আর এক মেয়ের জননী। সুখের সংসারে ছিল সাহসের মায়ের জীবন। যখনই বড় ছেলে নয়ন বিয়ে করল সাহসের মায়ের জীবনের মাঝে হালকা ঝড় আসলেও মাঝের ঝড় সাগরের পালিয়ে গিয়ে বিয়ের মাধ্যমে শুরু হয় সর্বশেষ ঝড় এসে ঘ্রাস করে বিষাক্ত হাড় ক্যানন্সার নিয়ে যায় সাহসের মায়ের জীবন কিন্তু যখন বিষাক্ত ক্যন্সার তার আনন্দ কেঁড়ে নিয়েছে। আনন্দ মাখা হারানো ব্যথা তার সব আনন্দ কেঁড়ে নিল। মায়ের বিদায় তার সব আনন্দ কেঁড়ে নিয়েছে। হারানো কিছু হয়তো পরে ফিরে পাওয়া যায় কিন্তু কিছু কিছু হারিয়া যাওয়া সম্পদ কখনও ফিরে পাওয়া যায় না সে না পাওয়া সম্পদ হারিয়ে পেললো সাহস এ হারানো তার অন্য সব হারানোকে হার মানায়। মাকে বিদায় দিয়ে সাহস তার আনন্দের সব কথা ভুলে গেছে।
২১ জানুয়ারী - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
০ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪