এক ২১৭১ সালের ১৫ই জুলাই। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে আপিল চলছে। আসামির কাঠগড়ায় যাকে দেখা যাচ্ছে সে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান করেছিল।এমনকি বাংলাদেশের অস্তিত্বেই ছিল তার অবিশ্বাস।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও সে পূর্ব-পাকিস্থান পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন নিয়ে ঘোরে বেরিয়েছে যুক্তরাজ্য, মধ্য-প্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলোতে।আর বাংলাদেশ ভারতের অংশ হয়ে যাবে এই কথা বুঝাতে তৎকালিন মুসলিম বিশ্বশক্তির প্রধান সৌদি আরবে সে পরেছিল কয়েক বছর।মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস সময় পাকিস্থানি সেনাদের দলগতভাবে সহযোগিতা করেছিল। তার নাম গোলাম আযম, বাংলাদেশের ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা ও গনহত্যার’ প্রতীক। মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গনহত্যায় ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উস্কানী, সহযোগীতা ও উর্ধ্বতন কর্তৃত্ব থেকে করা অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৫ই জুলাই তৎকালিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ তার নব্বই বছরের কারাদন্ড দেয়। এই রায় দেশের সাধারন জনগন মেনে নিতে পারেনি। জনগন যখনি সুযোগ পেয়েছে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দাবি করে আসছিল। স্বাধীনতার প্রায় দুইশত বছর পর ও গোলাম আযমের মৃত্যুর প্রায় ১৫০ বছর পর জনগনের তীব্র আন্দোলনের চাপে বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল পুনরায় গঠন করে। তার আগে অবশ্যয় গোলাম আযমকে পুনরায় জীবিত করতে হয়েছে।তার কবর হতে ডিএনএ সংগ্রহ করে তার দেহ তৈরি করেছে বুয়েটের একদল চৌকশ বিজ্ঞানী। আর তাতে কৃত্রিম হৃৎপিন্ড স্থাপন করে মানুষ হিসেবে দাড় করিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল মেধাবী চিকিৎসক।আগের ট্রাইবুনালে তার যখন বিচার হয়েছিল তার বয়স ছিল ৯০।আর এখন তার দেহের গঠন এমন ভাবে গড়া হয়েছে যেনো মনে হয় ৪৯ অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স যত ছিল।
মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গনহত্যায় ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উস্কানী, সহযোগীতা ও উর্ধ্বতন কর্তৃত্ব থেকে করা অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সরকারের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের রায় বাতিল করে গোলাম আযমের রায় পুনরায় ঘোষনা করে। এই রাইয়ে তাকে ১৬ই ডিসেম্বর ২১৭১ সালের প্রথম প্রহরে মৃত্যু না ঘটা পর্যন্ত শাহবাগের মোড়ে যেখানে ২০১৩ সালে গনজাগরন মঞ্চ হয়েছিল সেখানে ফাসির মঞ্চ তৈরি করে ফাসিতে ঝুলানোর আদেশ দেয়া হয়। ২৪৩ পৃষ্টা ও প্রায় দুই মেগা-বাইট সাইজের পূর্নাঙ্গ রায়ের পরতে পরতে পাকিস্থানের প্রতি গোলাম আযমের আত্ম-নিবেদন ও স্বাধীন বাংলাদেশের চরম বিরোধিতার দালিলিক প্রমান উপস্থাপিত হয়। রায়ে দেখা যায়,১৯৫৪ সালে জামায়াতে যোগ দেয়ার পর ১৯৬৯ সালে গোলাম আযম তৎকালিন পূর্ব-পাকিস্থানের আমির নিযুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান রক্ষার নাম দিয়ে শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস প্রভৃতি আধা সামরিক বাহিনীর গঠন করেছিল সে। তার অধীন এসব আধা সামরিক বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বর্বরোচিতভাবে বাঙালি নিধনে সরাসরি অংশ নিয়েছে, নারী ধর্ষনে অংশ নিয়েছে। পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করেছে। তবে বাংলাদেশের বিজয়ের ক্ষণ যখন ঘনিয়ে আসছিল,তখন একাত্তরের ২২ নভেম্বর তিনি তখনকার পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যায়।রক্তঝরা যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করলেও এ দেশকে পূর্ব পাকিস্তানরূপে ফিরে পাওয়ার আশা ছাড়েনি গোলাম আযম। রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে গোলাম আযম ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি’ গঠন করে। ১৯৭৩ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি মধ্যপ্রাচ্য ও ইসলামিক দেশগুলোতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে,স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়।
দুই ২১৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বরের রাত এগারটা। দলে দলে মানুষ গনজাগরন মঞ্চের দিকে যাচ্ছে। বিজয়ের ২০০ বছর উৎযাপনের সবচেইয়ে বড় অনুষ্ঠান আয়োজন হবে এখানেই। বন্ধু প্রতীম দেশগুলো বিভিন্ন উপহার পাঠিয়েছেন। পাকিস্থান তাদের অপরাধের জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চেয়েছে এবং ক্ষতিপূরন দিয়েছে।তবে সবচেয়ে বিষ্ময়কর উপহারটি দিয়েছে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশি দেশ ভারত। তারা উপহার দিয়েছে একটি ফাসির মঞ্চ। মঞ্চটি প্রতিস্থাপিত হয়েছে গনজাগরন মঞ্চে। ফাসির মঞ্চের ডান পাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বামপাশে শহীদ জননী জাহানার ইমামের প্রতিকৃতি। মঞ্চে নিয়ে আসা হয়েছে ৭১এর ঘাতক প্রধান গোলাম আযমকে। তাকে মৃত্যুর আগে তার কৃতকর্মের জন্য দেশবাসির কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। উত্তরে সে বলল, একাত্তরে যা ঠিক মনে করেছি, এখনো তাই করি। আর আমি যদি অপরাধ করে থাকি তবে বিচার করবে আল্লাহ। আপনারা বিচার করার কে? আল্লাহ তার বিচার করেনি, করেছে জনগন। তাকে ফাসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে এবং দেশের মানুষ যেনো আজীবন তাকে গৃণা করতে পারে সে উদ্দেশ্যে তার লাশ বিশেষ উপায়ে মঞ্চসহ জাতীয় জাদুঘরে রেখে দেয়া হয়। পুনচ্চঃ ইতিহাসের দায় মেটাতে অপরাধির উপযুক্ত বিচার পৃথিবীতেই হবে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।