চারিদিকে অবরোহ শূণ্য। সাদিয়া বাবার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে আত্মবিভোর সুশাš— নদীর তীরে। সময় যেখানে ধ্বংস আর মৃত্যু দিয়ে খেলা করে। কিছুদিন আগেই সাদিয়ার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। এ-এক নিঃসঙ্গ করুণার মৃত্যু। সাদিয়া এখন কিশোরী। বাবা ছাড়া তার আর তেমন কেউ নাই। মায়ের বংশের দিক থেকে নানী, মামা আর খালা বেঁচে আছে। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে সাদিয়া ব্যথাভরা মনে বাবাকে বললো, মা আর ফিরে আসবে না! বাবা বললো তোমার মা, না ফেরার দেশে চলে গেছে। কিছুকাল পরে আমরাও সেই না ফেরার দেশে চলে যাবো। সে দেশ থেকে পুরনায় কেউ ফিরে আসে না। সে এক চিরন্তন মহা সত্যের দেশ। আগের মতোই সনাতন সজিব আর নতুন। সাদিয়া গভীরভাবে পুনরায় বলল সেই না ফেরার দেশে মা এখন কি করছে। বাবা মৃদু হেসে বললো তোমার মা এখন পরম সত্তার চৈতন্য মগ্ন হয়ে আছে। অনাদি অনন্ত অব্যক্ত অচিন্ত্য মহাবিন্দুর প্রেমে! যেখানে মহাসত্যের পূর্ণজীবন লাভ হয় চির জাগ্রত অস্তিত্ববানের প্রাণ থেকে। সে এক অদৃশ্য নিরাকার মহাভেদের জগত। সাদিয়া বললো মা আমাদের ছেড়ে এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলো কেন? এটা জগত নিয়মের খেলা। কে কখন চলে যাবে আমরা কেউ বলতে পারবো না। মহাবিশ্বের এক জ্যোতির্ময় দীপ্তিময় সত্তা আমাদের ঘিরে আছে, তার সমগ্র থেকে কেউ বাইরে যেতে পারে না। তার পরম প্রেমের অনুরণিত অনুরাগের ভেতর মানুষ আর সব সৃষ্টিরা খেলা করে। বাবা বলে তিনি এক বিমিশ্র একত্ববাদের ভেতর জ্যোতির্ময় জ্ঞান। আপনা আপনিতে বিকশিত হতে থাকে। নিগূঢ় সত্য সম্বলিত রূপে। জগতের অস্তিত্ববোধ ঈশ্বররের একত্ববোধে মিশে অবিমিশ্র একের সূচনা করে। অবিভাজ্য তিনি চিরস্থায়ী নিগূঢ় শূণ্যের ভেতর ঘুরে ফিরে আবার অখন্ড চির-জাগ্রত চৈতন্য অস্তিত্ববান হয়। সাদিয়া বলে এমন কঠিন শব্দ দিয়ে আমার কথার উত্তর দিওনা বাবা। মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে এতে আমি বড় ক্লাš—। আমার শরীরটা বেদনায় ক্লাš— হয়ে যাচ্ছে বাবা। তুমি মায়ের শান্তির জন্য দোয়া করো। বাবা মৃত্যুর দেশতো কঠিনই। সেখানে আজীবন সুখ দুঃখ বিরহ আর কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। যার যার আমল, তার তার কল্যাণে কাজ করে। তুমি আর আমি শুধু আমাদের পূর্বপুরুষদের জন্য দোয়া করবো। তারা যেন ভালো থাকে। সেই অনন্ত সত্তার সাথে। সত্য প্রেমিক হয়ে তারা যেন পরম সত্তার অন্তরালে জেগে থাকে। তাদের শরীরে যেন নূরময় প্রেমের কাল কাউসার জেগে ওঠে। ধর্মের প্রজ্ঞা বিশ্বাস আর সরল পথে। নতুন স্পন্দনে তারা যেন রঙিন শস্য ¶েত্রের প্রসন্ন ছায়া পায়। ঐশ্বরিক সৃষ্টির বিচিত্র সম্ভারে তারা যেন মুক্তির উষাকাল দেখতে পায়। প্রবাহমান ইন্দ্রিয়ের নদীতে সমুজ্জ্বল অফুরন্ত ভালোবাসা যেন আল্লাহর চৈতন্যের সাথে মিশে থাকে। মা তুমি ধীরে ধীরে লেখা পড়ার পাশাপাশি আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হবে। তারপর আল্লাহর সাথে বন্ধুত্ব হলে তুমি তোমার মাকে দেখতে পাবে। আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করতে পারলে হিংস্রবৎ রিপুর কাম ক্রোধ মোহ নিমূল হয়ে যাবে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ভেঙ্গে যেমন সূর্যকিরণ দেবে। মানবত্মার তেমনি তমাচ্ছন্ন প্রবৃত্তি ভেঙ্গে দিয়ে তোমার ভেতর নূরের জ্যোর্তি প্রতি বিস্মিত হবে। আর তখন তুমি না ফেরার দেশে মানুষ গুলোকে দেখতে পাবে। প্রবাহমান নদীর পানি দ্রুত ছুটে যাচ্ছে। পাখির গানহীন মগ্ন বালুচরে উলঙ্গ কিশোররা খেলা করছে। দূর দিগন্তে সবুজে শস্যগুলো দোল দিচ্ছে। দারিদ্রের বুক ভেদ করে ¶ুধার কান্না ভেসে আসছে। সাদিয়া বাবার হাত ধরে ভাবছে কত দূর এই অবরোহ শূণ্য। সাদিয়া বলে বাবা মানুষ আসে আর চলে যায়। আমরাও এসেছি আবার চলে যাবো। কেন এই আসা যাওয়া। বাবা করুণ মুুখে সন্তানের দিকে তাকিয়ে বলে এরই নাম জীবন। অলৌকিক সৃষ্টির সম্ভারে অজস্র আত্মা বিস্ময় জগতের ভেতর খেলা করে। তারা মৃত্যুকে জয় করতে পারে না কিন্তু মৃত্যুর সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। মৃত্যু এক গভীর ভালোবাসা জীবনের নিরব সহচর। তাই তারা বার বার ফিরে আসে আবার ফিরে যায় এক অচিন দেশের ঠিকানায়। সাদিয়া দাঁড়িয়ে আছে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সামনে সুদূর অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যত ঘুরছে, গুরুত্বপূর্ণ একটা চলমান সিরিজের ভেতর। সেখানে জীবনের প্রত্যাশা আর মৃত্যুর কামনা বাস করে। বৃত্তের ভেতর এক বৃহৎ চক্রাকারে এটা আদিমকালের মতোই সনাতন। সব বাস্তবতার এক চিরন্তন পুনরুদয়ের মহাভেদ। ধীরে ধীরে শেষ বিকেলে গোধূলী নেমে আসছে কিছু¶ণ পরেই কালো রাত্রির আঁধার ক্রমে ক্রমে পৃথিবীকে গ্রাস করবে। তারপর আস্তে আস্তে যামীনির কান্না থেকে নতুন দিন জেগে উঠবে। শুকনো রুটি হাতে বিবস্ত্র কিশোর হেটে যাবে। অপূর্ণ প্রেমের ছোঁয়ায় নতুন ফুল ঝরে যাবে। তারপরও সাদিয়া তাকিয়ে থাকবে মায়ের ফিরে আসার মমতায়.....।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক
গল্পের সাথে অধ্যিাত্মিক ধারনা...ভালো লাগলো....
মোঃ সাইফুল্লাহ
খুবই সুন্দর। আমার মা গলব্লাডারে ক্যান্সারে আক্রান্ত। আল্লাহর কাছে আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন ও আমার মায়ের শাররিক অসুস্থতার বিষটি মানবিক দিক দিয়ে বিচার করে যে যতটুকু পারেন আর্থিক সাহায্য করবেন । সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা : মোঃ সায়ফুল্লাহ ,সঞ্চয়ী হিসাব নং -১০১৭৪০৪, সোনালী ব্যাংক,মাগুরা শাখা মাগুরা।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।