প্রিয়তম সন্তান আমি তোমাকে বলছি

স্বাধীনতা (মার্চ ২০১৩)

এনামুল হক টগর
  • ১১
  • 0
  • ২১
প্রিয়তম সন্তান আমি তোমাকে বলছি
তুমি আমার কথা শোন-
তোমার বয়স এখন নয় বছরের কাছাকাছি
তুমি চতুর্থ শ্রেণীতে লেখা পড়া করো
তোমাদের পাঠ্য সূচীতে স্বাধীনতার কথা
মুক্তিযোদ্ধাদের কথা জাতির ইতিহাসের কথা
তেমন লেখা নেই, লেখা নেই আমাদের পূর্ব পুরুষের কথা
তুমি আস্তে আস্তে উপরের ক্লাসে উঠতে থাকবে
আর ধীরে ধীরে সব ইতিহাস জানতে থাকবে-
জাতির মহানায়কের কথা, অগ্রনায়কের কথা
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা
অনাহারে উপবাসে জেগে থাকা মানুষের কথা
আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের কথা-
প্রিয় সন্তান আমি তোমাকে বলছি
তুমি আমার কথা শোন-
এই বাংলার মাটিতে এখনও প্রতিদিন রক্ত ঝরে
নগ্ন ঘাতক আর সন্ত্রাসের মিলিত বন্ধুত্বে
মৃত্যুর আর্ত চিৎকার ধ্বনি আসে
আলোহীন নিষিদ্ধ জীবনের জীর্ণ ব্যর্থতায়।
পিতার মুখ লজ্জায় অবনত-
এখনও লাশের উপর ভাসে আমাদের স্বাধীনতা
ক্ষীণ আলোয় নদীর মাঝি ছুটে যায়
গঞ্জের বাজারে মানুষের বুকে এখনও জমে দুঃখ
ঘুমহীন এই স্বদেশের মাটির বুক ছুঁয়ে
প্রিয়তম সন্তান আমি তোমাকে বলছি
তুমি আমার কথা শোন।
এখনও দুঃস্বপ্নের ভেতর আমি শুনি যুদ্ধের আওয়াজ
হাত কাটা কিশোরের করুন আর্তনাদ
মাতৃত্বের আমূল মাটির বেদনায়
নগরের বুকে অবুঝ শিশুরা ঝরে পড়ে
অতন্দ্র রাতে আগুন জ্বালা প্রহরে।
ক্লান্তির আঁধারে নিরত্তাপ এই পৃথিবী
বিদায় বিষণ্ণ বিরামহীন যাত্রা করে
সুহাস বক্ষের উপর তার ক্লান্ত চোখ
আঁকা বাঁকা রাস্তার মতো চলমান
ভীষণ স্রোতে নিঃসঙ্গ একা একা
প্রিয়তম সন্তান তুমি শুনতে পাও
সে কান্নার শব্দ-
তোমার পূর্ব পুরুষের চোখের গহীনে ছিল
অসংখ্য ক্ষত-বিক্ষত চিহ্ন
তারা গোপনে লুকিয়ে রেখেছিল অচিন বেদনা
এক তন্দ্রাহীন অক্লান্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে !
দুর-বহুদূর নীল অন্ধকারে সারারাত
হাজার কৃষকের স্বপ্ন বুকে ফসলের প্রত্যাশা ছিল
জননীর বুকে ছিল উল্লাসের ধ্বনি
প্রিয়তম মুখ শেফালী ঝরা প্রভাত জেগে উঠতো
মাটিতে সৌরভ ছড়াতো অতিক্রান্ত রাত্রির আধার ভেঙে
তাদের অধিকারের আর্তনাদে আজন্ম শ্লোগান ভেসে আসে
তুমি কি শুনতে পাও প্রিয়তম সন্তান
তাদের অধিকারের কথা-
বিচলিত গ্রাম আর নগরের বুকে আলো জ্বালাতে
ভালো বেসে যুদ্ধে গিয়েছিল তরুণ যুবক
প্রখর সূর্যের আলোতে সে জ্বলে উঠেছিল মৃত্তিকার বুক
পবিত্র বীজের অংকুরে নোতুন চারাগাছ
আজন্ম স্বাধীনতার গান গেয়েছিল
তখনই ঘাতকরা আমার স্বদেশকে আক্রমণ করলো
আমাদের জাতিকে রক্তাক্ত করলো
আমরা সূর্যের শিখার মতো জ্বলে উঠলাম
রোদদের দাউদাউ উত্তাপে।
মাটির মমতায় সংঘবদ্ধ হলাম
প্রিয় দেশের সবুজে
আশার ধ্বনি বিজয় কণ্ঠ শোনালো
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম
সুগঠিত জাতির সারিতে
যুদ্ধের তলোয়ার শানিত করলাম
এবং এক রক্তাক্ত স্বাধীনতা অর্জিত হলও।
শক্ররা অন্ধকারে লুকালো
আমরা জেগে উঠলাম
উজ্জ্বল রৌদ্রের উদ্ভাসিত আলোয়
দেশ প্রেম মাটির প্রতি নতজানু হল
তখনই নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করা হল
সত্যের ভাষণ স্বাধীনতার মহানায়কে
ধীরে ধীরে হত্যা করা হল
স্বাধীনতার অগ্রনায়কদের।
প্রজ্বলিত সূর্যের আলো নিভে গেল
ঘাতক শক্ররা আবার জেগে উঠলো
অভিশপ্ত রাত্রির বিষাদ তরঙ্গের মতো
আজন্ম অবক্ষয় নগরের রাজপথে
চতুর্দিক ক্ষুধা শস্যহীন মাটির বক্ষ
নিষ্ফল বৃক্ষরাজি অনাহারী পাখি
আদিগন্ত বাংলার প্রিয়তম পিতা প্রিয় জননী
ইতিহাসের মাটিতে ঘুমিয়ে পড়লো।
প্রিয়তম সন্তান আমি তোমাকে বলছি
তুমি আমার কথা শোন-
পরি সমাপ্ত যুদ্ধে কথা এখনও শেষ হয়নি
অনিবার্য সুন্দর্যের সুকন্ঠ ধ্বনি তুমি এখনো শোননি
গর্ভবতী বোনের ধর্ষিত লাশ তুমি সেদিন দেখনি
ভাসনাম পিতার লাশের পাশে শমিরনের মৃত দেহ
বিভৎস সেদিনের সেই রূপ তুমি দেখনি
আবুল হোসেন এখনও নতুন বাজার থেকে ফেরেনি
নিহত টিংকুর খবর কেউ জানেনা
মালেকা বানু এখনও বেঁচে আছে নিজেকে বিধবা ভাবেনা
তার প্রিয় সন্তান এখনও বাবাকে খোঁজে
এখনও আঁধার রাতে শিশুরা কাঁদে
আহত নদীর বুকে ক্ষত চিহ্ন বিধ্বস্ত স্রোত
পানির বুকে ঢেউ তোলে মৃত লাশের গন্ধ
কত বেওয়ারী লাশ মাটিতে পচে গিয়েছিল
নিষ্ঠুর ঘাতকের বারুদের বিষে জ্বলে ছিল কত গ্রাম
প্রিয় সন্তান তুমি শুনছো আমি তোমাকে বলছি-
বাংলার মাটিতে বৃটিশ বিরোধী নিঃসঙ্গ দেশ প্রেমিক
তিতুমীরের বুক থেকে প্রথম রক্ত ঝরেছিল
রক্ত ঝরে ছিল সিরাজুদ্দৌলা, মোহনরায়ের বুক থেকে
আরও আরও আরও অনেকের
কত ঝরা পাতার বুকে মৃত দেহের কন্না
আঁধার পথের পেছনে পেছনে দূর্বিনীত বিশ্বাস ঘাতক
কত বিনিদ্র রাত প্রেম হারা যুবক
আকাশ জুড়ে কালো মেঘ
শব্দহীন মৃত্যুর মত নিরব ক্ষত
উত্তাপহীন অসুখে জড়ানো
দেহের ভেতর শীতল কান্না
দিনের রোদ ঝরে পড়ে সন্ধ্যার বুকে
তখন আঁধার নেমে আসে
ছিঁন্ন ভয়ানক অন্তরালে জ্বেগে ওঠে এক ঘাতক
রক্তে বিশ্বাসে বিষ ঢালে ছিঁড়ে ফেলে জাতির শেকড়।
প্রতিকুল অবিশ্বাসী বৃক্ষের ছায়ায়
আমাদের এই বসবাস-
ঘামের গন্ধ ছড়ায় ক্লান্তির অবসাদ
বিষফল বৃক্ষ তৃষ্ণায় কাঁদে
কঠিন মাটির অক্ষম বেদনায়
গ্লানির স্পর্শে জেগে ওঠে চাঁদের করুন হাসি
পৃথিবীর রাত জানে বিশাল অনিদ্রার কি শোক।
দুর্যোগ অন্ধকার ভাঙা এক একটা প্রতিজ্ঞা
কঠিন তিমিরে যাত্রাছিল আমাদের সংগ্রাম
ভেঙে দেয় বিষাদের ধ্বনিময় সুরে
তবুও প্রিয়তম মূখ হৃদয়ে আঁকি
দুঃখের রঙ দিয়ে ভালবাসার ঘর বাঁধি
মাটি রঙে স্বদেশের ছবি আঁকি
অনেক স্বপ্ন দিয়ে কষ্ট দিয়ে নতুন নির্মান করি
তোমাদের আগামী দিনের সুন্দর পথ
প্রিয়তম সন্তান আমি তোমাকে বলছি
তুমি আমার কথা শোন-
হৃদয়ের মর্মমূলে ছবি আঁকো
তোমার নিবিড় বিশ্বাসের ঠিকানায়
নির্জন হৃদয়ের একটি ছোট ঘরে
বাঁশি বাজাও ধ্বনি তোল
চেতনার লাল মুখখানি জ্বলে উঠুক।
জীবনের শ্রমগুলো শস্য বীজের খোলস ভেঙ্গে
মাটির দেহে অংকুরিত হোক সবুজ গাছ
ভেঙে চুড়ে ধাবমান নিজস্ব গতিতে বেড়ে উঠুক
নিঃশ্বব্দের আলো ছড়াক স্বপ্নের পথে
মৃত্যুর অগ্নিবিষ হোমানোল শিখায়
অশুভ বৃক্ষকে পেছনে ফেলে
জীবনের ধাবমান আদর্শ যাত্রায়
প্রিয়তম সন্তান তুমি হেঁটে চলো
মানুষের চোখের নিদ্রারেণু ভেঙে
অপেক্ষার আলো জ্বালাও মাধুরী প্রেমে
পূর্বাভাস জন্মের শেখরে বেড়ে ওঠা
তোমার বংশের কালো ক্ষত চিহ্ন মুছে
তবে শেষ হবে বেদনা দিন
ফসলে ভরে উঠবে মাঠ
অহিংস প্রেমে জেগে উঠবে জাতি
সবুজ সতেজ এক সূর্যময় সুন্দর আগামী
অনর্গল ছড়াবে আলোর জ্যোতি
দীর্ঘ আঁধার রজনী মুছে যাবে
আলোর প্রভাতে দুঃখরা কেটে যাবে
প্রিয়তম সন্তান তুমি পাবে স্নেহমুগ্ধ নতুন সকাল।
চাষাবাদের উপযোগী ফসলের মাঠ
প্রিয়তম অমিত সন্তান আমার
তুমি হেটে যাও হেটে যাও
এক সুস্থ ফুলের বুকে জাগিয়ে তোল আমাদের বাংলাদেশ।
আঁধার কেটে যাক স্বচ্ছ আলো ফিরে পাক চাঁদ
চন্দরের স্নিগ্ধ মাধুরী প্রথম জোছনার হাসি
মৌশুমি নদীর শিমুল ফোটা তীরে।
শেষ স্মৃতি চিহ্ন ঝরা বকুলের গন্ধে
স্নেহময় হাতের বিনীত পুষ্প মমতা
সত্যের উদগত নতুন অংকুরে জেগে উঠুক
এক প্রত্যয় প্রদীপ্ত জীবন।
অতীত সমকাল এক চৈতন্যে মিশে
মাটির ললাট স্পর্শ করে আগামীরা
হেটে যাক তোমার সাথে
প্রিয়তম সন্তান আমি তোমাকে বলছি
তুমি আমার কথা শোন-
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ ইকরামুজ্জামান (বাতেন) অনেক বড় কবিতা চমৎকার লিখেছেন ভাই । ছেলেকে স্বাধীনতার নছিহত
মোঃ কবির হোসেন চমত্কার কবিতা. ধন্যবাদ.
সুমন ভাল লিখেছেন। গুছিয়ে কলেবর আরেকটু ছোট রাখতে পারতেন।
সূর্য বড় লেখায় যেটা হয় "ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারা" এ কবিতায় সেটা হয়নি। ধারাবাহিকতায় সুন্দর ভাবেই এগিয়েছে কবিতা। রূপকে সেই সময়ের পুরো বাস্তবতাই উঠে এসেছে "গর্ভবতী বোনের ধর্ষিত লাশ তুমি সেদিন দেখনি ভাসনাম পিতার লাশের পাশে শমিরনের মৃত দেহ বিভৎস সেদিনের সেই রূপ তুমি দেখনি আবুল হোসেন এখনও নতুন বাজার থেকে ফেরেনি নিহত টিংকুর খবর কেউ জানেনা মালেকা বানু এখনও বেঁচে আছে নিজেকে বিধবা ভাবেনা" আবার "মাটির ললাট স্পর্শ করে আগামীরা হেটে যাক তোমার সাথে" অতীত মনে রেখে ভবিষ্যতে এগুনোর আহবান ও সুন্দর করেই ব্যক্ত হয়েছে। ভাল লাগলো কবিতা।
হান্নান শাহ আরো সম্পাদিত হতে পারতো। বেদরকারী লাইনও রয়েছে।
এশরার লতিফ সুন্দর শক্তিমান এবং বিরাট পটভূমির কবিতা। তবে আরেকটু কম দৈর্ঘ্য নিয়েও সারা যেত। অনেক ধন্যবাদ।
তানি হক অসাধারণ কবিতা ...একটু অন্যরকম উপস্থাপনায় ..দারুন শিক্ষা মূলক কবিতা ...খুব ভালো লাগলো ...ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা আপনাকে
নাইম ইসলাম অনেকটা ইতিহাসের মত করে নবাগতকে অমিয় কবিতার বাণী শোনালেন কবি। স্বাধীনতার পরতে পরতে যে বাস্তবতা ছিল সেইসব । শেষে এসেও অহিংস প্রেমে জাতি জেগে উঠবে এই আশাবাদ করেছেন । এত কিছুর বর্ণনা দিতে গেলে কবিতার আয়তন বড় হয় বৈকি! অনেক ভালো লাগলো টগর ভাই...
তাপসকিরণ রায় দীর্ঘ কবিতা,মনের সব কথা বিষয় ধরে বলা হোল--ভাব ভাষা ভাবনা সব মিলে বেশ ভালো লাগলো।ধন্যবাদ কবিকে।
মিলন বনিক কবিতার বিশালতায় মনোযোগী পাঠকে কিছুটা অমনোযোগী করলেও কবির দৃষ্টিভঙ্গি আর কবিতার গাঁথুনি সত্যিই মুগ্ধ করেছে...অনেক খতা উঠে এসেছে...খুব ভালো লাগল টগর ভাই...শুভকামনা....

২১ অক্টোবর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৯৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪