মহান সভ্যতার ভেতর এক ভাঙ্গা আঁধার সময়কে দাসত্ব করে রেখেছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের ইতিহাসের ভেতর কোন উদীয়মান শূন্যতা খেলা করে। মন্টু, দুলাল, লিটন রবি শফিক আর নীলা বসে আছে। তেমাথার শেষ গ্রাম বকুলপুরের মাঠে। মন্টু কসাই প্রতিদিন ভোর বেলায় দুই থেকে তিনটি পশু জবাই করে পাবনা শহরের বড় বাজারে বিক্রি করে। দুলাল কবি প্রতিদিন কবিতা লেখে। রবি শিল্পী মানুষকে গান শুনায় আর লিটন আইনজীবী। মানুষকে আইনের সহায়তা করে। শফিক ডাক্তার মানুষের সেবা করে। আর নীলা শহরের ধ্বনি মানুষের মেয়ে ওদের সবার সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে।
মন্টু কসাই মনে মনে নীলাকে ভালোবাসা। নীলার সাথে কেউ কথা বলতে চাইলে সে সন্দেহ করে এবং মন ভারী করে থাকে। অন্য বন্ধুদের কাছে তার বদনাম করে। এভাবে মন্টু কসাই সব বন্ধুকেই সন্দেহ করতে থাকে।
তাই সবার সাথে মন্টুর দূরত্ব বেড়ে যায়। সন্ধ্যার পর যে দিন সে একা থাকে সেদিন সে শুকনো খেয়ে নেশা করে আর নীলা নালা বলে চিৎকার করে।
নীলা হয়তো আজো বুঝেনি মন্টু কসাই তাকে ভালোবাসে।
মন্টুর পরিশ্রান্ত হৃদয়ে আত্মপ্রেম খেলা করে। অতৃপ্ত মলিন এক দাসত্বের জগতে। ধোঁয়াসার ভেতর অতীত স্মৃতিরা তাকে ডাকে। প্রাণহীন পুরনো দিনের কথাগুলোর সাথে। মন্টু নেশায় মাতাল হয়ে রূপকথা রোড দিয়ে হেটে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় রাস্তাটি জন্যশূন্য মনে হচ্ছে।
নেশার ভেতর মন্টু কসাই ¯^প্ন দেখে নীলা যেন তাকে ডাকছে উদ্দীপ্ত প্রেম আর ভালোবাসা দিয়ে।
মন্টু কসাই সেই প্রেমের মধ্যে অšে¦ষণ করতে করতে রা¯—ার পাশে ড্রেনে পড়ে যায়। দুগন্ধময় ড্রেনের ভেতর থেকে বিভিন্ন পোকা মাকড় এসে মন্টুকে ঘিরে ধরলো। মন্টু কসাই মাতাল অবস্থায় জোরে জোরে আবোল তাবল কথা বলতে লাগলো।
রা¯—া দিয়ে মন্টুর বন্ধু দুলাল হেঁটে যাচ্ছিল মন্টুর কণ্ঠ শুনে সে এগিয়ে গেলো। ততক্ষনে মন্টুর প্যান্টের ভেতর দিয়ে জোক ঢুকে পড়েছে এবং কামড়ে ধরেছে। দুলাল কয়েকজনের সহযোগিতায় মন্টু কসাইকে উপরে তুলে নেয় এবং রক্ত ক্ষরণের কারনে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়।
হাসপাতালে চিকিৎসা অবস্থায় মন্টু কসাই ঘুমিয়ে পড়ে এবং ঘুমের ভেতর স্মৃতিময় অতীত কালের এক ¯^প্ন দেখে। যুদ্ধের সময় একদিন পাকিস্থানী মিলিটারীরা তার নানীর কোল থেকে তাকে নামিয়ে বলেছিল এই লেড়কা কাপড়া উঠাও এই বলে মিলিটারীরা তার হাফপ্যান্টের নীচ দিয়ে নুনুর খোঁজ করে এবং লাঠি দিয়ে নেড়ে চেড়ে নুনু দেখে। তারপর একদিন ¯^াধীনতা বিরোধীরা তার পাচার উপর লাঠি দিয়ে দুটি বাড়ি মেরে ছিল। ¯^প্নের ভেতর সে আরো দেখে নীলা তাকে ডাকছে। প্রাণের অন্তর্গত পৃথিবীর দূরবর্তী অঞ্চল থেকে অ¯^চ্ছ মাটির বুকে ফসলের নীরবতা, যেখান থেকে জন্ম হয় দিন ও রাত্রি শুভ আর অশুভ।
ঈশ্বরের অতল গহŸরের রহস্য ভেদ পরিমাপহীন শ্রেণীর বিভাজন রেখা শৃক্সখল আর মাটির ভেতর মাটি রঙ ঘুরছে, তৃষ্ণার্ত আলোর প্রকাশে। ত্বরাম্বিত নদী বহমান ধুসর জগত তন্দ্রাচ্ছান্ন ¯^র্গীয় জ্ঞানের প্রতিধ্বনি এসে মধুর ঘুম ভেঙে দেয়। তখন শেষ রাত্রি। আর কিছুক্ষণ পরেই শহরের বাজারে গিয়ে মন্টুর মাংস বিক্রয় করার কথা। কিন্তু মন্টুর শরীর খুব খারাপ তাই সে আজ বাজারে যাবে না। সকাল হলে সে বাড়িতে ফিরে যাবে। এক সময় মন্টু বাড়িতে ফিরে যায় এবং সারাদিন বিশ্রাম করে। শেষ বিকেলে সে শহরের পথে হাটতে হাটতে এল,এম,বি মার্কেটের সাদের উপর গিয়ে বসে। মন্টুর হাতে একটি বাঁশি আছে। ছোট বেলায় মন্টু খুব ভালো বাঁশি বাজাতো। তার মনে আজ খুব দুঃখ, নীলার কথা মনে পড়ছে। তাই সে ছাদের উপর বসে বাঁশি বাজাতে থাকে। তার বাঁশির সুরে প্রস্ফুটিত হচ্ছে শোকার্ত ফুল। প্রাণের ওষ্ঠগুলোর উপর বিবর্ণ অনুভূতি লজ্জা ছড়াচ্ছে। অচিন যৌবনের গভীরে কে যেন গান গাইছে প্রকৃতি বনভতি আর আকাশের দিকে চেয়ে।
হঠাৎ মন্টুর চোখে পড়লো কয়েকটি কিশোর বানী সিনেমা হলের দিকে যাচ্ছে। এই বাণী সিনেমা হলে মন্টুর কিশোর বেলায় একদিন সে সিনেমা দেখতে এসে হলের ভেতর প্রস্রাবের জন্য প্রচন্ড বেগ আসে। তারপর প্রসাব করার জন্য হলের ভেতরে বাথরুমে যায় এবং প্রসাব করতে গিয়ে প্যান্টভরে পাইখানা করে ফেলে। সেই স্মৃতিময় দিনগুলো কিশোরগুলোকে দেখে মন্টুর মনে পড়ছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে ববি, দুলাল, লিটন আর শফিক এলো। মন্টুর মন খুব খারাপ আজ সারাদিন নীল ফোন করেনি। রবি বলে নীল আজ আমাকে ফোন করেছে, দুলাল বলে নীনা গতকাল আমাকে ফোন করেছিল, লিটন বললো আজ নীলার মামার বাসায় গিয়েছিলাম কথাগুলো শুনে মন্টুর মন শুকিয়ে গেলো। সে ভাবে নীলা না জানি আমার চেয়ে ওদেরকে অনেক বেশী ভালো বাসে। তাই সে মনে মনে কষ্ট পায় এবং তার একজন খুব পরিচিত বন্ধু মহিলা কমিশনারের কাছে ছুটে যায়, মনের দুঃখ ভোলার জন্য এবং মহিলা কমিশনারকে নিয়ে মেন্টাল হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় বেড়ায়। এক সময় পদ্মানদীর তীরে গিয়ে দাঁড়ায়। পদ্মার অথৈই পানি তাকে পেছনের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। মনে পড়ে কিশোর বেলায় নিজ গ্রামের বাড়ী ফরিদপুরের বড়বিলে কিশোরী রোজিনার সাথে জোয়ারের পানিতে সে লেওটা হয়ে খেলা করতো। রাজশাহী শহর থেকে এক তরুণী তাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পদ্মার চরে। আজ সেই দিনগুলো তার মনে বড়ই বেদনা দেয়। সন্ধ্যায় মহিলা কমিশনারকে বাড়ি পৌছে দিয়ে মন্টু নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। এবং প্যারাডাইসের মিস্টির দোকানে সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এমন সময় সেশুনতে পেলোÑ এই মন্টু দাঁড়া!
সে পেছনে ফিরে দেখে যে নীলা। অমনি মন্টু থমকে দাঁড়ায় এবং ফোঁপাতে ফোঁপাতে কাঁদে আর বলেÑতুই আমাক জীবনে অনেক দুক্কু দিছিস।
নীলা বলেÑ তুই যে আমাক ভালোবাসতু তাকি কুনোদিন কইছস? যুদ্ধের বছরে যেবার তোক পাকিন্থানি মেলেটেরিরা মাইরে তোর কাপুড় খুলে ফেললে, তহনও তো তুই আমাক ভালোবাসার কতা কসনেই। আর আজ কচ্ছিস, তুই আমাক ভালোবাসিস। আমার এহুন ১১ডা ছাওয়াল-মিয়ে!
মন্টু বলেÑ মেলেটারিরা আমাক মারিছিলে তাও তুই দেখিছিলু। আমাক লজ্জা দিলু। এই বলে আবার মন্টু ফোঁপাতে ফোঁপাতে কাঁদতে থাকে।
নীলা মাথায় হাত দিয়ে আদর করে আর বলেÑতোর জন্য চকলেট কিনিছি, ধর খা!
মন্টু চকলেট খেতে খেতে বাড়ি চলে যায়। ছেলেবেলা থেকে নীলাকে ভালোবেসে এখন সে বড় ক্লান্ত। নীলা এখন ঢাকায় থাকে এগার সন্তানের জননী ¯^ামী শিল্পপতি মাঝে মাঝে সে পাবনায় নিজ বাড়িতে আসে। মন্টুর দুই মেয়ে তিন ছেলে ছেলেরা মন্টুর সাথে মাংস বিক্রয়ের কাজ করে। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তার বৌ বেশ সুস্থ্য।
এই সুস্থ্যতার কারণে নীলাকে তার বারবার মনে পড়ে কিন্তু নীলা তাকে ভাইয়ের মত দেখে। নীলা পাবনা এলে তার সাথে দেখা করে অনেক গল্প করে জীবনের স্মৃতিগুলো নিয়ে দুঃখ করে। পাশাপাশি নীলা মন্টুর বন্ধুদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করে। টেলিফোনে গল্প করে। এতে মন্টু বন্ধুদের উপর এবং কখনো কখনো নীলার উপর ক্ষুব্ধ হয়।
পরের দিন বাজারের কাজ শেষ করে মন্টু এল,এম,বি মার্কেটে এসেছে। অন্যান্য বন্ধুরাও এই মার্কেটে আসে এবং চা কপি আর সিগারেট পান করছে।
এমন সময় নীল দুলালকে ফোন করে অনেকক্ষণ গল্প করছে। মন্টু বুঝতে পারে নীলা ফোন করেছে। দুলালের সাথে অনেক ক্ষণ গল্প করা দেখে সে ক্ষুব্ধ হয়। দুলাল বলে মন্টুর অবস্থা খুব খারাপ।
সে পাকশি গিয়ে ট্রেন লাইনে মাথা দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে আমাদেরকে জানায়। নীলা বলে পাকসি এসে ট্রেন লাইনে মাথা দেওয়ার দরকার কি। চাটমোহর ষ্টেশনে গিয়ে ট্রেন লাইনে মাথা দিলেইতো পাড়ে। দুলাল বলে চাটমোহর ট্রেন লাইন অনেক উঁচু ওখানে মাথা দিয়ে মরলে ব্যাথা বেশী পাবে তাই পাকসি ট্রেন লাইনে গিয়ে মাথা দেবে। কথা বলতে বলতে দুলাল বলে মন্টুর সাথে কথা বল।
এই বলে মন্টুর হাতে ফোন ধরিয়ে দেয়। মন্টু বলে আল্লাহর কিরে আমি ট্রেনের নীচে মাথা দিয়ে মরতে চাইনি। শালারা সব মিথ্যে কথা কচ্ছে। নীলা বলে তুই নাকি লতিফের কাছে মাংস বেচা বাঁকি টেকা আনবের গিছিলূ। আর লতিফ টেকা না দিয়ে তোক চাকু লিয়ে তারা করেছে। তারা খায়ে নাকি তোর প্যান-ম্যান খুলে গেছে।
মন্টু মিথ্যে কথা আর তুই দৌড়ে পালিয়েছিস মিথ্যে কথা শালারা আমাকে পাগল পায়ছে। এতো কথা শুনতে শুনতিতো আমি পাগল হয়ে যাবো। ববি গান গাইতে থাকে। সবাই মন্টুর কথায় আনান্দ করে। এক সময় লিটন বলে মন্টু চল যাই আগামী কাল সকাল করে আদালতে যেতে হবে।
মন্টু লিটনের সাথে হাঁটতে থাকে আর ভাবে বাড়ীতে খুব অশান্তি। বৌ দেখতে পারে না। শরীরটা পরীক্ষা করাতে হবে। পরের দিন সকালে বাজারের কাজ শেষ করে মন্টু ডা. শফিকের কাছে যায় এবং মনের সব কথা খুলে বলে। ডা: শফিক তাকে ভিটামিন ঔষধ দেয় এবং বলে রাত্রি খাওয়ার আগে গরম চায়ের সাথে মিশিয়ে খাবি। তারপর আধঘন্টা পর এক গ্লাস গরম দুধ খাবে দেখবে শরীর ধীরে ধীরে সবল হচেছ। মন্টু মনের আনন্দে ঔষধ নিয়ে গরম চায়ের সাথে মিশিয়ে খায় এবং কিছুক্ষণ পর এক গ্লাস গরম দুধ খেয়ে বৌকে বলে তুমি সব সময় আমার পাশে পাশে থাকিস কারণ আজ আমাদের খুব আনন্দের দিন। বৌ খুব খুশি হয় এবং মন্টুর সাথে সময় কাটাতে থাকে। মন্টুর শরীর আস্তে আস্তে সবল আর গরম হতে থাকে এবং মনে মনে আনন্দ অনুভব করতে থাকে। সময় যেতে যেতে কিছুক্ষণ পর মন্টুর পেটের ভেতর গরগর করে ডাকে উঠলো। অমনি মন্টু অশান্তি বোধ করতে লাগলো এবং এই অশান্তির মধ্যে মন্টু বদনা নিয়ে দৌড় দিয়ে পাইখানার দিকে ছুটলো। শুরু হলো পাইখানা। মন্টু পাইখানা যায় আর আসে যায় আর আসে। এভাবে রাত শেষ হতে লাগলো আর মন্টু ক্লান্ত হয়ে পড়লো। মন্টুর বৌ মন্টুকে স্যালাইন আর টেবলেট দিচ্ছে কিছু হচ্ছে না। একসময় মন্টু অসুস্থ অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়লো এই সুযোগে বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করলো। দুই দিন হাসপাতালে থাকার পর মন্টু সুস্থ হয়ে উঠলো এবং কবি বন্ধু দুলালকে সাথে নিয়ে পাকসি রেল লাইনের পাশে পদ্মা নদীতে বেড়াতে গেলো। দুলাল বলল বন্ধু শুকনো এনেছি খাবি। খেয়ে দেখ সব দুঃখ ভূলে যাবি মনে আনন্দ পাবি।
মন্টু বলল বলিস কি সব দুঃখ ভুলে মনে আনন্দ পাবো তবে দে, খেয়ে দেখি। দুলাল সিগারেটের ভেতর শুকনো ভাবে মন্টুকে খেতে দেয়, মন্টু সিগারেটে ভরা শুকনো গুলো আরাম করে খায়। খেতে খেতে এক সময় তার মাথা ঘুরে যায় মন্টু বুঝলো তাকে গাজা খাওয়ানো হয়েছে।
এক সময় মন্টু আকাশকে বাতাস বলছে বাতাস কে পানি বলছে পানিকে মাটি বলছে তারা মাথা ঘুরছে এবং সে শুন্যতার মধ্যে দেখছে নীলা অন্য পুরুষের সাথে হাত ধরে দুর দেশে চলে যাচ্ছে।
তার যৌবিন আনন্দের মধ্যে এক মরিচিকা খেলা করছে, ক্ষুধার অনুভব জাগাচ্ছে। নিগুঢ় এক ভালোবাসা তাকে শূণ্য করে দিচ্ছে। দেহের ভেতর শুধু কালো ছায়া খেলা করছে আর মায়ার তৈরী করছে। রহস্য দর্শনে অচেতন মানুষ হেঁটে যাচ্ছে।
এমন সময় মন্টু চিৎকার করে বললোÑ দুলাল তুই, আমাকে গাঁজা খাওয়ালু! আমি আমার বৌর কাছে সব কথা কয়ে দেবো।
দুলাল বললোÑ ওই দেখ, রেললাইন দিয়ে নীলা হেঁটে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি ডাক দেÑ। নাহলি চলে যাবিনি-।
নীলার কথা শুনে মন্টু জ্ঞানহারা হয়ে যায়। একই সাথে সে সব কথা ভুলে যায়। অতঃপর সে ভূতগ্রস্থ মানুষের মতো নীলা-নীলা বলে ট্রেন লাইনের উপার দিয়ে ছুটতে শুরু করে। তার এহেন উন্মাদের ন্যায় ছুটে চলা দেখে অনেকে তাকে এবটা বদ্ধ উন্মাদ ভাবে। এবং তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরে থাকার চেষ্টা করে।
এমন সময় স্টেশনের নিরাপত্তারক্ষী এসে মন্টুকে আটকালো এবং তাকে ক্ষাš— করতে যখন মুখের কথায় কাজ হলো না, তখন তারা তাকে নির্দয়ভাবে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেললো। অতঃপর তারা অল্প সময়ে বুঝতে সক্ষম হলো লোকটা আদতে পাগল বা উন্মাদ নয়; বরং লোকটা গঁজ্ঞিকা সেবন করেছে। তার চোখ দুটো রক্তার্ভ এবং ঠোঁট দুটি শুকনো দেখাচ্ছে। কাজেই তারা তাকে হাজত খানায় নেবার বদলে তার সেবাশ্রæষায় মনযোগ দিল এবং তাদের একজন দৌড়ে গিয়ে পাশেরএকটি মুদির দোকান থেকে খানিকা বাঘারে তেুঁতুল এনে পানিতে গুলিয়ে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করলো।
প্রথমত নিরাপত্তা রক্ষীদের কথায় রাজী না হওয়ায় অর্থাৎ তেঁতুল গোলা পানি পান করতে না চাওয়ায় তারা তাকে মৌখিকভাবে ভয় দেখালো এবং তাতেও যখন ফল হলো না, তখন তাদের একজন হাতের মোটা রুল দিয়ে মন্টুর পশ্চৎাদেশে গোটা দুই ঘা দিতে বাধ্য হলো। ইতিমধ্যে সেখানে যথেষ্টর বেশি কৌতূহলী লোকজন জমে গেছে। তাদের মধ্যে একজন মন্টুকে চিনতো। সে চিৎকার করে নিরপত্তারক্ষীদের উদ্দেশ্যে বললো, পুলিশ ভাই লোকটাকে আর হেস্তানেস্তা করবেন না। ও একটা পাগলই।
পাগল!
-আরে ভাই বোঝবিুঝির কি আছে। এই ঘটনার পর মন্টু সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে যখন নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছালো, তার বৌ বেচারি তার হতকাব্যিক অবস্থা দেখে তাকে আর কোনো কিছু না সুধিয়ে সোজা বাথরুমে ডুকিয়ে দিয়ে তাকে একরকম বিবস্ত্র করে মগমগ পানি তুলে তার টেকো মাথায় চাঁদির উপর ঢালতে থাকলো। এতে মন্টু খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠলো। এবং খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিছানায় গিয়ে বেঘোরে নাক ঢাকাতে থাকলো।
পরদিন সকালে তার ঘুম ভাঙ্গে এবং যথারীতি সকালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নত্ াসম্পূর্ণ্ করে সে বাজারের মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। সকাল ছিল, নির্মল, সূর্য ধীরে ধীরে মাথার উপরে উঠছে, চারদিকে নানা পাখপাখালি ডাকছে। রাস্তা দিয়ে যথেষ্ট পথচারী ছিল, বাচ্চা ছেলেমেলেয়া তাদের স্কুলের দিকে যাচ্ছিল। তাদের বইয়ের ব্যাগ ইত্যাদি দেখে মন্টুর হঠাৎ করে কেন জানি ছেলেবেলার কথা মনো পড়লো। আর তখনই যেন তার বুকের ভেতরটা হু-হু করে বেদনায় ভরে উঠে কারণ সে ছেলেবেলায় লেখাপড়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ পায়নি। কেউ তাকে অই ব্যাপারে কোনো উৎসাহ দেয়নি। যার জন্য তার এই বয়সে নিজের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিষয়ে তার ভেতরে কোনো প্রেরণা-আগ্রহ জন্মায়নি।
শিক্ষাজীবনের জন্য এক সূদূর পথের দিশায় অনন্তকালের আবর্তনে ছুটে যায় সমীম থেকে অসীমের দিকে; আদি থেকে অন্তহীন পথে। প্রেমের দর্শন-যুক্তি যেখানে শেষ জ্ঞানের দর্শন-যুক্তি সেখান থেকে শুরু: প্রজ্জ্বলিত বিকিরণ রহস্যের উপলব্ধি আলোর রঙ মন্টু চিনতে চায় এক জীবন থেকে অন্য জীবনে কীভাবে স্থানান্তরিত হয় . . .।
২১ অক্টোবর - ২০১২
গল্প/কবিতা:
৯৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪