নগরের উঁচু অট্রালিকার দ্বারে দ্বারে লাখো মানুষ ক্ষুধায় যন্ত্রণায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ আসমানের দিকে তাকিয়ে আকুল ও বিনয় ফরিয়াদ করছে। দরিদ্রতার ভিতর থেকেই জীবনের কান্না ও অনুভুতিকে হারিয়ে ফেলছে। দীপ্তহীন কালো বৃত্তবানের প্রাসাদের জানালা দিয়ে বিলাসী ভদ্রলোকগুলো কৌশলে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে। পুলিশ রনির হাতে হ্যানক্যাপ লাগিয়ে মতিঝিল থানার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েক দিন হলো রনির স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শ্বশুর বাড়ির মানুষ থানাতে মামলা করায় রনিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ৬ মাস আগে ওদের বিবাহ হয়েছে। দীর্ঘদিন ওরা একে অপরকে ভালোবাসতো। বিবাহের আগে ওদের কোন কলহ হয়নি কিন্তু বিবাহের পর নিজ সংসার করতে গিয়ে কঠিন অভাবের মুখোমুখি হয়। দীর্ঘ ৬ মাসের মত ২ জন তেমন ভালো খেতে পাইনি। অর্থের অভাবে ভালোবাসাটুকু পুড়তে শুরু করেছে। রনির অজান্তেই নওরিনের এক বৃত্তবানের সাথে সর্ম্পক গড়ে তুলেছে। নওরিন জানেনা বৃত্তবানদের মন আছে কিন্তু অধিকাংশ বৃত্তবানই বুঝতে ও শুনতে চায়না। তাদের ভেতর চরম ঔদাসীন্যের এক অবহেলা। সভ্যতার মুখোশ ধারণ করে ভিতরে ভিতরে মানুষের সাথে প্রতারণা করে। তারা দৈহিক ও মানুষিক ভাবে সীমা অতিক্রমের পথ দিয়ে জীবনকে হাটায়। রাত গভীর ওসি সাহেব থানায় প্রবেশ করলো। রনিকে থানার ভিতরে একটি রুমে তালা বদ্ধ করে রেখেছে। একজন পুলিশ তালা খুলে রনিকে ওসি সাহেবের সামনে নিয়ে এলো। মায়াবী চেহারা অসহায় রনির মুখের দিকে ওসি সাহেব তাকালো। ওসি সাহেব অন্তরে এক সত্য ইঙ্গিত পেলে জীবনে অনেক খুনিকে দেখেছি অনেক অপরাধিকে চিনতে পেরেছি কিন্তু এই ছেলের ভিতরে তেমন অন্যায় স্পর্শ করছে না। ওসি বললো দেখে তো ভদ্র মনে হয়। কিন্তু কিভাবে নিজের স্ত্রীকে খুন করলে। থানার পাশে ছোট একটি মাঠ সাথে একটি পুকুর বিদ্যুতের ঝলকের কারণে জ্যোৎস্নার সৌন্দর্য় মলিন হয়ে যাচ্ছে। তারপরও যৌবনের ভালোবাসা থেকে রঙিন স্মৃতির সমাহারগুলো নিরন্তর ধ্বনিতে আলিঙ্গন করছে। স্বপ্ন বিভোর তৃষ্ণার ভিতর উজ্জল আকাশ জমিনকে ডাকছে। দূর সেই গ্রাম থেকে যেন কৃষক লাঙ্গল হাতে বাঁশিকে আহবান করছে আর নিস্বর্গ প্রিয়তমা দুদর্শার মর্মপীড়া থেকে জীবনকে বিপদগামী পথে নিয়ে যাচ্ছে। ওসি সাহেবের কথা শুনে রনি নিশ্চুপ। তারপর ধীরে ধীরে মাথা তুলে বললো অসাম্যের বীজ সমাজকে কুলষিত করছে। জীবনে প্রতিটি ধারায় অন্যায় আর অবিচার। অপরাধীরা দেশের মেরুদন্ডকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে চাইছে অসৎ ক্ষমতাধররা মানুষকে মানুষের মানদন্ডে বিচার না করে ক্ষমতার মানদন্ড দিয়ে বিচার করছে। তাই সবার জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। ওসি সাহেব এক রাগান্বিত কন্ঠে বললো এসব বাক্য আমি শুনতে চাইনা। জানতে চাই স্ত্রীকে হত্যা করেছো কেন। রনি মৃৃদু হেসে বললো আমি যদি অসত্যভাবে বলি আমিই নওরিনকে হত্যা করেছি তবে কি আপনার প্রশ্ন শেষ হয়ে যাবে। যদি শেষ হয়ে যায় তবে এই সত্য কথা লিপিব্ধ করে আদালতে পাঠিয়ে দিন আমার শাস্তি হয়ে যাক। ওসি সাহেব নিরব, কারন সত্য জেনে নেওয়াই ভালো। মিথ্যা সবসময়ই সত্য ও আদর্শের কাছে পরাজিত হয়। ওসি সাহেব বললো, ধরে নিলাম আপনি আপনার স্ত্রীকে হত্যা করেনি কিন্তু কে তাকে হত্যা করেছে। রনি থানার জানালা ভেদ করে দূর পৃথিবীর দিগন্তে তাকালো আর চিন্তা করলো কিভাবে সময় ভাগ্যকে পরিবর্তন করছে। কিভাবে কর্ম করলে মানবিক সম্মান আর অধিকার অজর্ন করা যায়। থানায় একজন মহিলা আসামী ঘুমিয়ে আছে রনির কথা তার কর্ণে পৌছাতেই সে জেগে উঠলো এবং বললো এই শহরে বেঁচে থাকার জন্য আমি বহু পথ ঘুরেছি। আমার শান্ত মনটা তীব্র যন্ত্রণার আঘাতে শত শত ছিদ্র হয়ে গেছে। একটি শিশু সন্তান ছিল তার নিরাপত্তা দিতে পারিনি গরিবের স্নেহের সন্তান এ ভাবে ঝরে যায়। ওসি সাহেব বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। দুনিয়া-দারির স্বার্থবাদী রাজনিতিবিদ ধর্মবাজ আমলাতান্ত্রিক শাসকগণ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তারা শুধু মানুষের কল্যানের কথা বলে কিন্তু মানুষের সত্যকার সেবক হতে চায় না। মুখোশের কৌশলে সেবকের ভান করে অভিনয় করে আর অন্ন-বস্ত্রগুলো লুটে নেয়। রনি মহিলার দিকে তাকিয়ে বললো বিশ্বাসী মানুষগুলোকে সিমেন্টেড ঐক্যের মতো সংঘবদ্ধ হতে হবে যাতে সত্যের আন্দোলন অত্যাচারকে সম্মুচিত শিক্ষা দিতে পারে। জাতি নিরব দর্শকের মতো তাকিয়ে থাকলে দেশের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না। ওসি সাহেব এক ক্লান্ত চোখে বললো এই সব কথাগুলো তোমরা আদালতে গিয়ে বলো। আমি জানতে চাই তোমার স্ত্রী কিভাবে খুন হলো। পৃথিবী একা, গভীর রাতও একা, অসহায় গরিবদের তুচ্ছ জ্ঞান করে শাসকরা তাদের বুকে একটি লেবেল মেরে দিয়েছে। এই লেবেল মুছে ফেলার সংগ্রামে বিশ্বভ্রাতৃত্বের এক মহৎ সংঘ গড়ে তুলতে হবে। সত্য বিশ্বাস আর দেশের একতা বদ্ধের কল্যাণ নিয়ে কাজ করাই সেবা ও জেহাদ। রনি বললো আমার স্ত্রী খুন হয়েছে আমিতো নিজেও জানি না। তার মৃতদেহ কোথায় কিভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে কোথায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। ওসি সাহেব বললো মৃতদেহ পাওয়া যাইনি সম্ভাবত তাকে গুম করা হয়েছে। রনি আপনি কিভাবে জানলেন তাকে গুম করা হয়েছে। মামলার বাদি পক্ষ এই কথা লিখেছে। এটা যদি সত্য হয় তবে পৃথিবীর বিশ্বাসী ও সত্যবাদীদের জানিয়ে দিন অবহেলিত মানুষগুলো এভাবে বেঁচে থাকে এবং মৃত্যুবরণ করে। থানায় বন্দি আসামী মহিলাটির নাম পারুল। সে সব কথা শুনছে আর চেয়ে চেয়ে দেখছে আর কিছু বলতে চাইছে। আষাঢ় মাস নদীতে প্রবল স্রোত সুললিত প্রকৃতির শরীর প্রিয়তমার রূপ স্বর্গরাজ্যের মতো বিস্বময় বুড়িগঙ্গাঁ ঢেউয়ের পর ঢেউ তুলছে আর নিরব অপ্রতিবাদে ঢাকা শহরটি দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে তপ্তক্রোধ কুটিল অসন্তোষ যেন আক্রমনাত্বক কলহ বিরহ। বন্দী নারী পারুল বললো আমার শিশু সন্তানটিকে বাঁচানোর জন্য এই নগরে কত বৃত্তবানের কাছে ঘুরেছি কত মানুষ মুখে প্রতিশ্র“তি দিয়েছে তাদের অতি নগন্য মিথ্যা কথা আমি বিশ্বাস করেছি, ভেবেছি সাহায্য পেলেই সন্তানকে চিকিৎসা করাতে পারবো। তারা অত্যাচারি আর অপরাধি বিরুদ্ধে কথা বলে আবার সুযোগ পেলেই মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার টুকু ছিনিয়ে নেয়। গরিবের বন্টনের সামান্য মজুরীটুকু আÍসাৎ করে নিজের পুঁজি মজবুত করে। আকাশের অনেক মেঘ দ্বিধাবিভক্তির ক্রোধে বিধ্বস্ত বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে বিসর্জন মর্মযন্ত্রণায় ব্যাতিথ জীবন গুলো চেয়ে আছে। ওই যেন আলমে হাহুত আলমে আরওয়া আলমে মালায়েক আলমে বর্যাখ আলমে আলায়ে ইল্লীল আলমে সিজ্জীন সমূহ এক স্বরূপ সূত্রজ্ঞানের উর্দ্ধে রহস্যভেদে ইচ্ছা শক্তিকে বিকাশ করছে। ওসি সাহেবকে লক্ষ করে রণি বললো মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যক্তিই দেশে অমান্য আর অন্যায়ের বীজ ছাড়াচ্ছে। মহৎ শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুকে ভেঙে দিচ্ছে। আতœবিরোধ ভাবধারার ভোগবিলাসে লোভীরা অরাজকতার সৃষ্টি করছে তাই দেশ ও সমাজে নেমে আসছে ভয়াবহ অভিসাপ। ধর্মের নাম করে মিথ্যাবাদীরা অধর্মের কাজ করছে আর নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করছে। তাই শেকড়েরর রক্তক্ষরণ জাতিকে প্রবল বেদনায় কাঁদাচ্ছে। বন্দি নারী পারুল বেদনায় কাঁদছে। একসময় বিলাসী আর প্রাচুর্য তার যৌবনকে কিনে নিয়েছিল কিন্তু এখন সে মলিন। অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। বঞ্চিতরা হাজার চেষ্টা করেও নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। পেটের জন্য স্বেচ্ছাচারী আর অপমানের কাছে নিজেকে বিক্রি করতে হয়। কর্ম না থাকলে জীবন যেন বোঝাস্বরূপ অর্থের কাছে পরাস্ত হতে থাকে। থানায় বন্দী নারী চিৎকার করে দেশ ও সমাজকে জানাতে চায় ওই যে মানবপাচারকারী ও ইয়াবা ব্যবসায় উখিয়া টেকনাফের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও তার স্বজনরা শত শত কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসা করছে ওই যে সংসদ সদস্যের পুত্র যার পিস্তলের গুলির বিলাসিতায় গভীর রাতে দুইজন অসহায় মানুষ নিহত হয়েছে। তারা আবার মিডিয়াতে উচ্চকন্ঠে জাতির সেবার কথা বলে আর ভন্ড সেবক সাজে। ক্ষমতাধর মানুষের কথা শুনে ওসি সাহেব বিব্রত হচ্ছে থানার ভেতরে কয়েকজন দারগা ও কনস্টবল ঘুরাঘুরি করছে। থানায় বিচার চেয়ে মামলা করার জন্য একজন নিপীড়ন গভীর যন্ত্রণায় বলে উঠলো আন্তরিক ত্যাগছাড়া কখনো জাতি জেগে উঠতে পারবে না। সব মানুষই যেন মানুষের মানদন্ডে বিচার পায়। তবেই জাতি এক দিন শ্রেষ্ঠ মানবতার দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। অন্যদের কথা শুনতে শুনতে রনি বললো প্রতিদিনই খবরের শিরোনামে দেখি ভাইয়ের হাতে ভাই উৎপীড়ন অথবা খুন। শোষণের নীতি শুধুই ধনি আর গরিবের বিভেদ। অসহায়কে বৃত্তবানের মুখাপেক্ষী করে রাখা হয়। এ এক অসভ্য যুগের আচারণের মতো। এভাবেই বিশ্বমানবের ভেতর অশান্তির সাবধান বাণী না বুঝে আরো বেশী অকল্যানের পথতৈরী করছে। আমরা চাই বিশ্বশান্তির গোষ্টিভুক্ত এক পরিবার। সরল বিশ্বাসের প্রেমে মধুর প্রীতি জড়ানো ভাই ও স্বজন সম্পর্ক। যে ভালোবাসা থেকে অসাম্যের প্রবল প্রাচীর ভেঙে যাবে। সবাই বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার পাবে। শেষরাতে আভা পৃথিবীকে জাগিয়ে তুলছে। সুগন্ধি ফুলের বুকে ভ্রমরগুলো গুণগুণ করে গান গাইছে। না ফোটা কুঁড়ির বাহারী চেতনা প্রেমের ভালোবাসাকে নিরন্তর রাশির ধ্বনিতে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। যুদ্ধে বিজয় পূর্বপুরুষ আগামী সময়কে অপ্রতিরোধ্য আর্শীবাদ দিচ্ছে। যেন বর্ষফলকের মতো আধিপত্যের ধারালো গৌরব নিয়ে জাতি বেঁচে থাকতে পারে। হঠাৎ বিস্ময় সোনালী সকালের রোদে লাল শাড়ি পড়ে এক বৃত্তবানের হাত ধরে নওরিন থানায় প্রবেশ করলো আর চিৎকার করে বললো রনিকে ধরে এনেছেন কেন ? ওর কি দোষ। নওরিণের সাথে বৃত্তবান লোকটিকে দেখে ওসি সাহেব চুপচাপ হয়ে গেলো। কারণ তার নিজের সুবিধার জন্য বহুবার এই বৃত্তবানের কাছে গিয়েছে। বৃত্তবান লোকটি তার পদোন্নতির জন্য অনেক সাহায্য করে দিয়েছে। ওসি সাহেব বললো আপনার স্বজনরা রনির বিরুদ্ধে মামলা করেছে আর মামলাতে লেখা আছে যে রনি আপনাকে হত্যা করেছে। তাই পুলিশ তার কর্তব্য পালন করেছে। রনি ধীরে ধীরে নওরিনের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো আর নম্রকন্ঠে বললো কেমন আছো। এতোদিন কোথায় ছিলে তোমাকে না এ দামী লাল শাড়িতে খুব ভালো লাগছে। নওরিন বললো আমি শুধু তোমাকে মুক্ত করার জন্য থানায় এসেছি। আমি চাইনা কোন মিথ্যা মামলায় তোমার শাস্তি হোক। আমার কথা না ভেবে তুমি মুক্ত হয়ে তোমার জীবনের জন্য চিন্তা করো। রনি বললো তুমিই তো আমার জীবন তুমিইতো আমার সুখ আর শান্তি। নওরিন চিৎকার করে বলে উঠলো চুপ চুপ। দীর্ঘ ছয় মাস আমাদের বিবাহ হয়েছে সবাইকে ফেলে এই ঢাকা শহরে চলে এসেছি, দুই বেলা পেটভরে খেতে পাবো বলে। কিন্তু এই ছয় মাসে প্রতিদিন প্রতিরাতেই আমি অনাহারে থেকেছি কেউতো আমাকে খেতে দেয়নি। এই দেখো এই বৃত্তবান আমাকে খেতে দিয়েছে লাল রঙের শাড়ি কিনে দিয়েছে আরো কতো কি। থানার ভেতর বন্দি পারুল তার শিশু সন্তানের জন্য চিৎকার করছে। বিংশ শতাব্দীর কোটি কোটি মানুষের ক্ষুধার জ্বালা বুকে নিয়ে। অবহেলিত মানুষের করুন ফরিয়াদে ঢাকা শহর যেন কান্নায় অশ্র“ ঝরাচ্ছে। নওরিনকে উদ্দেশ্য করে বললো তোমার মতো আমারও যৌবন ছিল ভালোবেসে গ্রামের এক সুজনকে বিয়ে করছিলাম। এই রাজধানীতে কিছু দিন জীবন যাপন করার পর একদিন সুন্দরী মেয়ে হাত ধরে আমার সেই সুজন পালিয়ে গেলো সেই থেকে আমি একা। প্রতিরাতে যৌবন বিক্রি করে উপার্জন করতে হয়। দয়া মায়া বর্জিত নিষ্ঠুর এই পৃথিবী স্বার্থপরতার ছলনা আর মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আমাদেরকে ভূলিয়ে রেখেছে। অপশক্তির দেয়াল দিয়ে পৃথিবী ঘেরা। রণক্ষেত্রের দেশ প্রেমিকরা আজ কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে। জড় জগত ও আতœার ক্রমবিকাশে মানুষ ভিন্নভিন্ন শ্রেণীতে রূপ নিয়েছে। একাধিক আতœা যেন একাধিক আলো আর আধারের দিকে ছুটে যাচ্ছে আবার একই আলো ও আধারের দিকে প্রত্যাবর্তন করছে। যেন মানবাতœা পরমাত্বার আলোতে নি®প্রভ। অন্তরে বিরাজিত সত্য চেতনা যেন সূক্ষ্ম বিকরণে আসল বন্ধুত্বের সন্ধান করছে কিন্তু সীমার লঘুত্বকে কেউ চিনতে ও বুঝতে পারছে না। রনি বললো অনেক দুঃসময়ের জীবন সঙ্গী তুমি শুধু অর্থের কারণে আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছো। অভাবের টানাপোড়া কি মরমী দুঃখ গাঁথা সময়কে এভাবেই বেদনার হাত ছানি দিয়ে চলে যায়। অনুচ্চারিত অর্ন্তযাত্রার আপ্রাণ লড়াইয়ে আমাদের উত্থান ও পতন কি এভাবেই খন্ড বিখন্ড হয়ে যাবে। অবলম্বনহীন নিঃসঙ্গতার এই অসহায় জীবনই কি আমাদের দিকে তাকিয়ে শুধুই ডাকছে আর পথে আক্রান্ত ও আক্রমনতব্য মানুষগুলোর প্রাণশক্তি চুষে নিচ্ছে। পারুল বললো সাহসী সহযোগি ও প্রিয়তম বিশ্বাসী আর ত্যাগী বন্ধু ছাড়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা কঠিন। যুদ্ধবিধ্বস্থ জীবনের উপর বার বার যুদ্ধ চাপানোই বৃত্তবানদের কাজ। মানুষ জানেনা দোদুল্যমান সময় দাঁড়িয়ে থাকে হেঁটে যায় কিন্তু প্রকৃত সত্য চেনা যায় না। রনি দু:খ ও যন্ত্রণায় বলতে লাগলো জানো নওরিন ছোট বেলায় মা বলতেন বাবা তোর হাসিভরা সুন্দর মুখ যেন চাঁদের জ্যোৎস্নার চেয়েও উজ্জ্বল আভা আমি যতদিন শিশু ছিলে ততদিন মুখে ও শরীরে দীপ্ত আভাছিল। তখনতো অবুঝ ছিলাম জ্ঞান আর বুদ্ধিও অবুঝ ছিল। যৌবনে হাটতে শিখে বুঝলাম শুধু সুখ ও দেহের সুন্দর সুরত নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না। বাস্তবতার ভেতরে অনেক কষ্ট ও যন্ত্রণা। আমার মুখ চিৎকার করে বলতে চায়, জীবনের দু:খের, কথা কখনো নিপীড়নের গোপন কথা, কিন্তু ক্ষমতার কুক্ষিগতরা তা শুনতে চায় না তারা আজীবনই শাসক থাকতে চায়। পারুল কাঁদতে কাঁদতে বললো দেখছো না এ সমাজে নির্যাতনকারীরই আমাদের রক্ষাকারী, বিপদগামীরাই আমাদের পথ প্রদর্শক। যারা আত্যসাৎ করছে তারাই যেন আমাদের উদ্ধারকর্তা, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেন লুটেরারাই আমাদের দাতা আর অপরাধীরাই যেন আমাদের ন্যায় বিচারের সাক্ষ্য। যারা দেশ ও সমাজকে দূর্নীতিতে ভরে দিচ্ছে তারাই যেন মনুষত্বের মানবতাকারী নেতা ও ধর্মের পন্ডিত। রনি কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো ছেলে বেলায় মা কতো দিন কতো রাত্রি অনাহারে থেকে আমাদেরকে খাওয়াতো কিন্তু বুঝতে দিতে না যে তিনি ক্ষুধার্ত থেকে আমাদের খাওয়াতেন। বাস্তবাতায় জর্জরিত সংসারে গামছা পেটে বেঁধে খুব ভালো ও পেটভরে খেয়েছে বলে যা আমাদেরকে সান্ত্বনা দিতেন। পেটে খাবার নেই থাকবার ঘর নেই তবুও বুদ্ধিদীপ্ত মমতাময়ী মাতা আমার কখনো তার স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে যান নাই। সেই মায়ের পবিত্র ভালোবাসায় আর প্রিয় গ্রামেই আমি ফিরে যাবো যেখানে এখনো সত্য বেঁচে আছে যে রক্তক্ষরণ থেকে জাতি আজো রসদ পায়। নওরীন ভারাক্রান্ত হৃদয়ে থানা থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাটতে থাকে। চারিদিকের অপমান লাঞ্চিত ঠাট্রাতামাসা বুকে নিয়ে ক্লান্ত সমাজ দাঁড়িয়ে আছে। অসহায়রা মৃত্যু ও ক্ষুধার্ত মুখোমুখি পৃথিবীকে আলিঙ্গন করছে। নিশ্চুপ স্থির প্রাণহীন বৃত্তবান নওরীনকে ফেলে অন্য কে ছলনাময়ীর হাত ধরে রাজধানীর গলি পরিবর্তন করে হেটে যাচ্ছে। মহান দৃশ্যের অবতারণ ও শৈল্পিক নির্মাতা ক্ষণস্থায়ী জীবনের ঠিকানায় পৌছে দিতে প্রত্যাশাকে নিরুদ্দেশ করে দিচেছ। তারপরও নওরিন অজানার নিষিদ্ধ রাস্তাকে আলিঙ্গন করে অশনি বার্তা থেকে মিথ্যা আশ্রয়ের পথ খুজছে....।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
২১ অক্টোবর - ২০১২
গল্প/কবিতা:
৯৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।